মনের গহীনে শুধুই তুমি পর্ব-১৭+১৮

0
1414

#মনের_গহীনে_শুধুই_তুমি
#পর্ব_17+18
#Mst_Meghla_Akter_Mim

কিন্তু বাড়ির চৌকাট পেরোতে ই হঠাৎ ইহানা “ও মা গো মরে গেলাম” বলে চিৎকার দিলো। সবাই দ্রুত ইহানার দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলো ইহানা মাটিতে বসে পায়ে হাত বুলিয়ে ন্যাকা কান্না করছে। আয়রা আর রোদ মনে মনে দারুণ খুশি কিন্তু তা প্রকাশ করলো না। রোদ মনে মনে বললো,

–“ঠিক হয়েছে। তুই আমার গায়ে পড়িস বেশি এই জন্য এখন নিজেই পড়ে গেছিস। যাক বাঁচলাম তোর থেকে আজ।”

মেঘ ওর পাশে বসে বললো, “ইহানা কি হয়েছে তোমার? পায়ে ব্যথা পেয়েছ মনে হচ্ছে দেখি কোথায় লেগেছে?”

ইহানা যেনো ফোস করে উঠলো যেনো মেঘের কথায় ওর গা জ্বলে যাচ্ছে। মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,” আমার যা হোক তোমার কি তাতে? সবাই কে দেখাতে চাও তুমি কত ভালো?”

মেঘ ইহানার কথায় অনেকটা কষ্ট পেলো। মেঘ কখনোই চায় নি ইহানা কষ্ট পাক। মেঘ মাথা নিচু করে বললো,” তুমি আমার সমসয়সী তোমাকে আমি সবসময় নিজের বন্ধুর মতই ভেবেছি। এখন এইসব কথা থাক তোমার পায়ে বরফ লাগাতে হবে দাঁড়াও আমি আনছি।”

ইহানা মেঘের হাত ধরে বললো,” তোমার দরদ উঠলে পড়ছে!”

রোদ মেঘের হাত ইহানার হাত থেকে ছাড়িয়ে মেঘ কে বললো, “যে তোমায় পছন্দ করছে না তার জন্য এতকিছু ভাবতে হবে না তোমার।”

মেঘ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মন টা বেশ খারাপ হয়ে গেলো। চোখ থেকে যেনো এখনই পানি পড়বে পড়বে ভাব। এই নিয়ে দুবার ইহানা মেঘ কে কষ্ট দিয়ে কথা বললো। ইশা চৌধুরী হস্তদস্ত হয়ে দৌড়ে এসে এলো। ইহানা ইশা চৌধুরী কে দেখে কান্না শুরু করলো আরো। সবাই ইহানা কে বাড়ির ভেতরে নিয়ে বসিয়ে দিলো। ইশা চৌধুরী বরফ লাগিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,

–“আমার মেয়েটার পা খুব ব্যথা করছে তাইনা?”

ইহানা কেঁদে কেঁদে বলছে,-” হ্যাঁ আম্মু পা মনে হয় ভেঙ্গে গেছে আমার।”

–“না এইসব খারাপ কথা ভাববে না। খারাপ কিছু ভাবতে নেই।”

রোদ বললো, – “ইহু তুই চাচীর কথা শুনিস না। জানিস আমার একটা ফ্রেন্ড পরে গেছিল পরে ওর পা কেটে ফেলতে হয়েছে। আমার না মনে হচ্ছে তোর পা ও কেটে ফেলতে হবে। সত্যি তোর জন্য আমার খুব চিন্তা হচ্ছে ।”

রোদ এমন ভাবে বললো যেনো ওর কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। ইহানা রোদের কথা শুনে আরো কান্না শুরু করলো। মৌ ইসলাম ইহানার পাশে বসে বললো,

-” ইহানা রোদের কথা বিশ্বাস করো না! তোমার পায়ে কিছু হয়নি, একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে ট্রাস্ট মি! রোদ তোমাকে নিয়ে মজা করছে তো।”

–” না আমি মজা করছি না রে ইহু, সত্যি বিশ্বাস করিস না তুই আমায় বল?” – এইবারের কথাগুলো রোদ আরো আকুল ভাবে বললো।

আয়রা আর প্রিন্স দাঁড়িয়ে হাসছে কিন্তু মেঘ মুখ ম্লান করে দাঁড়িয়ে আছে। নীল ইসলাম আর আদিল চৌধুরী ওদের কান্ড দেখছে আর বিড়বিড় করে নিল ইসলাম কে বললো,

-“এইটা এক কাবাবে হাড্ডি বুঝলে? ওভার অ্যাক্টিনের ডিব্বা!”

–” এভাবে বল না। মেয়েটার পায়ে খুব লেগেছে মনে হচ্ছে।”

–“কিছু হয়নি একটু দেরি করো আর দেখো কি কি হয়।”
.
ইহানা আরো কান্না করছে। ইশা চৌধুরী বললো, “রোদ তুমি আমার মেয়ের পেছনে লাগো কেনো? একটু ভালো করে কথা বললেও তো পারো। ইহুর পা বোধ হয় ভেঙে ই গেলো। ”

আয়রা বললো, “চাচী ভাইয়া কেনো তোমার মেয়েই ভাইয়ার পেছনে পড়ে থাকে তো। আর ইহু তুই এতো কান্না করছিস তোর ম্যাক আপ নষ্ট হয়ে গেলো। তোকে তো পেত্নীর মতো লাগছে রে।”

আয়রার কথা শোনা মাত্র ইহানা কান্না থামিয়ে দিয়ে মুখ মুছে নিলো আর বললো,” আয়রা এইবার ঠিক আছে তো দেখ তো?”

ইহানার কান্না থেমে যাওয়ায় সবাই হেসে উঠলো,মেঘ হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করল। নীল ইসলাম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রোদ বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

–” আয়রা তুই ম্যাজিক জানিস আগে তো বলিস নি! তোর এক কথায় ইহানার পা ঠিক হয়ে গেলো। আচ্ছা ইহু তোর সত্যি লেগে তেগেছিল তো? নাকি অভিনয় করলি?”

ইহানা আবার কেঁদে উঠলো। বললো,” ও মা গো আমার পা শেষ। রোদ আমার পাশে একটু বস না প্লিজ।”

রোদ চোখ বড় বড় করে বিড়বিড় করে বললো, “নাটকের জায়গা পায় নি। ”

আদিল চৌধুরী এসে বললো,” বসবে কেনো রোদ? আরে রোদ বউ মা, প্রিন্স আর আয়রা আর কতক্ষণ দেরি করবে বলবি? প্রিন্স তো বি ডি দেখার জন্য উতলা হয়ে আছে। তুই যা ওদের নিয়ে ইহানা আজ তোদের সাথে না যাক!”

মেঘ শান্ত গলায় বললো, “বাবা ইহানা কে এই পরিস্থিতিতে রেখে আমাদের যাওয়া ঠিক না মনে হয়। পরে যাবো আমরা? ”

প্রিন্স কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,” তাহলে আমার বি ডি তে ঘুরতে আরো লেট হয়ে গেলো? বোরিং লাগছে। ”

মেঘ প্রিন্স কে বললো,” ভাই ইহানা কে রেখে যাওয়া ঠিক হবে না। একদিন লেট হলে কি বা হবে বলতো? কাল যেও ঠিক আছে? ”

প্রিন্স মাথা নারল। আদিল চৌধুরী প্রিন্সের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, “আজকেই তুমি ঘুরতে যাবে। মেঘের কথা চলছে না এখন। প্রিন্স কত ইচ্ছা করলো আর এই সামান্য ব্যাপারে সেই আনন্দ মাটি হোক আমি চাই না। ”

–” কিন্তু বাবা… “-মেঘ

মেঘ কে থামিয়ে দিয়ে রোজা চৌধুরী বললো, “ইহু তুই বাংলাদেশেই থাকিস তাই সবকিছু দেখেছিস কিন্তু প্রিন্স দেখেনি তাই আমার মনে হয় ওরা যাক তুই ও চাস?? ”

ইহানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশা চৌধুরী বললো,”হ্যাঁ তাই তো। ওরা যাক কোনো সমস্যা নেই।”

ইহানা মুখ ফ্যাকাসে করে ওর মায়ের দিকে তাকালো ।ইহানা ভাবেই নি ওর মা রোদ কে মেঘের সাথে একা যেতে দিবে। আদিল চৌধুরী বললো,” তাহলে কোনো সমস্যায় রইলো না। তোমরা যাও এখন। ”

–“হুম বাবা।”

যাওয়ার আগে মেঘ ইহানার পাশে গেলো আর বললো,”একটু রেস্ট নাও ঠিক হয়ে যাবে। ”

ইহানা রেগে বললো, “তুমি তো চেয়েছিলে আমি যেনো না যায়। আর সেই ইচ্ছা পূরণ হয়ে গেলো। এখন রোদের সাথে যাবে!”

ইশা চৌধুরী বললো,” ইহানা রোদ ওর স্বামী ওর সাথেই তো যাবে। আর তোমার কথা এমন কেনো? মেঘ তোমার ভাবি হয় একটু ভালোভাবে কথা বলো! ”

আদিল চৌধুরী, আয়রা, রোজা চৌধুরী সহ রোদ ও ইশা চৌধুরীর কথায় পুরোই অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো। ইশা চৌধুরীর এত ভাল ব্যবহার ভাবায় যায় না তাও আবার মেঘের সাথে। আয়রা রোদের কানের কাছে গিয়ে বললো,

–” ভাইয়া এইটা সত্যি নাকি স্বপ্ন? ”

রোদ ফিসফিস করে বললো,” এইটা সত্যি কিন্তু একটা ঘোর। আর যাইহোক চাচী এত ভাল ব্যবহার করার মানুষ না। নিশ্চয় এর মাঝে অন্য কিছু আছে।”

বলে রোদ মেঘের কাছে গিয়ে মেঘের হাত ধরে বললো,”মেঘ এখন কারো কথা শুনে সময় নষ্ট করো না চলো যেতে হবে। ”

রোজা চৌধুরী আর মৌ ইসলাম হাসি মুখে বললো,”সাবধানে যেও। ”

মেঘ মুচকি হেসে মাথা নারালো।ইহানা মুখ ভার করে বসে রইলো। ওরা সবাই যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লো। আয়রা আর প্রিন্স মেঘ কে রোদের পাশে বসার জন্য খুব জোর করলেও মেঘ বসলো না। প্রিন্স রোদের সাথে বসলো। আয়রা আর মেঘ গল্প করছে গাড়িতে ই। প্রিন্স বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখছে আর বললো,

–“ব্রো অনেক সুন্দর তো বি ডি। পাপা কে মাম্মা কে আগেও আসতে বলেছি কিন্তু নিয়েই আসে নি।”

রোদ মুচকি হেসে বললো, “আগে আসলে মনে থাকতো না। এখন বেশ বড় হয়েছ সবকিছু মনে থাকবে।”

–“নো ব্রো আর মনে থাকা না! আমি এখানেই থাকবো।”

–“বাহ তাহলে আমার একটা সঙ্গী হয়ে যাবে।”

আয়রা বললো,” প্রিন্স আন্টি রা কেনো আসেনি এত বছর? ”

–” আমি তো জানিনা আপু। ”

রোদ আনমনে হয়ে বললো, “আয়রা সে কথা বাদ দে। এখন এসেছে এইটাই তো অনেক। বাস্তব কে সামনে রেখে জীবন ভাব। ”

মেঘের মনে হঠাৎ বলে উঠলো,” তাহলে আপনিও তো আমায় নিয়ে ভাবতে পারেন। আমি তো আপনার বাস্তব রোদ!”

মেঘের ভাবনার ছেদ হল প্রিন্সের কথায়। প্রিন্স বললো,”মেঘ আপু তুমি চুপ করে কেনো আছো? মন খারাপ তোমার তাইনা? তোমার কি ঘুরতে ভালো লাগে না? ”

মেঘ হাসার চেষ্টা করে বললো, “না ভাই আমার মন একদম ভালো আছে। আর আমার তো ঘুরতে খুব ভালো লাগে।”

রোদ বাঁকা হেসে বললো,” হ্যাঁ তোমার আপুর ঘুরতে খুব ভালো লাগে। আর ঘুরতে গিয়েই তো আমার গলায় ঝুলে পড়ছে। ”

মেঘ রেগে গেলো। ইচ্ছা করছে রোদের গলা টিপে দিতে। আয়রা জীবে কামড় দিলো। মেঘ দাঁত পিষিয়ে বললো,”আমি না আপনি আমার জীবন প্যারাময় করে দিয়েছেন। আপনি কেনো ওই ঘরে গেছিলেন? আমি আগে গিয়েছিলাম। ”

রোদ বললো,” প্রিন্স আমি কতো সুইট একটা ছেলে। তোমার কি বিশ্বাস হয় জেনে শুনে এই পেত্নীকে আমি নিজের জীবনে এনেছি?”

প্রিন্স একটা শ্বাস ছেড়ে বললো, “তোমরা সারাদিন ঝগড়া করো কেনো?”

–” আমি না ভাই রোদ করে। ”

–” যেই করো। আর ঝগড়া করবে না। ঝগড়া করা মোটেও ঠিক না। আর আপু তুমি আজকে আমাদের বাড়িতে যাবে? ”

–” তোমাদের বাড়িতে মানে? ”

–” আমাদের বাড়িতে মানে আমাদের বাড়িতে। আজ রাতে তো আমরা বাসায় যাব। আমি কোনোদিন বাসায় যায় নি জানতো। কিন্তু শুনেছি আমাদের বাসায় কেউ নেই করিম চাচা আছেন শুধু। তিনি বাড়ি দেখাশোনা করেন।”

–” কিন্তু আজকে কেনো বাসায় যাবে? আজ আমাদের বাসায় থাকবে তোমরা। “-মেঘ ।

–“হ্যাঁ আজ আমরা সবাই আড্ডা দিবো। “-আয়রা।

“কিন্তু….”

রোদ প্রিন্স কে থামিয়ে বললো, “কোনো কিন্তু না। আজ আমাদের বাসায় থাকবে।”

বলেই ব্রেক করে বললো, “চলো আমরা এসে পড়েছি।”

প্রিন্স বাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,” ভাইয়া কোথায় আসলাম আমরা?”

রোদ মৃদু হেসে বললো, “বাংলাদেশে এসেছ তাই আগে স্মৃতিসৌদ্ধ দেখাতে নিয়ে আসলাম। বাঙলাদেশের প্রধান দর্শন গুলো আগে দেখা দরকার। ”

প্রিন্স উৎফুল্ল হয়ে বললো,” ইয়া ব্রো! আমি ইন্টারনেটে এই জায়গা দেখেছি।”
.
রোদ, মেঘ, আয়রা, প্রিন্স কয়েক ঘণ্টায় বেশ কিছু জায়গায় ঘুরল। সাভার থেকে সংসদ ভবন সবকিছু ঘুরা শেষে রাত দশ টায় একটা রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য রোদ বললো। কিন্তু মেঘ তাতে রাজি হল না। মেঘ বললো প্রিন্স যেহেতু বাংলাদেশে এসেছে তাই কোনো রেস্টুরেন্ট না রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুসকা, ঝাল মুড়ি, পানি পুরি এইসব খাবে। বাংলাদেশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খাওয়ার মজা আর রেস্টুরেন্ট এর কথা অনেক আলাদা। আয়রাও বায়না ধরলো আর প্রিন্সও খুব ইচ্ছুক তাই রোদের আপত্তি থাকা শর্তেও রাজি হয়ে গেলো। একটা ফুসকার স্টলের কাছে রোদ কার পার্কিং করলো। রোদ কখনো খোলা মেলা যাওয়ায় কিছু খায় না। রোদ নাক সিটকে বললো,

” এমন পরিবেশে কিছু খাওয়া যায় না।”

মেঘ বললো,” একবার খেয়েই দেখুন না। তাকিয়ে দেখুন একটা couple কি সুন্দর করে একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছে। রাস্তার ধারের খাবারের দোকানে অনেক দামী জিনিস গুলো দেখা যায় যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। প্রেমিক প্রেমিকার একটু সুন্দর মুহূর্ত এখানেই দেখা যায় আবার বুড়ো বয়সের মানুষ গুলো ও দেখা যায়। তারা আসে স্মৃতি চারণ করতে।”

রোদ বিস্ময় দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। ঝগড়ুটে মেয়ে এত আবেগ দিয়েও ভাবে আবার? মেঘ দেখলো রোদ তাকিয়ে আছে। ওদিকে আয়রা আর প্রিন্স গিয়ে ফুসকা খেতে শুরু করেছে। মেঘ রোদের মাথায় বাড়ি দিয়ে বললো,

–” আপ্নার মাথায় ঢুকবে না আমার কথা। ঝগড়া ছাড়া আপনার আর কিছুই জানা নেই।”

বলে মেঘ ফুসকা ওয়ালা কে বললো, “মামা বেশি করে ঝাল দিয়ে আমায় ফুসকা বানিয়ে দিন।”

রোদ মেঘের পাশে এসে দাঁড়ালো। মেঘ রোদের দিকে না তাকিয়ে বললো, “আপনি ঝাল খেতে পারেন?”

–“আমি কিছুই খাবো না। ”

” একটা অন্তত খেয়ে দেখুন। “-বলে মেঘ রোদের মুখের সামনে ফুসকা নিয়ে গেলো। রোদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মেঘ মুখ বাঁকা করে বললো,

–” আপনি খাবেন না তা দেখতে ভালো লাগছে না তাই দিতেছি ।”

রোদ আর কোনো উত্তর না দিয়ে মেঘের হাত এগিয়ে নিয়ে ফুসকা মুখে নিলো। খেতে খেতে বললো,” খারাপ না! ”

মেঘ মৃদু হেসে বললো, “মামা উনাকেও দিন কিন্তু একটু ঝাল কম দিবেন।”

ফুসকা ওয়ালা ফুসকা বানাতে বানাতে বললো,” নতুন বিয়ে হয়েছে আপনাদের। আপনাদের বেশ মানিয়েছে, আর প্রেম করে বিয়ে তাইনা?”

মেঘ রোদ কোনো উত্তর দিলো না। মেঘ একটু মুচকি হাসি দিলো আর একে অপরের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ পর রোদ আর খেতে পারল না। প্রিন্স, আয়রাও খেয়েই চলেছে। রোদ বললো,

–“তোদের পেট খারাপ করবে এতো খাস না। ”

মেঘ মুখে একটা ফুসকা পুড়ে আদো আদো করে বললো,”আপনার পেট এমনিতেই খারাপ। আমাদের পেট আপ্নার মত না।”

প্রিন্স আর আয়রা হেসে উঠলো। রোদ কিছু না বলে অন্য দিকে তাকালো। তখনই খেয়াল করলো রাস্তায় কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে মেঘের দিকে খারাপ নজরে তাকিয়ে আছে।

একজন বলছে,” দোস্ত নীল শাড়ী পড়া মেয়েটা বেশ না? উফ যদি কাছে পেলাম একবার! ”

আরেকজন বললো,” দেখ কিভাবে খাচ্ছে। পুরোই আগুন।”

.

রাগে রোদের গা রি রি করছে। ছেলে গুলো কে এখনই মেরে উচিত শিক্ষা দিতে ইচ্ছা করছে রোদের। রোদ হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে ছেলে গুলোর দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল কিন্তু দু পা এগিয়ে থেমে গেলো। মেঘ, প্রিন্স, আয়রার দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরা তিন জন খুব খুশি। রোদের মনে হলো এই বাজে ছেলেদের জন্য ওদের আনন্দ মাটি করার মানেই হয় না। এখন রোদ ওদের কিছু করতে গেলে তা দেখে প্রিন্সের মনেও দেশ সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা তৈরি হবে। রোদ আবারো ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলো ছেলে গুলো আরো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। রোদের দিকে ছেলে গুলো খেয়াল ই করে নি। রোদ ফোন বের করে কি যেনো করে মেঘের কাছে গিয়ে বললো,

–“অনেক রাত হয়ে গেলো আর বেশি খেয় না কেউ। বাহিরের খাবার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল না।”

মেঘ বললো, “বেশি কেউ খায় নি, শুধু আপনি কম খেয়েছেন। আর আপনি তো সারাদিন বাহিরের খাবার খান।”

–“আচ্ছা আমি মেনে নিলাম কিন্তু এখন বাসায় যাবো তো নাকি?আমার না শরীর একটু খারাপ লাগছে।”

মেঘ রোদের খারাপ লাগছে শুনেই মরিয়া হয়ে উঠে বললো,” কি হচ্ছে তা বলুন তো। ঠিক মতো খান না তো আপনি সেজন্য এমন তো হবেই। এতক্ষণ পর বলে কেউ? আগে বলবেন তো।”

কথাটা শেষ করে রোদ কে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দিলো না মেঘ। আয়রা আর প্রিন্স কে তাড়াতাড়ি বাড়িতে যাওয়ার জন্য তারা দিলো। রোদ মেঘের চিন্তা দেখে অনেকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আয়রা প্রিন্স গাড়িতে উঠার পর মেঘ রোদের দিকে খেয়াল করে দেখলো রোদ ওর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ই আছে। মেঘ কড়া গলায় বললো,

–“এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? গাড়িতে উঠুন।”

তারপর নরম গলায় বললো,” বেশ খারাপ লাগছে তাইনা? বাসায় গিয়ে রেস্ট নিবেন তাড়াতাড়ি চলুন। আর ড্রাইভ করতে হবে না আপনার আমি ড্রাইভ করছি!”

রোদ এতক্ষণ অবাক হয়ে ছিল মেঘের এ কথায় আরো অবাক হয়ে বললো, “তুমি কার চালাতে পারো?”

–” হুম পারি। যখন আমার তেরো বছর বয়স তখন থেকেই পারি। এখন এত কথা না চলুন আপনি।”

বলেই গাড়ির দিকে পা বাড়াল। রোদ ওর পাশে পাশে গিয়ে বললো,” আমি ড্রাইভ করতে পারবো তুমি আমার পাশের সিটে বস তাহলেই হবে।”

মেঘ থেমে রোদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না। মেঘ ড্রাইভিং সিটে বসল আর প্রিন্স ওর পাশে। রোদ তাকিয়ে আছে মেঘ ওর কথা শুনল না! প্রিন্স বললো,

–“আপু তুমি ড্রাইভ করবে?”

আয়রা বললো,” ভাবি ভাইয়া যাবে না আমাদের সাথে?”

মেঘ সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বললো, “আমি ই ড্রাইভ করব। তোমার ভাইয়ার নাকি শরীর খারাপ লাগছে। পেছনের সিটে বসে একটু আরাম করে বাসায় যাক তারপর ঘুমিয়ে নিবে।”

রোদ এখনও বাহিরে ই দাঁড়িয়ে আছে। প্রিন্স নেমে গিয়ে রোদ কে বললো, “ব্রো খারাপ লাগছে বলবে না আমাদের? চলো তুমি বসবে।”

–“না তেমন কিছু হয়নি। এমনি একটু…”

রোদের কথা শেষ না হতে ই মেঘ বললো,” প্রিন্স উনাকে আয়রার পাশে বসিয়ে দিয়ে তুমি আমার পাশে আসো ।উনি কথা শোনার মানুষ নন।”

প্রিন্স রোদ কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসলো। রোদ গাড়িতে উঠে জোরে জোরে বললো,” তুমি ড্রাইভ করতে পারবে না। শেষে accident করে বসবে।”

প্রিন্স বললো, “নো প্রবলেম আমিও ড্রাইভ করতে পারি। আপু ভুল করে আমি বলে দিবো।”

–” কিন্তু তুমি তো বাংলাদেশ সম্পর্কে জানো না। এখানে রোড accidents অনেক হয়।”

মেঘ আর কারো কথা কানে না নিয়ে চুপ করে ড্রাইভ করা শুরু করলো আর খুব সুন্দর ভাবেই ড্রাইভ করে বাড়িতে আসলো। বাড়িতে এসে গাড়ি থামিয়ে রোদের দিকে ঘুরে বললো,

–” কয়টা accident হলো? শুধু ছেলেরা না মেয়েরাও অনেক কিছু পারে বুঝলেন?”

রোদ হা করে তাকিয়ে আছে। আয়রা মুখে হাসি টেনে বললো, “ভাবি তুমি অসাধারণ ড্রাইভ করতে পারো।”

মেঘ মুচকি হাসি দিয়ে বললো, “এখন বাসায় চলো, বসে থাকবে নাকি সারারাত গাড়িতে?”

মেঘের কথায় সবাই বাড়িতে প্রবেশ করলো। বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখলো মৌ ইসলাম, নীল ইসলাম, আদিল চৌধুরী আর রোজা চৌধুরী গল্প করছে। মৌ ইসলাম উঠে এসে বললো,

–” এতো দেরিতে যে? প্রিন্স তোমার জন্য wait করে আছি কতক্ষণ ধরে। বাসায় যেতে হবে তো।”

সবাই একসাথে বললো,” না আজ যাওয়া হবে না।”

নীল ইসলাম বললো,” আবার আসব তো কিন্তু একবার বাসায় যাওয়া উচিত তো। দেশে এসেছি কিন্তু এখনও বাসায় যায় নি।”

মেঘ মুখে হাসি টেনে বললো, “আবার আসবেন কিন্তু আজকে থাকতেই হবে। আড্ডা হবে আজ সারারাত। প্রিন্স আজকে না থাকলে আমাদের মোটেও ভালো লাগবে না। আর আপনারা না থাকলে এই রাত্রি বেলা আমার মন ভীষণ খারাপ হবে। আপনারা চান যে আমি মন খারাপ করে থাকি?”

প্রিন্স বললো,” মাম্মা আজ থাকি না আমরা সবাই। তোমরা রাজি হয়ে যাও প্লিজ।”

মৌ ইসলাম আর নীল ইসলাম একই অপরের দিকে একবার তাকালো। তার পর মৌ ইসলাম কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। উনার চুপ করা দেখে সবাই চিন্তায় পড়ে গেলো যদি না থাকে। কিন্তু উনি সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করে হেসে উঠে বললো,

–” আজকে আমরা থাকছি।”

সকলের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু এর মাঝেই মেঘ তাড়াহুড়ো করে বললো, “রোদ আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? আপনার ঘুমের প্রয়োজন আর healthy food এর ও।”

আদিল চৌধুরী বললো, “কেনো বুঝলাম না?”

প্রিন্স বললো, “আঙ্কেল ভাইয়ার নাকি শরীর খারাপ করছে।”

আদিল চৌধুরী বললো, “তা তো করবেই বান্দরের শরীর খারাপ হলেও তো আমরা জানতেই পারি না।”

রোদ অসহায় গলায় বললো,” বাবা তুমি সবার সামনেও আমাকে এমন কেনো করো?”

–” তো কেমন করব?”

মেঘ জোরে করে বললো,” চুপ করুন সবাই। এখন উনি আগে রেস্ট নিক তারপর সব কথা।”

–” হুম ঠিক।”

–“না আমি এখন ঠিক আছি। একদম ঠিক হয়ে গেছি। প্রিন্স চলো আড্ডা হবে এখন। সারারাত গান, মজা আর গল্প ঠিক আছে?”

প্রিন্স মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ রোদের সামনে এসে ভ্রু কুঁচকে বললো, “আপনার আড্ডা বন্ধ।”

বলেই রোদের হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেলো। গিয়ে বললো,”যান ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার এনে রাখছি। খাবেন তারপর ঘুমাবেন।”

রোদ মুখ ভার করে বললো,” তোমাকে বলাই ভুল হয়েছে আমার। এখন আবার খাব? আর একটু আড্ডা দিলেই ঠিক হয়ে যাবো আমি বিশ্বাস করো।”

মেঘ তাওয়াল রোদের হাতে দিয়ে বললো,” সব বিশ্বাস করেছি। এখন ফ্রেশ হয়ে আসুন।”

বলে মেঘ মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেলো। রোদ ওর যাওয়ার পানে চেয়ে চেয়ে বললো, “বিশ্বাস করলো কি করলো না কিছুই তো বুঝলাম না। ধ্যাঁত!”

রোদ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো টেবিলের উপরে এক গ্লাস জুস, মেডিসিন বক্স, আরো কিছু খাবার সাথে একটা চিরকুট। চিরকুট হাতে নিয়ে দেখলো লেখা আছে,

“মিস্টার রোদ খাবার গুলো খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। খবরদার না ঘুমিয়ে থাকবেন না আর বাহিরে আসার চেষ্টা ও করবেন না। অবশ্য চেষ্টা করেও লাভ নেই বাহিরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছি দরজা। ভালোভাবে ঘুমান, আমি গল্প শেষ করে আসব নাহলে আয়রার রুমে থাকবো।”

চিরকুট পড়ে রোদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। দরজা খুলতে গেলো কিন্তু দেখলো সত্যি ই বাহিরে থেকে লাগানো। মুখ মলিন করে বেডে বসে জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে বললো,”বিয়ে করা মানে নিজ হাতে নিজের স্বাধীনতা অন্য কে বিলিয়ে দেয়া বুঝিয়ে দিলো আমায়! নে রোদ খেয়ে নে আর ঘুমিয়ে পড়।”
____________

পরেরদিন ফজরের আজানের পরে মেঘ দরজা খুলে দেখলো রোদ ঘরে নেই। অনেকটা অবাক হয়ে গেলো আর রোদ কে ডাকতে শুরু করলো কিন্তু রোদের কোনো সাড়া নেই। বেলকনিতে গিয়েও পেলো না যেই বেলকনি থেকে আসতে নিলো মেঘের সামনে এক সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে পড়লো। মাথায় টুপি পড়া আর মুখে বিন্দু বিন্দু পানি এখনও লেগেই আছে, অজুর পানি। মেঘের বুকের মধ্যে চমকে উঠলো। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ভয় টা মিলিয়ে গেলো কারণ মানুষ টি আর কেউ না রোদ ছিল। রোদ মুচকি হেসে বললো,

–” ভয় পেলে নাকি?”

মেঘ ঝাজালো কন্ঠে বললো, “আমি কোনো ভয় পায় না। কিন্তু আপনি কোথায় থেকে আসলেন? ঘরে তো আপনাকে পাই নি এসে।”

রোদ শান্ত গলায় বললো,” অযু করছিলাম ওয়াশ রুমে ছিলাম তাই দেখতে পাও নি। ঘর বন্ধ ছিল তাই কোথায় আর যাবো বলতো?”

মেঘ নিঃশব্দে একটু মুচকি হাসি ফুটে তুলে বললো,”মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আসুন। তেমন বেশি সময় নেই আর আপনার শরীর এখন ঠিক লাগছে?”

–” না ভালো হয়ে আর থাকতে পারি? এখন পুরোপুরি ভালো লাগছে। বলছি তুমি কলেজে যাবে আজ? ”

–” না আজ যাবো না ভাবছি। ”

রোদ মুখে হাসি টেনে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,”কলেজ মিস করা ঠিক না। তবে আজ না যাও প্রবলেম নেই কিন্তু পড়া টা করে নিবে বাসায়। আর আমি নামাজ শেষ করে আমার একটা কাজ আছে সেখানে যাবো। ”

মেঘ রাগী রাগী ভাব করে বললো,” কাজ পরে সকালে বাসায় খাবেন। আর এত সকালে কিসের কাজ?”

রোদ ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো, “আমার কাজের কোনো সময় নেই মেঘ। আর তুমি একদম চিন্তা করো না আমি বাসায় এসেই খাবো। আমাকে নিয়ে এত চিন্তা কেনো??”

মেঘ মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,” কে বলেছে চিন্তা করেছি? কোনো চিন্তা করছি না বুঝলেন আপনাকে তো আমার ভালোই লাগে না। এত বলছি কারণ আপনি অসুস্থ হলে সবাই ভাববে আমি আপনার যত্ন নেই নি। আর এখন যান আপনি। ”

রোদ যেনো হাসি তে শেষ হয়ে যাবে কিন্তু হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করে বললো, “ওকে আমি আসলাম। তবে তোমার ভাবনা কিন্তু বহুদূর বিস্তৃত। ”

–” যা হয় হোক তাতে আপনার কি? ”

রোদ শুধু হাসি দিলো।
_______________
নামাজ শেষ করে রোদ চলে আসলো কাজ চলমান রয়েছে এমন একটা অসম্পূর্ণ বিল্ডিং এ। বিল্ডিং এর পাঁচ তলায় গিয়ে একটা রুমের সামনে গিয়ে হাত দিয়ে চুল ঠিক করে পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে মুখে বেঁধে নিলো। রুমের চাবি বের করে রুমে ঢুকতেই একজন ছেলে বন্দুক তাক করলো রোদের দিকে। রোদ কে ভালোভাবে খেয়াল করে বন্দুক নামিয়ে বললো,

–“এতক্ষণ যে তোর আসার সময় হলো? আর ওদের কেনো নিয়ে আসতে বলেছিস?”

কন্ঠ শুনে বুঝা গেলো রুদ্রর গলা। রোদ রুদ্রর কাঁধে হাত রেখে বললো, “আমার ঘরের দরজা বাহিরে থেকে লাগিয়ে রেখেছিল তোর ভাবি তাই আর কি করব বল? আর কেনো নিয়ে এসেছি ওখানে গেলেই বুঝবি চল।”

রুদ্র হাসতে শুরু করলো। রোদ বললো, -“serius মুহূর্তে তোর হাসি পায় কেনো? হাসির কি বললাম তোকে? ”

রুদ্র হাসি থামানোর চেষ্টা করে বললো, “আরে ভাই হাসির কথায় তো। তুই মানুষকে আটকে রাখিস আর তোর বউ তোকে! সিআইডি হলে কি হবে বউ এর কাছে তো তুই আসামী। ”

রোদ দাঁত কটমট করে বললো, “নিজে বিয়ে কর তারপর তোর কি হয় দেখব। তুই নিজেও সিআইডি মনে রাখিস। বাই দ্যা ওয়ে তোর অর্চির কি হলো?”

রুদ্রর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,” ভাই ওয়েটিং এ রাখছে। বলছে আগে বন্ধুত্ব তারপর ভেবে দেখা যাবে। ”

–” তাহলে চিন্তা করিস না সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।তবে আমি না হয় নিজের বউ এর কাছে আসামী আর তুই কিন্তু তাও না। আমার চেয়ে তোর অবস্থা বেশি খারাপ। এখন চল ওদের একটু ঠিক করে আসি।”

রুদ্র আর রোদ ঘরের ভেতরে থাকা আরেকটা ঘরে প্রবেশ করলো। দুটো চেয়ারে দুজন ছেলেকে বেঁধে রাখা হয়েছে।আর কাল রাতে বাজে কথা বলেছিল যারা তারা ই। রোদ গিয়ে মুখ খুলে দিতেই একজন বললো,

–” তুই কে? আমাদের ধরে এনেছিস কেনো?”

রোদ ওর আইডি কার্ড ওদের সামনে ধরতেই ওদের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো। রোদ দ্বীর গলায় বললো,

–‘সিআইডি! আর তোদের কেনো ধরে এনেছি জানিস না?”

রোদ মুখ থেকে রুমাল সরিয়ে বললো,” আমায় দেখে এখন মনে কর। ”

রুদ্র বললো,” কি মনে করবে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না তো।”

রোদের উত্তরের আগেই একটা ছেলে বললো,” আ.. আ.. আপনি কাল রাতের ছেলেটি না?কিন্তু আমরা কি করেছি?”

রোদ রেগে গিয়ে বললো,” কি করেছিস মনে নেই? রাস্তায় মেয়ে দেখলে তাদের জন্য মনের ভেতরের পশু কে জাগিয়ে তুলতে ইচ্ছা করে? কি যেনো বলেছিলি কাছে যদি পেটি? শালা তোদের তো আমি মেরে ই ফেলব।”

বলেই রোদ দুজন কে চর বসিয়ে দিলো।

ছেলেদের মধ্যে একজন বললো, -” স্যার এইবারের মত আমাদের মাফ করে দেন আর কাউকে দেখে কিছু বলব না। ”

রোদ হেসে বললো,” না কিছু বলবি না কিন্তু তোদের এখন ছেড়ে দিলে আরো কিছু করবি তোরা। তোদের জন্য রোজ নিউজ পেপারে ধর্ষণের খবর পাওয়া যায়। তোদের বোন দের যদি কেউ বলত তোদের কেমন লাগতো??”

কথাটা শেষ করেই লাঠি দিয়ে দুজন কে আবারও আঘাত করলো। রুদ্র কিছু ভেবে বললো,

–” তার মানে কাল রাতে তোরা ঘুরতে গেছিলি তখন কিছু হয়েছে। তো এখন আমি দেখছি। ”

বলে দাঁত বের করে হাসি দিলো রুদ্র। রোদ লাঠি রুদ্রর হাতে দিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে বললো,” তুই ই দেখ। নাহলে আমি আবার ওদের মারতে মারতে মরে ই যাবে।”

রুদ্র কয়েকটা মাইর দিলো। ছেলে গুলো আহ্ আহ্ শব্দ করছে ব্যথায়। রুদ্র আবারও মারতে গেলো তখনই রোদ বললো,

–” রুদ্র থাক আর মারিস না।”

একজন ছেলের মুখ থেকে রক্ত পড়ছে। তবুও মুখ তুলে আক্রোশের গলায় বললো, -” তুই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে পারিস আর আমরা কাউকে দেখে কিছু বলেছি তাতেই আমাদের এভাবে মারলি! তুই নিজেই ঠিক নেই তো।”

রোদের রাগ উঠে গেলো আবারো। ও উঠে গিয়ে ছেলেটি কে একটা ঘুষি দিয়ে বললো,” কুত্তা তোদের মত সবাই কে ভাবিস? ওইটা আমার বউ। তুই আমার বউ এর দিকে নজর দিয়েছিস। ভেবেছিলাম তোকে ছেড়ে দিব কিন্তু এখন তোকে মেরে ই ফেলব আমি। যে চোখ দিয়ে ওর দিকে তাকিয়েছিস সে চোখ আমি তুলে নিবো।”

আরেকটা ছেলে আকুতি করে বললো, “স্যার আমায় ছেড়ে দেন। ওর মাথা ঠিক নেই ভুলভাল বলে ফেলেছে। বাড়িতে আমার অসুস্থ মা আছে স্যার।”

রুদ্র বললো,” অসুস্থ মায়ের কথা মনে হয় না কাউকে কিছু বলতে গিয়ে? রোদ এদের ছাড়ার দরকার নাই। কয়েকদিন এখানে বন্দি করে রেখে দেই। ”

রোদ কেনো যেনো শান্ত হয়ে বললো, “রুদ্র ওদের ছেড়ে দে। ”

–” কি বলিস! ”

–” হুম সত্যি বলেছি। ”

ছেলে গুলো বললো,” ধন্যবাদ স্যার। আর কখনো এমন কিছু করব না। ”

রোদ হঠাৎ ই রহস্যের হাসি দিয়ে বললো,” করার সুযোগ ও পাবে না কখনো!! ”

ছেলে গুলোর মুখ শুকিয়ে গেলো। রুদ্র বাঁকা হাসি দিলো। তাহলে কি রোদ ওদের মেরে ফেলবে?? সে ভয় ছেলে গুলোর মনে বাসা বাঁধল। ছেলে গুলো অসহায় দৃষ্টি তে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে ।

.
চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে