মনোহরা পর্ব-০৬

0
1080

#মনোহরা
#পর্বঃ৬
#লেখিকাঃনির্মলা

উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দুই কদম পিছিয়ে গিয়ে বললেন
শানঃ তুই কি চাস বলতো ইশা,!!!
ইশাঃ……………….
শানঃ কি হলো বল জোরে (চিৎকার করে)
শান ভাইয়ার এমন চিৎকার শুনে আমি ভিষন ভয় পেয়ে গেলাম। আমি ফুপিয়ে জোরে কান্না করে দিলাম।
উনি সেটা দেখে নিজের মাথা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলেন।তারপর সামনে থাকা ফুলদানি টা ছুঁড়ে মারলেন আর বলেন
শানঃ বলললললল!!!!
উনার এমন চিৎকার ভাংচুর শুনে বাড়ির সবাই উনার দরজার কাছে এসে নক করতে লাগলো।আর ডাকাডাকি করতে লাগলে।
বড় আন্টিঃ শান শান দরজা খোল বাবা
আঙ্কেলঃ শান এত চিৎকার কিসে কার সাথে এভাবে কথা বলছিস দরজা খোল
তখনই অহনা তার মা বাবাকে বলে উঠলো
অহনাঃ মা ইশা ভাবি তো রুমে আসিনি
শানের বাবা মা এত সময় যে ভয়টাই পাচ্ছিলো সেটাই হলো তার শানকে দরজা খোলার জন্য বলতে লাগলো। এরই মধ্যে রুসাও তার রুম থেকে বেড়িয়ে এলো। এসে বলতে লাগলো
রুসাঃ কি হয়েছে আন্টি শান এত চিৎকার করছে কার উপরে
অহনাঃ ভাবির উপরে
রুসাঃ ভাবি মানে
শানঃ ইশা ভাবি
রুসাঃ মানে
অহনাঃ এখন মানে বলার সময় নেই আপু তোমাকে সব পরে বলবো।
সবাই এমন ডাকাডাকি শুনে শান দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। সাথে সাথে সবাই ভিতরে ঢুকলো তারপর ভেতরে ঢুকে দেখলো। ইশাকে কান্না করতে দেখে শানের বাবা শানকে একটা চর মারলো আর বলল
শানের বাবাঃ কি করেছো তুমি মেয়েটার সাথে।

শান তার বাবার কথার কোন জবাব না দিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে গেলো রুসাও শানের পিছনে গেলো

এদিকে শানের মা আর অহনা ইশার কাছে যেতেই।ইশা তার বড় আন্টিকে দেখে জোরিয়ে ধরলো আর কান্না করতে লাগলো। ইশার বড় আন্টি ইশাকে বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ কি হয়েছে ইশা, বল আমাকে শান কি করেছে।
ইশা কান্না জোরিত গলায় বলতে লাগলো
ইশাঃ আমি বাড়ি যেতে চাই আন্টি আমি এখানে থাকতে চাই না
অহনাঃ ভাবি কি হয়েছে ভাইয়া এত টা রেগে আছে কেনো
ইশাঃ আপু আমি বাড়ি যাবো।
বড় আন্টিঃ চুপ কর মা
শানের বাবা ইশাকে এভাবে কান্না করতে দেখে শানের মাকে বলে উঠলো
আঙ্কেলঃ কালই ইশাকে ওদের বাড়ি দিয়ে আসবো।থাকুক তোমার ছেলে একাই। ভেবেছিলাম ইশার পরিক্ষা শেষ হলে আবার ওদের বিয়ে দিবো ধুমধাম করে। তারপর এবাড়িতে একেবারে ইশা মাকে নিয়ে আসবো। কিন্তু না সেটা আর করবো না তোমার ছেলে একা থাকুক
বড় আন্টিঃ আহ্ তুমি চুপ করো। অহনা তোর ভাবিকে নিয়ে যা
অহনাঃহুম, চলো ভাবি
ইশা আর অহনার রুমের দিকে পা বড়াতেই শানের বাবা বলে উঠলো
শানের বাবাঃতুমি এখনও আমাকে চুপ করতে বলবে শানের মা। তোমার ছেলের এত রাগের জন্য যদি কোন দূর্ঘটনা হয়ে যেতো তখন।
শানের মাঃ এসব কিছুই হতো না শান ইশাকে ভালোবাসে।
আমি বড় আন্টি মুখ থেকে এমন কথা শুনে দাড়িয়ে গেলাম। আর সেখানে দাড়িয়ে পড়ে মনে মনে বলতে লাগলাম না বড় আন্টি উনি আমাকে ভালোবাসে না।কখনও ভালোবাসি এ কথা বলেনি।শুধু রাগ আর জেদ দেখিছে
অহনাঃ কি হলো ভাবি দাড়িয়ে গেলে কেনো
অহনা আপুর ডাকে আমার ভাবনায় ছেঁদ পড়লো আমি চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে বলতে লাগলাম
ইশাঃ কিছু না
অহনাঃ হুম চলো
আমি অহনা আপুর সাথে তার রুমে চলে গেলাম

ওদিকে………………………
রুসাঃ What are you doing? Drive slowly shan.
শান রুসার কোন কথা না শুনে আরও জোরে গাড়ি চালাতে লাগলো।রুসা বলে উঠলো
রুসাঃ What happened, কিছু তো বল ওই মেয়েটার সাথে তুই রুমের মধ্যে কি করছিলি।

শান হঠাৎ করে গাড়িটা থামিয়ে দিলো।তারপর গাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। রুসা শানকে এভাবে বেড়িয়ে যেতে দেখে। সে ও বেড়িয়ে গেলো।দেখলো শান একটা ব্রিজ এর উপর গাড়ি দাড় করিয়েছে। শান ব্রিজের রেলিং এর সাইডে গিয়ে জোরে চিৎকার করে কান্না করে দিলো। শান কান্না করতে করতে ধপ করে নিচে বসে পড়লো।রুসা সেটা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো।রুসা দৌড়ে গেলো শানের কাছে।শান কে এভাবে কান্না করতে দেখে ওর বুকের মধ্যে মোচোর দিয়ে উঠলো।রুসা শান এর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর গালে হাত দিয়ে বলল
রুসাঃ কি হয়েছে শান এভাবে কান্না করছিস কেনো
শান……………..
রুসাঃ কি হলো শান বল
শান কান্না জোরিত গলায় বলল
শানঃ আমি ওকে বড্ড ভালোবাসি রুসা, কিন্তু আমার মনে হয় ও আমাকে ভালোবাসে না।
রুসা জানে শান একটা মেয়েকে ভালোবাসে। এর আগে লন্ডন এ থাকা কালিন শান রুসাকে বলেছে।তবে নাম বলেনি
রুসাঃ কাকে
শানঃ ইশাকে
রুসাঃ ইশাকে!!!!!
শানঃ হ্যাঁ, তুই জানিস আজ আবার আমি ইশার সাথে খারাপ ব্যবহার করে এলাম। মেয়েটা এমনিতেও আমার এই রাগটাকে বেশি ভয় পায়। আর আজ আমি ছি!!!
শানের মুখ থেকে ইশাকে ভালোবাসার কথাটা শুনে রুসার বুকটা ফেঁটে যেতে লাগলো তবুও নিজেকে সামনে বললো
রুসাঃ নিজেকে শান্ত কর শান
শানঃ কিভাবে শান্ত হবো বল তুই, বাবা ও আজ আমার উপর রাগ করেছে তুই তো দেখলি।উনি কোনদিনও আমার গায়ে হাত তোলেনি কিন্তু আজ( বলেই কান্না করলো)
রুসাঃ relaxed
শান আবারও বলে উঠলো
শানঃ জানিস রুসা,,, গত দুই বছর ও আমার সাথে কোন যোগাযোগ রাখে নি। প্রতি anniversary আমি নিজের হাতে কেক বানিয়ে পালন করতাম। ওকে দেখাতে খুব ইচ্ছা করতো কিন্তু ও, ও আমার সাথে কথা তো দূরে থাক আমি যখনই ওর মা বা ভাইয়াকে কল করতাম কোন না কোন বাহানা দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতো।
রুসাঃanniversary মানে!!!! তোদের বিয়ে…
শান নিজের চোখ মুছতে মুছতে বলল
শানঃ হ্যাঁ আমি লন্ডনে যাবার আগে।

এদিকে………………
ইশার চোখে যেনো ঘুমই আসছেনা।পাশ ফিরতেই দেখলো অহনা ঘুমিয়ে আছে। ইশা বিছানা থেকে উঠে washroom রুমের দিকে পা বাড়ালো। ইশা বেসিনের সামনে গিয়ে কল ছেড়ে চোখ মুখে পানি ছিঁটিয়ে তারপর আবার রুমে ঢুকলো।কিন্তু তার চোখে তো ঘুম নেই।কারন শান যে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছে । কোথায় গেছে এক রাশ চিন্তা এসে তার মাথার মধ্যে ঘুড়ছে। যতই ইশা শানকে ভয় পাক না কেনো। মনের মধ্যে শানের জন্য তার যে একটা অন্য রকম ভালোবাসা আছে সেটা সে কখনও বলতে পারে নি।কারন শানের সামনে গেলেই ইশা কেমন জানি হয়ে যায় সেটা সে নিজেও জানে না। এসব ভাবতে ভাবতে ইশা বিছানায় শুয়ে পড়লো কখন ঘুমিয়ে গেলো সে নিজেও বুঝতে পাড়লো না

সকালে……….
খুব সকালে শানের বাবা ইশাকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো ইশাদের বাড়ির উদ্দেশ্য। ইশা রেড়ি হয়ে নিচে নামার সময় শানের ঘরের দিকে এক বার তাকালো দেখলো শানের রুমের দরজা দেওয়া। তাই হতাশ হয়ে চলে গেলো।

গাড়িতে বসে জানালার বাহিরে দিকে তাকিয়ে আমি শুধু উনার কথাই ভাবছিলাম।ঠিক তখনই পাশ থেকে আঙ্কেল বলে উঠলো
আঙ্কেলঃ ইশা মা!!!!
আঙ্কেলের ডাক শুনে আমি তার দিকে তাকালাম উনি আবারও বলে উঠলেন
আঙ্কেলঃ তোমাকে নতুন করে শানের ব্যাপারে কিছু বলার নেই আমার। যদি পারো তাহলে ওকে ক্ষমা করে দিও মা। আর হ্যাঁ আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি।যতদিন না ওর রাগ, জেদ কমাতে পারবে। তোমাকে আর এ বাড়িতে নিয়ে আসবো না।যেদিন ও এসব কমাতে পারবে সেদিন ধুমধাম করে এবাড়ির বউ করে নিয়ে আসবো।
আঙ্কেল আমার মাথায় হাত রেখে কথা গুলো বললো।আর আমি শুধু চুপচাপ শুনলাম

এদিকে সারা রাত বাসায় ছেলে ফেরিনি দেখে শানের মা অস্তি হয়ে গেলো। বার বার শানের ফোনে কল দিতে লাগলো।সে ভাবতেও পারে নি ছেলেটা যেদিন আসবে এরকম কান্ড বাদিয়ে ফেলবে তাহলে সে ইশাকে এ বাড়িতে আনতো না। এক বারে নিয়ে আসতো আবার বিয়ে দিয়ে কারন যখন ওদের বিয়ে হয় তখন ইশার বয়সে খুব ছোট ছিলো। শুধু মাএ তার ছেলে বিদেশে যাবে বলে এক প্রকার ইশার মা মানে তার বোনকে জোর করে ওদের বিয়েটা দেবার জন্য।কারন ইশা যখন ছোট তখন তার বোনকে বলে রেখেছে ইশা আর শান বিয়ে যোগ্য হলে তাদের বিয়ে দিবে। কিন্তু পরিস্থিতি কারনে বিয়েটা তার আগে দিতে হয়েছে।

এরই মধ্যে শান গাড়ি এসে বাড়িতে ঢুকলো শানের মা দ্রুত পায়ে দরজার কাছে এগিয়ে গেলো।অহনাও নিচে নেমে এলো গাড়ির শব্দ পেয়ে। শান গাড়ি থেকে নেমে দরজার কাছে আসতেই তার মাকে দেখলো।শানের মা দেখলো তার ছেলের নাক মুখ ফোলা।মাথার চুল উসকো খুসকো।ছেলেকে দেখে এগিয়ে গিয়ে বলল
শানের মাঃ কি হলো শান সারা রাতে কোথায় ছিলিস তুই
শান গম্ভীর কন্ঠে উওর দিলো
শানঃবাহিরে!!!
এই বলে গটগট করে নিজের রুমে চলে গেলো
শানের পিছ পিছন রুসা বাড়িতে ঢুকলো

চলবে……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে