শোভা পর্ব-১২

0
445

#শোভা
#পর্ব_১২

সকালে খুব ভোরেই বেরিয়ে গেলেন রায়হান সাহেব।শোভা নাস্তা বানাতে উঠে দেখে সে বেরিয়ে গেছে ।গতকাল সারারাত অজানা এক ভয়ে দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি। সারাদিনের সব কাজ শেষ করে দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে বাচ্চাদের কে ঘুম পরাতে গিয়ে গতকাল রাতে না ঘুমানোর কারণে নিজেও কখন ঘুমিয়ে পরলো সে টেরই পেলোনা।

বিকেলের দিকে হঠাৎ করে কলিং বেলের শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। সে ভাবলো এই সময়ে আবার কে এলো! শোভা দরজা খুলে দেখলো , রায়হান সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। এই সময়ে তাকে দেখে শোভা একটু অবাক হলো।

– চাচাজি, এই সময়ে আপনি?

-হ্যা, কাজ শেষ হয়ে গেলো তাই ভাবলাম বাসায় চলে আসি। অবশ্য আজকের মধ্যে কাজটা শেষ হয়ে গেলে নাইটে চলে যেতে পারতাম।

-আচ্ছা। আপনি দুপুরে খেয়ে এসেছেন?

-হ্যা, খাওয়া শেষ । এককাপ চা দিতে পারবে? তোমার হাতের চা আবার আমার খুব পছন্দ হয়েছে !

-ঠিক আছে , আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি চা নিয়ে আসছি।

শোভা চা দিয়ে চলে যাচ্ছিলো তখন পেছন থেকে রায়হান সাহেব তাকে ডাক দিলেন।

-চলে যাচ্ছো ? একটু বসো! কথা ছিলো।

শোভার মনের মধ্যে কেমন করে উঠলো; তার সাথে আবার কি কথা রায়হান সাহেবের!

-জ্বী চাচাজি; কিছু কি লাগবে আর ?

– না। একটু কথা বলবো, বসো!

– জ্বী বলেন ! শুনছি!

– সরাসরিভাবেই বলি। আমি আবার অত ভূমিকা করতে পারিনা। তোমাকে তো বলেছি যে আমার স্ত্রী এই কয়েক বছর ধরে বেশ অসুস্থ! আমার সংসার প্রায় অচলাবস্থা । তাই আমি মনে মনে কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম এভাবে আর কত দিন! আমি তো আর বুড়ো হয়ে যায়নি। একজন স্বামী হিসেবে আমারও তো তার কাছে কিছু চাওয়া পাওয়া আছে। এসবের কোনোকিছুই তো সে পূরণ করতে পারেনা। তাই আমি আবার নতুন করে জীবন টাকে সাজাতে চাই।

রায়হান সাহেবের কথা শুনে শোভার বুকের মাঝে চমকে উঠলো।

– চাচাজি, এসব কথা আমাকে কেনো বলছেন? আমি এসব শুনে কী করবো?

– তোমাকে বলছি নিশ্চয়ি কারণ তো একটা আছে । অপেক্ষা করো বলছি।

– আল্লাহর কৃপায় আমার অনেক আছে। আমার যে সহায় সম্পত্তি আছে তাতে আমার ছেলেমেয়েরা পায়ের উপর পা তুলে খেতে পারবে। এত কিছু থাকার পরেও আমার মনে শান্তি নেই । দু দিনের জীবন ! এতো কষ্ট করে কি হবে বলো? তোমার দিকটাই তুমি দেখোনা , এই যে তোমার বয়স আর কত হবে? ছোট ছোট দুটি বাচ্চা নিয়ে একা একা বেচে থাকার সংগ্রাম করছো। তুমি তো কোনো অন্যায় করোনি । তাহলে তুমি কেন এভাবে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর সাফার করবে? তুমি একটা ভালো মেয়ে, গূণী মেয়ে। তুমি এভাবে কতকাল একাকি কাটাবে? তুমি তোমার লাইফে ভালো কিছু ডিজার্ভ করো!

– চাচাজি, আমাকে নিয়ে আপনি কেনো এখানে বলছেন? আমি ভালো আছি। আমার কোনো সমস্যা নেই । আপনি শুধু শুধু চিন্তা করছেন। আমার যা হবার তা হবে। আর কিছু কি বলবেন? আমি একটু ব্যস্ত! রাতের কিছু কাজ বাকি আছে । ওগুলো শেষ করতে হবে।

– এতো ব্যস্ত হচ্ছো কেনো? আমরা চারজনই তো! বাচ্চারা দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়েছে?

– হ্যা !

– শোভা, আমি তো বললাম, আমি কোনো ভূমিকা করতে চাইনা । সরাসরিই বলছি, আমরা চারজন মিলে কি একটা পরিবার হতে পারিনা? আমি তোমার মেয়েদের মাথার উপরের ছায়া হতে চাই । তোমার জীবনের সব অপূর্ণতাকে মুছে ফেলতে চাই। তোমাকে একটি পূর্ণ সংসারের স্বাদ দিতে চাই। তুমি কি আমাকে সেই অধিকার টুকু দিবে?

– চাচাজি ! এসব কি বলছেন ? আপনার মাথা ঠিক আছে তো? আমি আপনার মেয়ে সমতুল্য। আমাকে নিয়ে এসব ভাবার আগে আপনার বুক কাঁপল না? আপনি কাজলের চাচা। মানে আমারও চাচা। এর চেয়ে বেশি আপনাকে নিয়ে আমি কোনোকিছু ভাবতে চাইনা! আমি আপনাকে সম্মানের চোখে দেখি।

– আরে বোকা ! তাতে কি হয়েছে ? আমি তো তোমার রক্তের সম্পর্কের কোনো চাচা নই। এটাতে কোনো সমস্যা নেই। আমি তোমার মেয়েদেরকে সম্পূর্ন আমার মেয়ের মতো অধিকার দিয়েই বড় করবো। কেউ কোনোদিন জানতেও পারবেনা যে ওরা আমার মেয়ে নয় ? আর তুমি যাতে ইনসিকিউরড ফিল না করো সেজন্য তোমাকে আমার মফস্বলে যে বাড়িটা আছে সেটা তোমার নামে লিখে দিবো। ওটা থেকে মাস গেলে তুমি বিশ হাজার টাকা ভাড়া তুলতে পারবে। তাছাড়া আর ও অনেক কিছু আছে আমার । দরকার হলে বাজারের বড় দোকান দুইটি ও লিখে দিবো দুই মেয়ের নামে। ওদের দিকে তাকালে খুব মায়া লাগে। কি মায়াবী চেহারা। এই বয়সে এতিম হয়েছে। বাবার ভালবাসা বোঝার আগেই বাবা কে হারিয়েছে। তুমি রাজি থাকলে ভাবি ফিরলেই আমি তোমার ব্যাপারে কথা বলবো।

– শোভা রেগে গিয়ে বললো, আপনি এসব কথা কেনো বলছেন? আমার বিয়ের কোনো প্রয়োজন নেই! ভালোভাবে বেচেঁ থাকতে গেলেই মেয়েদেরকে পুরূষের সাপোর্ট লাগবে এটা ভুল ধারনা। আর আপনি ভাবলেন কি করে যে আপনাকে আমি বিয়ে করবো? আপনি একটা কেনো? দশটা বাড়ি দিলেও আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। আপনার মনের মধ্যে এসব চিন্তা এলো কি করে? আমাকে নিয়ে এসব উলটা পাল্টা চিন্তা করলেন কি করে? কালকে মাথায় তেল ম্যাসাজ দিয়ে দিয়েছি, আপনার পছন্দের রান্না করে খাইয়েছি এতেই বুঝি আপনি অমনি আমাকে বিয়ের চিন্তা শুরু করে দিলেন? ছিঃ! আমি আপনাকে আমার বাবার সমতুল্য মনে করেছিলাম। আর আপনি আমাকে নিয়ে আজেবাজে চিন্তা করেছেন?

আর, আজ আপনি আপনার স্ত্রী অসুস্থ দেখে বিয়ে করতে চাচ্ছেন ! আজ আপনি যদি অসুস্থ হতেন তাহলে কি আপনার স্ত্রী আপনাকে রেখে আপনার সামনে আরেক টা বিয়ে করতো?
আর মনে করেন বিয়ে করলো। তখন আপনার কেমন লাগবে? খুব ভালো লাগবে না নিশ্চয়ই?

শোনেন, অসুস্থতা বলে কয়ে আসেনা। এটা আল্লাহর দান! আজ আপনি ভালো আছেন কাল নাও থাকতে পারেন! আজ যে পৌরুষ্যের জোর আর বাহাদুরি দেখাচ্ছেন, কাল তা নাও থাকতে পারে!
এতটা বছর যে আপনার পাশে নিঃস্বার্থ ভাবে তার সারাটি জীবন আপনার সংসারে ত্যাগ করেছে, আপনার আর বাচ্চাদের দেখাশোনা করেছে, আপনার সংসারকে আগলে রেখেছে, সে আজ আপনার পৌরূষ্য ভরা যৌবনের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ; অমনি আপনি আরেকটা বিয়ে করতে চাচ্ছেন? নিজের বয়সের দিকে খেয়াল করেছেন? কোথায় তার পাশে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে তার শক্তি আর সাহস বাড়াবেন, তা না করে আপনার রংগলীলা করতে মন চাচ্ছে। কেমন পুরূষমানুষ আপনি? ছিঃ! আপনি মুরুব্বি না হলে এতক্ষণ….

– এতো নীতিকথা আসে কোথা থেকে? থাকোতো মানুষের বাসায়! একটা কাজের মানুষকে এতটা মাথায় উঠানো আমারই উচিৎ হয়নি। করোতো মানুষের বাসায় কাজ! আবার মুড দেখাও, না? তোমার মতো মেয়েমানুষ পয়সা হলে অভাব নেই! ছোট মুখে বড় কথা!

– ছিঃ! চাচাজি আপনার মুখে এই ধরনের কথা আসে কি করে? পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন আর এরকম চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘোরেন। এই নামাজে কি হবে, বলুন দেখি? আপনাকে চাচা ডাকতেও আমার লজ্জা লাগছে। ছিঃ!

আর আপনি বলছেন আমি মানুষের বাসায় কাজ করি, হ্যাঁ আমি কাজ করি। এতে আমার কোন লজ্জা নাই। আমি কাজ করে খাই, আমি চুরি করে খাই না। মানুষের সব সময় দিন একভাবে যায়না! হয়তো একসময় আমারও দিন পরিবর্তন হবে! এভাবে যাবে না আমার সারা জীবন। আমি আপনার সাথে আর কোনো কথা বলতে চাই না। আপনি এ বাসার অতিথি। আন্টি বাড়িতে নেই। আপনার দেখাশোনার দায়িত্ব আমার। আপনার কোন কিছু লাগলে আমাকে ডাক দিবেন।

শোভা দৌড়ে তার রুমে যেয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বুকফাটা কষ্টে তার দুচোখ বেয়ে জলধারা গড়িয়ে পড়তে লাগলো।

ওইদিন রাতে রুখসানা বেগম ফিরে আসলো। পরেরদিন সকালে কাজলের চাচা চলে গেলো। শোভা তার সম্পর্কে কোনো কথা আর রুখসানা বেগমের কাছে বললো না। শোভা রুখসানা বেগমকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে অনেক রিকোয়েস্ট করে বাসা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলো।

দিন সাতেক পরে তাদের সংগঠনের আরেক কর্মীর সাথে একসাথে টিনশেড বাসায় একটা রুম ভাড়া নিয়ে সেখানে উঠলো।

আলোর বাহনে কাজ করে শোভা তার ভাগ্যের চাকাকে ঘোরানোর চেষ্টায় দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আজ দু বছর সে এখানে কাজ করছে। তার হাতের কাজের অনেক সুনাম সেখানে! শোভার প্রতিটি কাজ অনেক নিখুঁত। জান্নাত স্কুলে পড়ছে। ভালো একটা বাসা ভাড়া নিয়েছে। খেয়ে পড়ে মেয়েদেরকে নিয়ে বেশ চলছে তিনজনের সংসার।

একদিন রুখসানা বেগম তাকে ডেকে নিজে ব্যবসা শুরু করার জন্য শোভাকে পরামর্শ দিলেন।
শোভাকে স্বল্পমেয়াদি কিছু ঋণের ব্যবস্থা করে দিলো আলোর বাহন। সে গরিব কয়েক জন মেয়ে যারা কাজ পায়না এমন কিছু মেয়ে দিয়ে একটা রুম ভাড়া নিয়ে শুরু করে দিলো কাজ। বেশ সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের মেয়েদের পোশাক, গৃহসজ্জার জিনিসপত্র তৈরি করে আলোর বাহনের কাছে বিক্রি করে। মোটামুটি ভালোই স্বচ্ছলতা আসতে শুরু করলো তার ব্যবসায়ে। ঋণ শোধ করার পাশাপাশি অল্প অল্প করে পুঁজি জমাতেও শুরু করলো সে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়।

এদিকে জহিরের বোনেরাও তার ভাইয়ের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে বাড়ি বন্ধক রেখে বেশ টাকা লোন নিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেছে। নতুন হিসেবে বেশ ভালোই চলছে!

আলোর বাহন থেকে হাতে কাজ করা পণ্য গুলি বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারি মূল্যে বিক্রি করা হয়। তার মধ্যে জামিল নামের একজন পাইকার সবসময়ই শোভার তৈরিকৃত পণ্যগুলি খুব চাহিদার সাথে কিনে নেয়। কিন্তু শোভার সাথে তার কখনো সরাসরি দেখা হয়নি।

একদিন শোভার সাথে হঠাৎ করে তার দেখা হয়ে গেল আলোর বাহনের এক মিটিংয়ে।

শোভার সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিলো রুখসানা বেগম। মধ্য বয়স্ক একজন ভদ্রলোক। কথাবার্তা খুবই মার্জিত! শোভা জামিল সাহেবের সাথে পরিচিত হওয়ার পর থেকে পুরো মিটিং জুড়ে বারবার তার দিকে তাকাচ্চিলো। কেনো যেন খুব চেনা চেনা মনে হয়! কিন্তু কোথায় দেখেছে সেটা শোভা কোনোভাবেই মনে করতে পারছিল না। বারবার তার দিকে তাকাচ্ছিলো। জামিল সাহেব এটা খেয়াল করে শোভার পাশের চেয়ারে এসে বসলো।

– কি ব্যাপার, আপা? সেই প্রথম থেকে লক্ষ্য করছি আপনি আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছেন! কিছু কি বলবেন?

শোভা তার কথায় লজ্জিত হয়ে বললো, আসলে আপনার নাম তো অনেক শুনেছি। আপনি আমার তৈরিকৃত পণ্যগুলি নায্যমূল্যে ক্রয় করেন, সময়মত দাম পরিশোধ করেন! এজন্য না কেনো বুঝতে পারছিনা, আপনাকে যেন কেমন চেনা চেনা লাগছে! আমি আগে আপনাকে কি কোথাও দেখেছি?

জামিল সাহেব হেসে বললেন, তাই নাকি! নাম শুনে শুনে মনে ছবি একে ফেলেছেন নাকি? যাই হোক আপনার সাথে কোনোদিন দেখা হয়েছে বলে আমার মনে পড়ছেনা। তবে আপনার প্রোডাক্টস এর অনেক চাহিদা। এত সুন্দর ডিজাইন করেন আপনি। আর প্রত্যেকটি ডিজাইন একদম স্বতন্ত্র। একটার সাথে একটার কোন মিল নেই। সত্যিই অদ্ভুত! আপনার প্রোডাক্ট মার্কেটে ওঠার সাথে সাথে স্টক আউট। অনেক চাহিদা। যেখানে এই আলোর বাহনের অন্যান্যদের প্রোডাক্ট শোরুমে মাসের পর মাস ঝুলতে থাকে কাস্টমার পাওয়া যায়না। আমি আপনার সাথে দেখা করার জন্য কয়েকদিন ধরে মনে মনে খুজছিলাম। আমি চাই আপনার সব প্রোডাক্টের একমাত্র হোলসেলার আমিই থাকবো। আমি আপনাকে এক পয়সাও ঠকাবোনা। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। অন্যরা যা দিবে আমি আপনাকে তার থেকে বেশি ছাড়া একটুও কম দিবোনা। আমি আপনার সম্পর্কে মোটামুটি অনেক কিছু জেনেছি রুখসানা ম্যাডামের কাছ থেকে। অনেক স্ট্রাগলস করেছেন আপনি। তাই আপনার জন্য আমার মনে আগে থেকেই একটা সফট কর্ণার রয়েছে। কতটুকুই বা বয়স হয়েছে আপনার? এই বয়সে এতো চড়াই উৎরাই পার করেছেন। আল্লাহ আপনার আরো হিম্মত দিক সেই দোয়াই করি। আপনি চাইলে কিছু পুঁজি যোগাড় করেন আমি আপনাকে নিজস্ব শোরুমের ব্যবস্থা করে দিই। আপনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবেনা, আমি আশ্বাস দিচ্ছি।

– ধন্যবাদ, ভাই! আমি আসলে এতটা প্রশংসার দাবিদার নই যতটা আপনি করছেন। আপনি যে আমাকে আর আমার প্রোডাক্টকে এতটা মূল্যায়ন করেছেন এটাই আমার বড় পাওয়া। আসলে কাজ সবাই ই ভালো করে কিন্তু আমার কাজের বিশেষত্ব হলো আমি প্রত্যেকটি কাজকে আমার নিজের সন্তানের মতো করে ভালোবেসে আগলে, অনেক যত্ন করে করি। কোনো কাজই আমার কাছে ছোট না। প্রত্যেকটি কাজকে আমি সমান ভাবে গুরুত্ব দিয়ে করে থাকি। প্রত্যেকটি কাজ আমি নিজে মনিটরিং করি। আসলে এটাই তো আমার রুজিরোজগার এর জায়গা। এটাকে অবহেলা করলে তো আমার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

– আপনি অনেক সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে পারেন! চমৎকার! আপনার দেশের বাড়ি কোথায়? আসলে দেশ বললে ভুল হবে। আমরা তো সবাই একই দেশের মানুষ। আমি বলছিলাম যে, আপনার হোম ডিস্ট্রিক্ট কোথায়?

– হোম ডিস্ট্রিক্ট পাবনাতে! আপনার?

– ফরিদপুরে ।

ফরিদপুরের কথা শুনে শোভা কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

– কি ব্যাপার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন যে ফরিদপুর নিয়ে কি কোনো বেদনাদায়ক স্মৃতি আছে নাকি?

শোভা যেন কিছুক্ষণ আনমনা হয়ে গিয়েছিল সে একটু চুপ করে থেকে বলুন কিছু বলেছেন?

– আপনি শুনেন নি আমি কি বলেছি? বলেছি যে ফরিদপুর নিয়ে কি কোনো বেদনাদায়ক স্মৃতি আছে নাকি? এরকম রিঅ্যাক্ট করলেন যে ফরিদপুরের নাম শুনে, তাই বললাম আর কি!

– না, এমনিতেই! ফরিদপুরে আমার শশুরবাড়ি। যদিও ওখানে কোনোদিন যাওয়া হয়নি আমার।

– ওখানে কোথায় আপনার শশুরবাড়ি?

– নগরকান্দা উপজেলার রামনগরে! আপনার?

– রামনগরেই? আমি আপনাদের পাশেই চর যশোরদির! রামনগরে কোন বাড়ি?

– মৃধা বাড়ি।

– কি নাম ছিলো আপনার হাসবেন্ডের?

– জহির মৃধা!

– কি? জহির মানে আপনি জহির ভাইয়ের ওয়াইফ! আর জহির ভাই বেচেঁ নাই? বলেই দাঁড়িয়ে গেলো জামিল সাহেব!

– হ্যাঁ! আপনি জহির কে চেনেন?

– চিনি মানে খুব ভালো করেই চিনি! আপনি রিনা, বীণার ভাবি তাই না?

– হ্যাঁ আপনি ওদেরকে কি করে চেনেন?

– ওদেরকে চিনবো না! মানুষরূপী এক একটা জানোয়ার! ও এবার আমি বুঝতে পেরেছি আপনি হাজব্যান্ড মারা যাওয়ার পরে কেন শ্বশুরবাড়িতে টিকতে পারেননি! কিন্তু, জহির ভাই মারা গেলো কীভাবে একটু বলেন দেখি! হে আল্লাহ উনি তো অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। আহারে ওই ঘরে ওই একজন ই তো ছিলো মানুষ! আর সবগুলো তো একেকটা নরপিশাচ! সবচেয়ে বেশি অমানুষ ওই বুড়ি! মেয়েগুলিরে নষ্ট করে ছাড়ছে। উহ! কি হয়েছিলো জহির ভাইর?

– স্ট্রোক করেছিলো। কিন্তু আপনি ওদের সম্পর্কে এত কিছু জানেন কিভাবে?

– আমি জানবোনা! কি বলেন? আমার জীবন টাকে শেষ করে দিয়েছে ওরা। ওদের জন্যই আমি আমার জীবন টাকে আজ পর্যন্ত ভালোভাবে গুছিয়ে উঠতে পারিনি। উহ! ওইসব যন্ত্রণার কথা মনে পড়লে আমার এখনো মাথায় রক্ত উঠে যায়।

– কিন্তু, জামিল ভাই আপনার পরিচয় টা কিন্তু এখনো দিলেন না।

– এত কিছু জানার পরেও পরিচয় চাচ্ছেন। আমি রিনার হাসবেন্ড! আমি মুহিবের বাবা।

শোভা তার পরিচয় শুনে চমকে উঠলো!

– ও ও ও! এজন্যই তো আপনাকে আমি বারবার আপনাকে দেখেছিলাম। রিনার বিয়ের ছবির এলাবামে আমি আপনার ছবি দেখেছিলাম। এজন্যই তো চেনা চেনা মনে হচ্ছিলো আপনাকে! আপনিই তাহলে মুহিবের বাবা!

– জ্বি! আমি মুহিবের বাবা। কিন্তু এমনই বাবা যে জানেনা তার সন্তান দেখতে কেমন হয়েছে? কার মতো হয়েছে? কতটুকু হয়েছে?

– দেখতে আপনার মতই হয়েছে অনেক টা। তবে চরিত্রের দিক থেকে পুরাই মা খালার মতো। কিছু মনে করবেন না, প্লিজ!

– মনে করার কিছুই নাই, ভাবি! ওই শয়তান পুরিতে থাকলে যে কেউ ওদের মতো হবে এটাই স্বাভাবিক। দুবাই থেকে আসার পর অনেক খুঁজেছি ওদের। কিন্তু পাইনি। যাই হোক আপনার গল্প বলেন?

– আমার কথা তো শুনবেন। কিন্তু আপনার সম্পর্কে যে শুনলাম আপনিই নাকি রিনার জীবন টাকে ধ্বংস করেছেন? আপনি নাকি নেশার টাকার জন্য রিনাকে মারধোর করতেন?

– হাসালেন ভাবি! কি বলবো বুঝতে পারছিনা। যাই হোক সব কথা শুনবো আর আপনাকে শুনাবো। আপনি আমার ফোন নাম্বার আর ঠিকানা টা রাখেন। আসেন একদিন বাবুদের নিয়ে আমার বাসায়। অনেক কথা হবে। আর আমার মিসেস এর সাথেও পরিচিত হবেন, প্লিজ! অনেক খুশি হবো। এক কাজ করুন না, কাল কে তো শুক্রবার। মামণি দের নিয়ে চলে আসুন আমার বাসায়। আমার সব কথা শুনাবো আপনাকে, যদি শুনতে চান। আমার ও ছোট্ট একটা ছেলে আছে। আপনার মেয়েদের সাথে খেলে খুশিই হবে। না করবেন না, প্লিজ!

শোভা খানিকক্ষণ ভেবে বললো, আমি চেষ্টা করবো। রাতে ফোনে জানাবো। কারণ কালকে আবার একটা অর্ডারি কাজ আছে। রাতের ভিতর ম্যানেজ করতে পারলে আপনাকে ফোনে জানাবো, ইনশাআল্লাহ! আর আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। মনে হলো অনেকদিন পরে কোনো আপনজনের সাথে কথা বললাম।

– ঠিক আছে। আজ তাহলে উঠি। কালকে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ!

– চেষ্টা করবো।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে