অপ্রিয় প্রিয়জন পর্ব-০১

0
620

#অপ্রিয়_প্রিয়জন
#Fiza siddique
#পর্ব-1

ফারহান একটা মেয়ের হাতে হাত দিয়ে পাশাপাশি একটা পার্কে বসে আছে, মেয়েটা ফারহানকে আইসক্রিম খাইয়ে দিচ্ছে আবার কখনো দুষ্টামি করে নাকে লাগিয়ে দিচ্ছে, ফারহান বিরক্ত হচ্ছে দেখে মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠছে। দুজনকে ভীষণ হাসিখুশি লাগছে। হটাৎ সামনে বৃষ্টিকে দেখে কিছুটা থতমত খেয়ে যায় ফারহান, মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে।

কিরে এদিকে কোথায় যাচ্ছিস? ফারহানের কথায় যেন ধ্যান ভাঙ্গে বৃষ্টির। বলে, কোথাও না একটু বেরিয়েছিলাম আর কি, সরি অযথা তোদের ডিস্টার্ব করার জন্য। আসছি রে! বলেই আর কিছু কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে চলে যায়। ওর যাওয়ার পথে চেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ফারহান, আর ভাবে মেয়েটা বড্ড অদ্ভুত।

কি হলো বলতো ব্যাপারটা! বৃষ্টি এমন করে কথা বলল কেন? ওর মনটাও খারাপ লাগছিল, ফারহান তুই কি কিছু জানিস?
নারে তন্নি আমি জানিনা, বাদ দে চল বাড়ি যাই। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।

বাড়িতে এসে কাউকে কিছু না বলেই নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় বৃষ্টি। চোখ দুটো ভীষণ জ্বালা করছে, এখনই টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়বে যেন।

ফারহানের সাথে পরিচয় স্কুল লাইফে, ছেলেদের থেকে এড়িয়ে চলা বৃষ্টি ফারহানকে ভালোবেসে ফেলে একটা সময়। অবশ্য বন্ধুত্বের হাতটা ফারহানই আগে বাড়িয়েছিল, বৃষ্টিও না করেনি। কিন্তু এই বন্ধুত্বের আড়ালে কখন যে বৃষ্টির মনে কিশোরী বয়সের ভালোলাগা তারপর আস্তে আস্তে ভালোবাসার উঁকি দিল সে বুঝতে পারেনি। অনুভূতিতে কাঁচা মেয়েটা অনুভূতি প্রকাশে ভীষণ ভয় পায়, তাই তো আজও বলা হয়ে ওঠেনি। তন্নী ফারহানের বেস্ট ফ্রেন্ড। আজ ভীষণ কান্না পাচ্ছে, বৃষ্টির মনে হচ্ছে কেউ তার খুব প্রিয় জিনিসটা ছি/ নি/ য়ে নিচ্ছে। কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই, যখন ঘুম ভাঙলো সকাল সাতটা উঠে ফ্রেশ হয়ে স্কুলের জন্য রেডি হয়ে যায়।

ইশ কাল না জানি আম্মু কত ডেকেছিল, অনেক রেগে গেছে হয়তো কিন্তু আমি কি করবো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তো এসব ভাবতে ভাবতে নাস্তা টেবিলে আসে। এসে দেখে আব্বু বসে আছে, আব্বুকে সালাম দিয়ে নাস্তা করতে বসে যায়। আম্মু স্কুলে যাব তাড়াতাড়ি খেতে দাও। রাবেয়া বেগম কোন কথা না বলে নাস্তার প্লেট এগিয়ে দেয়। কি হয়েছে আম্মু?কথা বলছো না কেন? সরি, আসলে কাল খুব ঘুম পেয়েছিলো, রাতে তুমি ডেকেছিলে আমি শুনতে পাইনি বিশ্বাস করো। সরি আম্মু, কিউট ফেস করে বলে বৃষ্টি।

মেয়ের এমন করে বলা দেখে নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলেন না রাবেয়া বেগম, একেবারে মেঘ ছাড়া ব/ জ্র/ পা/ তে/ র মত সব উগড়ে পড়ল। আমার তো যত জ্বা/ লা, বাপ মেয়ে মিলে আমাকে জ্বা/ লি/ য়ে খেলো, ওদের বাহানার শেষ নেই, সব আমার উপরে দায়িত্ব। বাপ যাবে অফিসে আমাকে সব রেডি করে দিতে হবে, মেয়ের টিফিন, নাস্তা, ছেলের টিফিন, স্কুলে দিয়ে আসা, রান্না সব কাজ আমার আবার ওদের চারবেলা ডেকে ডেকে খাওয়ানো, পারবো না আমি এই সংসার করতে।

আশরাফ হোসেন মেয়ের কানে কানে বলেন- শুরু হয়ে গেছে তোর মায়ের টেপ রেকর্ডার, এসব শুনিসনা তাহলে তোর লেট হয়ে যাবে। চল কেটে পরি, বলে দুজনেই হাসতে হাসতে খাওয়া শেষ করে। তারপর বৃষ্টি চলে যায় স্কুলে আর ওর বাবা অফিসে।

বৃষ্টি স্কুলে গিয়ে সোহেল, সৃজা, ইশাদের সাথে ক্লাসে বসে। কিছুক্ষনের মধ্যে স্যার আসে ক্লাসে আর দুমাস পর এসএসসি পরীক্ষা তাই সব স্টুডেন্টদের নিয়ে একটা পিকনিক অ্যারেঞ্জ করা হয় স্কুল থেকে। সব স্টুডেন্টদের থাকতে বলা হয় এই পিকনিকে।

আগামী শুক্রবার পিকনিকের ডেট ঠিক করা হয়। সবাই অনেক খুশি পিকনিকে যাবে বলে, দেখতে দেখতে পিকনিকের দিন চলে আসে। সকাল 6টার মধ্যে সবাইকে স্কুলে আসতে বলা হয়, এখান থেকে 7টায় বাস ছাড়া হবে। এদিকে বৃষ্টির আসতে লেট হচ্ছে দেখে ফারহান ভাবে বৃষ্টি হয়তো আসবে না, মন খারাপ করে কল করে বৃষ্টিকে তারপর একটু সাইডে গিয়ে জানতে চায় কোথায় আছে? বৃষ্টি জানায় সে প্রায় এসে গেছে, এটুকুতেই হাসি ফুটে ওঠে ফারহানের মুখে। ইশা ফারহানকে এভাবে মুচকি হাসতে দেখে কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করায়, কিছুনা বলে বাকিদের কাছে চলে যায়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস ছাড়া হবে কিন্তু এখনো বৃষ্টি আসেনি দেখে চিন্তা হয় ফারহানের, তারপর হঠাৎ করে কাউকে দেখে যেন থমকে যায় আর মুচকি হাসে। এসব কিছু অজানা বৃষ্টি কোনো রকমে নিজের ওড়না এক হাতে ধরে দৌড়ে দৌড়ে বাসে এসে ওঠে।

বৃষ্টি আজ একটা লাল রঙের চুড়িদার পরেছে যার পাজামা আর ওড়না সাদা, চুলটা হালকা উঁচু করে পনিটেল করে ছাড়া, বাম হাতে একটা ঘড়ি, কানে দুটো ছোট্ট দুল, এতেই যেন মুগ্ধ হয়ে দেখছে ফারহান বারবার। আর এদিকে ফারহান একটা ব্লু শার্ট, কালো জিন্স, হাতে একটা ওয়াচ, আর চুলগুলো সেট করা, ব্যাস এটুকুতেই যেন প্রচুর হ্যান্ডসাম লাগছে, আড়চোখে বারবার বৃষ্টির চোখ ফারহানের দিকে পড়ছে। ছেলেরাও এত সুন্দর হয় নাকি? সুন্দর তো মেয়েরা হয়! ছেলেরা এত সুন্দর হলে হয় নাকি! আচ্ছা, মেয়েরা সুন্দর হলে সুন্দরী বলে আর ছেলেরা সুন্দর হলে কি সুন্দরা বলে?

এসব আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝখানে ফারহান পাশে এসে বসে বৃষ্টির পাশে। কিরে আজ এত সাজগোজ করেছিস কেন? কি ব্যাপার?

তুই শুধু আমাকেই দেখলি সাজগোজ করে আসতে? আর বাকিদের চোখে পড়ে না তোর? দেখ সবাই আমার থেকেও বেশি সেজে এসেছে।

আশেপাশে তুই থাকলে আর অন্য কারোর দিকে চোখ যাবে তবেই না দেখবো, বিড়বিড় করে বলে ফারহান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পাশে বসা মেয়েটার দিকে, মেয়েটা এমনিতেই মায়াবী তার উপর যেন এই ড্রেসে পুরো পবিত্র স্নিগ্ধ ফুল লাগছে। আচ্ছা কোন ফুলের মত লাগছে? লাল গোলাপ ভালোবাসার আর সাদা গোলাপ তো বন্ধুত্ব আর স্নিগ্ধতার প্রতীক। যে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে এত কিছু ভাবছে সে তো আনমনে জানালার বাইরের পরিবেশ দেখতে ব্যস্ত।

১১ টার মধ্যে পিকনিক স্প/ টে পৌছে যায় সবাই। রাস্তায় অনেক গল্প আর আড্ডা দিয়ে সময়টা পার করে, বাস থামতেই বৃষ্টি দৌড়ে নেমে পড়ে আর বাকিরাও নামে বাস থেকে। ফারহান নামতে গিয়ে লক্ষ্য করে বৃষ্টির ফোন সিটে পড়ে আছে, ফোনটা হাতে নিয়ে অন করতে অবাক হয়ে যায়, অবশ্য যতটা অবাক হওয়ার তার থেকে কম হয়েছে কারণ ব্যাপারটা আগে থেকেই আন্দাজ করেছিল আর কাল নিশা ওকে সব বলে দিয়েছে।

বাস থেকে নামার সময় দেখে বৃষ্টি উঠতে চেষ্টা করছে কিন্তু বারবার দুজনে মুখোমুখি এসে যায়, ফারহান ডান দিক থেকে নামতে চাইলে বৃষ্টি সেদিক থেকে ওঠার চেষ্টা করে আবার ওই অন্য সাইড দিয়ে নামতে গেলেও সেম অবস্থা। দেখে দুজনেই হেসে দেয়, তারপর ফারহানের হাতে নিজের ফোন দেখে ছো মেরে নিয়ে চলে যায়। ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে আর মনে মনে বলে পাগলি একটা।

যেহেতু ওখানেই রান্নার ব্যবস্থা করা হয় তাই সব মেয়েরা কিছু না কিছু কাজে হাত লাগাচ্ছিল, আর ছেলেরা পেছনে বসে, দাড়িয়ে হাসাহাসি করছিল। ফারহান বৃষ্টির পিছনে দাঁড়িয়ে সমানে ক্ষে/ পি/ য়ে যাচ্ছিল আর ওদের দুষ্টুমি দেখে সবাই হাসাহাসি করছিল, হঠাৎ করে আলু কাটতে গিয়ে ছু/ রি/ তে হাত লেগে যায়।

বৃষ্টির আহহ বলে চিৎকারে ফারহান ছুটে এসে দেখে হাত অনেকটা কেটে গেছে, র/ ক্ত বেরোচ্ছে। সাথে সাথে হাত ধরে ফু দেয়, তারপর একজন ফার্স্ট এইড বক্স এগিয়ে দিলে আস্তে আস্তে জায়গাটা পরিষ্কার করে ড্রে/ সিং করে দেয় তারপর হাত ধরে ওখান থেকে উঠিয়ে পাশে একটা পাথরের উপর বসিয়ে বকতে শুরু করে।

তোকে কে বলেছিল এসব কাজ করতে? বড় হয়ে গেছিস খুব তাই না? কাজ করতে এসেছিস তুই এখানে? এর থেকে আর বেশি কিছু বলতে পারল না, বৃষ্টির ছলছল করা চোখ আর কিউট ফেস দেখে সব রাগ পড়ে যায়। কান্না করার ফলে যেন একটু বেশিই কিউট লাগছে, এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে কল আশায় একটা একটু দূরে গিয়ে কলটা রিসিভ করে কথা বলতে থাকে।

সৃজা, সোহেল, বৃষ্টি সবাই একসাথে একটা গাছের নিচে বসে গল্প করছে, ফারহান কিছুক্ষণ পর এসে যোগ দেয় ওদের সাথে। আড্ডার মাঝে সোহেল সৃজাকে জিজ্ঞাসা করে, কিরে প্রপোজ ডে কতগুলো প্রপোজ পেলি?

একটাই পেয়েছে রে।

কিরে কে প্রপোজ করল একবারও বললি নাতো? (আসলে সোহেল সৃজাকে পছন্দ করে সেটা সৃজাও জানে)

এভাবে সৃজা ফারহানকেও জিজ্ঞাসা করলে বলে একটাও না, সোহেলও বলে একটাও পায়নি, কেউ নাকি ওর ভালোবাসার গুরুত্ব দেয় না বলে মন খারাপ করে। সবাই ওর কথা শুনে এক দফা হেসে নেয়, তারপর ফারহান বলে- ওই! তুই কটা প্রপোজ পেলি? বৃষ্টি অন্যদিকে তাকিয়ে থাকায় বুঝতে পারেনি কাকে উদ্দেশ্য করে বলল, তাই সৃজা ওকে খোঁ/ চা মেরে বলে, ওই তোকে জিজ্ঞাসা করছে রে!
ও এমন করে ওই! বলে বললে কিভাবে বুঝবো কাকে জিজ্ঞাসা করছে? আমার তো একটা নাম আছে নাকি? নাম ধরেও তো বলতে পারে।

এই তুই কখনও ওর নাম ধরে ডাকিসনা কোনো বলতো? বললো সোহেল।

আরে বুঝিসনা এগুলোকে বলে প্রেম, বাবাহ কত্ত প্রেম, বলে হাসতে লাগলো সৃজা।

এদিকে ওদের কথা শুনে তো পুরো থম মে/ রে গেছে বৃষ্টি, এসব কি বলছে এরা? মনে মনে সৃজাকে বকতে লাগলো।
আর আমি কোনও প্রোপোজ ট্রোপস পায়নি, তোদের মত সুন্দরি নাকি আমি, যে কেউ প্রপোজ করবে, কারোর কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই?
ওদের কথা শুনে ফারহান হাসিমুখে বলে, হু তুই তো সুন্দরি নাহ, তারপর বিড়বিড় করে বলে মায়াবী তুই।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে