সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-১৫

0
115

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১৫
৩৬.
নিরার পাশ ঘেসে কফির কাপ নিয়ে বসে আছে রুদ্র। রুদ্রর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে তার কারন নিরা তার সাথে কথা বলছেনা যা তার মন টাকে ধীরে ধীরে অশান্ত করে তুলছে।

—নিরা কি হয়েছে আপনি আমার সাথে কথা বলছেন না কেন?

নিরার মনে আগে থেকেই অভিমানের পাহাড় জমে ছিলো রুদ্রর মুখে আপনি শুনে যেনো অভিমান টা গাঢ় হলো আরও। তবুও স্বাভাবিক রাখলো নিজেকে

—কই কিছুনাতো আকাশ টা আজ কেমন নিশ্চুপ হয়ে আছে মনে হয় বৃষ্টি নামবে।

রুদ্র নিরার গলা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস নিলো সে ভেবেই নিলো ঘুম থেকে উঠায় নিরা তেমন কথা বলছেনা। রুদ্রর হালকা হেসে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে রইলো।দুইজনার দৃষ্টি দুই দিকে। রুদ্রর দৃষ্টি নিরাতে আবদ্ধ কিন্তু নিরার দৃষ্টি আকাশে আবদ্ধ।হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হওয়াই রুদ্র উঠে পড়লো

—নিরা ভিতরে চলুন বৃষ্টি এসেছে।ভিজে যাবেন তো। অবেলাই ভিজলে অসুখ বাধবে।

রুদ্রর বেলকোনির উপর ছাদ না থাকাই বৃষ্টির পানি অনায়াসে নিরাকে ভিজিয়ে দিচ্ছিলো

—আপনি যান রুদ্র এই বৃষ্টির পানি কখনোই আমার ক্ষতি করেনি বরং সময়ে অসময়ে আমার পাশে ছিলো আছে।কেউ না থাকুক এই প্রকৃতি কখনো কাউকে ভুলেনা ছাড়ে না আগলে রাখে।যেমন সন্তানকে তার মা আগলে রাখে।

নিরা চোখ বন্ধ করে বসে রইলো সে বন্ধ চোখজোড়া বেয়েই গড়িয়ে পড়লো অশ্রুকোণা। বৃষ্টির পানি আর অশ্রুতে মিলেমিশে গড়িয়ে পড়তে থাকলো নিরা গাল বেয়ে। রুদ্রর কেন যেনো নিরাকে অস্বাভাবিক লাগছে কারন এর আগেও বৃষ্টিতে ভিজেছে সে কিন্তু তখন তার মধ্যে উৎফুল্লতা দেখতে পেয়েছে।এমন মন মরা হয়ে সে কখনোই ছিলোনা।
রুদ্র এবার নিরার সামনে বসলো হাটু মুরে।

—জানপাখি আমার দিকে তাকাও।

রুদ্রর আদরমাখা ডাকে নিরা চোখ মেলে তাকালো স্থির চোখজোড়া দেখে রুদ্রর বুকের পাশটা ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো

—কি হয়েছে তোমার কি কোন কারনে মন খারাপ বা আমার কাজে খারাপ লাগেছে বলো আমাকে আই এম সরি প্লিজ।

নিরা কিছুনা বলে রুদ্রর বুকে মাথা এলিয়ে দিলো

—আমি কারো একদিনের ভালো লাগাই সীমাবদ্ধ নই রুদ্র। আমি কারো প্রয়োজনে আবদ্ধ হই আমি প্রিয়জনে সমৃদ্ধ।

—কি বলছো তুমি জানপাখি।
—কিছুনা ভিজে গেছেন চলেন।
—তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দিবা।

নিরা রুদ্রকে রেখেই ভিতরে ওয়াসরুমে চলে যায় অগাত্য রুদ্রকেও যেতে হয় বাসর রাতেও এই মান অভিমানের পাল্লা যেনো কমার নাম নিচ্ছেনা।

নিরা বের হতেই রুদ্র তাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে রুদ্র এখনো ভিজা অবস্থাতেই আছে
—কি সমস্যা বলো না রে বাবা। না বললে বুঝবো কিভাবে আমি হ্যা। আমি কি তোমার মাইন্ড রিড করতে পারি নাকি আজব তো।আমাকে বলবা ত কি হয়েছে আমি কি করেছি

নিরার ধৈর্যর বাধ এবার ভাংগলো
—কি বলবো হ্যা বলেন আমি কি বলবো এইটা বলবো আমার স্বামি আমাকে বিয়ে করে খুশি না তার আফসোস হচ্ছে আমাকে বিয়ে করে বলেন এইটা বলবো সে তার বউ এর দিকে একবার ও তাকায়নি চোখ তুলে এইটা বলবো নাকি কোলে তুলে নিতে তার বিবেক এ বাধছিলো এটা বলবো।নিজের বাসর অব্দি সাজায়নি নিজের অনিহায় এইটা বলবো।

রুদ্র থমকে গেলো দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে নিরার গলাই মুখ গুজলো। মাত্র অগ্নিরুপে দাঁড়ানো নিরা শান্ত হয়ে গেলো। কেপে উঠলো তার সমস্ত স্বত্তা। রুদ্রর নেওয়া একেকটা শ্বাস যেনো তার শরীরে অদ্ভুত কম্পণ তৈরি করছে।এ কি আজব অনুভূতির মাঝে ফাসলো সে।

—মানে নিলাম তোমার সমস্ত অপবাদ জানপাখি কিন্তু তুমি দেখলানা আড়চোখে আমার চোখ সম্পূর্ণ তোমার দিকেই ছিলো।তোমার লাল শাড়িতে দেখে আমার সমস্ত শরীর অদ্ভুত ভাবে আমাকে জানান দিচ্ছিলো আমার জানপাখি আমার রাজ্যের রানী আমার বউ আমার প্রিয়সী আজকে বিনাশকারী লাগছে। তার দিকে তাকানো মানেই আমার সর্বনাশ। তাইতো সরাসরী তাকানোর সাহস পাইনি।আমি চাইনি তুমি অস্বস্তি বোধ করো প্রথম দিনেই তাই আমি তোমাকে কোলে নিতে চাচ্ছিলাম না।আর বাসর আমার জীবনের ফুল ত তুমিই জানপাখি।আমি পারিনা নিজের খুশি গুলা বাকীদের মতো হৈইহুল্লুর করে দেখাতে বা জোড়ে হাসতে তাই বলে তোমাকে ভালোবাসিনা বা তোমার প্রতি অনিহা কিভাবে ভেবে নিলা জানপাখি।তুমি যে আমার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন আমার এক চিলতি সুখ আমার #সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা তোমাকে আমার জীবনে পাওয়া আমার সৌভাগ্য। নিজের সৌভাগ্যর উপরে কেউ কোনদিন।আফসোস করতে পারেনা জানপাখি সে সাধ্য এই অধমের নেই।

কথা শেষ করেই নিরা গলায় চুমু খেলো রুদ্র। রুদ্রর ভিজা শার্টের সাথে লেপ্টে থাকায় নিরার পরণের শাড়িও ভিজে গেছে পুনিরায়।রুদ্র আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে নিরার ঠোঁটের ভাজে নিজের ঠোঁট পুরে নিলো

—ভালোবাসি জানপাখি অনেক বেশি ভালোবাসি।

৩৭.
ভোরের আলো ফুটতেই ঘুম ভেংগে গেলো অভ্রর চোখ খুলে পাশ ফিরতে নিলেই বুকে ভারি কিছু থাকায় ফিরতে সক্ষম হলোনা।বুকের দিকে তাকাতেই চোখ জোড়া আটকে গেলো তার। তার বুকে গুটিশুটি মেরে চাদর লেপ্টে শুয়ে আছে রুহানী। ঘুমের কারণে মুখ জোড়া আগের থেকে আরেকটু ফুলে গেছে ঠোঁট জোড়াও কেমন ফোলা ফোলা হয়ে আছে।
অভ্র আলতো হাতে রুহানীর চুল গুলা কানের পিঠে গুজে দিলো কি মনে করে দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় আসতেই আঙুল দিয়ে গাল বেয়ে গলায় ঘাড়ে শুড়শুড়ি দিতে শুরু করলো ঘুমন্ত রুহানী কানে পিঠে বিরবির করে উঠতেই লাফিয়ে উঠে বসে অভ্রর বুকে।আচমকা রুহানীর এমন উঠে বসায় অভ্রও ব্যাথা পেলো

—আহ্

অভ্রর ব্যাথার আওয়াজে রুহানী নিজের দিকে না তাকায়ে ওই ভাবেই অভ্রর বুকে বসেই তার দিকে ঝুকে গেলো অভ্র ব্যাথায় চেচাবে কি তার আগেই অভ্র রুহানীর তার দিকে ঝুকে পড়ায় তার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেই।।
দুইজনে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

রুহানীর ঘুম ভাংগে নয়টা নাগাদ। তড়িঘড়ি করে উঠে গোসল করে গোল একটা জামা পড়ে মাথায় কাপড় টেনে নিচে নেমে যায়। ডাইনিং টেবিলে সব মেহমান নাস্তা করছিলো রুহানীকে নামতে দেখে মিসেস তালুকদার মুচকি হেসে এগিয়ে গেলেন।

—ঘুম হয়েছে সোনামা?

রুহানী সম্মাতি জানাতেই হাসি দিয়ে মিসেস তালুকদার তাকে চেয়ারে বসায় দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো।উপস্থিত সবাই ততক্ষনে চেয়ার ছেড়ে উঠে গেছে তাদের খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় খালি উঠলোনা অভ্রর ছোট ফুফু তিনি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে রুহানীর দিকে।তিনি চেয়েছিলেন অভ্রর বিয়ে তিনি তার বড় মেয়ের সাথে দিবেন কিন্তু মিসেস তালুকদার রাজি না হওয়াই তার মেয়ের বিয়ে অন্য জায়গায় দিতে হয়েছে অবশ্য সেখানে সে ভালোই আছে কিন্তু তবুও চাপা একটা ক্ষোভ রয়ে গেছে উনার মনে।

মিসেস তালুকদার আসতেই রেহেনা বেগম বলে উঠলেন

—হে ভাবি আমার সোনার মতো মেয়েটাকে না করে দিয়েছিলেন বুঝি এই মেয়ের জন্য যে কি না বিয়ের পরের দিনই বেলা নয়টা অব্দি ঘুমাই তাও শাড়ি না পড়ে জামা পড়ে। কই প্রথম দিন নিজে হাতে সবাইকে রান্না করে খাওয়াবে সেখানে সে নিজেই খেতে বসে গেছে।

রুহানী কেবল মুখে খাবার দিতে যাবে তখন ই কানে কথা গুলা আসাই হাতে খাবার নিয়েই মাথা নিচু করে বসে রইলো।আশেপাশে অভ্রকে খুজতে শুরু করলো শিকদার বাড়ি হলে নিশ্চয় এতোক্ষন তার হয়ে তার বাবা ভাই তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে দিতো।সে নিজেও বা চুপ থাকতো।কিন্তু হাজার হোক এটা শশুড় বাড়ি।
মিসেস তালুকদার অসস্তিতে পড়ে গেলেন। কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে অভ্র শান্ত স্বরে বলে উঠলো

—আপনার মেয়েকে আম্মু নই আমি না করেছিলাম ফুফু জান কারন সে আমার কাছে বোনের মতোই ছিলো আর সেও আমাকে ভাইয়ের নজরেই দেখতো আর রইলো আমার বউ এর রান্না নিয়ে আমি যতোদূর জানি আমাদের বাড়িতে যথেষ্ট কাজের মেয়ে আছে যার কার‍ণে আমার বউ বা মায়ের রান্না করার প্রয়োজন নেই আর রইলো পোষাক নিয়ে সে শালীন পোশাক ই পরিধান করেছে এখানে খারাপ কিছু আমি দেখছিনা তাই দয়া করে নিজের ভাই এর অন্ন ধ্বংস করে বেরিয়ে যান। রুহ আমার জন্য কফি নিয়ে রুমে আসবা এখন ই।

রুহানী নিজের কফিটা হাতে নিয়েই দৌড় দিলো।কারন রেহেনা বেগমের ফেস এক্সপ্রেশান দেখে রুহানীর হাসি কন্ট্রোল করা সম্ভব হচ্ছিলোনা।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে