কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-১৩

0
1720

#কাঠগোলাপের মোহে🌻
#মোনামি শেখ
#part:______13

ভাইয়া আপনি??আপনি এখানে!! আর আমাকেই বা এভাবে জড়িয়ে ধরেছেন কেন???অবাক হয়ে প্রণয় ভাইয়ার দিকে চেয়ে কথা গুলো বললাম আমি।

আর প্রণয় ভাইয়া অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আমার উপর।আনি একটা শুকনো ঢোক গিললাম।এই খাটাশটা আবার আমার জিবনটাকে সাহারা মরুভূমির করে দিতে এসেছে নিশ্চয়।

কিছুক্ষণ পর তিনি আমাকে বললেন__নিচে তাঁকা

আমি নিচে তাকাতেই কলিজা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়ালো। আর ২ পা বাড়ালেই আমি ছাদ থেকে পড়ে যেতাম।আর প্রণয় ভাইয়া আমাকে বাঁচিয়েছেন।পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

ছাদের এককোণে কোনে কোনো রেলিং দেয়া নেই।আর আমি আহানের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে এই কোণটায় এসে পড়েছি তা লক্ষ্যই করিনি।আহানের সাথে কথা বলারত অবস্থা পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে তা টের পেয়ে পিছন ঘুরতেই ভাইয়াকে দেখতে পাই।

তার পরেরটুকু তো আপনারা জানেন ওই…

এবার মাথা তুলে ভাইয়াকে সরি বললাম।
তিনি কিছুনা বলেই ধাক্কা দিয়ে আমায় তার কাছ থেকে সড়িয়ে নিলেন।আর হনহন করে ছাদ থেকে চলে গেলেন।

আমি হাফ ছেড়ে বাঁচালাম।এইবারে জোর বাঁচা বেঁচে গেলাম।

আহানকে আর ফোন দিলাম না। কিছুক্ষণ ছাদে থেকে নিচে গেলাম।রান্নাঘর থেকে কফি বানিয়ে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম।

আধশোয়া হয়ে হুমায়ুন আহমেদের লেখা উপন্যাস “রুপা” বইটা পড়ছি আর ফাঁকে ফাঁকে কফিতে চুমুক দিচ্ছি।ভালোই লাগছে উপন্যাসটা পড়তে। হুমায়ুন আহমেদের লেখা মৃন্মীয়ি উপন্যাসটাও আমার খুব প্রিয়।তার লেখা আরো একটি” নীল অপরাজিতা “। উপন্যাস টা পড়া এখোনো বাকি আছে।

আমি ফেসবুকে স্টোরি পড়তে ভালোবাসি।বলতে গেলে এটাও এক প্রকারের নেশা। আমার প্রিয় লেখিকাদের লিস্টে___ অনিমা কোতয়াল,ইলমা বেহরোজ,মৌরি মরিয়ম,ইতি চৌধুরী, তৃধা আনিকা,তৃধা মোহিনী,আরো অনেকেই এই আছেন।তবে ছেলে লেখকের গল্প আমি মোটেও পড়িনা শুধু হুমায়ুন আহমেদের ছাড়া।ছেলেদের লেখা গল্প পড়তে কেন জানিনা আমার ভালো লাগেনা। তবে বিখ্যাত ব্যক্তির কথা আলাদা।

কিছুক্ষণ পর রুমে ধুকলো নিরা আপু।নিরা দৌড়ে এসে আমাকে ঝাপটে ধরলো আর আমিও।আমি সারপ্রাইজ নিরাপু কে দেখে।

__ নিরাপু তুমি? তুমি কখন এলে!! এক্সসাইটেড হয়ে চিল্লিয়ে বললাম আমি।

___ আরে বানু আস্তে আস্তে।এত এক্সসাইডম্যান তোর শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।আমার গালে ঠাস করে একটা চুমু খেয়ে বললো নিরাপু।

__আমিও নিরাপুর গালে ঠাসসস করে একটা চুমু দিয়ে বললাম__ তুমি এখানে এসেছো তা আমার কল্পনারো বাইরে।তাই এক্সসাইটেড হয়ে পড়েছিলাম।সরি আপু ওওওও…

নিরাপু আমার কথা হেঁসে দিলো।আর বললো___ তুই অসুস্থ এটা জেনে আমি কি করে না এসে থাকতে পারি বল??আর আমার ফাইনাল পরিক্ষা শেষ তাই আর দেরি না করে দেশে ফিরে এলাম।

___ তা তুমি কখন দেশে ফিরেছো??আর আমাকেও জানাওনি তোমার আশার কথা??মুখটা হুতুম পেশার মতো হোপ করে বললাম আমি।

__ এয়ারপোর্ট থেকে নেমে সোজা এখানে এসেছি। বাড়িতে কেউ জানেনা। আমার আসার খবর শুধু প্রণয় ওই জানতো। ফুফি, ফুপা আমাকে দেখে সে লেভেলের ঝটকা খেয়েছেরে বনুওও।বলে হেঁসে কুটিকুটি নিরাপু।

___ আমি কিন্তু সেইইই খুশি আপু।যা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবোনা গো!!

___ আমিও অনেককক খুশি। তবে তোর অসুস্থতার কথা শুনে খুব টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম।

___ এই আপু যাও আগে ফ্রেশ হয়ে আসো।খুব টায়ার্ড দেখাচ্ছে তোমায়।পড়ে কথা হবে।

নিরা আপু ওকে বলে লাগেজ থেকে জামা বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।

রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছি।আমার পাশে নিরাপু তার পাশে প্রণয় ভাইয়া।আর ওপর পাশে খালামনি ও ছোট আব্বু বসেছে।

খালামনি ছোট আব্বু সবাই খুব খুব খুশি নিরাপু আসাতে।কয়েক বছর ধরে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে আমেরিকার ছিলো নিরাপু। তাই এতদিন পর নিরাপুকে দেখে সবারই ভালো লাগছে।

খাওয়া শেষে প্রণয় ভাইয়া রুমে চলে গেলেন।আর আমরা ৪জন মিলে অনেক্ষণ আড্ডা দিলাম।এর পর নিরাপু আমি দুজনেই রুমে চলে গেলাম।

রাত ১১ঃ৩৪ বাজে।তাই আর গল্পসল্প না করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

খুব ভোরে উঠে নামাজ আদায় করে দুজনেই হাটতে বেড়োলাম।

হাটতে হাটতে আহানের বাড়ির সামনে আসতেই আমার চোখ পড়লো ব্যলকানিতে দাড়িয়ে থাকা সদ্য ঘুম জড়ানো আহানের মুখ।বুকটা কেমন জানি করে উঠলো তাই সাথ সাথ চোখ নামিয়ে ফেললাম।নিরাপুকে নিয়ে আবার বাড়ির যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরলাম।

আর এদিকে অয়ত্রিকে দেখে মিটিমিটি হাসছে আহান।
অয়ত্রিকে দেখে মনে শান্তি পেলো সে।খুব করে তার ইচ্ছে করে অয়ত্রি হাতটা ধরে ঝুম বৃষ্টির দিনে হাঁটার।
অয়ত্রি কপালে পড়া অবাধ্য ছোট ছোট চুলগুলো সযত্নে কানের পিঠে গুজে দেয়া।সবচেয়ে বেশি ইচ্ছে কেটে অয়ত্রির নাকের নিচের তিল টাকে ছোট ছোট চুমুই ভরিয়ে দেয়া। নিজের মনে আক্ষাঙ্খা গুলো যেন তীব্র ভাবে নাড়া দিচ্ছে আহানকে।
__________________________________________

আর এদিকে ইভানি প্রণয় চলে যাওয়ার কথা শুনে পাগলের মতো অবস্থা হয়েছে।সারাদিন রুমে নিজেকে বন্ধী করে রাখে আর প্রণয়ের ছবি বুকে ধরে কাঁদে।
তার মনে একটাই আশঙ্কা প্রণয় যদি আর ফিরে না আসে!!!প্রণয় ইভানির তার প্রতি দূর্বলতা বুঝতে পারেনি বা বুঝতেও চায়নি এটা ইভানি ভালোকরেই জানে।এবার প্রণয় আসলেই ইভানি তার মনের কথা
প্রণয় কে বলবে। সে এটা ঠিক করেছে।

_______________

সকালের খাওয়া দাওয়া শেষে
আপু সহ রুমে বসে গল্প করছি। আমার কোলে পুষি চুপটি করে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পাশের রুম থেকে খালামনির ডাক শুনতে পেলাম।তিনি আমাকে
ডাকছেন।তাই আপুকে রুমে রেখে তারাহুরা করে তার রুমের দিকে যেতে লাগলাম।

তখনই কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে পড়ে গেলাম।ব্যাথা কম পেয়েছি।কোমরে হাত দিয়ে মাথা তুলে দেখে প্রণয় ভাইয়া আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন।তার মানে তার সাথেই ধাক্কাটা খেয়েছি। আর ভাইয়া আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে যা দেখে আত্মাটা লাফিয়ে উঠলো।প্রণয় ভাইয়াকে আমার সামনে হাসতে আজ প্রথম দেখলাম।তিনিঔ হাসতেও পারেন!!!

একের পর এক অবাক কান্ড আমার সাথে ঘটেই চলেছে।অবশ্য তার হাসিটা দেখে যে কোনো মেয়ে পাগল হয়ে যাবে।কিন্তু এখন আমার রাগ হচ্ছে তার হাসি দেখে।একেবারে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতো। তাই আমি তারাহুরো করে উঠে তাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই তিনি আমার কোমর জড়িয়ে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আমার দিকে কেমন জানি করে তাকিয়ে আছেন।এতক্ষনে আমার কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেছে।আর রাগ সে তো ফুস করে উড়ে গেছে।

আমার কেমন জানি এক অনুভূতি হচ্ছে কিন্তু সেই অনুভুতির ব্যাখা আমার জানা নেই।

👉to be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে