এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-০১

0
115

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০১

অন্ধকার রুমে বলিষ্ঠ এক পুরুষকে নিজ চেম্বারে দেখতেই চমকে উঠলো আদ্রিতা। চেঁচাতে যাবে তার আগেই বলিষ্ঠ পুরুষটি দৌড়ে এসে তার মুখ চেপে ধরলো। তীক্ষ্ণ স্বরে শুধালো,
“হুস! শব্দ না। ভয় নেই আমি আপনার কোনো ক্ষতি করতে আসি নি। আমাকে অল্প কিছুক্ষণ সহ্য করুন আমি একটু পরই চলে যাবো।”

আদ্রিতা চোখ বড় বড় তাকিয়ে রইলো পুরুষটির কুচকুচে কালো চোখ জোড়ার দিকে। তার হাতে জ্বলতে থাকা মোবাইলটা উল্টে পড়ে গেল নিচে। আগন্তুক পুরুষটি মুহুর্তের মধ্যে তার গলায় একটা ছুরি ধরে বললো,“যা বলছি তাই করুন, নয়তো।”

আদ্রিতা ভয়ে ঢোক গিললো। কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,“কি করতে হবে?”

আগন্তুক পুরুষটি তাকে কিছু বললো। পুরো হসপিটালে লোডশেডিং হয়েছে। রাত তখন প্রায় তিনটে ছাড়িয়ে প্রায় মানুষই ঘুমে বিভোর। আদ্রিতার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। আচমকা কোথা থেকে কি হচ্ছে তার সাথে? কিছুই বুঝতে পারছে না। কিছু মানুষের পদধ্বনি শোনা গেল। আদ্রিতা ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে সামনে তাকালো এক লোক তার মুখের ওপর নিভু নিভু আলো থাকা টর্চলাইট মারলো। আদ্রিতা চোখ বন্ধ করে নিলো এতে। স্বাভাবিক গলায় বললো,“আপনারা কারা?”

পর পর পাঁচজন পুরুষ আর একটা মহিলা ঢুকলো রুমে। একজন খুব ক্ষীপ্ত হয়ে বললো, আমরা কারা তা পরে বলছি আগে বলুন এখানে কি কেউ এসেছে?”

আদ্রিতা কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার পিছনেই পিঠে ছুরি দিয়ে বসে আছে আগন্তুক পুরুষটি। আদ্রিতা স্বাভাবিকভাবেই বললো,
“না তো।”

মহিলাটি প্রশ্ন করলো,
“আপনি শিওর?”
“জি। আমি অনেকক্ষণ থেকেই এখানে আছি এখানে কেউ আসে নি।”

লোকগুলো মেনে নিলো। বললো,
“ঠিক আছে। বিভ্রান্ত করার জন্য দুঃখিত।”
“ইট’স ওকে। কিন্তু আপনারা কারা বললেন না তো।”
“একজন বলতে নিলেও মহিলাটি বললো এটা হসপিটাল স্যার বিভ্রান্ত করা ঠিক হবে না পেশেন্টরা ঘাবড়ে যেতে পারে।”

লোকটি শুনলো। মৃদুস্বরে বললো,কেউ না।”

লোকগুলো চলে গেল। আদ্রিতা থ মেরে বসে রইলো। প্রায় আধ ঘন্টা পর্যন্ত তারা দুজন ওভাবেই বসে। পরিবেশ তখন শান্ত। আচমকা মেঘ কেঁপে বর্ষণ শুরু হলো। ফারিশ তার পকেট থেকে ফোনটা বের করলো। কল করে বিশ্রী ভাষায় বললো,“আধ ঘন্টার মধ্যে আমার গাড়ি চাই নয়তো তোদের সব কয়টাকে আমি দেখে নিবো। ফারিশ মাহমুদের সাথে বেইমানি এর ফল কতটা ভয়ংকর হতে পারে তোরা হয়তো ভুলে গেছিস। আমায় শুধু ফিরতে দে।”

অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি ফারিশের কথা শুনেই ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো,“আসছি ভাই, আসছি।”

ফোন কাটলো ফারিশ। রাগে তার পুরো শরীর কাঁপছে। আদ্রিতা তখনও স্বাভাবিক হয় নি। সে চুপচাপ বসে ছিল চেয়ারে। ফারিশ একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিল সে কোনো মেয়ের পিঠে ছুুরি ধরে আছে। হঠাৎই হুস আসলো ফারিশের সঙ্গে সঙ্গে সে ছেড়ে দিল আদ্রিতাকে। আদ্রিতারও হুস আসলো দ্রুত চেয়ার থেকে সরে উঠে দাঁড়ালো। ফারিশ কর্নার থেকে বের হলো। আদ্রিতা ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারিশের মুখশ্রীর দিকে। যদিও অন্ধকারে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হন্তদন্ত হয়ে মোমবাতি খুঁজলো আদ্রিতা। কারণ নিচে পড়ে তার ফোনটা বন্ধ হয়ে গেছে।

হসপিটালে লোডশেডিং এর বিষয়টা দু’দিন যাবৎ হচ্ছে তার রুমের জেনারেটরটা কাজ করছে না। আদ্রিতা দ্রুত ড্রয়ার থেকে মোমবাতি বের করলো
এরপর খুঁজতে ছিল লাইটার। দ্রুত আলো চাই তার। ফারিশ তার পকেট থেকে লাইটার বের করে জ্বালালো। মেয়েটা যে হন্তদন্ত হয়ে ভয়ে দৌড়াচ্ছে তা বেশ বুঝতে পেরেছে ফারিশ। আদ্রিতা লাইটারের আলো দেখতেই এক জায়গায় দাঁড়ালো। তখনই লাইটারের আলোতে দেখতে পেল সেই পুরুষটির মুখশ্রী। মাথায় ঝাকড়া চুল, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের অধিকারি পুরুষটির বড় বড় চোখ, চোখের মনির অত্যাধিক কালো,গাল ভর্তি চাপ দাঁড়ি, চোখের পাশে কাটা দাগ, গায়ে কালো জ্যাকেট জড়ানো। সে বসে আদ্রিতার রুমের দেয়ালের পিঠ ঠেকিয়ে।

আদ্রিতার হাত কাঁপছে, এভাবে হুট করে একটা পুরুষ তার চেম্বারে ঢুকে গলায় ছুরি ধরবে ভাবতেই পারে নি। ফারিশ চোখের ইশারায় ডাকলো। লাইটার তখনও জ্বলছিল তার হাতে। আদ্রিতা কাঁপা কাঁপা হাতে তার হাতের মোমবাতিটা এগিয়ে দিলো ফারিশের দিকে। ফারিশ লাইটার দিয়ে মোমবাতি জ্বালালো। আদ্রিতা মোমবাতিটা রাখলো তার রুমে থাকা টেবিলের ওপর। কাউকে ডাকার চেষ্টা করতেই আদ্রিতার দিকে না তাকিয়েই বলে উঠল ফারিশ,“শব্দ করবেন না এই মুহূর্তে শব্দ চাচ্ছি না।”

আদ্রিতার দাঁড়িয়ে পড়লো চুপচাপ আর কাউকে ডাকার সাহস করলো না। ফারিশ পকেট থেকে এবার বের করলো একটা সিগারেট। সেটাকে লাইটারের সাহায্যে জ্বালিয়ে মুখে দিয়ে ধুঁয়া উড়ালো। আদ্রিতা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো ফারিশের দিকে। ফারিশও এবার দৃষ্টি রাখলো মেয়েটার দিকে। গায়ে ডাক্তারি পোশাক পড়ে মেয়েটা কাঁপছে। ফারিশের খুব মজা লাগছে। তার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে হাসতো কিন্তু সে হাসছে না কারণ ফারিশ সহজে হাসে না। ফারিশের এবার বিরক্ত লাগছে। সে আরেকবার সিগারেটে ফুঁ দিয়ে ধমক দিয়ে বললো,“এত ভয় পাওয়ার কি আছে আমি কি আপনায় মেরেছি?”

আদ্রিতা স্থির হয়ে দাঁড়ালো তাও তার হাত পা কাঁপছে। সে কাঁপা কাঁপা স্বরে প্রশ্ন করলো,“কে আপনি?”

ফারিশ জবাব দেয় না। আদ্রিতা আবারও প্রশ্ন করে,“এখানে কি করতে এসেছেন?”

এবার মুখ খুললো ফারিশ। বললো,
“কিছুই তো করতে আসি নি, দেখছেন না চুপচাপ বসে আছি।”
“লোকগুলো কারা ছিল?”
“বললোই তো কেউ না।”
“যাচ্ছেন না কেন?”
“গাড়ি আসুক চলে যাবো।”
“আমার কি আপনাকে ভয় পাওয়ার উচিত?”

হাসি আসলো ফারিশের। ভয়ে কাঁপছে ওদিকে জিজ্ঞেস করছে ভয় পাওয়া উচিত কি না। ফারিশ হাসি দমিয়ে উত্তর দিলো,
“আপনার ভয় পাওয়া উচিত কি না বলতে পারছি না কিন্তু আপনি যে ভয়ে কাঁপছেন তা কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি।”

আদ্রিতা লজ্জা পেল। ভুল প্রশ্ন করার লজ্জা। আদ্রিতা স্বাভাবিক হলো। জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে দু’পা এগিয়ে এসে বললো,“আমি মটেও ভয় পাই নি সে তো আচমকা নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মস্তিষ্কের উপর দিয়ে যাচ্ছিল বিধায় ঘাবড়ে গেছিলাম একটু।”

ফারিশ হাতে থাকা সিগারেটটায় লাস্ট টান দিয়ে নিচে ফেলে পা দিয়ে পিসে ফেললো। তারপর আয়েশ করে বসে বললো,“ওহ আচ্ছা বুঝেছি।”

আদ্রিতা থরথর করে বললো,
“কি বুঝেছেন?”

জবাব দেয় না ফারিশ। এত কথা সহ্য হচ্ছে না। শরীরে যন্ত্রণা হচ্ছে। ফারিশ তার জ্যাকেটটা খুললো। সঙ্গে সঙ্গে আদ্রিতা আবার দু’পা পিছিয়ে গিয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,“আপনি জ্যাকেট খুলছেন কেন?”

ফারিশ নিরুত্তর। ফারিশ তার জ্যাকেটটা খুলে পিছনে টিশার্টের উপর দিয়েই পিঠে হাত দিলো। জ্বলে উঠলো বোধহয়। হাতটা সামনে আনতেই দেখলো ফারিশ রক্ত। ফারিশের হাতে রক্ত দেখে আদ্রিতা দ্রুত দৌড়ে আসলো আচমকা হাত ধরে বসলো ফারিশের চিন্তিত স্বরে বললো,“রক্ত আপনি কি আহত?”

ফারিশ জবাব দেয় না। এবার বিরক্ত লাগছে আদ্রিতার এ ছেলে প্রশ্নের জবাব কেন দেয় না। আদ্রিতা বিরক্ত নিয়ে বললো,“কথার উত্তর দিচ্ছেন না কেন?”

ফারিশ স্থির দৃষ্টিতে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বললো,“পানি আছে?”

আদ্রিতা একঝলক ফারিশকে দেখলো। বললো,
“আছে।”
“নিয়ে আসুন তাহলে।”

আদ্রিতা দেরি না করে টেবিলের উপর থাকা বোতলটা নিয়ে গ্লাস ভরে পানি নিয়ে এসে দিলো ফারিশের হাতে। ফারিশ নিলো। পানি না খেয়ে তার রক্তে ভেজা হাতটা ধুলো। তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
“ফারিশ আহত হয় না।”
“এটা কেমন কথা আপনার শরীর দিয়ে রক্ত ঝরছে আর আপনি বলছেন ফারিশ আহত হয় না।”

ফারিশ হাসলো। খুব নিদারুণ দেখালো সেই হাসি। ফারিশ বললো,“আমি কে এটা আপনি জানলে বোধহয় আপনিও আমায় আঘাত করতেন।”

আদ্রিতা কথাটায় বেশি গুরুত্ব দিলো না। দ্রুত ডাক্তারির সরঞ্জাম রাখার বাক্সটা নিয়ে বসলো ফারিশের পাশে। বললো,“আপনি কে এটা আমার জানার প্রয়োজন নেই আমি একজন ডক্টর আর আমার দায়িত্ব আহত মানুষদের সেবা করা। আপনি উল্টোদিক ঘুরুন আমি আপনার চিকিৎসা করবো।”

ফারিশ অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে আদ্রিতার মুখশ্রীর দিকে। শক্ত কণ্ঠে বলে,
“দরকার নেই ফারিশ কারো সেবা নেয় না।”
“অদ্ভুত তো শুয়ে পড়ুন দ্রুত।”

ফারিশ বসে রয়। আদ্রিতার এবার রাগ ওঠে। সে নিজেই ঘুরাতে নেয় ফারিশকে। ফারিশ রাগান্বিত স্বরে বলে,
“আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন।”
“চুপ থাকুন তো। কথা বেশি বলেন। যখন কথা বলার প্রয়োজন তখন চুপ থাকেন আর যখন কথা বলার প্রয়োজন নেই তখন বেশি বলেন। আহত হয়ে ভুল করে হলেও যখন ডাক্তারের কাছে এসেছেন তখন সেবা তো নিতেই হবে।”

ফারিশ কি বলবে বুঝতে পারছে না। এই প্রথম যেন মনে হলো কারো প্রশ্নের পিঠে সে কথা বলতে পারছে না। অবাক হলো ফারিশ। মেয়েটা তাকে ভয় পেয়েও কেন ভয় পাচ্ছে না?”

#চলবে….

#TanjiL_Mim♥️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে