কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১০

0
1619

#কাঠগোলাপের মোহে🌼
#মোনামী_শেখ
#part:____10

__ বাবা আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা।তুমি এই বিয়ে ক্যান্সেল করে দাও।

___হোয়াট?!!! আর ইউ সিরিয়াস?? তুমি কি কথাগুলো ভেবে চিন্তে বলছো??

___ তুমি জানো আমি যা বলি তাই করি।আর আমি যা বলেছি তা ভেবে চিন্তেই বলেছি।

___ তোমার বাকদান হয়ে গেছে।সামনের মাসেই তোমার বিয়ে।আর তুমি কিনা বলছো তুমি এই বিয়ে করবে না??

___ হ্যাঁ আমি এই বিয়ে করবোনা।আর এটাই আমার শেষ কথা।বলেই ডয়িংরুম থেকে সোজা নিজের ঘরে চলে গেলো ইভানি।

আর তা দেখে মিস্টার হাসান বললেন___ ইভানি,ইভানি
কিন্তু তার আগেই নিজের রুমে গিয়ে খট করে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ধুকলো ইভানি।

বেসিকের সামনে দাড়িয়ে চোখ বুঝে চোখে মুখে পানি দিচ্ছে ইভানি।চোখ বুঝে সে শুধু প্রণয়ে মুখটা দেখতে পেল।মুখে ফুটে উঠলো চওড়া হাসি।

তোমাকে ভালোবেসে ফেলিছি।তোমাকে আমার চাই মিস্টার প্রণয় প্রহসন।সয়নে,স্বপ্নে,জাগরণে এখন শুধু তোমারই বিচরণ।প্রথম দেখায় ভালোবাসা হয় কিনা জানি।আমি অন্তত এটা বিশ্বাস করতাম না।কিন্তু তোমার প্রেমে পড়ে তা আমি বুঝতে পেরেছি।
________________________________________________

আজ লাস্ট পরিক্ষা দিয়ে হল থেকে বেরোলাম অরিন সহ।লম্বা একটা নিশ্বাস ছাড়লাম।যে নিশ্বাসে এতদিন চিন্তা,ভয়,রাগ,হতাশা ছিলো তাও আবার এই পরিক্ষার জন্য।কিন্তু এখন আমি ফুল ফ্রী টেনশন মুক্ত যাকে বলে।

অরনি সহ মাঠের সাইডে থাকা ফুচকার দোকানের সামনে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলাম দুজনেই।আজ ফুচকা পার্টি হবে।আমি তো সেই রকমের এক্সসাইডেট। কারণ অনেকদিন হলো ফুচকা খাওয়া হয়না।আজ ২ প্লেট ফুচকা খাব বলে ঠিক করেছি।

___ অরিন আজ দুই প্লেট ফুচকা খাবো।

আমার কথায় অরিন চোখ দুটো বড়বড় করে আমার দিকে তাকালো আর বললো—অয়ত্রি তোর মাথা ঠিক আছে??তুই একসাথে দুপ্লেট ফুচকা খাবি??

___ হ্যাঁ তাতে সমস্যা কি।তুই ও খাবি।মিহি হেঁসে বললাম আমি।কারণ আমি জানি অরিন ফুচকা বেশি পছন্দ করেনা।১ প্লেট ফুচকা খেতেই অরিন হিমশিম খেয়ে যায় আর ২ প্লেট ফুচকা তো অনেক দূরের কথা।
এসব ভেবেই মুখ টিপে হাসলাম আমি।

__ অয়ত্রি তোর কয়েক প্লেট ফুচকা খেতে ইচ্ছে করে তুই খা।আমাকে জোর করবিনা।ওকে।

___ না না জানু তা তো হবেনা।তোকে দুই প্লেট ফুচকা খেতে হবে।তুই সেদিন ট্রিট দিতে চেয়েছিলি।তো আমি সেই ট্রিটের বদলে এটা চাইছি।

___অয়ত্রি তুই আমার সাথে এমন করিসনা প্লিজ।আমি কখনোই দুই প্লট ফুচকা খেতে পারবোনা।১ প্লেট হলেই যথেষ্ট।

___অরিনের কথায় কিছু বলতে যাবো তার আগে আমাদের টেবিলে একজন চোখে সানগ্লাস ও মাস্ক পড়া ছেলে বসলো।আমি অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকালাম।কারণ ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগছে।আহানের মতো লাগছে। বাট আহান কেনো বা এখানে আসবে।দূর এসব আজাইরা গোয়েন্দাগিরি কম কর।নিজে নিজেকেই বললাম মনে মনে।

এবার ফুচকার প্লেট টেবিলে এসে পড়েছে।তাই আমি আর দেরি না করে খেতে লাগলাম।অরিন মুখ বাঁকা করে খাচ্ছে।২টা ফুচকা খাওয়া হতে আর একটা হাতে নিয়ে মাথা তুলে যখনই মুখে দিতে যাবো তখনি কাউকে দেখে আমার চোখ চড়কগাছ।

হায় হায় এ আমি কাকে দেখছি!!!তাহলে এতক্ষণ যা ভাবছিলাম তাই ঠিক।আহান আমার সামনে বসে আছে।আমি অরিনের হাতের কুনুইয়ে চিমটি কেটে কানে কানে বললাম___ দেখ অরিনোকো আমাদের সামনে কে বসে আছে!!!

অরিন মাথা ঘুড়িয়ে আহনকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। আশে পাশের মানুষ অবাক চোখে অরিনের কান্ড দেখছে।তারা অরিনকে হয়তো হাফ মেন্টাল ভেবে ফেলেছেন অরিনের লাফানো আর চিৎকারে।আর সামনে বসে থাকা আহান অরিনের এহেন কান্ড ভরকে গেছে।

আরে আহান চৌধুরী আপনি এখানে??তাও আবার আমাদের টেবিলে বসে চটপটি খাচ্ছেন।ওমাআআআ
তা ভাবা যায়!!!

এবার আমি অরিনের হাত টেনে চেয়ারে বসিয়ে নিজেও বসে পড়লাম।

আসলে সরি।আপনাকে এখানে দেখে অরিন একটু বেশি এক্সসাইটেড হয়ে পড়েছিল।তাই এইভাবে বলেই একটা চাপা মার্কা হাসি দিলাম আমি।

তিনি এবার আমার চোখে নিজের চোখ আবদ্ধ করে বললো— তো মিস আপনি এক্সসাইটেড হননি আমাকে দেখে??

আমি আহানের কথায় থতমত খেয়ে গেলাম।চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছি আর মনে মনে বলছি____ আপনাকে দেখে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।যার জন্য আপনাকে দেখে উত্তেজিত হওয়ার সময় ওই পাইনি। আপনাকে চোখে সামনে পাশের চেয়ারে বসা দেখা আমি হতবাক,অবাক,আশচার্য সবই হয়েছি।আর খুশি হয়েছি কিনা তা এখনো নিজেই বুঝতে পারিনি।তবে আপনাকে চোখে সামনে দেখে আমার মনের আশা একটা পূরণ হয়েছে।এরজন্য আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া।

হঠাৎ তিনি আমার চোখে সামনে চুটকি মেরে বললেন__
হ্যালো মিস কোথায় হাড়িয়ে গেলেন??

____না না কিছুনা।এমনিই আর কি।বাড়িতে একটা কাজের কথা মনে পড়ে গেলো।তাই আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। চল অরিন।

বলেই অরিনের দিকে তাকালাম। অরিন আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।তার কারণটা আমি ভালোকরেই জানি।

হেই মিস অয়ত্রি এত তারাতারি বাসায় ফিরবেন কেনো?একটু আড্ডা দেয়া যাক।আমার মতো একজন হ্যান্ডসাম ছেলে আপনাদের সাথে যেচে কথা বলছে আবার আড্ডা দেয়া অফার দিচ্ছে আর আপনি কিনা তা ক্যানন্সেল করতে চাচ্ছেন?ভেরি স্ট্রেন্জ!!! ভ্রু কুঁচকে মুখে মুচকি হাসি নিয়ে আমাকে আর অরিনকে উদ্দেশ্য করে বললো আহান।

হ্যাঁ হ্যাঁ আমারা আপনার সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য রাজিই।আপনার মতো একজন মানুষ আমাদের সাথে নিজ ইচ্ছেয় আড্ডা দিতে চাচ্ছে সেটা কি রিফিউজ করা যায়?? কোনো ভাবেই যায়না।উত্তেজিত হয়ে টপাটপ কথাগুলো বলে দিলো অরিন।

আমি অরিনের দিকে চেয়ে বোঝার চেষ্টা করছি।অরিনের মতলবটা কি??

অরিনের কথায় হাসলো আহান।এবার আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলল আহান— তো আপনি কি আমাকে রিফিউজ করবেন।নাকি আমার এই সামান্য আবদারটা রাখবেন??

এইরে কি বিপদেই না পড়লাম এই গাড়ি অরিন টার জন্য।এখন তো না ও বলতে পারবো।তাই কি আর করার হ্যাঁ বলতে হবে।

আসলে বাড়িতে কাজ ছিলো তাই বলছি।আপনি আবার অন্য ভাবে মাইন্ড করিয়েন না। কাজটা কাল ও করা যাব।যেহেতু আপনার মতো একজন মানুষ আমাদের কাছে এইটুকু একটা আবদার করেছে সেটা তো পূরণ করার দায়িত্ব আমাদের।কি বলেন??বলেই হাসলাম।

আহান ও আমার কথায় হেসে ফেললো।আমি অবাক চোখে আহানের হাসিটা দেখতে লাগলাম।কি সুন্দর হাসি।ছেলে মানুষের হাসি বুঝি এত সুন্দর হয়!!!

____________________________________________

রাত দশটা____ ব্যালকানিতে দাড়িয়ে গরম ধোঁয়া উড়ানো কফিতে ক্ষনে ক্ষনে চুমুক দিচ্ছে আর মনে মনে ব্লাসি করছে আহান। অয়ত্রির সাথে কাটানো সময়গুলো তাকে বরংবার ভাবাচ্ছে কিন্তু এতে সে বিরক্ত হচ্ছেনা বরং সে মুচকি মুচকি হাসছে।আরও অয়ত্রি মুখটা চোখ বুঝে কল্পনা করছে।

অয়ত্রি নাকের নিচের তিলটা আহানকে নেশায় জড়ায়।হালকা পিংক কালারের ঠোঁটগুলো হঠাৎ হঠাৎ কেঁপে উঠা দেখে বুকের ভেতর ধকধক শুরু হয়ে যায় আহানের।পিটপিট করে তাকানো অয়ত্রির চোখগুলো আহানের চোখকে আবদ্ধ করে।অয়ত্রির লম্বা সিল্ক চুলগুলো আঙ্গুলের ভাজে নিয়ে খেলতে ইচ্ছে করে তার।

অনেক আগে থেকেই তো তার মায়ায় পড়ে গেছি।কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারিনি এখন পর্যন্ত।কিন্তু হ্যাঁ এখন আস্তে আস্তে অনুভুতি গুলোর তার সামনে।এতদিন যে তীব্রো অনুভুতিতে আমি ঝলসে পুড়েছি এবার এই অনুভুতিতে তোমাকেও পোড়াবো। বলেই মিটিমিটি হাসতে লাগলো আহান।
_________________________________________
ইশ মাথাটা এত ব্যাথা করছে কেন তা বুঝতে পারছিনা।
ড্রয়ার থেকে পেইনকিলার নিয়ে মাথা মেছেস করে নিলাম কিছুক্ষণ।

চোখ বুঝলেই আহানের সেই মারাত্মক হাসি আমার কল্পনায় ভেসে উঠে।আর হৃদপিণ্ডটাও লাফিয়ে উঠে।
কি যে করি!!! আহান আমার ক্রাশ ঠিক আছে।বাট বন্ধুত্ব করাটা ঠিক হয়নি।আর আজ যা যা হয়েছে সব ওই অরিন টার জন্য।আহানকে সামনাসামনি দেখেছি এটাই আমার জন্য যথেষ্ট ছিলো।বাট ____আর কিছু বলতে পারলাম না।তার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো।
বালিশের নিচ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম আননোন নাম্বারে ফোন এসেছে।যা দেখে চরম পর্যায়ে বিরক্ত হলাম।এত রাতে আবার কে ফোন দিলো।ফোনটা ধরলাম।

__হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না।
তাই আবার বললাম____ হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন??
নাহ এবারো সাড়া পেলাম না। শুধু একটা গভীর নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলাম।

তার মানে ফোনের ওপাশের লোকটা ইচ্ছে করেই কথা বলছেনা!!!
এবার মাথায় রাগ চড়ে গেলো।তাই বললোই ফেলাম__
এই বয়রা,কানা,বান্দর কথা বলিস না কেন??কথাই যখন বলবনা তো ফোন কেন দিছিস???লজ্জা করেনা? এত রাতে একটা মেয়েকে ফোন দিয়ে ডিসটার্ভ করিস?
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।ধুপ করে শুয়ে চোখ বুঝে রইলাম।

ফোনের ওপাশের লোকটা অয়ত্রির কথা শুনো মিটিমিটি হাসছে আর বলছে__ জান তুমি এখনো আগের মতোই রয়েছো। হাত পায়ে বড় হলেও মেচিওরিটি বড়ো হও নি!! তবে সমস্যা নেই।আমার খাঁচায় বন্দি হলে টিকি তুমি মেচিওরিটি বুঝে যাবে।

👉to be continue….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে