মনোহরা পর্ব-০৭

0
1064

#মনোহরা
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃনির্মলা

এই বলে গটগট করে নিজের রুমে চলে গেলো
শানের পিছন পিছন রুসা বাড়িতে ঢুকলো।শানের মা শানের পিছনে যেতে নিলেই রুসা বলে উঠলো
রুসাঃ আন্টি!!!!
শানের মা পিছনের ফিরলো।তখন রুসা শানের মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল
রুসাঃ আন্টি শানকে একা থাকতে দিন সারা রাত Drive করছে।
অহনাঃ কি বলছো তুমি এসব রুসা আপু
রুসাঃ হুম ঠিক বলছি, I think he needs rest now
অহনাঃ মা রুসা আপু ঠিক বলেছে এ বিষয় নিয়ে ভাইয়ার সাথে পরে কথা বলো
শানের মাঃ হুম তোমরা ঠিক বলেছো, রুসা যাও হাত মুখ ধুয়ে নিচে আসো আমি তোমাকে খাবার দিচ্ছি।
রুসাঃ না আন্টি আমি আর এখন কিছু খাবো না,
শানের মাঃ সেকি কেনো
রুসাঃ আসলে আন্টি সারা রাত না ঘুমানোর কারনে মাথাটা ভিষন ধরেছে। তো এখন গিয়ে rest করবো
অহনাঃ কফি দিবো
রুসাঃ না অহনা, আন্টি আসছি
শানের মাঃ ঠিকাছে

এদিকে………

আমাকে আঙ্কেল দিয়ে দুপুরে খেয়ে উনি চলে গেলেন।আমি মায়ের রুমের গিয়ে তার ফোনটা নিয়ে আমার রুমে গিয়ে দরজা আটকে অহনা আপুকে ফোন করলাম।দুইবার রিং বাজতেই অহনা আপু ফোন ধরলো
অহনাঃ hello!!
ইশাঃ hello!!!
অহনাঃ হুম ভাবি কখন পৌঁছালে
ইশাঃ কয়েক ঘন্টা আগে
অহনাঃ ও বাবা কোথায়
ইশাঃ আঙ্কেল একটু আগে চলে গেছেন।আচ্ছা শোন
অহনাঃ হুম বলো
ইশাঃ শান ভাইয়া কি বাড়ি ফিরেছে
অহনাঃ হুম ফিরেছে, তবে জানো তো
ইশাঃ কি?????
অহনাঃ সেই কখন রুমে গেছে এখনও বেড় হয় নি
ইশা তার পাশে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো দুপুর ২ঃ৪০ বাজে। সেটা দেখে ইশা বলে উঠলো
ইশাঃ তার মানে তো উনি দুপুরে খান নি
অহনাঃ দুপুরে কি বলছো সকাল থেকেই না খাওয়া। ভাবি একটা কথা বলি কিছু মনে করো না।আমার ভাইয়াটা খুব রাগি আমরা সবাই জানি সেটা, তবে ওকে সামলানো যেমন আমাদের দায়িত্ব তেমনই তোমার।তোমার তো বিয়ে হয়েছে ভাইয়ার সাথে সে যে বয়সেই হোক না কেনো হয়েছে তো। আমার মনে হয় তুমিই পারবে ভাইয়াকে সমলাতে।
ইশাঃ……………..
অহনাঃ কি হলো কিছু বলছো না যে
ইশাঃ আমি
অহনাঃ হুম,,,,, তুমি ভাইয়াকে কল করো তোমাদের মধ্যে সব দূরত্ব কাটিয়ে নতুন করে শুরু করো দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। ভেবে দেখো
ইশাঃ হুম,,,
অহনাঃ আচ্ছা রাখছি

এই বলে অহনা ফোনটা কেঁটে দিলো। ইশা ফোনটা বিছানায় রেখে মেঝেতে বসে পড়লো।

ওদিকে………….
শান শাওয়ার এর নিচে প্রায় ১ ঘন্টা ধরে দাড়িয়ে আছে। নিজের সমস্ত রাগ যেনো আজ এই পানির সাথে ধুয়ে দিতে চাচ্ছে।কিন্তু দীর্ঘ দুই বছরের রাগ কি এভাবে দূর করা যায়। ভেবেই সে দেয়ালে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে আঘার্ত করলো।শানের হাত ফেঁটে রক্ত ঝরতে লাগলো।তারপর শান জোরে চিৎকার করে বলতে লাগলো
শানঃ কেনো ইশা কেনো তুই কি আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না। ভেবেছিলাম লন্ডন থেকে ফিরে এসে হয়তো তোর আর আমার মাঝের দূরত্বটা আস্তে আস্তে কমাবো।তুই হয়তো আমার রাগ জেদ টাকে কমাতে পারবি কিন্তু না। তুই কি করলি সব সময় আমার থেকে দূরে থাকি।আমার কাছে ঘেঁষতে চাস না।আমার তোমাকে চাই ইশা, কই তুমি তো একবারও এলিনা আমার কাছে।আমি কাল রাত থেকে বাড়ি নেই। কই তুমি তো একটা কল ও করলি না আমি কোথায় আছি কিভাবে আছি।

আর কিছু বলতে পারলো না শান তার গলা ধরে আসছে।সে জানে ছেলেদের কান্না করতে নেই।কিন্তু সে তার আবেগ গুলো গত দুই বছর ধরে চাপিয়ে রেখতে আর পারছে না।

ছোট বেলা থেকেই শানের ইশাকে ভালো লাগতো অন্য কাজিনদের যেমন ভাবে দেখতো ইশাকে তেমন দেখতো না। ইশা কোন ভূল কাজ করলে তাকে ধমকাতো বক তো।যার ফলে ইশা কাজিনদের মধ্যে সব থেকে ভয় শানকে পেতো।ছোট বেলায় শান যখন তাদের বাড়ি যেতো ইশা শানে থেকে দূরে থাকত ভাবতো এই বুজি তাকে বকা দিবে। পরে ওরা আস্তে আস্তে বড় হলো।শানের এমন রাগি সভাবের জন্য ইশা তেমন একটা শানদের বাড়ি ও যেতো না।

শান শাওয়ার শেষ করে রুমে আসলো। তারপর
গেঞ্জি আর টাউজার পড়ে নিয়ে রুমের দরজার দিকে যাবে ঠিক তখন দরজায় কেউ নক করলো।শান ভাবলো হয় তো ইশা এসেছে। সে দ্রুত পায়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে দিতেই দেখলো। তার মা দাড়ানো হাতে তার খবাবারের প্লেট নিয়ে ।শান তার মাকে দেখে হতাশ হয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই শানের মা বলে উঠলো
শানের মাঃ দাড়া শান কোথায় যাচ্ছি
শান গম্ভীর কন্ঠে উওর দিলো
শানঃ ছাঁদে
শানের মাঃ কোথাও যাবি না তুই
শানঃ মা please আমাকে একা থাকতে দেও
শানের মা ছেলের মুখ থেকে এমন কথা শুনে রেগে গিয়ে বলল
শানের মাঃ অনেক হয়েছে শান আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না।সকাল থেকে এই পর্যন্ত একাই তো ছিলিস।আয় এদিকে আয়

শানের মা ছেলের হাত ধরে রুমের মধ্যে নিয়ে গেলো।তারপর সোফায় বসিয়ে নিজ হাতে ছেলেকে খাইয়ে দিতে লাগলো। শান খাবার মাঝে বলে উঠলো
শানঃ মা ইশা কি আমার উপর খুব রাগ করেছে। আমার কি উচিত ইশাকে sorry বলা।

শানের মা তার ছেলের মুখ থেকে এমন কথা শুনে থমকে গেলেন।ঠিক তখনই রুসা শানের রুমে প্রবেশ করলো।শানের মাকে আর শানকে এক সাথে দেখে রুসা দরজার কাছে দাড়িয়ে রইলো।তখন শানের মা বলে উঠলেন
শানের মাঃ ইশা চলে গেছে শান
শান উঠে দাড়িয়ে বলে উঠলো
শানঃ মানে!!!
শানের মাঃ তোর বাবা ইশাকে তাদের বাড়িতে দিতে গেছে।আর বলেছে যতদিন তুই তোর রাগ কমাতে না পারবি ঠিক ততদিন ইশা ও বাড়িতেই থাকবে
শান এ কথা শুনে রুমে বাহিরে যাবার জন্য পা বাড়াতেই।দেখলো রুসা তার রুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। রুসা শানকে দেখে বলে উঠলো
রুসাঃ শান তুই
আর কিছু বলতে পারলো না রুসা শান রুসাকে পাশ কাটিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।শান যাবার পর শানের মা রুসাকে দেখে রুসার কাছে এগিয়ে এসে বলল
শানের মাঃ রুসা মা তুমি ওকে একটু বুঝাও।ওহো তুমি হয় তো সবটা জানো না মা।
রুসাঃ আমি সব জানি আন্টি, কালই শান সবটা বলেছে।চিন্তা করবেন না আন্টি আমি দেখছি।
এই বলে রুসা শানের পিছনে পিছনে গেলো।
দেখলো শান ছাদের দিকে যাচ্ছে রুসা সেটা দেখে নিচে গিয়ে দুইকাপ কফি নিয়ে ছাদে গেলো
রুসা গিয়ে দেখলো শান ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।রুসা শানের পাশে দাড়িয়ে বলল
রুসাঃ change হতে হবে
কথাটা শুনে শান পাশে তাকালো দেখলো রুসা দাড়ানো শান বলে উঠলো
শানঃ মানে!!!
রুসা শানের দিকে তাকিয়ে বললো
রুসাঃ তোকে আর ইশা দুজনকে change হতে হবে
এই বলে রুসা কফির মগটা শানের দিকে বাড়িয়ে দিলো।শান মগটা নিতে নিতে গম্ভীর কন্ঠে বলল
শানঃ আমাকে না ইশাকে change হতে হবে।
রুসা কপির মগে একটা চুমুক দিয়ে বলল
রুসাঃ উহু,,,,, তোদের দুজনকে
শানঃ হুম তারপর বল
রুসাঃ দেখ তোর রাগ বেশি আর ইশাকে আমি একদিনে মানে যেটুকু সময় দেখেছি তাতে আমার মনে হলে মেয়েটা তেমন matual না।তো তোকে তোর রাগ কমাতে হবে আর ওকে Matual হতে হবে।
শানঃ হুম তারপর
রুসাঃ দেখ আমরা যেমন বন্ধুরা তোর রাগ সম্পর্কে মোটামুটি এই দুই বছরে জেনে গেছি কারন আমরা এক সাথে পড়াশুনা করছি। এক সাথে আড্ডা দিয়েছে তাই আমরা জানি কোন কথা বললে তুই রাগ করবি আর কোনটা করলে বলবি না right
শানঃ হুম right কিন্তু ও তো চলে গেছে।
রুসাঃ তো মানে তোরা যেহেতু husband wife সেহেতু তোর ওর উপরে অধিকার আছে ওকে নিয়ে আয় এ বাড়িতে।
শান রুসার কথা শুনে গভীর চিন্তায় চলে গেলো।তখনই রুসা ওকে ধাক্কা দিয়ে বলল
রুসাঃ কি হলো বুঝলি,
শানঃ হুম,, কিন্তু
রুসা শানের মাথায় গাট্টা মেরে বলল
রুসাঃ এক সাথে না থাকলে ভালোবাসাটা ওর তোর প্রতি বাড়বে কি করে হুম।
শানঃ তুই ঠিকই বলেছিস
রুসাঃ আমি সব সময়ই ঠিক বলি
কথাটা বলেই রুসার হঠাৎ শানের হাতের দিকে খেয়াল গেলো

চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে