কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১৯

0
1696

#কাঠগোলাপের_মোহে🌻
#মোনামী_শেখ
#part:19

নিরা আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?কোনো ভণিতা ছরাই বললো আহান।

নিরা চমকে উঠলো আহানের কথায়।একি বলছে আহান.?সজ্ঞানে কথাটা বলেছে বলে মনে হচ্ছেনা নিরার।

__আবার আ আপনি ঠিক আছেন তো আহান??ভেবে চিন্তে কথাগুলো বলছেন তো???

__হ্যা আমি ভেবে চিন্তে সজ্ঞানে কথাটা বলেছি।আপনি কি আমায় বিয়ে করবেন??

___ আপনি কি অয়ত্রিকে ভুলতে পেরেছেন??

___ নাহ ভুলতে পারিনি।তবে ভোলার চেষ্টা করছি।

___আপনি অয়ত্রিকে ভালোবাসেন আর ভালোবাসার মানুষকে কখনো ভোলা যায়না।

___হ্যাঁ আমি অয়ত্রিকে ভালোবাসতাম আর এখনো ভালোবাসি।

কথাটা শুনে বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো নিরার।

___ তো আপনি আবার আমায় বিয়ে করতে কেন চাইছেন??

___অয়ত্রি আমার অতিতর আর আপনি আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। এটা ঠিক অয়ত্রি যায়গা আমি কাউকে দিতে পারবোনা ঠিকি।কিন্তু আপনাকেও এটুকু বলেই থামলো আহান।

___ আমাকে কি ভালোবাসতে পারবেন??

___খুব করে চেষ্টা করবো।তবে আপনার মতো জিবন সঙ্গী আমি কোথাও খুজে পাবনা।আপনাকে এখন নিজের করে পেতে চাই।আপনি না হয় আমার জিবন সাথী হলেন।অনেকেই তো তার ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পায়না তা বলেকি তারা অন্যকাউকে তার জিবনে জায়গা দেয়না বা ভালোবাসতে পারেনা??

___ হ্যাঁ পারে।ভালোবাসাটা সবার কাছে তারতার মতো সঙ্ঘায় সঙ্ঘায়িত।মানুষ হাজারবার প্রেমে পড়েতে পারে।কিন্তু প্রিয় মানুষটার ভালোবাসাটা সবাইকে দিতে পারেনা। মিহি গলায় বললো নিরা।

___হুম সেটাই।তবে আপনাকে একটা কথা দিতে পারি
আপনাকে কখনো কষ্ট দিবোনা।আপনার যথেষ্ট খেয়াল রাখবো আমি।

___হুম।

___ আপনাকে এখনি ডিসিশন নিতে হবেনা।আপনি আরো দুদিন সময় নিন।

___ আচ্ছা। বাই বলেই ফোনটা কেটে দিলো নিরা।লম্বা একটা শ্বাস ছাড়লো মনে হয় এতক্ষণ যে দাম বন্ধ করে ছিলো।ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে নিরা।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে মাথার উপরে ফ্যান ঘুরা সত্বেও।হার্ডবিড দ্রুত গতিতে চলছে।
আহানের বলা প্রত্যেকটি কথা বার বার তার হৃদয়কে অযাচিত ভাবে কাঁপিয়ে তুলেছে। অবশ্য এগুলো হওয়ার কারণ অতিরিক্ত এক্সসাইডমেন্ট।

সেইদিন আহানের সাথে নিরার কথা হওয়ার পর কেটে গেছে একমাস।এই একমাসে প্রতিদিন একবার হলেও কথা হয়েছে নিরা ও আহানের।নিরা আহান কে মানুষিক ভাবে অনেক সাপোর্ট করছে।আহানকে সে আবার নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।এই মাসে আহসানকে নিরা ভালোবেসে ফেলেছে।আগে থেকেই আহানকে পছন্দ করতো নিরা।টিভিতে ফেসবুকে আহানের অনেক ছবি দেখেছে সে।আহান তার ক্রাশ ছিলো।

আর এদিকে প্রণয় অয়ত্রিতে প্রতিনিয়ত কেয়ার, শাসন,ভালোবাসা দিয়েছে।আর অয়ত্রি ও প্রণয়ের প্রেমে পড়ে গেছে বলতে।বিয়ে নামক পবিত্র সম্পের্কো কে কখনো অস্বীকার করেনি অয়ত্রি বা প্রণয়।তবে ভালোবাসাও প্রকাশ্যে আসেনি।সাধারণত প্রণয় কেয়ারিং দেখালেও অয়ত্রি এতে কোনো ভাব প্রকাশ করেনি বাহির থেকে।ভিতরে ভিতরে সেও আহানের এমন কেয়ারিং দেখে প্রেমে পড়ে গেছে নিজের অজান্তেই।তবে মুখ কোনো কিছুই প্রকাশ করেনা।আহান ব্যালকানিতে দাড়িয়ে এসব ভাবছে।
_____________________

ফাইনালি সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে পাবে!!এটা ভাবতেই অন্যরকম ফিলিংসের সাথে পরিচয় হচ্ছে নিরা।

__ওহ গড এটা স্বপ্ন নাকি সত্যি ??আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।নিরা বিরবির করে কথাটা বললো।

তখনি তার রুমে ধুকলাম আমি।আমি নিরাপুকে এমন ব্যাস্ত দেখে বললাম___নিরাপু কি হয়েছে তোমার???

নিরা পিছন ফিরা অয়ত্রিকে দেখেই দৌড়ে গিয়ে অয়ত্রিকে জড়িয়ে ধরে বললো___অয়ত্রি আহান আমাকে আজ একটা বড় সারপ্রাইজ দিয়েছে।

__ কি সারপ্রাইজ আপু??

___আহান আমাকে বিয়ের প্রোপজাল দিয়েছে।

নিরাপুর কথা কেমন যেন লাগলো আমার।তাও হাসি মুখে নিরাপুকে বললাম__ওহ তাই নাকি আপু??

___ হুম তাই!!!আমি খুব খুশি।লজ্জা মুখ নিয়ে বললো নিরাপু।

___তো বিয়ের তোর জোর শুরু করো।মামা মামিকে জানাও।আমি গিয়ে খালামনি আর ছোট আব্বুকে জানাই গিয়ে।হেঁসে হেঁসে বললাম আমি।

___হুম তুই জানা।আমি আজই বাসায় গিয়ে মা বাবাকে জানাচ্ছি তারা অমত করবেনা আমার বিশ্বাস।

___ আচ্ছা।বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম আমি।
___________________________________

প্রণয় কয়েকদিনের জন্য রাজশাহী গিয়েছে।বিশেষ করে ইভানির বাবার অনুরোধে।

প্রণয় ইভানির কেবিনে ইভানির বেডের সাইডে বসে আছে।আর ইভানি তাকে পলক পড়া হীন ভাবে দেখেই চলেছে।

____ মিস ইভানি আপনি কি এখন সুস্থ বোধ করছেন.?বললো প্রণয়।

___খুব সুস্থ বোধ করছি।মুচকি হেসে বললো ইভানি।

___ আপনি কেন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন??শুনেছি আপনি নাকি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেনা??সারাদিন নিজেকে রুমে বন্ধী করে রাখেন।এটা তো ঠিকনা মিস ইভানি।

____তুমি পাশে থাকলে কখনোই আর এমন করবোনা।তুমি থাকবে সারাজীবন আমার পাশে??আহবানে হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো ইভানি।

___ মিস ইভানি আমি আগে থেকেই জানতাম আপনি আমার উপর দূর্বল কিন্তু এটা দূর্বল সেটা জানতাম নাহ।

___তুমি সব জানতে প্রণয়??? কিন্তু তবুও আমায় ইগনোর করেছো??

___ আমি আরেক জনকে ভালোবাসি।তার সাথে আমার বিয়েও হয়েছে।

প্রণয়ের কথা শুনে চোখে বৃষ্টির ধল নেমেছে ইভানির।
নিজের প্রিয় মানুষের মুখে যদি অন্যকারো নাম শোনে তাহলে তার কোন কষ্ট তা আজ বুঝতে পেরেছে ইভানি।

হৃদয়টা জ্বলে পুরো খাক হয়ে যাচ্ছে।কিছুতেই এই কথা মানতে পারছেনা ইভানি।তবুও ইভানি বললো___
সরি প্রণয় আমি তোমার বিষয়ে এসব জানতাম না।জানলে তো এটুকু বলেই থামলো ইভানি।

আমি জানি ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রনা কতটা।কারণ আমিও কাউকে ভালোবাসি।তাও বলছি নিজের জীবনটাকে গুছিয়ে নাও।তোমার এই মূল্যবান জিবনটা নষ্ট করিওনা।আমার চেয়ে ভালো কাউকে তুমি পাবে।আল্লাহ আমাকে তোমার কপালে রাখেনি সেহেতু তোমার কপালে এমন একজনকে রেখেছে যে তোমাকে আজীবন ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখবে।ইভানির দিকে তাকিয়ে বললো প্রণয়।

ইভানি মনোযোগ দিয়ে প্রণয়ের কথাগুলো শুনলো।প্রণয়ের কথাগুলো ঠিক কিন্তু তবুও তার মন যে মানছেন।

___ প্রণয় আমার একটা কথা রাখবে তুমি???

____হুম বলেন মিস ইভানি!?

___আমাকে আপনার বন্ধু বানাতে হবে এবং আপনাকে তুমি বলে সম্মোধন করতে হবে।

___হুম অবশ্যই বলেই হাসলো প্রণয়।

___ইভানি শুধু মলিন হাসলো
কিন্তু তার চোখে মুখে বিষাদের ছায়া।তার চোখেও কষ্ট অনুভব করা যাচ্ছে।
_____________________

নিরা তার বাবা মাকে বিয়ের কথা জানিয়েছে।তারা এক কথায় রাজি কারণ ছেলে ভালো পরিবার ভালো তাই।
নিরা জানিয়েছে আজি সে দেশে ফিরছে।তবে এটা গোপন রেখেছে যে “সে অনেক আগেই দেশে ফিরেছে।

নিরাপু চলে যাওয়া সময় খুব কেঁদেছে।তবে সে একদিক দিয়ে খুব খুশি যে সে বিয়ের পর আমাদের এখানে থাকবে।যেহেতু আহানের বাসা এখানেই।
___________________________________________

চারদিন হয়ে গেলো আহান আমার কোনো খোঁজ নেয়নি না কোনো ফোন কল করেছে।অবশ্য আমি ফোন করিনি তাকে।এটা ভেবেই হয়তো সে আমাকে ফোন দেয়নি।

বিছানায় শুয়ে মনে মনে বলছিলাম কথাগুলো তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো।তাই দরজা খুলে দেয়ার জন্য নিচে গেলাম।আজ বাসায় আমি ছারা কেউ নেই।খালা মনি ছোট আব্বু একটু বেড়িয়েছে।আর শাপলার আজ আসেনি।

নিচে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম তাতে আমি অবাকের শেঘপ্রান্তে এসে পড়েছি।কারণ আমার সামনে প্রণয় ভাইয়া ও তার সাথে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।মেয়েটা কেমন যেন করে আমাকে দেখছে।

দরজা আগলে ধরে থাকবি নাকি সারাদিন??বললেন প্রণয় ভাইয়া।

আমি দরজার সামন থেকে সড়ে দারালাম।তারা ভিতরে ধুকলো।

ইভানি প্রণয়কে বললো___প্রণয় তোমার বউকে দেখতে পাচ্ছিনা যে???

___, তোমার সামনেই দাড়িয়ে আছে আমার বউ।প্রনয় উত্তর দিলো।প্রণয় ভাইয়ার কথায় মেয়েটা আমায় চোখ ঘুরিয়ে ঘুড়িয়ে দেখতে দেখতে বললো___

____ তো অয়ত্রি কেমন আছো তুমি???আর প্রণয় তোমার বউ কিন্তু অনেক কিউট হুম…

___আলহামদুলিল্লাহ। আপনি???

___ভালোই।আর তুমি হয়তো জানোনা আমি কে?

___ আমি না সূচক মাথা নাড়ালাম।

___আমি ইভানি চৌধুরী।প্রণয়ে বন্ধু।

____ আমি এবার কৌতুহল ঝেরে ফেলে বললাম।ওহ আচ্ছা।তো আপু আপনি চলুন আমি তোমাকে গেস্ট রুমে নিয়ে যাই। নিশ্চয়ই টায়ার্ড তুমি.?

ইভানি হেসে উওর দিলো হ্যাঁ।
তো ইভানি পরে কথা হচ্ছে বলেই প্রণয় ভাইয়া নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

আর আমি ইভানি আপুকে গেস্ট রুমে নিয়ে গেলাম।
ইভানি আপুকে রুমে পৌছে দিয়ে নিজের রুমে গেলাম।

রুমে প্রণয় ভাইয়া নেই।হয়তো ওয়াশরুমে আছে।আমি ব্যালকানিতে গেলাম।

প্রণয় ভাইয়াকে যখন ইভানি আপুর সাথে দেখলাম তখন বুকে অদ্ভুত রকমের কষ্ট অনুভব করলাম।কিছু হারানো ভয় মনে জেঁকে বসেছিলো।এখনো সেই ভয় রয়ে গেছে মনে।মনে মনে ঠিকই প্রণয় ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করতে পারছিনা।খুব করে ডুবে গেছি তার প্রেমে।সারাক্ষণ প্রণয় ভাইয়াকে আমার এই বেহায়া চোখ দুটো খুঁজে বেড়ায়।মন চায় তার পাশে সবসময় থাকতে।বিলিন হয়ে যাচ্ছি তার প্রেমের আগুনে। হয়তো তারো এমন অনুভূতি হয়েছিল।কিন্তু আমি তা বুঝতে পারিনি।না বুঝতে চেয়েছি।মনে মনে বলছিলাম কথাগুলো।তখনি পিছনে কারো অস্তিত্ব টের পেলাম।

বুঝতে পেরেছি কে আমার পিছনে দাড়িয়ে আছে।তাই
পিছন ফিরা রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।তখনি আমার হাত টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।

আমি তাকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে চাইলাম।
কিন্তু সে আরো জোরে আমাকে চেপে ধরলো।

__ ছাড়ুন আমায়।বিরক্ত নিয়ে বললাম আমি।

___জানপাখি রাগ করেছো আমার উপর???

___ নাহ।কেন আমি আপনার উপর রাগ করবো বলেন তো??

এবার তিনি আমার ঠোঁটে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে বললো__এইযে তোমায় এ কদিন ফোন দেইনি।

___ নাহতো।আপনি আমার কে যে আপনার উপর রাগ করে থাকবো।মানুষতো তার আপনজনের উপর রাগ করে বাইরের মানুষের উপর নয়।শক্ত গলায় বললাম আমি।

আমার কথাগুলো শুনো প্রণয় ভাইয়া আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো চোয়াল শক্ত করে।আমি তার এমন রুপ দেখে ভয়ে সিটিয়ে গেলাম।আজ নিশ্চয় তিনি আমায় তুলে আছার মারবে।

এবার তিনি আমায় দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।আমার আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলেন।কামড়ে কামড়ে ঠোঁটকে জখম করছে প্রণয় ভাইয়া।আর এদিকে আমার অবস্থা করুন।চোখের জল ফেলছি তার কাছথেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু তার সাথে পেরে উঠছিনা।কাঁটা মুরগির মতো ছটফট করছি ব্যাথায়।একসময় জ্ঞান হারালাম।

to best continue….

[গল্পের পার্টটা একটি এলোমেলো লাগতে পারে তার জন্য সরি]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে