মনোহরা পর্ব-১৪

0
998

মনোহরা
পর্বঃ১৪
লেখিকাঃনির্মলা

দুই হাত তুলে আলসেমি ভেঙে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে ৯টা বাজে লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে washroom এ চলে গেলো। গোসল করে বাহিরে এসে শাড়ি পড়ে নিলো ইশা। কালকে শাড়ি পড়া কিছুটা শিখেছে। যেভাবে পড়িয়ে ছিলো ঠিক সেভাবে পড়ার চেষ্টা করলো।তবে তারা যেভাবে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছিলো সেরকম হয়নি যা হয়েছে সেভাবেই পড়ে নিচে চলে গেলো ।নিচে গিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না ইশা।তাই ইশা রান্না ঘরের দিকে গেলো গিয়ে দেখলো তার শাশুড়ী মা কাজ করছে।ইশা পিছন থেকে বলে উঠলো
ইশাঃ মা!!!
শানের মা ইশার দিকে ফিরে একটা হাসি দিয়ে বলল
শানের মাঃ ইশা মা তুমি উঠে গেলো
ইশা মাথা নিচু করে বলল
ইশাঃ জি আর sorry মা
শানের মাঃ কি হয়েছে ইশা মা তুমি হঠাৎ sorry বলছো কেনো
ইশা তার শাশুড়ী মায়ের দিকে তাকিয়ে মুখ গোমড়া করে বলল
ইশাঃআমার ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হয়ে গেছে তাই
ইশার শানের মা ইশার দিকে এগিয়ে এসে গালে হাত দিয়ে বলল
শানের মাঃ ধুর পাগলী এতে এমন করে বলার কি আছে
ইশাঃ আছে তো আমি তো এ বাড়ির বউ না। বউ দের তো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হয়।
ইশার শানের মা ইশার মুখ থেকে এমন কথা শুনে হেসে দিয়ে বলল
শানের মাঃ কে বলেছে তোকে এসব
ইশাঃ কেউ না আমি জানি,
শানের মাঃ আমার মেয়ে তো দেখি সব বুঝে,এখন চল তো খেয়ে নিবি। (মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)
ইশাঃ হুম
এই বলে ইশাকে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে দিলো।তারপর নিজের হাতে করে ইশাকে খাইয়ে দিলো ইশার শাশুড়ী।

এদিকে………..

হাতে ফাইল নিয়ে খুব মনোযোগ দৃষ্টিতে দেখছে শান।তার সামনে তার সহকারী উর্মি দাড়িয়ে আছে।মেয়েটা আজই অফিসে Join করেছে।শান ফাইলের দিকে দৃষ্টি রেখে মেয়েটাকে শান বলে উঠলো
শানঃ মিস উর্মি!!!!মিস উর্মি
উর্মির কোন হুস নেই সে এখনো পলকহীন দৃষ্টিতে শানের দিকে তাকিয়ে। শান উর্মি কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে। সামনে তাকাতেই দেখলো উর্মি তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
শান তার হাত দিয়ে টেবিলে জোরে শব্দ করে বলে উঠলো
শানঃ মিস উর্মি আপনি কি আমাকে শুনতে পারছেন
শান জোরে শব্দ করায় উর্মি কিছুটা কেঁপে উঠল। সেটা দেখে শান বলে উঠলো
শানঃ sorry এতো জোরে শব্দ করার জন্য আপনি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন মিস উর্মি
উর্মিঃ ইয়ে মানে!!! স্যার আমি, কিছু বলছিলেন স্যার আমাকে (কথা ঘুরিয়ে বলল)
শানঃ হুম, আমি এই ফাইটা পুরোপুরি দেখে নিয়েছি। এটা আপনি নিয়ে একবার চেক করে আপনাদের বড় স্যারের কাছে দিবেন (ফাইলটা উর্মির হাতে দিতে দিতে বলল)
উর্মি ফাইটা হাতে নিয়ে বলল
উর্মিঃ জি স্যার,,,,,
এই বলে চলে যেতে নিলেই।পিছনে ফিরে আবারও বলে উঠলো
উর্মিঃ স্যার,,,, আপনার কিছু লাগবে
শানঃহুম,,,,, এক কাপ কফি পেলে ভালো হতো
উর্মিঃ ওকে স্যার আমি পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করছি( হাসি মুখে)
বলেই একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো।এদিকে শানের মাথাটা ভীষণ ধরেছে। সেই সকালে অফিসে এসেছে। এতসময় কাজে খুব ব্যাস্ত ছিলো চেয়ারে গাঁ এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ইশার কথা মনে পড়লো শানের।শান চট করে চোখ খুলে টেবিলের এক সাইডে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে ইশাকে ফোন করতে গেলেই শানের খেয়াল হলো ইশার কাছে তো ফোন নেই। ঠিক তখনি উর্মি শানের কেবিনে দরজার সামনে দাড়িয়ে বলে উঠলো
উর্মিঃ May I coming sir?
শান দরজার দিকে না তাকিয়ে বলে উঠলো
শানঃ Yes coming
উর্মি হাতে করে এক কাপ কফি নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন।কফির মগটা শানের দিকে এগিয়ে বললেন
উর্মিঃ স্যার আপনার কফি
শান ফোনের দিকে মনোযোগ দিতে দিতে বলল
শানঃ রেখে যাও
উর্মি কফিটা রাখতেই। শান কি যেনো মনে হলো সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে উর্মির দিকে তাকিয়ে বলল
শানঃ আমি lunch করতে বাড়ি যাচ্ছি। তোমাদের বড় স্যার আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলেদিও আমি বাড়িতে গিয়েছি ok
উর্মিঃ ok sir
শান এই বলে বেড়িয়ে গেলো তার কেবিন থেকে।উর্মি শানের যাওয়ার দিকে কিছুসময় তাকিয়ে তারপর কফির মগটি হাতে নিয়ে বলল
উর্মিঃ নিজের হাতে কফি করে আনলাম স্যার সেটা না খেয়ে চলে গেলেন (মন খারাপ করে)

ওদিকে
ইশা বসে বসে টিভি দেখছে কারন অহনা বাড়িতে নেই কলেজে গেছে।বাড়িতে আজ ইশা তার শাশুড়ী মা, আর একটা কাজের মেয়ে ছাড়া কেউ নেই। এদিকে তার শাশুড়ী মা তাকে রান্না ঘরে যেতে বারন করেছে নতুন বউ বলে। তাই সে কি করবে ভেবে না পেয়ে বসে বসে একটা মুভি দেখতে লাগলো।মুভিতে একটা কষ্টের সিন দেখে ইশা কান্না করতে লাগলো ।এরই মধ্যে দরজার কলিং বেল বেজে উঠলো। কাজের মেয়েটা দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দিতে দেখলো শান এসেছে। শান ভিতরে ঢুকে সিঁড়ির দিকে যেতেই হঠাৎ তার সোফার দিকে খেয়াল গেলো।সোফার দিকে তাকাতেই দেখরো ইশা টিভি দেখছে।সে দ্রুত পায়ে গিয়ে ইশার পাশে দাড়ালো। কিন্তু ইশার কোন হুস নেই কেউ তার পাশে দাড়িয়ে আছে।সে টিভির দিকে তাকিয়ে কান্না করেই যাচ্ছে। হাতের উল্ট পিঠ দিয়ে বারবার চোখ মুছছে।শান একবার টিভির দিকে একবার ইশার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে।এদের দুজনের মধ্যে কার বেশি কষ্ট হচ্ছে।শান ইশার দিকে একটা রুমাল বারিয়ে দিয়ে বলল
শানঃ খুব কষ্ট হচ্ছে কি???
ইশা রুমালটা হাতে নিতে নিতে ইশা বেখেয়ালি ভাবে বলল
ইশাঃ খুব মেয়েটার ছেলেটার সাথে এমন করা ঠিক হয় নি

বলেই শানের রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে লাগলো
শান তার গলার টাইটা ঢিল করতে করতে ইশার পাশে বসে বলল
শানঃ director ফোন করে বলবো এই সিনটা পাল্টে দিতে
ইশাঃ হ্যাঁ ব
বলেতে বলতে পাশে তাকাতেই আর কিছু বলতে পারলো না ইশা কারন শান তার পাশে বসে আছে ।শানকে দেখে ইশার ফট করে সোফা ছেড়ে দাড়িয়ে গেলো আর বলল
ইশাঃ আপনি!!!!! কখন এলেন
শান দাড়িয়ে প্যান্টের পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে বলল
শানঃ মাএ, এসে দেখলাম তুমি কান্না করছো তাও আবার এই Stupid মার্কা মুভি দেখে
ইশাঃমোটেও stupid না মুভিটা অনেক ভালো
শানঃ হ্যাঁ সে তো দেখলাম কতটা ভালো মুভি দেখতে দেখতে কান্না করছিলে
ইশার শানের কথায় রাগ উঠে গেলো তাই সে আর কিছু না বলে চলে যেতে নিলেই শান তার হাত ধরে টান দিলো।ব্যাপারটা এত দ্রুত হলো যে ইশা তালসামলাতে না পেরে শানের বুকে গিয়ে পড়লো।ইশা পড়ে যাবার ভয়ে শানের শার্ট খামচে ধরলো।শানের হাত ইশার শাড়ি ভেদ করে কোমড়ে আকড়ে ধরলো।ইশার শরীরে শানের হাতের স্পর্শ পেয়ে ইশা কিছুটা কেঁপে উঠল। ইশা শানের দিকে তাকিয়ে দেখলো শান তার দিকে নেশা ভার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইশা শানের কাছ থেকে সরে আসতে চাইলে শান তাকে আরও শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো সাথে সাথে ইশা তার চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। শান বলল
শানঃ কোথায় যাচ্ছো
ইশা চোখ বন্ধ রেখে বলে উঠলো
ইশাঃ রুমে
শান আর কথা না বারিয়ে ইশাকে এভাবে চোখ বন্ধ করে থাকতে দেখে মিটমিটিয়ে হেসে।ইশাকে কোলে তুলে নিলো।হঠাৎ ইশার মনে হতে লাগলো সে হাওয়া ভাসছে। চোখ খুলতে দেখতে চাইলে শান সেটা দেখতে পেয়ে বলে উঠলো
শানঃ চোখ খুললে কিন্তু ফেলে দিবো

শানের বলতে যতটা দেড়ি হলো ইশার শানের গলা জড়িয়ে ধরতে দেড়ি হলো না।শান সেটা দেখে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যেতে যেতে ইশাকে উদ্দশ্য করে বলল
শানঃ তুমি কি এখনও আমাকে ভরসা করতে পারো না ইশা। (নরম শুরে)
শানের মুখ থেকে এমন কথা শুনে ইশা ফট করে শানের চোখের দিকে তাকালো আর ভাবলো
সত্যই কি আমি উনাকে ভরসা করতে পারি না।উনার চোখে তো আমি আমার জন্য এক রাশ ভালোবাসা দেখতে পাই আর সেদিনের পর থেকে উনি আর আমার উপর রাগ দেখান না।তবে কেনো আমি…..
এরই মধ্যে শান তার রুমের দরজা পা দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে খুলে ভেতরে ঢুকে ইশাকে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো। ইশা এখনও শানের দিকে তাকিয়ে আছে। শানও তার দিকে তাকিয়ে আছে। শান হাঁটু গেড়ে ইশার সামনে বসে হাতে হাত রেখে বলল
শানঃ তুই কেনো বুঝিস না ইশা আমি তোকে কতটা ভালোবাসি
ইশাঃ………..চুপ
শানঃ আচ্ছা কি করলে তুই বুঝবি আমি তোকে কতটা ভালোবাসি,
ইশাঃ……… চুপ
শানঃ আচ্ছা আমি কি তোর ভালোবাসা পাবার যোগ্য না।নাকি আমার মতন মানুষকে তুই ভালোবাসতে পারিস ন……..
আর কিছু বলতে পারলো না শান ইশা শানের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো

চলবে……..

[[[লেখায় ভুল হতে পাড়ে একটু বুঝে পড়বেন ধন্যবাদ]]]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে