কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১৮

0
1823

#কাঠগোলাপের মোহে
#মোনামী_শেখ
#part:18

মানুষের জিবনে ভালোবাসা এমনই এক মানুষিক ও শারীরিক বিষয়,যা অবশ্যই যে কোনো সূত্রের চেয়েও উর্দ্ধে।যেটাতে কোনোরুপ হিসাব করেও নির্দিষ্ট ফল বের করার তেমন কোনো সুযোগ থাকেনা।সুতরাং কারো প্রেম—ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে যে কোনো মন্তব্য করা কিন্তু বোকামি।এবং আমি বিশ্বাস করি যে, কোনো ব্যাক্তির একান্তই আধ্যাত্বিক রুচিবোধটা দৈবাৎ যখন এক সময়ে ঐ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সেইসব ইন্ধন বা উদ্দেশ্যে আকৃষ্ট হয়। সেটাই মূলত ভালোবাসা!!!

আহানের সামনে দাড়িয়ে কথাগুলো বললো নিরা!!!
আহানের এলোমেলো চোখগুলো শান্ত হওয়ে এলো নিরার কথায়।

তো মিস্টার আহান বুঝেছেন নিশ্চই আমার কথাগুলো।
আপনিও ভালোবাসেন অয়ত্রিকে আর প্রণয় ভাইয়াও ভালোবাসে অয়ত্রিকে।কিন্তু আপনি যতটানা পুড়েছেন প্রেমাগুনে তার চেয়ে দ্বিগুণ জ্বলেছে প্রণয় ভাইয়া।
এটা ঠিক ভালোবাসার মানুষকে কখনো জোর করে
পাওয়া যায়না।কিন্তু মনে বিশ্বাস আর ভালোবাসার জোড়ালো টান থাকলে সে অবশ্যই একদিন ঠিকই ভালোবাসা বুঝতে সক্ষম হবে।আর সেই কাজটা করেছে প্রণয় ভাইয়া।নিরা কাঠ কাঠ গলায় কথাগুলো বললো।

__ আব আমি অয়ত্রিকে ভালোবাসি আর অয়ত্রি ও আমায়!!

___ অয়ত্রি আপনাকে ভালোবাসে এটা কি আপনাকে বলেছে??

___না!!

___অয়ত্রি আপনাকে পছন্দ করতো ভালোবাসতো না।
আর ভালোলাগা ভালোবাসা একনয় সেটা তো আপনি জানেন ওই তবে আপনি কেন এই কথাটা সবাই জানে।

__ কিন্তু অয়ত্রি তো প্রণয়কে ভালোওবাসেনা সাথে পছন্দ করেও করে নাহ!!

___ হুম তা ঠিক।তবে অয়ত্রি ও প্রণয় এরা দুজন এখন একটা পবিত্র সম্পের্ক আবদ্ধ হয়েছে।এই সম্পর্কের একটা জোড়ালো টান আছে।এটা নিশ্চয় আপনি জানেন।

__কোনো কিন্তু নয় মিস্টার আহান।আপনি বোঝার চেষ্টা করুন।ওদের দুজনকে ওদের মতো থাকতে দিন।আর ভালোবাসার প্রাপ্তি মানে শুধু এই নয় যে ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাওয়া। ভালোবাসার মানুষকে নিভৃতে যত্নে দূরথেকে ভালোবেসে যাওয়া একধরণের বড় প্রাপ্তি।দূর থেকেও ভালোবাসা যায় মিস্টার আহান যদি আপনার ভালোবাসা সত্যি হয়।

নিরার কথাগুলো শুনে বুকটা ধক করে উঠলো আহানের ।এবার কি তার ভালোবাসার প্রমাণ সরুপ অয়ত্রিকে অন্যকারো হতে দেবে।নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যকারো হতে দেখার মতো কষ্ট আর কিছুই হতে পারেনা।

আপনি আমার কথাগুলো একবার মন দিয়ে ভেবে দেখবেন মিস্টার আহান…আর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।বলেই ওখান থেকে চলে গেলো নিরা।

আহান ধুপ করে পিছ রাস্তায় বসে পড়লো।হৃদয়ে পাওয়া না পাওয়ার ঝড় উঠেছে।কি এক অদ্ভুত যন্ত্রণা হচ্ছে তার বুকে।অয়ত্রির বিয়ের কথা শুনে কয়েক মহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলো সে।পুরো পৃথিবীটার ভার যেন মাথায় এসে পড়েছে এমন মনে হচ্ছিলো আহানের।মানতে নারাজ ছিলো আহান যে অয়ত্রির বিয়ে হয়ে গেছে তাও আবার তারই সম্মতিতে।
___________________________________________
বিকেল বাজে ৫ টা

ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।আকাশটায় আজ বড়বড় কালোমেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।খুব মেঘ করেছে আকাশ।আকাশের হয়তো মন খারাপ আজ।আকাশের সাথে তাল মিলিয়ে আমারো মনটা আজ খুব খারাপ।মুখে জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিষাদের ছায়া। বাবা,মায়ের,ভাইবোনদের কথা খুব মনে পড়ছে আমার।
তাদের কথা আমার মনে পড়লেও আমার কথা হয়তো তাদের মনে পড়েনা।কত বছর হয়ে গেলো একটা দিনো তারা আমার খোঁজ করেনি।তাদের কাছে আমি আপদ ছিলাম আর আপদ বিদায় হলেতো সেই আপদকে ফের খোঁজ করার কোনো মানে নেই।খুশিতেই আছে তারা।আল্লাহ যেন তাদের সবসময় খুশিতেই রাখে।আল্লাহর কাছে এটাই চাওয়া।এসব মনে মনে ভাবছিলাম হঠাৎ ঘারে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলাম।পিছন ফিরে দেখলাম নিরাপু সন্ধিহান চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

___ নিরাপু কখন এলে!সেই কখন বাসা থেকে বেড়িয়েছো।আর এখন ফিরলে??

___ হুম একটু আগে ফিরেছি।ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয় তোর কাছে এলাম।ফুপি বললো তুই ছাদে এসেছিস তাই ছুটে আসলাম এখানে।

___ কেন আপু কিছু হয়েছে নাকি???

___ আজ আহানের সাথে দেখা হয়েছিলো।ছেলেটির অবস্থা করুন।

নিরাপুর কথা শুনে বুকটা ধক করে উঠলো।অজানা ভয় মনের মধ্যে লাগতে শুরু করলো।আহানের আবার কিছু হয়নি তো।

__ কক কি হয়েছে আপু আহানের??কাঁপা কাঁপা গলা বললাম আমি।

___ তোর বিয়ের কথা শুনে আহান খুব কষ্ট পেয়েছে।পাগলের মতো রাস্তায় ঘিরে বেড়াচ্ছে।

___ কে কে কেন আপু আহান কেউ আমার বিয়েতে কষ্ট পেয়েছে।?আর আহানকে কিভাবে চিনো তুমি আপু??অবাক হয়ে বললাম আমি।

__ আহনকে আগে থেকেই চিনি আমি।যেহেতু সে একজন নামকরা মডেল।

__কিন্তু আহানের আর আমার ব্যাপারে তুমি জানলে কিভাবে??

___প্রণয় ভাইয়া বলেছে।

__ প্রণয় ভাইয়া বলেছেহ!!!অবাক হয়ে বললাম আমি।

___হুম সে সবকিছুই আমাকে বলেছে।first to last
এটা ভাবিসনা যে প্রণয় ভাইয়া তোর ব্যাপারে৷
তোর ব্যাপারে সব কিছু জানে প্রণয় ভাইয়া।তুই কি
তুই কি করিস না করিস বা আহানের সাথে তোর
কেমন সম্পর্ক কেমন করে চিনিস তুই আহান
তোকে চেনে কিভাবে?তোকে ভালোবাসে কিনা
সব জানেন তিনি।

আমি নিরাপুর কথাগুলো শুনে বড়সড় একটা শক খেয়েছি।মাথায় একটা কথাই ঘুড়ছে আমার বিষয়ে এতকিছু প্রণয় ভাইয়া জানলো কিভাবে।সে কি আমায় নিয়ে পিএইচডি করেছে নাকি হাহ!!!

___ আশচার্য ব্যাপার!!!তিনি কেন আমার ব্যাপারে এত নাক গলাবে কেন??আমার ব্যাপারে এত কিছু জেনে তার লাভ কি??

___কারণ তিনি তোকে ভালোবাসে!!!

এবার বরাবড় একটা ধাক্কা খেলাম!!!কথাটা কানে ঝনঝন করে বাজছে।কি বলছে নিরাপু!! প্রণয় ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে??এটা হওয়ার ছিলো কি??আমার তো কিছুতেই এই কথা বিশ্বাস হচ্ছে নাহ।

___ নিরাপদ তুমি আমার সাথে মজা করছো তাইনা??আমাকে কনফিউজড করার জন্য।

___ না অয়ত্রি আমি তোর সাথে কোনো মজা করছিনা।
যা বলছি সব সত্যি।

___ প্রণয় ভাইয়ার আচরণে আমি কখনো ভালোবাসা খুজে পাইনি।

__ কারণ তুই ভালোবাসা খুঁজতে চাসনি। না বুঝতে চেয়েছিস!!বরং সবসময় আমায় কষ্ট দিয়ে এসেছে।

___ আমি আহসানকে পছন্দ করতাম আপু।আর প্রণয় ভাইয়াতো এই কথাটা আমাকে বলেনি।

___ বলার সময় আসলে ঠিকি বলবে।তবে একটা কথা মনে রাখিস প্রণয় ভাইয়া তোকে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে।আর তুই এখন প্রণয় ভাইয়ার বিবাহিত স্ত্রী।
এই সম্পর্কোটাকে অস্বীকার করার সাহস তুই দেখাস না।আশা করছি তুই এই সম্পর্কোটা মেনে নিবি।বলেই নিরা হনহন করে ছাদ থেকে নেমে গেলো।

তার পিছন পিছন আমিও নিচে গেলাম।মাথায় শুধু নিরাপুর কথাই ঘুরছে।নিশ্চিত এবার আমার পাবনা হসপিটালে ভর্তি হতে হবে।

ফ্লাসব্যাক……👇

নিরা মার্কেটে গিয়েছিলো কিছু কসমেটিকস আনতে।
রাস্তায় কিছু ছেলে তাকে টিস্যু করছিলো।রাস্তার ওপাশে দাড়িয়ে ছিলো আহান।নিরাকে দেখতে পেয়ে চিনে ফেলে আহান।কারণ সেদিন অয়ত্রির সাথে দেখেছিলো। তাই আহান নিরার কাছে গেলো।ছেলেগুলো আহসানকে দেখেই পালালো। তারপর নিরা সহ একটু রাস্তার ওপারে একটা গাছের সামনে দাড়ালো।আহান বললো আপনি এখানে??

__একটু কাজে এসেছিলাম।আপনি মিস্টার আহান??

___ হ্যাঁ।আচ্ছা অয়ত্রি আপনার সাথে আসেনি??

___নাহ। অয়ত্রি ওর হাজবেন্ডের সাথে আছে।

___ what এটা কি বলছেন আপনি??মাথাটা ঠিক আছে তো আপনার??

__ মাথা ঠিক আছে আপনার??

__প্রণয় ভাইয়ার সাথে অয়ত্রির বিয়ে হয়েছে কাল।

___ কিন্তু প্রণয় তো অয়ত্রিকে সয্যই করতে পারে না।
তাহলে কেন প্রণয় কেন অয়ত্রিকে বিয়ে করল?

___ কারণ প্রণয় ভাইয়া অয়ত্রিকে ভালোবাসে তাই।

👉পরের টুকু তো আপনারা জানেন ওই..

রাত দশটা______

রুমে শুয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বুঝে বিরহের একটা শুনছিলাম আর নিরাপু আর প্রণয় ভাইয়ার কথা ভাবছিলাম।হঠাৎ পেটে কারো স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠলাম আমি।চোখ খুলে দেখলাম প্রণয় ভাইয়া আমার পাশে শুয়ে আমাকে তার ডানহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে চোখ বুঝে আছে।তার মুখের দিকে তাকাতেই হার্ডবিড ধপাশ ধপাশ শুরু করে দিয়ে।খুব মনোযোগ দিয়ে তার মুখটা দেখতে লাগলাম।

ঘুমের মাঝেও চোখের পাতা গুলো কেঁপে কেঁপে উঠছে।
ঠোঁটের নিচে কালো তিলটা ফর্সা মুখটায় খুব মানিয়েছে।চিকনচিকন হালকা পিংক কালারের ঠোঁট গুলো দেখেই বুকে মোচর দিয়ে উঠলো।ছেলেদের ঠোঁট এতো আর্কষনীয় হয় এটা আমার ভাবনার বাহিরে ছিলো।কালো ও হালকা ব্রাউনের সংমিশ্রণে সিল্ক চুলগুলো কিছুআংশ কপালে এসে পড়েছে।ফ্যানের বাতাসে চুলগুলো উড়ছে।আর জিম করা বডির কারণে আরো আর্কষনীয় লাগে তাকে।কোনো নায়কের থেকে কম নয়।

হঠাৎ আমার হাত চলে গেলো প্রণয় ভাইয়ার চুলে।আলতো করে স্পর্শ করলাম তার গুলো।কি নরম সফট সিল্ক চুল।চুলগুলো আমি হাত দিয়ে বুলিয়ে দিচ্ছি।

প্রণয় ভাইয়ার মুখেরদিকে চোখ পড়তেই চমকে গিয়ে দুরে সরে গেলাম।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
তাহলে এতক্ষন তিনি জেগে ছিলনা আর আমার কান্ড দেখছিলেন।ভাবতেই একরাশ লজ্জা আমায় ঘিরে ধরলো।

আমি তার উল্টো পাশ হয়ে শুয়ে পড়লাম।না জানি তিনি কি ভাবছেন আমার কান্ড দেখে।নিশ্চিত আমায় ছ্যাচড়া মেয়ে ভাবছেন।

★★★★★★★★★★★★★

প্রণয়ের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।তার প্রিয়তমার কান্ড দেখে।মনে প্রশান্তিতে ছেয়ে গেছে।সে বুঝতে পেরেছে তার ভালোবাসার জয় বেশি দুরে নয়।অয়ত্রিও তার কাছাকাছি আসছে।

__জানপাখি তোমাকে তো আমায় ভালোবাসতেন হবে।
জনম জনমের তরে।তুমি শুধু প্রণয়ের।আর প্রণয়ের এর ওই থাকবে।

প্রণয় ভাইয়া এবার আমার হাতটেনে ঘুরিয়ে তার কাছে নিয়ে এলেন।বুকে সাথে জড়িয়ে নিলেন।

___ এই কি কি করছেন ছাড়ুন আমায়। বলেই তার কাছ থেকে ছারা পাওয়ার জন্য মুছরামুছরি শুরু করে দিলাম।কিন্তু তাও আমায় ছাড়লোনা।

___চুপ করে ঘুমিয়ে পড়ো।নয়তো আমি কি করতে পারি তা তুমি ভালো করেই জানো।কাঠ কাঠ গলায় বললেন প্রণয় ভাইয়া।

___ তার কথা শুনে শুকনো একটা ঢোক গিললাম।আমি এটা ভালোকরেই জানি প্রণয় ভাইয়া যা বলে তাই করে।তাই আর বাড়াবাড়ি করলাম নাহ।চুপচাপ হয়ে গেলাম।চোখ বন্ধ করে আছি।প্রণয় ভাইয়া হার্ডবিড শুনতে পারছি।
কেমন যেন এলোমেলো অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে। যখন থেকে শুনেছি এই এলিয়েনটা নাকি আমায় ভালোবাসে!!!
_________________
ইভানি যদি জানতে পারে প্রণয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাহলে ইভানির পাগলামিরই মাত্রা আরো বেরে যাবে ইভানির মাকে বললেন ইভানির বাবা।

তা শুনে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছলো ইভানির মা।
মেয়েটাকে আমার ভালোকরে দাও আল্লাহ। আমি তোমার কাছে হাত জোর করে ভিক্ষা চেয়ে বলছি।ইভানির মা মনে মনে বলছেন কথাগুলো।

>>>>>to be continue….

👉 গল্পটা রিচেইক করিনি…..sorry👇

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে