তুমিময় নেশার আসক্তি পর্ব-০৬

0
1222

#তুমিময়_নেশার_আসক্তি
#আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_৬

–দোস্ত আমি নাহ অনেক এক্সাইটেড।
–কীসের জন্য।
–আরে নবীন বরণের জন্য। আমি তোহ ডিসাইডও করে ফেলসি আমি অনুষ্ঠানের দিন কী পড়বো। এক কাজ করি তুই আর আমি মেচিং মেচিং পড়ি। কী বলস?
–আমি বুঝি না এগুলো নিয়ে এতো এক্সাইটেড হওয়ার কী আছে। কিছুটা বিরক্তি নিয়ে কথাটি বললো নেশা। কিন্তু রিমঝিম ওর কথাকে পাত্তা দিলো নাহ। সে আবার বললো-
–দোস্ত চল আমরা শাড়ি পড়ি। উফফ! আমিও কী পাগলের মতো প্রশ্ন করছি। আমরা তোহ শাড়িই পড়বো।
–বোন থাম! তুই শাড়ি পড়বি নাকি লেহেঙ্গা পড়বি এটা তোর ইচ্ছা কিন্তু আমাকে এসবের মধ্যে টানিছ নাহ৷ এই শাড়ি-টারি আমার দ্বারা হ্যান্ডেল হবে না। কয়বার যে উষ্ঠা খাবো আল্লাহই জানে।
–তুই কী জানোস তুই কী বলতাসোস। বাঙালী মেয়ে হয়ে শাড়ি পছন্দ করিস না। যদি শাড়ির অপমান করার জন্য শাস্তি থাকতো তাহলে তুই এখন ফাঁসিতে ঝুলতি।
–ধুর বিরক্ত করিস না। ভাল্লাগছেনা।
–অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছি তুই সব কিছুর উপর বিরক্ত। কিছু কী হয়েছে? তুই ভাইয়ার কাছে সরি বলতে গিয়েছিলি তখন কি কিছু হয়েছে?
–না কিছুই হয় নাই। তুই বেশি বেশি ভাবছিস।
–দেখ সত্যি সত্যি বল। দেখ আমি জানি আমাদের দেখা হয়েছে আজ বেশি দিন হয় নাই কিনতু আমি তোকে এতটুকু বুঝি যে কিসে তোর মন খারাপ আর কিসে তুই বিরক্ত। অতঃপর নেশা একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো আর লাইব্রেরিতে ঘটা ঘটনা রিমঝিমকে বলে দিলো।

অপরদিকে ফায়াজ নবীন বরনে কী কী করবে তা নিয়ে আলোচনার এক সভা বসিয়েছে। সবাই তাতে নিজের মতামত পেশ করছে। তারা ভাবছে এবারের অনুষ্ঠানে নবীনদের উপরও কিছু দায়িত্ব দিবে। একটু আগে আলোচনা শেষ হয়েছে এখন যে যার মতো বাসায় যাবে। এমন সময় রিখিয়া এসে ফায়াজের সামনে দাঁড়ায়। ফায়াজ এক ভ্রু উঁচিয়ে রিখিয়ার দিকে তাকায়। রিখিয়া কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বলে উঠলো-
–ফা..ফা..ফায়াজ।
–হঠাৎ ভাইয়া থেকে ফায়াজ। তোমার তোহ দেখি অনেক উন্নতি হচ্ছে।
–আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম কী..। এটুকু বলে রিখিয়া থামলো। অতঃপর জোড়ে একটা নিঃশ্বাস নিলো। তারপর বলে ফেললো-
–আমি তোমাকে ভালোবাসি ফায়াজ। ফায়াজ এই কথা শুনে জোরে জোরে হেঁসে দিলো। এমন ভাবে হাসছে যেনো কেউ তাকে কোনো জোক শোনাচ্ছ।
–ফায়াজ তুমি হাসছো কেনো? এভাবে হেসে তুমি আমার ফিলিংসের মজা উড়াচ্ছ।
–ওহ রেলি রিখিয়া! তুমি আদৌও বুঝো ফিলিংস কী? তুমি যদি কারো ফিলিংস বুঝতে তাহলে এতোগুলো ছেলের ফিলিংস নিয়ে কখনো খেলতে নাহ। তোমার জন্য কতগুলো ছেলে সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে সেই ধ্যান তোমার আছে। কাপড়ের মতো তুমি ছেলে বদলাও। যে ছেলের কাছে টাকা বেশি থাকে তার কাছে চলে যাও। আমাকে তোহ তুমি আগে দেখতেই পারতে নাহ। যখন শুনলে আমি তোমাদের ভার্সিটির ভিপি আমার বাবা একজন সফল বিজনেস ম্যান তার একমাত্র উত্তরাধিকার আমি সেই সুর সুর করে আমার সাথে ভাব জমাতে আসলে। নেহাৎ তুমি আমার বন্ধুর বোন বলে বেঁচে আছো নাহলে তোমার মতো মেয়েকে আমি কবেই মেরে ফেলতাম। বিরক্তি নিয়ে কথাটি বললো ফায়াজ।
ফায়াজের মুখে এসব তিক্ত কথা সে হজম করতে পারছে না যার ফলে সে কান্না করে দিলো।
— প্লিজ ফায়াজ এমন করো নাহ। আমি তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। ফায়াজ বিরক্তি নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল আর রিখিয়া কান্না করে দিল।

–তুই এসব কী বলছিস নেশা? সত্যি বল দিনের বেলা রাতের স্বপ্ন দেখছিলি নাকি? আশ্চর্য হয়ে কথাটি বললো রিমঝিম।
–আমি এখন তোর সাথে মজা করার একদম মুডে নাই। আর এখন চলতো আমার একদম ভালো লাগছে নাহ।
–হুম চল।

অপরদিকে ফায়াজ ফোনে কথা বলতে বলতে বাসার মধ্যে প্রবেশ করলো। হঠাৎ কিছুর শব্দ শুনে সে হকচকিয়ে গেল। শব্দের উৎসকে ফলো করতে যেয়ে সে দেখলো তার বাবা শরীরে এ্যাপ্রোন পড়ে রাইস কুকারের সাথে যুদ্ধ করছে। অতঃপর সে রান্না ঘরের দরজার সামনে হাত ভাঁজ করে দাড়িয়ে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো-
–এখানে কী হচ্ছে?
–কিছু না। আমি তো আমার গুণধর ছেলের জন্য রান্না করছি।
–পাপা তোমাকে কতবার বলেছি তোমার এসব করার দরকার নেই তাও কেনো প্রতিদিন এসব করতে যাও। বাসায় তোহ সার্ভেন্ট আাছে।
— আমার জন্য তাড়াতাড়ি একটা বউ মা এনে দে আমি এসব করা ছেড়ে দেব। বুড়ো বয়সে একা আর ভালো লাগে নাহ। কই নাতি-নাতনিদের সাথে খেলবো তা না করে তোর মতো দামড়াকে পালতে হইতাসে।
–তোমার এই আশা খুব জলদি পূরণ হবে। এই কথাটা বলে ফায়াজ বাঁকা হেসে সেখান থেকে চলে গেলো। আর রায়হান চৌধুরী হতবাক হয়ে চেয়ে রইলেন তার ছেলের যাওয়ার দিকে অতঃপর মনে মনে বললেন( এটা কী সত্যি আমার ছেলে। বিয়ের কথা বললে যে ছেলে ক্ষেপে যেত সে ছেলে বলছে আমার আশা জলদি পূরণ হবে। ছেলে প্রেমে-টেমে পড়ে নিতো? খবর নিতে হবে।)

নেশা ভার্সিটি থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে সোফার উপর বসলো, ফোনটা বের করলো ভাইকে ফোন দেওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দিলো। এরই মধ্যে হোস্টেলের গার্ড তাকে ফোন দিয়ে বললো তার নামে কে যেনো একটা ফুলের তোড়ার মতো কিছু একটা পাঠিয়েছে কিন্তু তাতে কোন ফুল ছিলো নাহ। নেশা এসব শুনে হতবাক। এই অচেনা শহরে তাকে এসব কে পাঠাবে। তাও সে বললো তোড়াটা নিয়ে আসতে। তোড়াটা দেখে সে হতবাক কেননা তোড়াটায় ফুলের জায়গায় চকলেট দিয়ে সাজানো। আর সবই তার পছন্দের চকলেট। সে হঠাৎ খেয়াল করলো তোড়াটার এক জায়গায় একটা চিরকুট লাগানো। সে চিরকুটটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো-

~আঁধার ঘেরা এই জীবনে
নিঃশব্দে এলে তুমি
নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হয়ে
আমার নেশা হয়ে~

ভালোবাসি নেশা পাখি

নেশা চিরকুটটি পড়ে হতবাক। তার মানে ভার্সিটিতে যা হয়েছিল তা তার স্বপ্ন ছিলো নাহ। নেশা মাথায় হাত দুয়ে বসে পড়লে।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে