মনোহরা পর্ব-১১

0
1030

#মনোহরা
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃনির্মলা

কথাটা শোনা মাএ ইশার বুকের ধুকপুক আনি শুরু হয়ে গেলো। গাঁ হাত পা সব যেনো কাজ করা বন্ধ হয়ে গেলো।তখনই রিয়া বলে উঠলো
রিয়াঃ জীজু কে না খুব সুন্দর লাগছে তাই না নিতু
নিতুঃ হুম একদম রাজকুমার এর মতন হায় আমি তো দেখে পুরো ফিদা

তখনই দরজা দিয়ে অহনা ঢুকতে ঢুকতে বলল
অহনাঃ তোদের ভালো লাগলে কি হবে হুম , ভাবির ও তো ভালো লাগতে হবে কি তাই না। ভাবি।( ইশা কে উদ্দেশ্য করে বলল)
ইশা অহনাকে ভিতরে ঢুকতে দেখে বিছানা থেকে উঠে দ্রুত পায়ে অহনার কাছে গিয়ে অহনাকে জোরিয়ে ধরে বল
ইশাঃ কেমন আছো অহনা আপু
অহনা ইশাকে জোরিয়ে ধরে অভিমানি শুরে বলল
অহনাঃ এখন তুমি আমাকে অহনা আপু বলে ডাকবে ভাবি,এতদিন বলেছো বলেছো আজ থেকে please বলো না
ইশা অহনাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
ইশাঃ তাহলে কি বলে ডাকবো
অহনাঃ কেনো নাম ধরে ডাকবে
ইশাঃ ইস তুমি তো আমার বড় তোমাকে কি আমি নাম ধরে ডাকতে পারি
অহনাঃ বয়সে বড় হলে কি হবে ভাবি। সম্পর্কে তো তোমার ছোট তাই না। আর দয়া করে আজ থেকে শান ভাইয়াকে ভাইয়া বলবে না মাকে বড় আন্টি বলবেনা বাবা কে আঙ্কেল বলবেনা। আজ থেকে তাদের মা বাবা বলবে ঠিকাছে।
ইশাঃ ঠিকাছে
অহনা ইশাকে আবারও বলে উঠলো
অহনাঃ ভাইয়া কে কি বলে ডাকবে জানো
ইশাঃ না
অহনাঃ ও গো, শুনছো গো (অহনা এটা বলতেই সবাই মিলে হেসে উঠলো)
ইশা একটা মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠলো
ইশাঃ বয়েই গেছে
অহনা হাসি থামিয়ে বলল

অহনাঃ সেটা দেখা যাবে, ওকে এখন নিচে চলো সবাই অপেক্ষা করছে
ইশাঃ হুম

তারপর ইশাকে নিয়ে সবাই মিলে স্টেজে নিয়ে গেলো।ইশা যখন স্টেজের সামনে নিয়ে গেলো।শান তখন তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো। তখনই রুসা শানের পাশে দাড়িয়ে বলে উঠলো।
রুসাঃ শান ইশা
রুসার মুখ থেকে এমন কথা শুনে শান সামনের দিকে তাকাতেই হা হয়ে গেলো।কারন আজ তার ইশা পাখিকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে।শাড়িতে যে ইশাকে এত সুন্দর লাগতে পাড়ে সেটা তার জানা ছিলো। শান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইশার দিকে।এদিকে ইশা তো সামনে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।পিছন থেকে রিয়া আর নিতু তাকে বার বার বলতে লাগলো সামনে তাকাতে। কিন্তু ইশা তাকালো না একেতো শানকে ভয় পায় তার উপর আজ একটু লজ্জাও লাগছিলো ইশার। তাই আর সে তাকালো না।কিন্তু এদিকে আমাদের শান যেনো ইশার থেকে চোখই সরাতে পারছে না।তার বন্ধু বান্ধব এটা দেখে তাদের মধ্যে হাসা হাসি করতে লাগলো। একজন তো বলেই ফেললো। তোরই বউ বন্ধু আর কত সময় ধরে তাকিয়ে থাকবি দেখার তো সারাজীবন সময় পাবি।কথাটা শুনে শান ইশার থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। এরই মধ্যেই ইশাকে শানের পাশে নিয়ে দাড় করানো হলো।অহনা ইশাকে শানের পাশে দাড় করিয়ে চলে যেতে নিলেই।ইশা অহনার হাত চেঁপে ধরে রইলো।সেটা কারও চোখে পরুক না পরুক শান সেটা দেখেছে। শান অহনার দিকে তাকি ইশারা দিয়ে ওকে চলে যেতে বলল।অহনা ইশার হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো।ঠিক তখনই শান ইশার বাম হাতটা চেপে ধরলো।ইশা সেটা অনুভব করাতেই ফট করেই শানের দিকে তাকিয়ে পড়লো।শান ইশার চোখের দিকে চোখ রেখে বলে উঠলো
শানঃ এত ভয় পাবার কিছু নেই ইশা।আমি তো আছি তোমার সাথে

শানের মুখ থেকে এমন কথা শুনে ইশা কিছুটা অবাক আর সাথে কিছুটা ভালো লাগা কাজ করলো। ইশা খেয়াল করলো শানকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে।ছেলেদের যে এতটা সুন্দর লাগতে পারে তার সেটা জানা ছিলো। আর শানের এই চোখে যেনো সে আজ এক অদ্ভুত মায়া দেখতে পেয়েছে। যার দিকে সে বেশি সময় তাকালে সে এই মায়ায় পরে যাবে ভেবেই ইশা চোখ সরিয়ে নিলো।

ইশা চোখ সরিয়ে নিয়ে ভাবতে লাগলো উনার চোখে এত মায়া কেনো আজ। কি চায় উনি আমার থেকে এমনিতে এই লোকটা সব সময় রাগ দেখিয়ে বেড়ায় আমার সাথে।আজ হঠাৎ হাত ধরলেন, এভাবে তাকালেন কেনো উনার উদ্দেশ্য কি????

অবশেষে ইশা আর শানের বিয়েটা সুন্দর ভাবে হয়ে গেলো।বিদায়ের বেলায় ইশা তার মা বাবাকে জোরিয়ে প্রচুর কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলো।সাথে ইমার মা বাবাও ইশাকে ধরে কান্না কাটি করতে লাগলো।এক মাএ মেয়েকে বিদায় দিতে ইশার মা বাবার বুক ফেঁটে যাচ্ছে। ইশার সাথে রিয়া, নিতু,অহনা, ওরাও প্রচুর কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।আর জিসানকে তো কেউ ইশার বিদায়ের সময় পাওয়া গেলো না। ইশা যাবার আগে জিসানকে খুঁজে ছিলো কিন্তু পেলো না সবাই জিসানের ফোন করলো কিন্তু ফোনটা বন্ধ আসছিলো।ইশা বুঝতে পারলো তার ভাইয়া তাকে এভাবে চলে যেতে দেখতে পারবে না তাই লুকিয়ে আছে।আসলে ভাইবোনের সম্পর্কে এমনই হয় যখন আমরা এক সাথে থাকি তখন ঝগড়া, মারামারি করতে থাকে,কিন্তু কেউ কারও থেকে একটু দূরে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারি না।

ইশাকে গাড়িতে বসিয়ে দেওয়া হলো।তারপর শান গিয়ে তার পাশে বসলো।গাড়ি চলতে আরম্ভ করলো ইশা এখনো কান্না করতে লাগলো ।ইশাকে এভাবে কান্না করতে দেখে শানের বুকের ভিতরটা ফেঁটে যাচ্ছিলো।শান ইশাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে ইশার চোখের জল মুছিয়ে দিতে লাগলো।ইশা তবুও কান্না থামালো না ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।শান ইশাকে জোরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
ইশা কান্না করতে করতে হঠাৎ করে সে বুঝতে পাড়লো শান তাকে জোরিয়ে আছে।ইশা এর আগে কখনো শানকে জোরিয়ে ধরেনি।ইশার কেমন যেনো অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো। সে ইশানের বুক থেকে শরে আসতে চাইলে।শান তাকে আরও বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল

শানঃ ইশা পাখি please তুমি আমার বুকে থাকো আমি সারাজীবন তোমাকে আমার এই বুকে রাখতে চাই।

ইশা শানের মুখ থেকে এমন কথা শুনে কিছু বললো না চুপ হয়ে গেলো।কারন সে জানে যদি সে তাকে ছাড়ানোর জন্য বলো তাহলে যদি শান রেগে যায়। তাই আর জোর করলো না।

গাড়িটা শানের বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ালো।শানের মা নতুন বউকে মিষ্টি মুখ করিয়ে বাড়িতে ঢুকালো।ইশানে নিয়ে অহনা সোজা শানের রুমে নিয়ে গেলো।রুমের দরজা খুলতেই একটা চেনা ফুলের গন্ধ ইশার নাকে আসো।অহনা রুমের লাইট অন করতেই ইশার সামনে তাকাতেই পুরো অবাক হয়ে গেলো কারন পুরো ঘর ইশার পছন্দের ফুল রজনীগন্ধা দিয়ে সাজানো হয়েছে।অহনা ইশার কাছে গিয়ে বলল
অহনাঃ কি হলো ভাবি পছন্দ হয়েছেতো, ভাইয়া শুধু মাএ তোমার জন্য তোমার পছন্দের ফুল দিয়ে রুমটা সাজিয়েছে।

অহনা আপুর থুক্কু অহনার মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমার কেনো জানি না খুব ভালো লাগলো।উনি শুধু মাএ আমার জন্য আমার পছন্দের ফুল দিয়ে সাজিয়েছে।আমি এসব ভাবছিলাম তখনই অহনা আমাকে বলল
অহনাঃ ভাবি চলো তুমি গিয়ে বিছানায় বসো ভাইয়া এখনই চলে আসবে

এই বলে অহনা আমাকে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো।আমি বিছানায় বসে উনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।আমার কেনো জানি না খুব ভয় কাজ করছিলো।এই প্রথম উনার সাথে একই রুমে তার উপর উনি যে রাগি। এমন রাগি মানুষের সাথে কি আমি থাকতে পারবো। ঠিক তখনই দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম।সামনে তাকাতেই দেখলাম উনি এসেছেন। উনি ভিতরে ডুকে দরজাটা আটকে দিলেন।উনাকে দেখতেই আমি আমার শাড়িটা খামটে ধরলাম।উনি ধীর পায়ে আমার কাছে আসতে লাগলেন আমি উনাকে এভাবে আসতে দেখে উঠে দাড়ালাম। উনি আমার সামনে এগিয়ে এসে বললেন।
শানঃ fresh হয়ে Change করে নেও
উনার মুখ থেকে আমি এমন কথা শুনে আমি উনার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম।সেটা দেখে উনি আবার ও বলে উঠলেন
শানঃ কি হলো যাও,
আমি উনাকে পাশ কাটিয়ে washroom এর দিকে যেতে নিলে উনি আবার বলে উঠলেন।
শানঃ মুখটা একটু ভালো করে ধুয়ো (এটা বলেই শান একটু মুচকি হাসলো)
উনার কথাটা যেনো আমার কেমন লাগলো তবুও কিছু না ভেবে ব্যাগ থেকে একটা নীল কালারের শাড়ি নিয়ে washroom ঢুকে গেলাম।
washroom এ ঢুকে জামাকাপড় রেখে বেসিনের দিকে গিয়ে বেসিনের আয়নার দিকে তাকাতেই দেখলাম।আমার পুরো চোখে কাজল লেগে আছে।আমাকে ভিষন বাজে লাগছে দেখতে।আমি দ্রুত কল ছেড়ে চোখ মুখ ধুতে লাগলাম।আর ভাবতে লাগলাম আমি এতসময় এভাবে সবার সামনে ঘুড়েছি সেটা ভেবেই লজ্জা লাগছিলো। কোন রকম হাত মুখ ধুয়ে চোখের কাজোল পরিষ্কার রুমে ঢুকলাম। ঢুকতেই দেখলাম উনি দাড়িয়ে আছে আমার দিকে তাকিয়ে আমি একটা ঢোক গিলে উনার থেকে চোখ সরিয়ে ড্রেসিংটেবিলের উপর গহনা গুলো রেখে ঘুরে দাড়াতেই।

চলবে……

[[[লেখায় ভুল হতে পাড়ে একটু বুঝে পড়বেন ধন্যবাদ]]]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে