অপ্রিয় প্রিয়জন পর্ব-০২

0
381

#অপ্রিয়_প্রিয়জন
#Fiza siddique
#পর্ব-2

ওদের কথা শুনে ফারহান হাসিমুখে বলে, হু তুই তো সুন্দরি নাহ, তারপর বিড়বিড় করে বলে মায়াবী তুই, ভীষণ মায়াবী তুই।

কিরে আজ তো টেডি ডে, বৃষ্টিকে একটা টেডি দিতে পারতিস তো তুই, ফারহানকে উদ্দেশ্য করে বলে সৃজা। আসলে বৃষ্টি যে ফারহানকে ভালোবাসে এটা সৃজা আর সোহেল জানে।

যে নিজেই একটা টেডি তাকে আবার কি টেডি গিফট করবো বলে মুচকি হাসে ফারহান।
বাকিদের এমন কথাবার্তায় বৃষ্টি লজ্জায় লাল নীল হয়ে যায় লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে ওর।

চারজন একসাথে মেঠো রাস্তা পেরিয়ে একটা সুন্দর জায়গা দেখতে পায়। সরু পাকা রাস্তা আর দুদিকে কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া গাছ, কিছু ফুল রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সামনে সৃজা আর সোহেল হাত ধরে হাঁটছে আর খুনসুটি করছে, ওদের থেকে কিছুটা দূরে বৃষ্টি আর ফারহান পাশাপাশি হাঁটছে, দুজনে কারুর মুখে কোন কথা নেই যেন দুজনে সময়টাকে ভীষণভাবে উপভোগ করছে। হঠাৎ ফারহানের ফোন আশায় কিছুটা দূরে সরে গিয়ে কল রিসিভ করে, এটা দেখে মুহূর্তে বৃষ্টির কোমল মনে মেঘ ছেয়ে যায়, ভীষণ কষ্ট পেয়ে চুপচাপ রাস্তার ধারে বসে পড়ে।

সৃজা এসে বৃষ্টির পাশে বসে নানান ভাবে মন খারাপ কেন জিজ্ঞাসা করায় বৃষ্টি মাথা নিচু করে কেঁদে দেয়।

~ফারহান তো বেশিরভাগ সময় তন্বীর সাথে সময় কাটায়, ঘুরতে যায়, আজ প্রথম আমি আর ফারহান কোথাও এসেছি তাও ওকে কেন আমাদের মাঝে আসতে হবে বল? বলতে বলতে কান্না করে বৃষ্টি।
আচ্ছা ঠিক আছে তুই শান্ত হ আগে, আর কি হয়েছে বল আমাকে। ফারহানটাই বা কোথায় গেল সান্ত্বনা দিতে দিতে বলল সৃজা।

কিরে কি হয়েছে ও এভাবে কান্না করছে কেন? কোথাও লেগেছে? ব্যথা পেয়েছিস? কি হয়েছে বল আমাকে। ওই বলনা কি হয়েছে? ফারহানকে এমন করে চিন্তিত হতে দেখে কান্না কমে যায় বৃষ্টির। ফারহান সৃজাকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমি তো একটা কল আশায় সাইডে গিয়ে কথা বলছিলাম, এসে দেখি ও কান্না করছে। এক মিনিট! ওই তাকা আমার দিকে, কলটা আম্মু করেছিল, তন্বী করেনি। এটুকু বলেই মুচকি হেসে তাকায় বৃষ্টির দিকে, এদিকে বৃষ্টিও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ফারহানের দিকে আর মনে মনে ভাবে ও কিভাবে বুঝলো যে আমি তন্নী কল করেছে ভেবে কষ্ট পেয়েছি। ফারহান মুচকি হেসে আলতো হতে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল, বুঝি বুঝি আমি সব বুঝি। আবারো অবাক হয়ে তাকানো বৃষ্টি।

এদিকে এতক্ষণে বাকিদের ব্যাপারটা বোধগম্য হতেই হু হা করে হেসে ওঠে সবাই, ফারহান আর বৃষ্টি কিছুটা লজ্জা পায়। ফারহান এই মুহূর্তটা ক্যামেরাবন্দি করে নেয়, ফারহানের পাশে বৃষ্টি, তারপর সৃজা পাশে সোহেল। অনুভূতিগুলোকে যেন আজ কেউ ধরে রাখতে পারছে না, মুক্ত পাখির মত উড়ে বেড়াচ্ছে খোলা আকাশে।

ফারহান বৃষ্টির হাত ধরে কিছুদূর এগিয়ে একটা জায়গায় বসে, আর বৃষ্টিকেও বসতে বলে, তো ফোনটা দে তো, এই কথাটা শোনার সাথে সাথে বৃষ্টি নিজের ফোনটা পিছনে লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে আর বলে কেন আমার ফোন নিয়ে তোর কি কাজ নিজের ফোনটা আছে আমারটা দেওয়া যাবে না। জোর করে বৃষ্টি হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে অন করতেই লজ্জায় পড়ে যায় বৃষ্টি। এত লজ্জা পেতে হবে না আমি জানি সব, বলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফারহান আবার বলা শুরু করল কিছু কথা বলি মন দিয়ে শুনবি।

তোর বয়সটা অনেক কম, বাচ্চা মেয়ে দুষ্টুমিতে ভরা তুই। এটা তোর ভালোবাসা নয় এটা নিতান্তই তোর আবেগ, ভুলটা তোর না ভুলটা বয়সের, এই বয়সে আবেগ এ গা ভাসিয়ে দেওয়াটা স্বাভাবিক, এই বয়সে আমাদের জীবনে যেটা আসে সেটা ভালোলাগা। ভালোবাসা আর ভালোলাগা এক করে ফেলিসনা। দেখবি সময়ের সাথে সাথে এই আবেগ, মোহ কেটে যাবে, এই বয়সটা পড়াশোনা করার। তুই অনেক ভালো স্টুডেন্ট কিন্তু তুই কি জানিস কিছুদিন ধরে তুই পড়াশোনা কতটা কমিয়ে দিয়েছিস? আমি তোকে খুব বড় হতে দেখতে চাই। প্লিজ এখন আপাতত এসব ভুত মাথা থেকে নামিয়ে মন দিয়ে পড়াশোনাটা কর। আমারও তোকে ভালোলাগে বাট ভালোবাসা নিয়ে আমি কখনো ভাবিনি।

বৃষ্টি মাথা নিচু করে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে। কিছুক্ষন চুপ থাকার পর ফারহানের আর বৃষ্টির কান্না সহ্য হলো না, দুহাতে ওর মুখটা উঁচু করে ধরে, আর কাঁদিস না প্লিজ, তোর কান্ড আমার সহ্য হচ্ছে না আমার। তুই আমার কাছে ফ্রেন্ডের থেকেও বেশি কিছু, কেন বুঝিস না। এটুকু বলেই আলতো করে বৃষ্টির কপালে নিজে ঠোঁট ছোঁয়ায় তারপর ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে দুজনে চুপ থেকে কিছুক্ষণ সময়টা উপভোগ করতে থাকে। এতক্ষনে বৃষ্টির কান্না থেমে গিয়েছে, একটা মিষ্টি, নতুন অনুভূতি খেলা করছে ওর মনে আর ঠোঁটে লেগে আছে মিষ্টি হাসি।

খেতে বলে ফারহান ঠিক মতো খেতে পারছিলনা, কারণ তরকারিতে ঝাল একটু বেশী হয়েছিল আর ফারহান একজন ঝাল খেতে পারেনা। ফারহানের এমন অবস্থা দেখে বৃস্টির গলা দিয়ে আর খাবার নামলোনা। হাত ধুয়ে উঠে চুপচাপ একটা গাছের গুঁড়ির উপর গিয়ে বসলো। কিছুক্ষনের মধ্যে ফারহান এসে পাশে বসলো।

খেলিনা কেনো তুই? আমার নাহয় ঝাল লাগছিলো বলে ঠিক মতো খেতে পারলাম নাহ। কিন্তু তুই খাবার ছেড়ে উঠে এলো কেনো? ঝাল জিনিস তো তুই পছন্দ করিস খুব।

না আসলে এমনি ভালো লাগছিলনা খেতে তাই উঠে এলাম। এমনি নাকি আমি খেতে পারলাম না বলে তুইও খেলিনা?
ফারহানের কাছে এভাবে ধরা পড়ে যাওয়ায় যেনো থতমত খেয়ে গেলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না, কিন্তু এভাবে ধরা পড়া যাবেনা তাই বললাম আসলে তেমন নাহ, ঝাল খেলে ঠোঁটটা জ্বালা করছিল তাই খেতে ইচ্ছে করলোনা। তাড়াহুড়োতে কি বলেছি নিজেও জানিনা, কিন্তু আমার কথা শুনে ফারহান হু হা করে হাসতে লাগলো, আর বৃষ্টি আড়চোখে ওর হাসি দেখতে দেখলাম।

কিন্তু আমি তো শুধু কপালে কিস করলাম, তাহলে ঠোঁটের এই অবস্থা কি করে হলো? কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে কথাটা বলায় যেনো কয়েকটা হার্ট বিট মিস হয় গেলো বৃষ্টির, ওড়নাটা খামচে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ওদের কথার মাঝেই সৃজা আর সোহেল এসে বসতে চায় ওদের সাথে, তাই বৃষ্টি ফারহানের পাশ থেকে সরে ওদের বসার জায়গা করে দিতে গেলে সৃজা বৃষ্টিকে ঠেলে ফারহানের সাথে চিপকে দিয়ে দুজনে বসে পড়ে। বৃষ্টি তো আজ শেষ পুরো, সবাই আজ এত এত লজ্জাতে ফেলছে ওকে যে চোঁখ তুলে তাকাতেও পারছেনা।

এভাবে থাকতে চাইলে আমার কিন্তু কোনো অসুবিধা নেই, ফারহানের কোথায় বৃষ্টির হুস আসে, আর লজ্জায় আরো গুটিয়ে যায়। আসলে সৃজা ঠেলে দেওয়ার ফলে বৃষ্টি সোজা ফারহানের বুকে গিয়ে পড়ে, আর দুহাত দিয়ে ফারহানের বুকে ঠেস দিয়ে ধরে।

ফারহানা তুইনা টমেটো খেতে খুব পছন্দ করিস? সৃজার কোথায় হ্যাঁসূচক মাথা নাড়তেই সৃজা আবার বলে তাহলে তোর পাশে একজন পুরো টমেটো হয়ে বসে আছে দেখতে পাচ্ছিসনা? টুপ করে খেয়ে ফেল। বলেই সৃজা আর সোহেল হাসতে থাকে। বৃষ্টি আর এক মুহুর্ত ওখানে না দাড়িয়ে কিছুটা দূরে এসে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আল্লাহ আজ এরা কি আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছে নাকি? এত লজ্জা আমি জীবনেও পাইনি, বলে মুচকি হেসে দেয় আর ভাবে সন্ধ্যার আগে এই মুহূর্তটা খোলা আকাশের নিচে গ্রাম্য পরিবেশে খুব সুন্দর সুন্দর স্মৃতি দিয়ে গেলো আমাকে।

ভাবনার মাঝে ফারহানা এসে হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল গলিয়ে দেয়, আর দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে থাকে, দুজনের মাঝে কিছুক্ষণ নিরবতা বজায় থাকার পর ফারহান বলে ওঠে, আমার আর তন্নীর মাঝে এমন কোনো সম্পর্ক নেই যেটা তুই ভাবছিস। we are just best friend। আমিও ওকে বেস্ট ফ্রেন্ড মনে করি আর ও তাই মনে করে। তাই তন্নীকে নিয়ে এত ওভারথিংকিং করিসনা।

কিছুক্ষনের মাঝেই বাস ছাড়া হবে, তাই সবাই বাসের কাছেই আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে। সৃজা ফারহানকে বলে কেনো বৃষ্টিকে কষ্ট দিচ্ছিস তুই বলতো? তুই ওকে ভালবাসিস বলে দে না। আমি চাইলেও পারবোনা রে ওকে সবটা বলতে, এতে পরে ও বেশি কষ্ট পাবে, আর আমি যদি এখন ওকে ভালোবাসি বলি তাহলে ও যেটুকু পড়াশোনা করছে সেটাও করবেনা, চিনি ওকে ভালো করে। তাই যা হওয়ার এক্সামের পর হবে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে