কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১১

0
1701

#কাঠগোলাপের_মোহে🌻
#মোনামী_শেখ
#part:____11

আজ একটু কেনাকাটা করতে বেড়িয়েছি ।কাউকে সাথে নেইনি।আমার আবার এবার একা-একা শপিং করতে ভালোই লাগে। বাড়িতে গাড়ি থাকে শর্তেও রিকশা করেই বেড়োলা। রিকশায় চড়তে আমার ভিষন ভালো লাগে।

“ইশ কেউ একজন থাকতো।তার সাথে রিকশায় বসে হাতে হাত রেখে এই ব্যাস্ত শহরটাকে ঘুরেফিরে দেখতাম।আর মরিয়া হয়ে খুঁজে বেড়াতাম কোলাহল পূর্ণ একটি নদীর তীর ও খোলা নীলাভ আকাশ। সেই আকাশে উড়ে বেড়াতো একঝাক শালিক। মনে মনে ভাবছি আমি। যখন ধ্যান ভাঙ্গলো তখন নিজের ভাবনাগুলো মনে করে লজ্জা পেলাম।

শপিংমলে পৌঁছালাম।দরজা ঠেলে ভিতরে ধুকতে যাবো ওমনি ওড়নায় টান পড়ল।আমি অবাক হয়ে পিছন ফিরে দেখলাম।একটা ৭কি ৮ বছরের বাচ্চা মেয়ে আমার ওড়নার কোণ নিজের আঙ্গুলোর ভাজে রেখে আমার দিকে অসহায় চোখে দাড়িয়ে আছে।

খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করলাম__মেয়েটির মুখের ফেসটা অনেক মায়াবি।যদিও গাঁয়ের রঙ চাপা ফর্সা।নাকে একটা আধো রঙ উঠা সিটিগোল্ডের নথ।গায়ে ছেড়া ফ্রক। চুলগুলো উশখো খুশকো।মুখে বিষাদের ছায়া।

আমি মেয়েটির কাছে গিয়ে মাথা নীচু করে তার গালে হাত রেখে বললাম— কি হয়েছে মামনি??কোনো সমস্যা??

মেয়েটি আমার প্রশ্নের উত্তর হিসেবে না সূচক উত্তর দিলো।আমি মিষ্টি হেসে বললাম—তাহলে কি তোমার ক্ষিদে পেয়েছে??

মেয়েটি এবার মিহি ও দূর্বল কন্ঠে বললো— আমার ছোড বোইনের বিরিয়ানি খাওনের খুব ইচ্ছে করতাছিলো তাই ভিক্ষা করতে বাইর হইছি।কিন্তু এহন পর্যন্ত ৫০টাকাও তুলতে পারিনাই।আপা আমারে কিছু টাকা দিবেন??

মেয়েটার কথা খুব খারাপ লাগলো।নিজের প্রতি নিজেরি ঘৃণা লাগতেছে।কতটাকা কত খানে খরচ করি।
অযাথা খরচেরও হিসাব নাই।অথচ এই অযাথা খরচ না করে যদি এই টাকা গুলো দিয়ে এদের মতো বাচ্চাদের অমূল্য হাসিটা কিনতে পারতাম কতইনা ভালোহতো।এমন না যে আমি কাউকে সাহায্য বা দান করিনা।কিন্তু তাও এদের মতো বাচ্চাদের যদি তাদের একটা হলেও ইচ্ছে পূরণ করতে পারি তাহলে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি হবো আমি।এসব মনে মনে ভাবছিলাম।তখনি মেয়েটার কথায় হুশ ফিরলো।

___আপা দিবেন কিছু টাকা??

___আচ্ছা।তুমি আমার সাথে চলো।বলেই মেয়েটার হাত ধরে শপিংমলে ধুকলাম।

মেয়েদের ড্রেস শপে ধুকে ওকে ২টো জামা।ওর বোনকে ২টো জামা কিনে দিলাম।আজ যা টাকা এনেছি তা দিয়ে মেয়েটার ইচ্ছে পূরণ করবো।যা বাকি থাকবে তা মেয়েটার হাতে দিবো।

____ মেয়েটা অবিশ্বাস্য ও ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি মেয়েটার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলাম।ও মুচকি হাসলো।

এরপর ওকে একজোড়া সেন্ডেল একজোড়া হিল।সাথে ওর বোনের ও।মেয়েটা এখনো শুধু আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।

শপিং শেষে একটা রেস্টুরেন্টে ডুকলাম। ওকে বসিয়ে দিয়ে আমি বসে পড়লা।আশেপাশের লোকজন কেমন যেন দৃষ্টি আমাদের দিকে তাকিয়ে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করতে লাগলো।অবশ্য আমি এতে কান দিলাম না।

মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম কি খাবে..??
সে উওর দিলো বিরিয়ানি। আমি ২ প্লেট বিরিয়ানি আর কাবাব অর্ডার দিলাম।

খাবার চলে টেবিলে আসতেই মেয়েটা খাবারের দিকে তাকাচ্ছে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে একবার।
আমি মেয়েটার কৌতুহল বুঝতে পেরে বললাম____
ঝুমুর আমার দিকে না তাকিয়ে মন দিয়ে খাও।

সে মাথা নাড়িয়ে না সূচক উত্তর দিলো। আমি অবাক হয়ে বললাম—খাবেনা কেন??

___এই বিরিয়ানিটা প্যাকেট কইরা দেন।আমি আমার বইনের জন্য লইয়া যামু।

আমি এবার মেয়েটার কথায় হেসে উঠলাম।ও হয়তো অন্যকিছু মনে করছে।তাই আমি বললাম___ঝুমুর তুমি এটা খাও।তোমার বোনের জন্যও নিয়ে যেও পরে।এবার তার চোখে মুখে হাসির ঝলক দেখতে পেলাম।আমারো খুব ভালো লাগছে।

দুজনেই খাওয়া শুরু করলাম।খাওয়া শেষে দুটো আইসক্রিম অডার দিলাম।

আইসক্রিম খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম— আচ্ছা ঝুমুর তোমার মা,বাবা নেই??

___ মায় তো মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে।আর আব্বা ৩ বছর আগে মারা গেছে।ভারাক্রান্ত গলায় জবাব দিলো জবাব দিলো মেয়েটি।

___ মেয়েটির কথায় বুকটা ধক করে উঠলো আমার।মেয়েটি এতিম।বাবা নেই। কিন্তু আমার যে বাবা থেকেও নেই।আমার পুরো পরিবার থাকা শর্তেও কেউ নেই।তবে হ্যাঁ আমার মায়ের সমান খালামনি বাবার সমান ছোটআব্বু তো আছেন।এরাই এখন আমার পরিবার তাই এসব নিয়ে কষ্ট পবার কোনো কারণ নেই।নিজেই নিজেকে শান্তনা দিলাম।

মেয়েটার সাথে আরো কিছুক্ষণ গল্প করেলাম।এরপর বিরিয়ানির তিনটা প্যাকেট সাথে দুটো আইসক্রিম কাপ
প্যাক করে ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম।মেয়েটা কান্না করতে করতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলাম।

“আপা আপনের মতো মানুষ হয়না।আপনার জন্য আইজ আমার বইনের ইচ্ছেটা পূরণ হইলো।আল্লাহ আপনার মনের আশা পূর্ণ করবো দেখিয়েন।আমি আমার মায়রে কমু আপনার জন্য করতে।আল্লাহ আপনারে যুগযুগ বাঁচায় রাখুক।মেয়েটা বললো কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সাথে বললো আমাকে।

আমি মেয়েটার কথায় মুচকি হাসলাম।এবার রেস্টুরেন্টে থেকে বেড়িয়ে মেয়েটাকে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য রিকশায় বসিয়ে দিলাম।হাতে গুজে দিলাম ১ হাজার টাকার ২টা নোট।মেয়েটা এবার চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি মেয়েটার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললাম—এই টাকাটা দিয়ে তোমার মাকে কিছু কিনে দিও।আর বাকি টাকা দিয়ে বাজার করিও।মেয়েটি মাথা নাড়ালো।

মেয়েটির ঠিকানা নিয়ে রেখেছি।প্রয়োজন হলে আবারো যাবো।

মেয়েটিকে বিদায় দিয়ে পিছন ঘুরতেই কাউকে আমার সামনে দাড়ানো দেখে চমকে গেলাম।
আহান ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।সেদিনের মতো মুখে মাস্ক পড়া আর সানগ্লাসটা টিশার্টে গুজে দেয়া।আজ নীল কালারের টিশার্ট তার সাথে মিলিয়ে জিন্স।

___মিস অয়ত্রি তুমি এখানে??

___ হ্যাঁ আসলে একটু কাজ ছিলো তাই।এখন বাড়ি ফিরবো।

___ ওহ আচ্ছা। আমি বাড়ি ফিরছি।চলো আমার সাথে।

___ আরে না না।আমি একায় যেতে পারবো।সামনের মোড়ে রিকশা নিয়ে চলে যাবো।

___ আমি তোমার কোনো কথা শুনবো না মিস অয়ত্রি।
বলেই আমার হাতটেনে কয়েকপা এগিয়ে তার গাড়িতে বসিয়ে দিলো।আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।

জানলাম মুখ করে বসে বাইরের দৃশ্য দেখছি।না হলে হয়তো এই বেহায়া চোখ দুটো হয়তো আহানের দিকেই যেতো।ক্রাশের সাথে বসে আছি। অনুভূতিতা কেমন হওয়া উচিত!!!

আর আহন ড্রাইভ করছে আর ফাঁকে ফাঁকে অয়ত্রির দিকে তাকাচ্ছে। কখনো বা মুচকি মুচকি হাসছে। আজ সে তার প্রেয়সির সব কান্ডকারখানা গুলে দেখেছে।আর এতে সে আরো একধাপ তার মায়ায় পড়ে গেছে।

🍁🍁🍁_____________________________🍁🍁🍁

এদিকে প্রণয় ইভানির জ্বালায় চরম বিরক্ত হয়ে পড়েছে।প্রণয়ের ক্যাবিনে গিয়ে বকবক শুরু করে দিয়েছে।ভদ্রতার খাতিরে প্রণয় কিছুই বলতে পারছেনা।
না হলে মেয়েটাকে এখনি ক্যাবিন থেকে বেড় করে দিতো।অবশ্য মেয়েটার কথা বার্তায় চঞ্চল হলেও পোশাক পরিছেদ্দ আধনিক মেয়েদের মতো না।হিজাবের সাথে লং থ্রিপিজ পড়ে ইভানি।আর ইভানি দেখতেও অতি সুন্দরী।যে কেউ তাকে প্রথম দেখায় ক্রাশ খাবে।তবে প্রণয় ইভানির উপর না ক্রাশ খেয়েছে না তার মনে ধরেছে।করেছে।তার মনে তো অন্যজনের বসত।তার হৃদয়জুড়ে শুধু তার সেই জনের নাম!!!

___প্রণয় চলুন না আজ কোনো রেস্তোরাঁতে ডিনারটা সেরে ফেলি।আকুতি ভরা কন্ঠে বললো ইভানি।

____ আজ আমার অনেক কাজ আছে মিসেস ইভানি।তাই আজ আপনার আবদারটা রাখতে পারলাম না।

____ আমি মিসেস নই মিস

___ আপনি তো বাগদত্তা তাহলে আপনি কিভাবে মিস হন??

___ বিয়েটা ক্যান্সেল হয়ে গেছে।

___ওহ। কেন বিয়েটা ক্যান্সেল হলো??

___ ওসব কথা পড়ে হবে।আগে আমার আবদারটা রাখুন প্রণয়।প্লিজ

___ আমিতো বললাম আজ আমার অনেক কাজ আছে।

___আজ কোনো অজুহাত শুনবো না।এই বলে দুদিন ঘুড়িয়েছেন আমায়।কিন্তু আজ আমার আবদরটা পূরণ করতেই হবে আপনাকে প্রণয়।

কি আর করার প্রণয় না চাওয়া শর্তেও ইভানির সাথে ডিনার করার জন্য বেড়িয়ে পড়লো। মনে মনে তো প্রণয় রেগে বোম।বাট ইভানি তো খুশিতে কাঁপতে শুরু করেছে।মনে মনে প্রেমের পায়রা সারা আকাশে উড়ছে ইভানির।

👉To be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে