মনোহরা পর্ব-০৯

0
1039

#মনোহরা
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃনির্মলা

ইশার মাঃ সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না পরিক্ষা সময় এখানে এসে পরিক্ষা দিবে সমস্যা কোথায়
ইশাঃ কিন্তু এতে মা আমার পড়াশুনার ক্ষতি হবে।
ইশার মা ইশার কাছে এসে বলল
ইশার মাঃ দেখ মা শানের মা আমার বড় বোন আমি ছোট বেলাথেকেই তার সব কথা মানি।তুই কি চাস আজ সেই কথার নরচর হোক

ইশা তার মায়ের মুখ থেকে এমন কথা শুনে আর কিছু বললনা রুমে চলে গেলো। সমানের শুক্রবার তার বিয়ে ভাবতেই তার কেমন লাগছে।কারন যে মানুষটার কাছে গেলেই তার হাত পা কাঁপে।তার সাথে কয় দিন পর থেকে একই ছাদের নিচে থাকতে হবে।কি করে থাকবে সে ভেবেই পাচ্ছে না। তখনই জিসান তার রুমে এলো দেখলো ইশা জানালার পাশে দাড়িয়ে রয়েছে।জিসান আসতে আসতে ইশার কাছে গিয়ে দাড়ালো।ইশার আড় চোখে জিসান দেখে শান্ত গলায় বলল
ইশাঃ কি হলো ভাইয়া তুমি এখানে গেইম খেলা নেই
জিসানঃকেনো আমি কি আমার ছোট বোনের কাছে আসতে পারি না
ইশা জিসান এর দিকে তাকিয়ে বলল
ইশাঃ না আমি তা বলিনি
বলেই ইশা চুপ হয়ে গেলো।জিসান ইশাকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠলো।
জিসানঃ মন খারাপ
ইশা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। সেটা দেখে জিসান বলে উঠলো
জিসানঃ বিয়ের কথা শুনে, শোন তুই যদি চাস তাহলে আমি একবার শান এর সাথে কথা বলতে পারি
ইশা জিসানের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
ইশাঃ তার কোন দরকার নেই ভাইয়া আমি রাজি আমার কোন সমস্যা নেই
জিসানঃ সত্যই বলছিস
ইশাঃ হুম
জিসান ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
জিসানঃ শান খুব ভালো ছেলে ইশা ও তোকে ভালো রাখবে দেখিস
ইশা শুধু হাসকা হাসি দিলো

দেখতে দেখতে গায়ে হলুদের দিন চলে আসলো। বাড়ি ভর্তি মেহমান ভরা।ইশাকে গায়ে হলুদের শাড়ি পড়িয়ে রাখা হয়েছে একটু পরেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।ইশা তেমন কোন সাজে নি ইশা বরাবরই এ রকম সাজগোজ করতে মোটেও পছন্দ করে না। তবুও তার কাজিনরা মিলে জোর করে একটু কাজোল আর লিপিস্টিক দিয়ে দিয়েছে।

এদিকে শান আজ একটা গাড়ো হলুদ রঙের একটা পাঞ্জাবি পড়েছে, সিল্কি চুল, হাতে হাত ঘড়ি, দেখতে পুরো তাকে হিরোদের মতন লাগছে। আয়নার দিকে তাকিয়ে শান তার পাঞ্জাবি হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল
শানঃআর মাএ ২৪ ঘন্টা ইশা পাখি, এরপর থেকে তোমাকে আমার কাছে সারাজীবন থাকতে হবে,কাল রেড়ি থেকো আমি আসছি। (বলেই ডেভিল মার্কা হাসি দিলো)
এরই মধ্যে শানের দরজায় নক পড়লো। শান দ্রুত পায়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। খুলতে দেখলো রুসা আর অহনা দাড়িয়ে আছে।অহনা তার ভাইয়াকে দেখে গালে হাত দিয়ে বলে উঠলো
অহনাঃ wow ভাইয়া তোমাকে তো খুব সুন্দর একদম হিরোদের মতন লাগছে তাইনা রুসা আপু (রুসার দিকে তাকিয়ে)
রুসা একটু হালকা হেসে বলল
রুসাঃ হুম ভালো লাগছে
শান শুধু মুচকি হাসলো ওদের কথায় তখনই অহনা বলে উঠলো
অহনাঃ ভাইয়া এবার চলো সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে নিচে।
শানঃ হুম চল
এই বলে শান অহনা,আর রুসা নিচে দিকে গেলো। এই ফাঁকে অহনা জিসান কে কল করলো।
জিসান সোফায় বসে বসে গেইম খেলছিলো।তখনই অহনার ফোন আসলো অহনার ফোন আসতেই জিসান উঠে দাড়ালো। তারপর ফোনটা রিসিভ করে বলল
জিসানঃ দিলেতো খেলাটা নষ্ট করে
অহনা অবাক হয়ে বলল
অহনাঃ মানে!!!!
জিসানঃ মানে!!! যাক রাখো ওসব কথা কেনো ফোন করেছো জানোইতো বাড়িতে কত লোক
অহনাঃ এটা তো আমার বলার কথা তুমি ছেলে হয়ে এটা বলছো
জিসান এক কোনায় গিয়ে বলল
জিসানঃ তো কি করবো হুম তুমি তো জানো আমাদের বাড়িতে কত লোক কেউ যদি একবার টের পেয় যায় তোমার সাথে আমার
অহনাঃ এহ,,,,,,এত ভাবো কেনো হুম আর সব সময় মেয়েদের মতন করো কেনো আমাদের বাড়িতে লোকজন নেই নাকি।
জিসানঃ আচ্ছা ঠিকাছে কেনো ফোন করেছো সেটা তো বল
অহনা জিভে একটা কামড় দিয়ে বলল
অহনাঃ ও হ্যাঁ দেখছো ভুলে গেছি আমি।
তখনই জিসান অহনাকে টিটকারি মেরে বলল
জিসানঃ সব সময় ঝগড়াটে একটা ভাব নিয়ে থাকলে তো সবই ভূলে যাবে।
অহনাঃএই তোমার বাজে কথা বন্ধ করে তো আর শোন
জিসানঃ জি বলেন ম্যাডাম শুনি
অহনাঃ বলছি যে ইশা ভাবির হলুদ হয়ে গেছে
জিসানঃ না এখনও হয় নি একটু পরেই শুরু হয়ে যাবে
অহনাঃ ও আচ্ছা ভালোই হয়েছে শোন না তুমি এক কাজ করো ভাইয়ার ফোনে একটা ভিডিও কল করো
জিসানঃ কেনো বলো তো
অহনাঃ আহ্ কিছু বোঝনা তুমি, তোমাকে কি সব বুঝিয়ে বলতে হবে, আরে বাবা দুজনের আলাদা জায়গায় গায়ে হলুদ হচ্ছে,তাই না
জিসানঃ হুম তো এটাই তো হয় ছেলেদের বাড়িতে ছেলের গায়ে হলুদ হয় আর মেয়েদের বাড়িতে মেয়ের তো।

অহনাঃ হায় আল্লাহ দুই ভাইবোনই এক রকম আল্লাহ তুমি এই দুই ভাইবোনকে বোঝার ক্ষমতা আমাদের দুই ভাইবোনকে দেও
জিসানঃ কি!!!
অহনাঃ কিছু না তোমাকে যেটা বলছি সেটা করো ভাইয়ার ফোনে কল দেও।যাতে ভাইয়া
আর ভাবি দুজন দুজনকে গায়ে হলুদের সময় দেখতে পারে
জিসানঃ ঠিকাছে
অহনাঃ শোন এখনই না ৫ মিনিট পর দিবা আর হ্যাঁ দয়া করে আবার গেইম খেলতে বসে যেও না। তাহলে কিন্তু আমি কাল এসে তোমার গলা চেঁপে ধরবো মনে রেখো
জিসানঃ হুম ঠিকাছে মহা রানি এখন রাখি আপনার ভাইকেও তো ফোন করতে হবে নাকি
অহনাঃ হুম bye
জিসানঃbye
ফোন কেঁটে দিয়েই অহনা নিচে চলে গেলো।শানকে স্টেজে বসিয়ে দেওয়া হলো।শানের পাশে গিয়ে রুসা বসলো।হঠাৎ করেই শানের ফোনে কল আসলো।শান ফোনের স্ক্রীন দিকে তাকাতেই দেখলো জিসান ভিডিও কল দিয়েছে। শান সাথে সাথে রিসিভ করলো আর বলল
শানঃ hey
জিসানঃ hi
জিসান শানকে চারপাশে বিয়েতে সাজানো হয়েছে সব ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে।শান সেটা দেখে বলে উঠলো
শানঃ শালা সাহেব আপনি কি এসব দেখানোর জন্য ফোন করছে
জিসানঃ না ঠিক তা না তবে আপনি কি কাউকে দেখতে চাচ্ছেন
শানঃ আপনার কি মনে হয়
জিসানঃ মনে হয় তো চাচ্ছেন
শান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল
শানঃ ইশা কোথায়
জিসানঃ এই তো রিয়া আর নিতু গেলো ওকে আনতে একটু পরেই গায়ে হলুদ শুরু হবে তো
শানঃ ও আচ্ছা

তখনই পাশ থেকে রিয়া আর নিতু চিল্লাতে চিল্লাতে দৌড়ে এলো জিসানের কাছে আর বলল
রিয়াঃ ভাইয়া!!!!! (হাঁপাতে হাঁপাতে)
জিসানঃ কি হয়েছে এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেনো
নিতুঃ আপুনি ঘরে নেই
জিসানঃ মানে!!! কি বলছিস এসব কোথায় গেছে ইশা
ফোনের ওপাশ থেকে শান সবটা শুনতে পেয়ে চিৎকার করে উঠে দাড়িয়ে
শানঃ what???? জিসান ইশা কোথায় গেছে
জিসানঃ শান দাড়া তুই অস্থির হয়ে পড়িস না আমি আগে ব্যাপারটা জেনে নেই
এদিকে শানের এভাবে চিৎকার শুনে সবাই শানের কাছে এসে বলতে লাগলো
শানের মাঃ কি হয়েছে
শানের বাবাঃ কি হয়েছে শান
রুমাঃ শান কি হয়েছে তোর
শানের এখন মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাবে শান তার ফোনের দিকে তাকিয়ে রাগি দৃষ্টিতে বলল
শানঃ জিসান!!!!
এরই মধ্যে ফোনের লাইনটা নেটওয়ার্ক সমস্যার কারনে কেটে গেলো।

ওদিকে
জিসানঃ কি বলছিস তোরা ইশা ঘরে নেই মানে
নিতুঃ নেই তো ভাইয়া
জিসানঃ washroom এ দেখেছিস।
রিয়াঃ সব জায়গায় দেখেছি ভাইয়া কোথাও পাই নি।
জিসানঃ ওর রুমে কেউ ছিলো না
রিয়াঃ ছিলো তো ওর এক বান্ধবী কি যেনো নাম
মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল তখন পাশ থেকো নিতু বলল
নিতুঃ নীলা!!!! মেয়েটার নাম নীলা আপুর বান্ধবী। ও তো ঘরে নেই ভাইয়া।
জিসানের এবার মাথা খারাপ হয়ে যাবার মতন অবস্থা। জিসান দৌড়ে তার মা আর বাবার কাছে গেলো।সাথে রিয়া আর নিতুও।জিসান দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে তার মা বাবাকে ডাকতে আরম্ভ করলো
জিসানঃ মা, বাবা কোথায় তোমরা
ইশার মা রান্নাঘর থেকে হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে আসতে আসতে বলল
ইশার মাঃ কি হয়েছে জিসান এভাবে ডাকছিস কেনো।তোর বাবা বাড়িতে নেই একটু বেড়িয়েছে।
জিসানঃ মা ইশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে
কথাটা শোনা মাএ ইশার মা দ্রুত পায়ে ছেলের কাছে এসে বলল
ইশার মাঃ কি যা-তা বলচিস জিসান গেইম না কি খেলিস সেটা খেলতে খেলতে তোর মাথা গেলো।
পাশ থেকে রিয়া বলে উঠলো
রিয়াঃনা মামি জিসান ভাই ভূল কিছু বলছে নি সত্যই আপুনি নেই।
নিতুঃ সত্যই মামি
ইশার মার এখন এসব কথা শুনে মাথা ঘুরতে লাগলো।তার যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না ইশা এরকম কাজ করতে পারে।

এদিকে

এদিকে শান জিসানের ফোনে বার বার কল করছে কিন্তু লাগছে না।রাগে শানে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে তার মনে হচ্ছে সব কিছু ভেঙ্গে ফেলতে। মনে তার হাজারও আশঙ্কা বাসা বাঁধছে। এদিকে শানের পরিবার আত্মীয় স্বজনরা শানের সামনে এসে বিভিন্ন প্রশ্ন ছুঁড়ে মারছে। শান তার মাথার চেঁপে ধরে জোরে চিৎকার করে বলল
শানঃ ইশাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

কথাটা শোনা মাএ কিছু সময়ের জন্য পুরো বাড়ি থ মেরে গেলো।

চলবে……………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে