অপ্রিয় প্রিয়জন পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

0
431

#অপ্রিয়_প্রিয়জন
#Fiza siddique
#পর্ব-17(শেষ)

বৃষ্টিকে খুঁজতে খুঁজতে মেঘ এসে দেখে বৃষ্টি মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে য/ন্ত্র/ণা/তে ছটফট করছে। হাতের আইসক্রিমটা ফেলে দৌড়ে বৃষ্টির কাছে আসবে তার আগেই বৃষ্টির জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলা দেখে বৃষ্টির নাম ধরে চেঁচিয়ে পাগলের মতো ছুটতে থাকে।

বৃষ্টির নামটা শোনামাত্র ফারহানের অবাক হয়ে তাকায় সামনের দিকে। মাথার নিউরোনের মধ্যে অসম্ভব দ্রুত গতিতে রক্ত প্রবাহ শুরু হয়। খিঁচে চোখ বন্ধ করে আবারও কিছু একটা মনে করে চোখ খুলে দ্রুত সামনে তাকিয়ে দেখে কিছুক্ষন আগে যে মেয়েটা ওর কাছে এসেছিলো সে পড়ে যাচ্ছে। এটা দেখে কেনো জানো ভীষণ কষ্ট অনুভব করলো ফারহান। দ্রুত গিয়ে মেয়েটাকে ধরে আস্তে করে নিজের কোলে মাথা রেখে খিলখিল করে হেসে ওঠে। এতক্ষনে সম্পূর্ণ জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলেছে বৃষ্টি। অনেকটা দূরে থাকায় মেঘের বৃষ্টির কাছে আসতে সময় লেগে যায়। বৃষ্টির সামনে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে হাটু মুড়ে বসে মেঘ। তারপর বৃষ্টির মাথাটা নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। মনে মনে অসংখ্যবার ধন্যবাদ জানায় ফারহানকে। আজ যদি ফারহান না থাকতো তাহলে অনেক বড় অঘটন ঘটে যেতে পারতো।

বৃষ্টিকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দ্রুত হসপিটালে যায় মেঘ। মেঘের যাওয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে ছিলো শুধু ফারহান। বারবার মনে হচ্ছিলো এই নামটা কোথাও শুনেছে আগেও। তারপর আবার সামনে পড়ে থাকা একটা বোতল নিয়ে খেলতে শুরু করে।

হসপিটালে পৌঁছে ডক্টর শুভর কাছে নিয়ে যায় মেঘ। বিগত কয়েকমাস উনিই বৃষ্টির সবরকম ট্রিটমেন্ট করেছেন। নিজে ডক্টর হলেও বৃষ্টির ক্ষেত্রে কোনরকম রিস্ক নিতে চায়নি মেঘ। তাইতো অন্য একজন ভালো ডক্টরের পরামর্শ নিয়ে চলে সবসময়।

বেশ কিছুক্ষন ট্রিটমেন্ট করার পর জ্ঞ্যান ফেরে বৃষ্টির। ডক্টর শুভ মেঘকে নিজের কেবিনে ডাকেন। তারপর বলেন, মেঘ বৃষ্টি এখন আউট অফ ডে/ঞ্জা/র আছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। যদিও প্রথমে আমিও ভয় পেয়ে গেছিলাম। এই অবস্থায় এত বড়ো শকটাতে ওনার এবং বেবির ক্ষ/তি হলেও হতে পারতো। কিন্তু এখন ভয়ের কিছু নেই। আর একটা গুড নিউজ আছে। ওনার যে শর্ট টাইম মেমোরি লস হয়েছিলো সেটা রিকভার হয়ে গেছে। আজকে কোনো এক কারনে ওনার পুরোনো সৃতিগুলোতে উনি ফিরে গেছিলেন যার ফলে ব্রেইনে এত প্রেসার না নিতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যান। এখন দুজনেই ভালো আছে। আপনি গিয়ে দেখা করতে পারেন।

ডক্টর শুভর কথা শুনে মেঘের পৃথিবী যেনো থমকে যায়। আশেপাশের কোনোকিছুর খেয়াল নেই মেঘের। মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরছে বৃষ্টির ফারহানের কথা মনে পড়ে গেছে। এখন আর বৃষ্টি ওর জন্য পাগলামি করবেনা। এখন আর ওদের সম্পর্কটা আগের মত থাকবেনা। আচ্ছা বৃষ্টি যদি ওদের বিয়েটাই না মেনে নেয় তাহলে ও কি করবে? বৃষ্টিকে কোনো মূল্যেই হারাতে পারবেনা মেঘ। মেঘের এখন নিজের ভাগ্যের উপর ভীষণ হাসি পাচ্ছে। সুখটা ওর জন্য মরীচিকার মতো এটা বারবার ভুলে যায়। সেজন্য তো বারবার মরিচিকার পিছনে ছুটে দিন শেষে খালি হাতে ফেরত আসতে হয় ওকে। ওর জীবনটা এমন না হলেও তো পারতো? বেশি কিছু তো চায়নি জীবনে। ছোটোবেলায় চেয়েছিলো বাবা, মা, মেঘলা আর ওর একটা সুন্দর হ্যাপি ফ্যামিলি। যেখানে থাকবে খুনসুটির আর ভালোবাসার ছড়াছড়ি। কিন্তু ভাগ্য একটা অ্যা/ক্সি/ডে/ন্টে কেড়ে নিলো ওর বাবা মা কে। তারপর থেকেই ভীষণ হাসিখুশি থাকা ছেলেটা হয়ে উঠলো বদমেজাজি, গম্ভীর আর রাগী। মেঘলা একটা ছোট্টো কোম্পানিতে জব করে সেই টাকা দিয়ে নিজের পড়াশোনার সাথে সাথে মেঘকে পড়াশোনা করতে সাহায্য করেছে। মেঘও মেঘলার আড়ালে কয়েকটা টিউশন করাতো। পরে অবশ্য মেঘলা এসব জানতে পেরেছিলো। এভাবেই তো তারা দুই ভাই বোন মিলে অনেক পরিশ্রম করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। বাবা মা মারা যাওয়ার পর বুঝেছিল আত্মীয়সজনও সময়ে পর হয়ে যায়।

এতোগুলো বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো কাউকে ভালোবেসেছে মেঘ। বৃষ্টিকে যদি হারিয়ে ফেলতে হয় তাহলে নিঃস্ব হয়ে যাবে যে। সুখকি আদৌ ওর কপালে নেই? এতোগুলো বছর পর একমাত্র বৃষ্টির সান্নিধ্যে আগের সেই ছোটবেলার মেঘ প্রকাশিত হয়েছে। রাগ, গাম্ভীর্যর পিছনে লুকিয়ে থাকা কোমল মনটা প্রকাশ হয়েছে। শুধু এটুকুই চেয়েছিলো বৃষ্টিকে নিয়ে সারাজীবন সুখে থাকতে। একটা সুখি পরিবার গড়তে।

বৃষ্টির কেবিনের সামনে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ। ভেতরে ঢোকার সাহস কুলাতে পারছেনা। বারবার দরজা খোলার জন্য হাত এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আবারো পিসিতে আনছে। এমন সময় কেবিনের দরজা খুলে একজন নার্স বেরিয়ে আসে আর সৌজন্যমূলক একটা হাসি দিয়ে মেঘকে ভেতরে যেতে বলে। কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে যায় মেঘ। তারপর বৃষ্টির কাছে গিয়ে কপালে নিজের রুক্ষ, শুষ্ক অধরের ছোঁয়া দিয়ে জিজ্ঞাসা করে, এখন কেমন লাগছে তোমার বৃষ্টি? কোথাও কষ্ট হচ্ছেনা তো?

মেঘের কথায় বৃষ্টি ফ্যালফ্যাল করে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে মেঘের দিকে তারপর বলে, হম কষ্ট হচ্ছে তো। কোথায় কষ্ট হচ্ছে জানো? মেঘের একটা আঙ্গুল নিয়ে নিজের বুকে দিয়ে বলে, এখানে। এখানে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মেঘ। কেনো হচ্ছে জানেন? কারন আপনি আমাকে মিথ্যে বলেছেন। কেনো হচ্ছে জানেন কারন আপনি আমার বিশ্বাস ভে/ঙ্গে/ছেন। কেনো হচ্ছে জানেন কারন আপনি আমার থেকে কথা লুকিয়েছেন। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে মেঘ, ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। আচ্ছা মেঘ! আপনি তো আমাকে প্রাণপাখি বলতেন, সবসময় বলতেন আপনার প্রাণটা আমার মধ্যেই বেঁচে থাকে। তাহলে আমার থেকে এত বড় সত্যিটা লুকাতে একটুও খারাপ লাগলোনা আপনার? বৃষ্টির এমন শান্ত অথচ অস্থির করার মত কথা শুনে ভীষণ ভয় পায় মেঘ। বৃষ্টিকে জাপটে ধরে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে বলে,

আমাকে ভুল বুঝনা প্রাণপাখি। আমি ভীষন ভয় পেয়ে গেছিলাম, আমি সত্যিটা বলে দিলে তুমি যদি আর আমাকে আগের মতো ভালো না বাসো? এসব চিন্তা আমাকে ভেতর থেকে কুরে করে খেয়েছে বারবার। আমি যেকোনো মূল্যেই তোমাকে হারাতে পারবোনা প্রাণপাখি। আমার নিজের জীবনের থেকেও বেশি প্রিয় তুমি আমার কাছে। প্লিজ আমাকে ভুল বুঝনা। তুমি যদি বলো আমাকে ভালোবাসবেনা সেটাও আমি মেনে নেবো। কিন্তু প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা কখনও। আমার প্রাণটাকে আমার থেকে আলাদা করে নিওনা প্লিজ। বলে পাগলের মতো বৃষ্টির সারামুখে আদর দিতে থাকে। বৃষ্টিও চোখ দুটো বন্ধ করে নিজের ভালোবাসার মানুষটার আদর, ভালোবাসা সাদরে গ্রহণ করছে। তারপর মেঘের বুকে মাথা রেখে বলে,

মেঘ আমাদের বিয়েটা আমার সজ্ঞানে না হলেও আমি এই বিয়েটা অস্বীকার করতে পারিনা। এটা তো মিথ্যে নয় যে আমিও আপনাকে ভালোবাসি। তবে যদি আমি আমার সৃতিগুলো হারিয়ে না ফেলতাম তাহলে আপনাকে ভালোবাসা আমার কাছে অনেক কঠিন হতো। তাই একদিক থেকে অনেক ভালো হয়েছে। আর আমি আপনাকে এত সহজে মেনে নিতে পরেছি কারন আমার বিষাক্ত অতীত আমার মনে ছিলোনা। তবে এতগুলো দিনে আপনাকে আমি অনেক ভালো করে চিনেছি মেঘ। আপনার মত। জীবনসঙ্গী পাওয়া প্রতিটা মেয়ের সপ্ন। আপনি আমার স্বপ্নের পুরুষ। আপনার মত ভালো না বসতে পারলেও আমিও যে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে। আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাওয়ার কথা আমি কখনো ভাবতেও পারবোনা। এভাবেই থাকবো সারাজীবন আপনার বুকে। তবে আপনাকে যে একেবারে মাফ করেছি আমি সেটাও নাহ। আপনাকে আমি অন্ধের মত বিশ্বাস করতাম মেঘ। সেই বিশ্বাসের জায়গাটা একটু হলেও নড়ে গেছে। আপনি আমার প্রিয়জন তো সারাজীবন থেকে যাবেন। তবে যতোদিননা আবারো সেই অন্ধের মত বিশ্বাসটা ফিরে পাচ্ছেন ততোদিন থাকবেন #অপ্রিয়_প্রিয়জন হয়ে।

তুমি যে আমাকে ছেড়ে যাবেনা এটাই তো অনেক বেশি কিছু আমার কাছে। আর তার সাথে সাথে আবার এত এত ভালোবাসা ফ্রী পাবো, এটা তো ধামাকা অফার এর মতো হয়ে গেলো। আর বাকি রইলো বিশ্বাস, সেটাও খুব তাড়াতাড়ি ফিরে পাবো আমি। এটা আমার বিশ্বাস প্রাণপাখি। মেঘের কথায় বৃষ্টি হেসে মেঘের গলা জড়িয়ে ধরে।
____________________

ফারহান একটা প্লে গ্রাউন্ডের পাশ থেকে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিল হটাত করে একটা বল এসে ওর মাথায় লাগায় ব্যালান্স করতে না পেরে পাশে টাকা একটা ইটে মাথা ঠু/কে যায়। আ/ঘা/তটা অনেক বেশী হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে যায় ফারহান। ছেলেগুলো বল খুঁজতে এসে এই অবস্থা দেখে ফারহানকে হসপিটালে নিয়ে যায়। ছেলেগুলো ফারহানকে হসপিটালে রেখেই চলে যায়। যেহেতু একটা পাগল তাই আর ওরা বেশি রিস্ক নেয়না। এদিকে মেঘ সবেমাত্র বৃষ্টির কেবিন থেকে বেরিয়ে কিছু ফরমালিটি পূরণ করার জন্য রিসেপশনের কাছে যায়। তখনই ওখানে রিসেপশনের একটা মেয়েকে ফোনে বলতে শোনে, স্যার আমরা তো জানিনা। কয়েকটা ছেলে এসে এই লোকটাকে রেখে চলে গেলো। লোকটা অনেকটা আঘাত পেয়েছেন। বাট ওনার বিল পে না করল তো ট্রিটমেন্ট শুরু করতে পারবোনা। ওদিকে লোকটা কি বললো জানা নেই তবে মেয়েটা ওকে স্যার বলে ফোন রেখে দেয়। মেঘ মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করলে মেয়েটা পেশেন্টের কাছে নিয়ে যায় মেঘকে।

ফারহানকে দেখে মেঘ প্রুচুর অবাক হয়। এইতো কিছুক্ষন আগেই ঠিক ছিল। হটাত করে কি হয়ে গেলো? তারপর কোনো কিছু না ভেবে পেশেন্টের ট্রিটমেন্ট শুরু করতে বলেন জলদি আর ওনার বিল মেঘ নিজেই পে করে দেয়। মেঘের জীবনে ফারহানের অনেক গুরুত্ব আছে। মেঘ ঠিক করে সুস্থ হলে নিজে ফারহানের কাছে তার জীবনটা এত সুন্দর করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাবে। কিজানি ফারহান তার কোনো কথা আদৌ বুঝবে কিনা। তবে নিজের দায়িত্বটা পালন করতে চায় মেঘ। তারপর সৃজাকে কল করে ফারাহানের ব্যাপারে সবটা জানায়। সৃজাও মেঘকে ধন্যবাদ দিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
____________________

কেটে গেছে আরও পনেরো দিন। এখন আর মেঘের মাঝে কোনো ভয় নেই। কারন বৃষ্টি ঠিক আগের মতোই আছে মেঘের কাছে। সবসময় চায় যেনো এভাবেই ওদের ছোট্টো পরিবারটা সুখে থাকে।

এরমাঝে বৃষ্টি আর মেঘ দুজনে সৃজার কাছে গেছিলো। সৃজা র কাছে সবটা শুনে ভীষন খারাপ লাগে বৃষ্টির ফারহানের জন্য। তবে এটা শুনে ভালো লাগে যে ফারহান আস্তে আস্তে ঠিক হচ্ছে। সেদিন ডক্টর বলেছিলো যে ফারহান আস্তে আস্তে মানসিক ভাবে ঠিক হয়ে যেতে পারে যদি ঠিকঠাক ট্রিটমেন্ট করানো হয়। বৃষ্টি ফাতেহাকে কোলে নিয়ে অনেক আদরও করেছিলো বেশ কিছুক্ষন। তারপর বৃষ্টি ফারহানের কাছে গিয়ে দেখে ও বেডের উপর কয়েকটা কাগজ নিয়ে খেলা করছে। বৃষ্টি এগিয়ে গিয়ে ফারহানের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর বলে,

আমার তোর উপর কোনো রাগ নেই ফারহান। আমি কখনও চায়নি তোর জীবনের এমন পরিণতি হোক। তোর সুখের জন্যই তো সেদিন চলে এসেছিলাম। আমি মন থেকে চাই তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। ফাতেহা তার বাবাকে পাক। এরপর মেঘ ফারহানের পাশে গিয় বসে তারপর বলে,

আমি জানি তুমি সেই সময় অনেক ভুল করেছো। তবে তোমার ঐ ভুলের জন্যই আমি বৃষ্টিকে পেয়েছি। বৃষ্টিকে আমার জীবনে আনার জন্য ধন্যবাদ ফারহান। সেদিন পার্কেও তুমি দ্বিতীয়বারের মত আমার বৃষ্টিকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছো। তাই তুমি আমার জিবনে #অপ্রিয়_প্রিয়জন হয়ে উঠেছ। সবসময় চাইবো তুমি খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে ওঠো আর নিজের জীবন গুছিয়ে নাও। ফারহান কি বুঝলো কে জানে তবে মেঘকে জাপটে ধরলো সে। মেঘও মুচকি হাসলো। সেদিন সৃজাকে মেঘ বলেছে ফারহানের ট্রিটমেন্টের সমস্ত দায়িত্ব তার। ফারহানকে সুস্থ করে তুলবে সে। সৃজা ভীষণ অবাক হয় মেঘের কথায়। মেঘকে যতই দেখে ততই মুগ্ধ হয়। একটা মানুষ এত ভালো কিভাবে হতে পারে এটাই ভাবে বারবার।

সেদিন বাড়িতে ফিরে বৃষ্টি মেঘের গলা জড়িয়ে ধরে বলে, দেখুন আজও আমি আপনার পছন্দের সবুজ রঙের সেই শাড়ীটাই পড়েছি। যেটা আপনার জন্মদিনে পড়েছিলাম। ঠিক এমনি একটা শাড়ী আপনি আমাকে প্রথম গিফট করেছিলেন, আর সেদিনই আমার অ্যাক/ সি/ ডেন্ট হয়েছিল বলে আপনি আর কখনো সবুজ রঙ আমাকে পড়তে দেননি। কিন্তু দেখুন আজ সবকিছু ঠিকঠাক আছে। বরং এই সবুজ রঙ আমাদের মাঝে খুশি এনেছে। আপনাকে আমার করেছে। মেঘ বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে হেসেছিল শুধু।

মেঘ কিচেনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবজি কা/ ট/ ছে আর রান্না করছে। হটাত করে দুটো হাত এসে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে তাকে। মেঘও ছু/ রি/ টা রেখে সামনে ঘুড়ে জড়িয়ে নেয় তার প্রিয়তমাকে। তারপর আস্তে করে বলে, কি ব্যাপার তোমাকে না বলেছিলাম বেড থেকে না নামতে। কিছু দরকার হলে আমাকে ডাকতে। শুনলেনা কেনো আমার কথা? কেনো আস্তে গেলে?

ধুর আমার সারাদিন শুয়ে বসে থাকতে আর ভালোলাগেনা। আপনি রান্না করুন আমি শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখবো।

উহু একদমই নাহ বেশি দাড়িয়ে থাকলে তোমার পা ব্যা/ থা করে, ফুলে যাবে। রুমে গিয়ে বসো যাও।

আপনি দিন দিন খুব পচা হয়ে যাচ্ছেন জানেন? আমার বাবুর অনেক অভিযোগ আপনাকে নিয়ে। আপনি তাদের আম্মুকে একটুও বাইরে নিয় যাননা। আর আমার পা ব্যাথা করলে বা না করলেও সেই তো আপনি রোজকার মতোই রাতে নিজের হাতে মাথা আঁচড়ে দেবেন, পা দুটো চেপে দেবেন। আমার কথা শোনেন নাকি আপনি? বৃষ্টির কথা হেসে ফেলে মেঘ তারপর বলে,

আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এখানে থাকো। তবে চুপচাপ বসে থাকবে। কোনো নড়াচড়া নাহ একদম। বলেই বৃষ্টিকে কোলে নিয়ে কিচেনের স্লাবের উপর বসিয়ে দেয়।

বৃষ্টি ঠোঁট দুটো গোল গোল করে কিউট ফেস বানিয়ে বলে, শুনুন নাহ। চুপচাপ বসে থাকতে ভালো লাগছেনা। একটু আচার দিননা বাটিতে করে। বৃষ্টির এমন কিউট ফেস করে বলা দেখে না বলতে গিয়েও বলতে পারলোনা মেঘ। বাটিতে করে আচার বের করে দিলো। বৃষ্টিও মনের সুখে দুই পা দোলাতে দোলাতে আচার খেতে লাগলো।

হটাত করে হাতের বাটিটা ফেলে পেটের ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে বৃষ্টি। বৃষ্টির অবস্থা দেখে মেঘ বুঝে যায় বৃষ্টির পেইন উঠেছে। তাই তাড়াতাড়ি করে গ্যাস অফ করে বৃষ্টিকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসায়। তারপর বৃষ্টিকে নিয়ে খুব দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে হসপিটালে পৌছায়। আগে থেকেই যেহেতু বলা ছিলো তাই খুব তাড়াতাড়ি ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয় বৃষ্টিকে। মেঘ বৃষ্টির বাড়িতে কল করে জানায় সবটা। তারাও খুব তাড়াতাড়ি চলে আসে হসপিটালে। ওটিতে নিয়ে যাওয়ার আগে মেঘ শুধু বৃষ্টির হাত নিজের দুই হাতের মাঝে রেখে বলে,

খুব তাড়াতাড়ি ফিরে এসো প্রাণপাখি। তোমার এই #অপ্রিয়_প্রিয়জন তার জীবনটা হাতে নিয়ে বাইরেই বসে আছে তোমাদের অপেক্ষায়। তারপর হাতের উল্টোপিঠে চুমু দিয়ে ওটির মধ্যে পাঠিয়ে দেয়।

বেশ অনেক্ষন পর একটা নার্স হাসি মুখে তোয়ালে পেঁচিয়ে নিয়ে আশে একটা বাচ্চাকে। মেঘ কাঁপা কাঁপা পেয়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। ততক্ষনে পাশে আরও একটা তোয়ালে পেঁচানো বাচ্চা নিয়ে আসে। মেঘ বুঝতে পারেনা কি হচ্ছে। তাই অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে নার্সদের দিকে। ওরাও মেঘের অবস্থা বুঝতে পেরে হাসি মুখে বলে, কনগ্রাচুলেশন ডক্টর মেঘ আপনি টুইন বেবির বাবা হয়েছেন। আর দুটোই মেয়ে। তারপর দুইহাতে দুটো বাচ্চাকে সাবধানে নেয় মেঘ। তারপর বৃষ্টির কথা জিজ্ঞাসা করলে ওরা বলে, ডক্টর বৃষ্টিও একদম ঠিক আছেন। অনেক কিছুক্ষনের মধ্যেই কেবিনে শিফট করা হবে। মেঘের মুখে এতক্ষনে হাসি ফুটে ওঠে। বৃষ্টির আব্বু, আম্মু, আসফি সবাই বাচ্চাদের কোলে নেয়। সবার মুখেই আজ তৃপ্তির হাসি।

কেবিনে শিফট করার কিছুক্ষনের মধ্যেই জ্ঞ্যান ফেরে বৃষ্টির। পাশে তাকাতেই দেখে মেঘ ওর একহাত নিজের দুইহাতের মাঝে ধরে বসে আছে। বৃষ্টিকে চোখ খুলতে দেখে মেঘ আলতো করে বেডটা অ্যাডজাস্ট করে বসিয়ে দেয়। বৃষ্টি এদিক ওদিক তাকিয়ে বাচ্চা খুঁজলে মেঘ বলে, কোনটাকে আগে নেবে বলো?

মেঘের এমন কথায় ভ্রু উঁচু করে তাকায় বৃষ্টি। যেনো কোনো ভুল কিছু বলে ফেলেছে মেঘ। মেঘও হেসে দিয়ে প্রথমে একটা বাচ্চাকে বৃষ্টির কোলে দেয়। বৃষ্টিকে বাচ্চাটাকে দুইহাতে নিয়ে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে সারামুখে চুমু খেতে দেখে দেখে মেঘ বলে, সব আদর কি ওকে একাই দেবে? এটার জন্যও কিছু বাঁচিয়ে রাখো।

মেঘের কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে অবাক হয়ে যায় বৃষ্টি। ওয়াবক চোখে একবার মেঘের দিকে তো একবার দুটো বাচ্চার দিকে তাকায়। মেঘ বাচ্চাটাকে কোলে নিয়েই বৃষ্টির পাশে বসে। তারপর বলে, আমাদের বাচ্চার জন্য কোনো নাম ভেবেছো তুমি? বৃষ্টি মাথা নাড়ায় যার অর্থ না। তাই মেঘ নিজে থেকে বলে, তুমি আমার জীবনের সুখ তাই তোমার কোলের বাবুটার নাম হবে সুখ। আর আমার জিবনের প্রাপ্তি এরা দুজন তাই আমার কোলের বাবুটার নামে হবে প্রাপ্তি। মেঘের কথায় হেসে মেঘের বুকে মাথা রেখে বৃষ্টি। আর মেঘও একহাতে জড়িয়ে নেয় তার প্রাণপাখিকে।

আসফি (বৃষ্টির ভাই) সবেমাত্র এসেছিলো কেবিনে বাবুদের নেবে বলে। কিন্তু ভেতরে এমন দৃশ্য দেখে সেটা ক্যামেরাবন্দি করে নেয়। তারপর আবারো দরজাটা বন্ধ করে বেরিয়ে যায়।

জানেন মেঘ, আমি কখনো ভাবিনি আমি কখনও এতটা সুখি হবো। আজ আমি পরিপূর্ণ মেঘ শুধুমাত্র আপনার জন্য। আপনি আমার জিবনে না আসলে কি যে হতো? বৃষ্টির কথা শুনে মেঘ আরও শক্ত করে তার প্রিয়তমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তারপর বলে, আমি কিভাবে আসতাম ন আমার সুখপাখিটার কাছে বলো? তোমার কাছে না আসলে যে আমি আমার জীবনের সুখটাই খুজে পেতাম নাহ। আমার সুখ, প্রাপ্তি সবই তো তোমাকে ঘিরে। এরপর দুজনেই তৃপ্তির হাঁসি হাসে।

এইকয়াদিনে সৃজা ফারহানের প্রতি এক অজানা টান অনুভব করে। ভীষণ মায়া কাজ করে ফারহানের প্রতি। কারনটা তার কাছে অজানা। সেদিনের পর থেকে সৃজাও দিন গুনতে থাকে তার #অপ্রিয়_প্রিয়জন এর সুস্থতার। হয়তো কোনো এক রক্তিম সন্ধায় তারাও সেও সুখের সময় পার করবে ফারহানের কাঁধে মাথা রেখে। সম্পূর্ণ হবে তাদের ছোট্টো সংসার।

সমাপ্ত,

এভাবেই ভালো থাকুক মেঘ আর বৃষ্টির জীবন। কেটে যাক বছরের পর বছর, বদলে যাক সবকিছু তবে শুধু না বদলাক ওদের ভালোবাসা। এভাবেই একে অপরের পরিপূরক হিসেবে থেকে যাক দুজনে। আর শেষ হোক ফারহানের শাস্তি। কারন তার অপেক্ষায় বসে আছে কেউ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে