কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১২

0
1622

#কাঠগোলাপের মোহে🌻
#মোনামী_শেখ
#part:12

এভাবেই কেটে গেলো কিছুদিন।আহানের সাথে অল্পসল্প কথা হয়।দেখা হলে বা ফেসবুকে।

ব্যালকানীতে দাড়িয়ে আছি।রাত বাজে তখন ১০।কিছুতেই ঘুম আসছে না।মনটা কেমন জানি উশখুশ করছে।কিছুতেই কিছু ভালোলাগছেনা আমার।
আকাশে আজ গোলাকার মালার ন্যায় চাঁদ উঠেছে সেই চাঁদের আলোয় চারিপাশ পরিষ্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে।হঠাৎ হঠাৎ দমকা হাওয়া বইছে।গিরিলে ঝোলানো টবে পূর্তলিকার গাছ গুলো কত সুন্দর লাগছে।ফুল ছাড়াও।আর আমার কাঠগোলাপের গাছটায় দুটো ফুল এখনো বিদ্যানান।মুগ্ধ করার মতো এত কিছু থাকলেও আমার কিছুই ভালো লাগছেনা আজ।

ব্যালকানি থেকে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মাথাটা কেমন ঘুরতে লাগলো।আমার মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটাই ঘুরছে আমার চারিপাশে।চোখ গুলোও ঝাপশা হয়ে আসছে।কিছুতেই আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।জ্ঞান হারালাম।

__________________________

পিটপিট করে তাকালাম।মাথাটা ভার ভার লাগছে।চারিপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখে বুঝতে পারলাম আমি হাসপাতালে।ঘড়ির কাটায় ১২ টা বাজে কিন্তু সেটা দিন না রাত তা বুঝতে পারলাম না।

সোয়া থেকে উঠতে যাবো তখনই হাতের লাগানো ক্যালোনায় টান পড়লো।ব্যাথার চোটে ঠোঁট নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলাম।চোখে কোণে পানি জমে আছে।শরীরে কোনো শক্তি পাচ্ছিনা।খুবই দূর্বল লাগছে নিজেকে।গলাটাও শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে পানির অভাবে।ডান হাতে ক্যানোলা লাগলো আর ডানপাশের টেবিলটায় পানির জগ ও গ্লাস রাখা আছে। তাই পানির গ্লাসটা হাতে নিতে পারছিনা।

হঠাৎ মুখের সামনে পানির গ্লাস দেখতে পেয়ে বাম হাত দিয়ে চট করে নিয়ে ঢকঢক করে খেতে লাগলাম।পানি খাওয়া শেষে একটা লম্বা নিশ্বাস নিলাম।তারপর পানি কে দিয়েছি তাকে দেখার জন্য মাথা তুলতেই অবাকের চরম সিমায় পৌঁছে গেছে।চোখ দুটোও যে কোটোর থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।

আমার সামনে আর কেউ নয় প্রণয় ভাইয়া দাড়িয়ে আহত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।তাকে কেমন যেন বিধস্ত লাগছে।চুলগুলো এলোমেলো।চোখ গুলো লাল আভায় ছেয়ে আছে।এর কারণ আমি বুঝলাম না।

__ভাইয়া আপনি এখনে??মিহি গলায় প্রশ্ন করলাম তাকে।

___তিনি কিছু বললেন না।আমার দিকে আর একবার তাকিয়ে রুম থেকে হনহন করে চলে গেল।তার এমন কান্ডে আমি ভ্যাবাচেকা খেলাম।তার সাথে রাগও হলো।

__নিজেকে মনে হন কোনো দেশের রাজপুত্র ভাবে।কারো কথায় তার কিচ্ছু যায় আসেনা।এমন ভাব দেখলে গা টা জ্বলে উঠে।মনে মনে বলে উঠলাম।

কিছুক্ষণ পর রুমে ডাক্তার সাথে ছোট আব্বু ঢুকলেন।
ছোট আব্বু ছুটে এসে আমার কাছে এসে বসলো আর হন্তদন্ত হয়ে বললো___ মা তোর জ্ঞান ফিরেছে??তুই ঠিক আছিস তো?এখন কোনো কষ্ট হচ্ছেনা তো??

আমি মুচকি হেসে বললাম___ হ্যাঁ ছোট আব্বু আমি ঠিক আছি।আর এখন খানিকটা সুস্থ বোধ করিনি।তাই তুমি চিন্তা করিও না।

মা জানিস আমি আর তোর খালা মনি খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। তোর খালামনি তোর ঔ অবস্থা দেখে খুব ভেঙে পড়েছিলেন।কান্না করতে করতে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন তিনি।

__খালামনি ঠিক আছে তো? খালামনি কোথায়?এখানে দেখছিনা কেন?এবার আমি হন্তদন্ত হয়ে বললাম।

___ তোর খালামনি এখন বাসায় আছে।প্রণয় ফোন করে তোর জ্ঞান ফেরার কথা বলে দিয়েছে।তুই চিন্তা করিসনা।আজই তোকে বাসায় নিয়ে যাবো।এখানে রাখবোনা তোকে।

___আচ্ছা ছোট আব্বু প্রণয় ভাইয়া কখন এলেন এখানে??

____ সকালে এসেছে।তোর খবর দেয়া মাত্রই প্রণয় ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছিলো।তোর কথা শোনার পর প্রণয় খুব কষ্ট পেয়েছেরে মা।

___ আমি আবারো একধাপ বেশি অবাক হলাম।ছোট আব্বুর কথা শুনে।প্রণয় ভাইয়া আমার অসুস্থার কথা শুনে কষ্ট পেয়েছেন।এটা খুব অবাক করার বিষয়।নাহ এসব নিয়া আর ভাবলাম না।মাথায় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

সন্ধ্যা হতে হতে বাসায় ফিরলাম। খালামনি আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো।আমি কাঁদছি আর খালামনিও।
খালামনিকে জড়িয়ে ধরে মায়ের কথা মনে পড়ছে।ইশশ আজ যদি মা আমাকে বুকে জড়িয়ে রাখতো।একটু ভালোবাসতো একটু!!!

তাহলে আমি আর তার কাছে কিছুই চাইতাম না।তবে হ্যাঁ খালামনি কে আনি আমার মায়ের আসনে বসাতে শুরু করেছি।আমি তাকেই এখন আমার মা ভাবি।তার আদর ভালোবাসা আমার পুনরায় বাঁচতে শিখিয়েছে।আমি একটা পরিবার পেয়েছি এটা ভাবলেই নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হয়।

___ অয়ত্রি মা তুই ঠিক আছিস তো??তোর শরীরটা এখন ভালে আছে তো??

___হুম খালামনি আমি একদম ঠিক আছি।দেখো তোমার সামনে আমি দাড়িয়ে আছি।দুষ্ট হেসে খালামনিকে উদ্দেশ্য করে বললাম।

___ আমার পাগলি মেয়েটা।বলেই আমার কপালে ভালোবাসার পরস এঁকে দিলো।এরপর আমাকে ঘরে নিয়ে গেলো।প্রণয় ভাইয়া নিজের রুমে গেলো।ছোট আব্বু ওষুধ আনতে গেছেন।

ঘরে শুয়ে আছি।তখনি বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বেজে উঠলো। বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বেড় করে দেখলাম আহান কল করেছে।অজান্তেই ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো আমার।

কল রিসিভ করতেই ওপারে থেকে আহান ব্যাস্ত হয়ে বললো__অয়ত্রি কাল থেকে কল করে যাচ্ছি রিসিভ করছোনা কেনো??কি হয়েছে তোমার??জানো কতো টেনশন হচ্ছিল আমার।

আমি আহানের কথায় হেসে উঠলাম।আহান নিশ্চিত ভরকে গেছে আমার হাসি শুনে।

__কি হলো অয়ত্রি তুমি আমার কথায় হাসছো কেন?আমি কি হাসার মতো কিছু বলেছি!!!??

____এমনিই হাসলাম।আমাকে নিয়ে এত টেন্স কেন আপনি??হুম!!

___তুমি আমার কে সেটা আমার আল্লাহ আর আমি জানি। খুব শিগ্রই তুমিও জানতে পারবে।মনে মনে বললো আহান।

____তুমি আমার কে সেটা পরের কথা।আগে বলো তুমি তুমি আমার ফোন ধরছিলেনা কেন??

___ আসলে কাল রাতে আমি সেন্সেলেস হয়ে পড়ছিলাম।আজ সকালে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করি।এখন বাড়ি আসলাম।

অয়ত্রির কথা বুকটা ধক করে উঠলো আহানের।অজানা ভয় মনে কাজ করতে লাগলো।

___ হোয়াট…তুমি অসুস্থ হয়েছিলাম।এখন কেমন আছো??কাঁপ কাঁপা কন্ঠে বললো আহান।

___ হুম আমি এখন একদম ঠিক আছি।শুধু শরীরটা একটু দূর্বল।

___এই শোনো ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করবে।কোনো দুষ্টিমি করবে না!আর শোনে কাল ছাদে দাড়িয়ে থাকবে তোমায় একটি বার দেখবো।

দরজার সামনে কারো ছায়া দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।
তাই আহানকে ওকে বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।
তখনি ঘরে ধুকলো প্রণয় ভাইয়া।

তিনি ধীরে ধীরে এসে আমার বেডের কাছে টুল নিয়ে বসলেন।তার চোখ গুলো হয়তো কিছু বলছে বাট সেই চোখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা হয়তো আমার নেই!!!

তার হাতের বাটিটা দেখে বুঝলাম কিসের জন্য তিনি আমার ঘরে এসেছে।

তিনি সুপ নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরছে। আমি তো এবার ৩ ধাপে কারেন্টের শক খাওয়ার মতো অবাক হলাম।এবার মনে হয় আমি হার্ডফেল করবো।একের পর এক ঝটকা।এগুলো সহ্য করবো কি ভাবে!!!

__কিরে খাচ্ছিস না কেন??বললেন তিনি।

___আমি চচাত করে খেয়ে সুপ খেয়ে নিলাম।তিনি বার বার আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আমিও বিনাবাক্যে খেয়ে নিচ্ছি।তার মুখের উপর কথা বলার সাহস আমার নেই বললেই চলে!!!

খাওয়া শেষে ওষুধ খাইয়ে তিনি টিশু দিয়ে আমার মুখটা মুছে দিলেন।আমিতো অবাক হয়ে তার কার্যকলাপ গুলো দেখে যাচ্ছি।

এবার তিনি আমার কপালে তার ঠোঁট ছোঁয়ালেন।কেঁপে উঠলাম। আমি এককাথায় বাকরুদ্ধ!! হার্ডবিদ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে।মন শুধু বলছে___এটা কি হলো!!!🥴🥴🥴

👉to be continue…

(গল্পটা রিচেইক করা সময় পাইনি।তাই সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)👇

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে