তুমিময় নেশার আসক্তি পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
1511

#তুমিময়_নেশার_আসক্তি
#আলফি_শাহরিন_অর্পা
#শেষ_পর্ব

রাহাত বসে আছে ফায়াজের সামনে। কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে ফায়াজের উদ্দেশ্য বললো-
— দোস্ত দেখ আমি তোকে কিছু বলতে চাই রিখিয়াকে নিয়ে। রিখিয়ার নাম শুনে ফায়াজের ভ্রু কুঁচকে এলো। সে কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে রাহাত তাকে কোন বিষয়ে কথা বলতে চায়। তাও নিজেকে সে স্বাভাবিক রাখে।
–হ্যাঁ বল! তুই কী বলতে চাচ্ছিস?
–দোস্ত কর ভাবে বলবো বা কী দিয়ে কথাটি শুরু করব বুঝতে পারছি না।
–এত চিন্তা না করে তাড়াতাড়ি বল।
–দোস্ত আমার মনে হয় রিখিয়া তোকে ভালোবাসে। ইন ফ্যাক্ট আমি বিডিতে ব্যাক করেছি তোর সাথে রিখিয়ার সম্পর্ক জুড়ে দেওয়ার জন্য। বোনটা আমার তোকে খুব ভালোবাসে।
–থাম রাহাত! এর আগে আর কোনো কথা বলিস নাহ। আমি তোর এই কথা রাখতে পারবো না।
–কেনো? কী খারাপ আছে রিখিয়ার মধ্যে? আমি মানলাম আগে ও যা করতো তা অনেক খারাপ ছিলো কিন্তু তোকে ভালোবাসার পর ও নিজেকে ভালো পথে নিয়ে এসেছে। এখন সে আর আগের মতো নেই।
–আমি যথেষ্ট সম্মান করি ওর ফিলিংসকে কিন্তু আমার পক্ষে তাকে ভালোবাসা সম্ভব নয়। কেননা আমি অন্য একজন ভালোবাসি। কিছুটা শক্ত কণ্ঠে কথাটি বলে উঠলো ফায়াজ। ফায়াজের এমন দৃঢ় কথা শুনে রাহাত অবাকের শীর্ষে। সে ফায়াজকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো নাহ।

–তুমি আমাকে এতোদিন ধরে কেনো ইগনোর করছ? নেশাকে উদ্দেশ্য করে উক্ত প্রশ্নটি করলো ফায়াজ। তারা বর্তমানে একটা পার্কে অবস্থান করছে। মূলত ফায়াজ রিমঝিমকে দিয়ে মিথ্যা বলিয়ে নেশাকে পার্কে এনেছে। নেশা মূলত জানতো নাহ এই ব্যাপারে।
–আমি কোথায় আপনাকে ইগনোর করছি। আর আমি ইগনোর করলেই বা আপনার কী?
— তুমি সত্যি জানো নাহ তুমি আমার কী নাকি না জানার ভান করছো?
— আমি আপনার সাথে ভান করতে যাবো কেন? আপনি আমার এমন কী লাগেন? কিছুটা আমতা আমতা করে বললো নেশা।
–আমি তোমাকে ভালোবাসি নেশাময়ী। সেদিন থেকে যেদিন আমি তোমার সাথে করিডোরে প্রথম ধাক্কা খাই। তুমিতো আমাকে ইগনোর করে সেদিন চলে গিয়েছিলে কিন্তু একবার যদি পিছনে ফিরে দেখতে তাহলে তুমি জানতে কেউ একজন তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর তুমি যখন তোমার সাথে হওয়া অপমানের জন্য তারপর আমি তোমার আবার প্রেমে পড়ে যাই। তোমাকে যত দেখি তত তোমাকে ভালোবাসতে মন চায়। তোমার দিকে যখন কেউ খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়েছে তার অবস্থা আমি কী করেছি তা তুমি শুনতে পারবে নাহ। শান্ত কণ্ঠে কথাগুলো বলে উঠলো ফায়াজ।
ফায়াজের এমন ভয়ংকর কথা-বার্তা শুনে নেশা কেঁপে উঠলো।
–কিন্তু আমি আপনাকে চাইলেও ভালোবাসতে পারবো না।
–কেনো পারবে না? ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নটি করলো ফায়াজ। নেশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করলো।
–মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। আমাদের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতি। না চাইলেও আমাদের সেসব মানতে হয়। জানেন যখন আমি এখানে পড়ালেখার জন্য এখানে আসতে চেয়েছিলাম লোকে কত সমালোচনা করেছে। আমার বাসায় এসে আমার মা-বাবাকে বলে গেছে মেয়েকে এত বড় শহরে যেতে দিয়েন নাহ মেয়ে খারাপ হয়ে যাবে আরও কত কী। কিন্তু তারা এসব কথায় কান দেয়নি কেননা তাদের আমার উপর বিশ্বাস আছে। আপনিই বলেন আমি কীভাবে তাদের বিশ্বাস ভাঙবো। এসব কারণের জন্য বাবা-মা তাদের সন্তানকে বাহিরে পাঠাতে চায় না, আর এসবের জন্যই হাজারো মেয়েকে তার স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়। আমাকে ক্ষমা করুন। এই বলে নেশা সেখান থেকে চলে গেল। নেশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে ফায়াজ।

মাঝরাস্তায় আনমনে হাঁটছে নেশা খুব কান্না পাচ্ছে তার, সেও যে ভালোবেসে ফেলছে ফায়াজকে। কিন্তু সে অসহায় তার হাতে করার কিছু নেই। হঠাৎ তার হাতের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো দেখলো নীরব ফোন দিয়েছে। তাই সে তাড়াতাড়ি তার চোখ মুছে ফেললো। অতঃপর ফোনটা রিসিভ করলো-
–নিশু মনি! তুই কোথায়?
–বাহিরে। কেনো?
–তুই কাল সকালের বাস নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় আস। এই বলে ফোনটা কেটে দিলো নীরব।

নেশা বসিয়ে রাখা হয়েছে ঘরভর্তি মানুষের সামনে। পরনে তার বিয়ের লাল জামদানী। কাজী এসে একটু আগে বিয়ে পড়িয়ে গেল। চোখ দিয়ে পড়ছে অঝড় জলরাশি। সে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে নাহ। সে এখন কারো বিবাহিতা স্ত্রী।

বারান্দার রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে নেশা। হঠাৎ কেউ তাকে পিছন দিয়ে ঝাপটে ধরলো। সে বুঝে গেল মানুষটি কে তাই সে মুচকি হাসলো। অতঃপর সেই ব্যক্তিটি বলে উঠলো –
–নেশাময়ী ভালোবাসি। এইটুকু শুনে তার ঠোঁটের হাসিটি আরও বড় হয়ে গেল।

~ফ্ল্যাশব্যাক~
যখন নেশা নিজের বাসায় এসে পৌছালো তখন দেখলো মানুষের সমাবেশ। বাড়িঘর অনেক জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজানো, সে কিছু বুঝতে পারছে না এখানে কী হচ্ছে। তখনই ওর সামনে ওর চাচী আসলো আর তাকে একটা রুমে টেনে নিয়ে গেল। রুমের ভিতরে যেয়ে দেখে সেখানে তার বাবা, ভাই ও চাচা উপস্থিত। সবার মুখে গম্ভীরতার ছাপ। অতঃপর ওর বাবা বললো-
–আমি তোমার জন্য একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশাকরি তুমি আমার কথা রাখবে। আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি। এইটুকু কথা শুনতেই নেশার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
–কিন্তু বাবা এটা কীভাবে সম্ভব? আমার এখনো পড়ালেখা শেষ হয় নাই।
–ছেলের বাবা অনেক রিকুয়েষ্ট করেছে তোকে তার ছেলের বউ করার জন্য। ছেলেও খুব ভালো আর পরিবারও খুব ভালো। আর এমনেও তোকে একা শহরে থাকতে দেওয়ার জন্য মন মানছিলো নাহ। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন তুই বল তুই কী করবি? পাশ থেকে কথাটি বলে উঠলো নেশার চাচী। নেশা তার কথাগুলো মন দিয়ে শুনলো। সে বুঝতে পেরেছে তারা তার সেফটির কথা ভেবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই সে আর কিছু বললো নাহ। কিন্তু হৃদয়ের এক কোণায় চিনচিন ব্যাথা করছে, হয়তো ফায়াজের প্রতি হওয়া অনুভূতির কারণে। কিন্তু সে তো জানতো তা কখনোই সম্ভব নয়।

বধূ বেশে কাজীর সামনে বসে আছে নেশা। মুখ দিয়ে কবুল নামক শব্দটি উচ্চারণ হচ্ছে না। হয়তো আপন মানুষদের ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য নয়তো এই শব্দটি উচ্চারণ করলে নিজের খুব কাছের কিছু হারিয়ে যাবে এই জন্য। তাও নিজেকে শক্ত করে কবুল নামক শব্দটি উচ্চারণ করে ফেললো।
অতঃপর কাজী যখন ছেলেকে কবুল বলতে বললো তখন নেশা বিস্মিত হয়ে গেল কেননা এই আওয়াজ তার চেনা। তাই সে তার মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখল তার পাশে ফায়াজ বসা।
তার মানে কী তার বিয়ে ফায়াজের সাথে হয়েছে।

~বর্তমান~
–আমিও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি ফায়াজ সাহেব। নেশার মুখে এই কথাটি শুনে ফায়াজ অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে, তার বিশ্বাস হচ্ছে না তার নেশাময়ী তাকে ভালোবাসি বলেছে।
–আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি।

~সমাপ্ত~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে