কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-৮+৯

0
1703

#কাঠগোলাপের_মোহে🌼
#মোনামী_শেখ
#part:8+9

আমি উর্মি বা এই নামে কাউকে চিনি না।দয়াকরে আমাকে যেতে দিন।লেট হয়ে যাচ্ছে।এই অরিন চল..
বলেই কিছুদূর যেতেই রিকশায় উঠে দুজনে বাড়ির দিকে রওনা হলাম।

কিছুক্ষণ আগে_____

আইসক্রিম ভ্যানের কাছে যখন গেলাম তখন পিছন থেকে কারো ডাক শুনে পিছন ঘুরলাম।তাকে দেখে বুকটা ধক করে উঠলো।মনে পড়ে যাচ্ছে সেই অতিতের ভয়ঙ্করদিন গুলোর কথা।যা আমার মস্তিষ্কের উপর প্রখর ভাবে চাপ ফেলছিলো। তৎক্ষনাৎ চোখ দুটোও ছি ছল করছিলো জলে।

___কিরে অরত্রি তুই এখানে???এখানে কিভাবে এলি তুই??অবিষাশ্য চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো আমার বড়বোন উর্মি।

___আপনি ভুল করছেন আমার নাম অয়ত্রি নয়।মিহি কন্ঠে বললাম।

___কিহ!! তুই অয়ত্রি নস??তুয়ি অয়ত্রি।মিথ্যা বলছিস কেন??ভ্রু কুঁচকে বললো উর্মি আপু।

__না আমি অয়ত্রি নই। আর আপনাকেও আমি চিনি না।

___কিন্তু___ উর্মি আপুকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলাম না।

বাকিটা তো আপনার জানেন ওই।

আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে ঝড়ে পড়েছে কষ্টের বহিঃপ্রকাশকৃত জল।

আর অরিন অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

__কিরে অয়ত্রি তুই কাঁদছিস কেনো???আর ঐ মেয়েটার সামনে তখন মিথ্যা বললি কেন???যে তুই অয়ত্রি নস??

আমি চোখ মুছে অরিনের দিকে তাকালাম আর বললাম__ এমনি কাঁদছি। আর ঐ মেয়েটা আমার বড় বোন উর্মি।

__ওহ।তাহলে তুই বললি কেন যে তুই অয়ত্রি নস?আর তুই তোর বোন কে চিনলেও না চেনার ভান করলি কেন??

__আমার পরিবারের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ বা সম্পর্ক নেই।প্লিজ আর কিছু আমায় জিজ্ঞেস করিস না।

___আচ্ছা।এই নে ধর আইসক্রিম।গলেই গেছে মনে হয়।
আইসক্রিমের কাপটা আমার হাতে দিয়ে বললো অরিন।

কিছুক্ষণ পর ফোনটা বেজে উঠলো।ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করলাম।ছোট আব্বু ফোন দিয়েছে।

__ আসসালামু আলাইকুম??

___ওলাইকুম আসসালাম।অয়ত্রি কোথায় তুমি??আমি তোমার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।তুমি ওটাতে করে বাসায় চলে যাও। আজ অফিসে আমার একটু ইনর্পটেন্ট কাজ পরে গেছে তো তাই তোমাকে নিতে যেতে পারিনি।

___ ইটস ওকে। আসলে ছোট আব্বু আমি এখন অরিনের সাথে রিকশায় আছি।আমরা বাসায় যাচ্ছি।গাড়ি পাঠানোর আর প্রয়োজন নেই।

___ আচ্ছা। দেখে শুনে যেয়ো।আর কাল থেকে গাড়িতে করেই যাওয়া আসা করবে।বুঝেছো??

___হুম বুঝেছি।আল্লাহ হাফেজ। রাতে দেখা হচ্ছে।

___আল্লাহ হাফেজ মামনি। বলেই ফোনটা কেটে দিলো ছোট আব্বু।

__ ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে আইসক্রিম খেতে লাগলাম।
আইসক্রিম খাচ্ছি আর ঢাকা শহরের ব্যাস্ত নগরী পর্যবেক্ষন করছি।

হঠাৎ চোখ গেলো একটা ব্লাক কালারের গাড়ির উপর।
চোখে সানগ্লাস মুখে মাস্ক পড়া একটা লোক ওই গাড়িতে বসে আছে। আমার কেন জানিনা লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে চেনা চেনা।কিন্তু কে??সেটা তো মাথায় আসছে না।চুলের কাটিং,বডি সেপ,ফর্সা কুঁচকে রাখা কপালটা আর বড় কথা প্রণয় ভাইয়ার একটা ঘড়ির মতো সেই ঘড়ি সেই লোকটার
হাতে।সব মিলিয়ে তার সাথে প্রণয় ভাইয়ার মিল পেলাম। কিন্তু প্রণয় ভাইয়া তিনি তো রাজশাহীতে।আর এখন আসার ও কথা নয়।হয়তো আমারি ভুল। কারণ পাই রকম কত ঘড়ি কতজনের আছে।তবে মনে মনে সেই খচখচানিটা এখনো দূর হচ্ছে না!!!

এসব ভাবছি হঠাৎ অরিনের কথায় হুশ ফিরলো আমার।

__কি অয়ত্রি তোর কি হয়েছে?? ঝৃষি মনিঝৃষিদের মতো ধ্যান ধরে বসে আছিস কেনো???

__আরেহ কিছুনা।এনমিই।মলিন হেসে বললাম অরিনকে।

অরিনের সামনে প্রণয় ভাইয়ার নামটা মুখে তোলাই যাবেনা।নয়তো আবার সেই ভাঙা রেকর্ড চালু হয়ে যাবে।আর মাঝখান থেকে আমার কানটা ঝালাফালা করে দিবে।

আর কিছুক্ষণ পর বাসায় পৌঁছে গেলাম।বাসায় গিয়ে দেখলাম খালামনি ঘরে বসে কুরআন শরিফ পড়ছে।তাই তাকে আর ডিসটার্ভ করলাম না।আমি সোজা রুমে চলে গেলাম।

ওফফফফফ খুব ক্লান্ত লাগছে।মাথা ঝিমঝিম করছে।
চোখ দুটো মনে হয় ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে। তাই আর দেরি না করে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পেলাম।

ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে ব্যালকানিতে গেলাম। পুষি দরকার এক কোণে গুটিশুটি মেরে বসে আছে।তা দেখে আমার খুব মায়া লাগলো। একদিন পুষির সাথে খুব কম সময় স্পেন্ড করেছি। আর এনমি হলে সেসারাদিন প্রায় আমার সাথেই ঘুরতো।

হাটু গেরে বসে পুরির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।পুষি মুখ তুলে চাইলো।আমাকে দেখে খুশিতে তার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো।আমি হেসে কোলো নিলাম তাকে।সে মৃদু স্বরে ম্যাও করে উঠলো।

আমি আস্তে করে তার নাকটা টিপে দিলাম।আর বললাম__ মন খারাপ করিসনা পুষি।দেখছিস ওই তো
কি ব্যাস্ততায় দিনকাল কাটছে।

সে বেচারি মাথা নাড়ালো।হয়তো বুঝেছে কি বলছি আমি।

পাশের রুম থেকে খালামনির ডাকছে আমায়।তাই পুষিকে চেয়ারের উপর রেখে খালা মনির ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।

__খালামনি ডাকছিলে আমায়?ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললাম আমি।

___ হুম।কেমন পরিক্ষা দিলি মা??? পরিক্ষার হলে কোনো সমস্যা হয়নি তো ?? বললো খালামনি।

__ না খালামনি কোনো সমস্যা হয়নি। আর পরিক্ষা আল্লাহর রহমতে আর তোমাদের দোয়ায় ভালোই হয়েছে।হেঁসে বললাম খালামনিকে।

__ তোর ছোটআব্বু তো তোকে পৌঁছে দেয়নি তাহলে তুই আসলি কার সাথে??

___ অরিনের সাথে রিকশা করে এসেছি। জানো খালা মনি আজ উর্মি আপুর সাথে দেখা হয়েছিলো।

কথাটা শুনে বিষ্ময়কর চোখে আমার দিকে তাকালো খালামনি আর বললো__ উর্মি এখানে কেন??তাও আবার তোর পরিক্ষার সেন্টারে!!!

__হুম খালামনি।আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো বাট আমি বলিনি।আর চাইও না ওর সাথে কথা বলতে।

part:9

___ ঠিক করেছিস একদম।ওর মতো বোন আমি জিবনে আর কোথাও দেখিনি।যে কিনা নিজের ছোট বোনকে মিথ্যা অপবাদে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আর তোর মা?? সে তো মা হওয়ার যোগ্যতাই রাখে না।মা নামে কলঙ্ক সে।যদিও সে আমার নিজের বোন। উর্মি যদি সেদিন ওমনটা না করতো তাহলে আজ তুই পরিবার ছাড়া হতিনা।

___ জানো খালামনি আজও সেই ভয়ঙ্কর অতিত আমায় প্রতিরাতে কাঁদায়। ছোট ভাইটার করুন আর মায়াময় মুখটা আমার সারাক্ষণ মনে পড়ে।হয়তো আল্লাহ তাকে ভালোই রেখেছে।আজও হয়তো তার অয়ত্রি আপুর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। আর ভাবছে কখন তার অয়ত্রি আপু এসে তার রাগ ভাঙ্গাবে।কিন্তু আমি যে আর ঐ বাড়িতে ফিরেবো কখনো খালামনি।চোখ বেয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে আর কথাগুলো বলতে যেয়ে গলাটা কেঁপে কেঁপে উঠছে আমার।

___ তোকে শান্তনা দেয়ার ভাষা আমার নেইরে মা।তবুও বলবো নিজেকে শক্ত কর।আর কখনোই নিজেকে একা ভাবিনা।আমরা তোর পাশে আছি সারাজিবন।খালা মনি আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো কথাগুলো।

___ বুঝতে শিখেছি থেকে মা কখনোই বুকে জড়িয়ে আমাকে আদর করেননি।না কখনো নিজের হাতে আমাকে কখনো খাইয়ে দিয়েছে।কিন্তু আপুকে ভাইয়া আদর করে নিজের হাতে খাইয়ে দিতো প্রতিদিন।আমার বাবা মা থাকা সত্বেও আমি অনাথ।এর থেকে বড় কথা আরও কি হতে পারে।

___ তোকে না বলছি ঐসব বিষয় নিয়ে আর ভাববিনা।তাহলে তোর ব্রেনে চাপ পড়বে।আর তার পর কি হবে সেটা তো জানিস ওই।

___ হুম জানি।

___ তাহলে এখন আয় খাবার খেতে যাই।তোর জন্য এখনো খাইনি আমি।বললো খালামনি।

___ আচ্ছা চলো।বলে দুজনেই নিচে গেলাম।

এভাবেই কেটে গেলে কয়েকটা দিন।পরিক্ষা ও শেষের পথে।

দিন গুলো খুব ব্যাস্ততায় কাটছে।এর মধ্যে প্রণয় ভাইয়ার কথা আমি প্রায় ভুলতেই বসেছি।

________________________________________________

এদিকে প্রণয় হসপিটালের ক্যাবিনে বসে ফাইল দেখছে। তখনি দরজায় নক দিলো কেউ। প্রণয় বললো— কামইন…

দরজার বাইরে থাকা মানুষটি ভিতরে প্রবেশ করলো।
প্রণয় মাথা তুলে মানুষটির দিকে তাকালো।

সামনে দাড়িয়ে আছে এই হসপিটালের মালিকের মেয়ে ইভানি চৌধুরী ।মুচকি হেসে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

___ ওহ মিসেস ইভানি আপনি??প্লিজ বসুন।বললো প্রণয়।

ইভানির হাসিটা এবার চওড়া হলো।সে এগিয়ে এসে সামনের চেয়ারটায় প্রণয়ের মুখোমুখি বসলো।

তো মিসেস ইভানি কোনো সমস্যা?সোজা সাপটা ভাবে বললো প্রণয়।

___ আরেহ না মিস্টার প্রণয় তেমন কিছুই না।যাষ্ট আপনার সাথে দেখা করতে এলাম। এখানে আপনার কোনো প্রব্লেম হচ্ছেনা তো।বললো ইভানি।

___না কোনো সমস্যা হচ্ছে। সব ভালোই চলছে। তো চা না কফি???

___ না কিছুই খাবোনা এখন। তবে আপনি যদি চান তাহলে কোনো রেস্টুরেন্টে ডিনারটা সাড়তে পারি।মুচকি হেসে বললো ইভানি।

___ সরি মিসেস ইভানি আমার কিছু ইর্পটেন্ট কাজ আছে আজ তা আপনার ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারলাম না। ফাইলগুলো দেখছে আর বলছে প্রণয়।

___ ওকে ওকে নো প্রব্লেম।আরেকদিন না হয় আমার ইচ্ছেটা পূরণ করলেন। আর একটা কথা; আমি কি আপনাকে প্রণয় বলে সম্বদ্ধন করতে পারি।

___ ওকে। আমার এখন কিছু কাজ আছে।সব কাজ গুলো করতে হবে। সো__ আর কিছু বললো না প্রণয়।

___ ইভানি বুঝতে পেরেছে কি বলতে চাইছে প্রণয়।তাই সে চেয়ার থেকে উঠে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বাই বলে চলে গেলো।

এবার প্রণয় পকেট থেকে ফোনটা বের কর গ্যালারিতে ধুকলো।একজনের কিছু পিকচার বারবার দেখছে প্রণয়।ঠোঁটের কোণে ফুঠে উঠেছে মুচকি হাসি।

তোমাকে ভালোবাসি।আর এটা আমি বুঝতে পেরেছি।আর হ্যাঁ জান খুব তারাতারি ফিরবো তোমার কাছে।তোমাকে নিজের করে নিবো। বলেই ডেভিল স্মাইল দিলো প্রণয়!!!

👉to be continue 🌼🌼🌼

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে