তুমিময় নেশার আসক্তি পর্ব-০৭

0
1202

#তুমিময়_নেশার_আসক্তি
#আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_৭

তোড়া আসার পর কিছুদিন কেটে যায়। এই দিনগুলোতে নেশার জন্য প্রায় এমন তোড়া আসতো, সাথে থাকতো সেই চিরকুটগুলো। চিরকুট গুলো যখন নেশা পড়ে তখন ওর অজান্তেই ওর ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। এখন সে নিজেও সেই ব্যক্তিকে দেখার জন্য আকুল হয়ে আছে। কবে যে তার দেখা পাবে।

অপরদিকে রিখিয়া একটা বদ্ধ রুমে বসে চোখের জল ফেলছে। তার আর এসব সয্য হচ্ছে নাহ। সেদিনের পর অনেকবার গিয়েছিলো ফায়াজের কাছে কিন্তু ফায়াজ তাকে প্রত্যেকবার অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ ওর মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো, সে হুর মুড়িয়ে গেলো ফোনের কাছে। নম্বরটি দেখে সে মুচকি হাসলো। ফোন ধরলে অপর পাশের ব্যক্তিটির কথা শুনে তার চেহারায় হাসি ফুটে উঠলো। যেনো নিজের খুব কাঙ্খিত জিনিসটি সে এবার পেয়ে যাবে।

এবার ভার্সিটির নবীন বরন আয়োজনের দায়িত্ব
পুরাতনের সাথে নবীনদেরও আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই রিমঝিম আর নেশাও এসেছে
সহযোগিতা করতে। ওদের কাঁধে এসেছে গেট সাজানোর দায়িত্ব। গেটের সামনে যখন আসে রিমিঝিম তখন গেটের উচ্চতা দেখে ভয় পেয়ে যায়। অসহায় ভঙ্গিতে নেশায় দিকে তাকিয়ে বলে-
–দোস্ত! গেট তোহ অনেক উপরে। আমি এতো উপরে উঠতে পারবো না। প্লিজ তুই উঠ। আমার ছোট বেলা থেকে উচ্চতা থেকে ভয় লাগে।
–ঠিক আছে। আমি উঠছি। সিড়ি ধর। এই বলে নেশা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। কিন্তু সিড়ির এক সাইড ছিলো নড়বড়ে হওয়ায় ধাপুস করে সে পড়ে যায়। কিন্তু পড়ে গিয়ে সে কোনো ব্যাথা পেলো নাহ কেনো? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো। অতঃপর ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখল সে নিচে পড়ে নাই কারো কোলের উপর পরেছে ব্যক্তিটিকে দেখার জন্য ঘাড় ঘুরালেই সে দেখলো ফায়াজ তাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ফায়াহকে দেখে নেশা হা হয়ে গেছে। লাল রঙের জ্যাকেটে তাকে খুব হ্যান্ডসাম লাগছে। নেশা আজ যেনো চেয়েও চোখ ফিরাতে পারছে নাহ।

–ওহ হ্যালো মিস! কোথায় হারিয়ে গেলেন? ফায়াজের ডাকে তার হুস আসে। নিজের অবস্থান খেয়াল হতেই নেশার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে। তাও ধীর কণ্ঠে বললো –
–প্লিজ আমাকে নামিয়ে দেন। ফায়াজ ওকে নিজের কোল থেকে নামিয়ে দিলো।
–ধন্যবাদ আমাকে বাঁচানোর জন্য।
–আমি আপনাকে না নিজেকে বাচিয়েছি। কথাটা বলে চোখ টিপ মেরে চলে গেল ফায়াজ। নেশা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো ফায়াজের যাওয়ার দিকে।
–লোকটা এইমাত্র কী বলে গেল? নাকি আমার কান বাজছে? মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলো নেশা।

কাল নবীন বরন অনুষ্ঠান কিন্তু নেশা এখনো ভাবতে পারছে না সে কী পড়বে? হঠাৎ নেশার ফোনে ফোন আসলো দেখলো হোস্টেলের গার্ড তাকে ফোন দিয়েছে। তার নামে নাকি পার্সেল আসছে তাই তাকে পার্সেলটা পিক করতে নিচে আসতে বলছে।

নেশা নিচে গিয়ে পার্সেলটা নিয়ে আসলো। পার্সেলের ভিতরের জিনিস দেখে সে অবাক। কেননা পার্সেলের ভিতরে ছিলো কালো রঙের সোনালী পারের খুব সুন্দর একটা সাড়ি তার সাথে ছিলো ২ ডজন কালো চুড়ি। আরও ছিলো সাড়ির সাথে মেচিং করা জুয়েলারি, মাথায় দেওয়ার গাজরা এবং তার প্রিয় কিছু চকলেট। নেশা এইসন দেখে অবাক। সে জানে এইসব কার কাজ। তার মুখে অজান্তেই একটা হাসি ফুটে উঠলো।

আজ নবীন বরন অনুষ্ঠানের দিন নেশা রেডি হচ্ছে এমন সময় ওর দরজায় নক পড়ছে। দরজ খুলে দেখে রিমঝিম এসেছে।
–এই নেশা! তুই এখনো রেডি হচ্ছিস না কেনো?
–আমি রেডি।
–আর ইউ সিরিয়াস! তুই অনুষ্ঠানে সেলোয়ার-কামিজ পড়ে যাবি। পাপ লাগবে পাপ!
–ভালোই তোহ লাগতাসে। নিজের দিকে চেয়ে বললো নেশা।
–আমি জানতাম তুই এমন কিছু করবি তাই নিজে আসছি তোকে সাজাতে আসছি। সর সামনে থেকে। অতঃপর রিমঝিম নেশাকে ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকে গেল আলমারির সামনে গিয়ে তা খুললো। আলমারি খুলতেই তার সামনে একট বক্স দেখতে পেলো। কৌতুহল বসত সেটা সে খুলল। বাক্সটার ভেতরের শাড়ি দেখে তার মুখ হা হয়ে গেল। এত সুন্দর ও বুঝি শাড়ি হয়। সে নেশাকে ডাক দিলো।
— দোস্ত শাড়িটা তোহ হেব্বি জোস। এটা তুই পর তোকে ভালো লাগবে।
–এটা কেনো বের করলি। এটা রাখ। অন্য আরও শাড়ি আছে তা দেখ। এটা আমি পড়বো নাহ।
–চুপ থাক তুই! তোকে এটাই পড়তে হবে। নাইলে তোর সাথে আমার আড়ি। নেশা রিমঝিমের কথা শুনে টাস্কি খেয়ে গেলো। বিষ্ময়ে তার মুখ হা হয়ে গেলো। অতঃপর কী আর করার নেশা শাড়িটা পড়ে ফেললো।

নেশা আর রিমঝিম এখন ভার্সিটিতে প্রবেশ করলো। সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে বিশেষ করে নেশার দিকে। এই ভীড়ের মধ্যে একজন খুব গভীরভাবে নেশাকে দেখছে। তার ভালো লাগছে নেশা তার দেওয়া শাড়িটি পড়েছে কিন্তু রাগও লাগছে সবাই কেনো নেশাকে এভাবে ঘুরে ঘুরে দেখছে।এভাবে তাকানো দেখে নেশার খুব অস্বস্তি হচ্ছে।
— এরা এভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে কেনো? আমাদের কী খুব বাজে লাগছে? রিমঝিমকে প্রশ্নটি করলো নেশা।
–এই ওতো হতে পারে আমাদের খুব সুন্দর লাগছে।
নেশা খুব অস্বস্তি নিয়ে এগিয়ে গেলো। সেখানে গানের তীব্র আওয়াজে তার কান ফেটে যাচ্ছে। ছেলে মেয়েরা একসাথে নাচা-নাচি করছে। নাচতে নাচতে তারা একে ওপরের গায়ে পড়ে যাচ্ছে। এসব দেখে তার খুবই বিরক্ত লাগছে। পারলে এখনও ছুটে চলে যেত। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ সে তার শরীরে পেল। রাগে তার শরীর কাঁপছে। সে কোনো কিছু না ভেবে ছেলেটিকে থাপ্পড় মেরে দিলো।

ভার্সিটি শেষে নেশা যখন বাসায় ফিরছিলো তখন তার মনে হচ্ছিল কেউ তার পিছু নিচ্ছিল। হঠাৎ তার মনে হলো একজন নাহ অনেকজন তাকে পিছু করছে। নেশার হাত-পা কাঁপছে। সে কী করবে ভাবতে পারছে নাহ।তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই সে কোনো দিকে না তাকিয়ে দৌড় দিলো। দৌড়াতে দৌড়াতে সে পড়ে গেল আর ছেলেগুলো আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ছেলেগুলোর মধ্যে একজনের চেহেরা দেখে সে অবাক হয়ে গেল কেননা তাদের মধ্যে ঐ ছেলেটা ও ছিলো যাকে নেশা সকালে থাপ্পড় মেরেছে। তাদের মুখে একটা বিশ্রী হাসি। সে হাসি দেখে নেশার শরীর কেঁপে উঠলো। অতঃপর ছেলেটি বললো-
–খুব তোহ সকলের সামনে থাপ্পর মেরেছিলি। ভার্সিটি ছিলো বলে তোকে কিছু বলতে পারিনি। কিন্তু এখন আশেপাশে কেউ নেই। এবার তোকে কে বাঁচাবে। বলেই একটা বিশ্রী হাসি দিলো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে