মনের গহীনে শুধুই তুমি পর্ব-১৫+১৬

0
1200

#মনের_গহীনে_শুধুই_তুমি
#পর্ব_15+16
#Mst_Meghla_Akter_Mim

মেঘ যেতে নিতেই গাড়ির কাঁচ নামিয়ে ভেতর থেকে একজন বললো, “একা একা কোথায় যাও তুমি?”

কণ্ঠ টা শুনে মেঘ থেমে গেলো কারণ কণ্ঠ টা রোদের। রোদ গাড়ি থেকে নেমে রাগী রাগী চোখে মেঘ কে বললো,”প্রবলেম কি? পাঁচ মিনিট অন্তত দেরি করা যেতো না? একা একা কেনো যেতে নিয়েছ? আর দরকার হলে ঈশান ছিল তো ওর সাথে আসতে।আর তুমি আমার গাড়ি দেখেও চলে যাচ্ছিলে কেনো? ”

মেঘ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো, “এই আপনি কখন কি বলেন মনে থাকে না? এই বলেন ঈশান এর সাথে যেনো না দেখি আবার বলেন ঈশান তো ছিলই। আসলেই আপনি পাগল! আর আপনার গাড়ি আমি চিনতে পারিনি। আপনি কি ঘন্টায় ঘন্টায় গাড়ি চেঞ্জ করেন? আসার সময়ে তো এই গাড়ি ছিল না!”

রোদ গাড়ির দিকে খেয়াল করে দেখলো তাই তো এইটা তো ওর বাড়ির গাড়ি না। তাড়াহুড়ো করে অন্য গাড়ি নিয়ে এসেছে। রোদের চুপ থাকা খেয়াল করে মেঘ বললো,” চুপ করে আছেন কেনো? আপনার আজব আজব কাজ আর কথা কিছুই বুঝি না।”

রোদ মেঘ কে গাড়িতে উঠতে বলে নিজেও ড্রাইভ শুরু করে বললো, “আসলে এইটা আমার কার না। তুমি কল করেছ খেয়াল করিনি একটু busy ছিলাম। তোমার কল দেখেই আমার এক বন্ধুর গাড়ি নিয়ে আসছি।”

মেঘ ভ্রু কুঁচকে বললো,” তো আপনার গাড়ি? আর আপনি আপ্নার বন্ধুর কাছে কেন? কোন বন্ধু বলেন তো? রুদ্র ভাইয়া?”

রোদ কি উত্তর দিবে খুঁজে পাচ্ছে না। একটু পর মুখে হাসি টেনে বললো,” আমার গাড়ি পার্কিং করা ছিল আর ও তখন ই আসছিল। দেরি হবে আমার গাড়ি বের করতে তাই ওর গাড়ি টা। আর এত প্রশ্ন করো কেনো তুমি?আর রুদ্রর কথায় কেনো ভাবলে?”

মেঘ চোখ ছোট করে রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,”আমার প্রশ্নের উত্তর দেন কোথায় আপনি? এতক্ষণ কোথায় ছিলেন জিজ্ঞেস করলেও তো বলবেন না আমি জানি।”

–” বলব কিন্তু আমার মিশন complete হয়ে গেলেই promise.”

মেঘ মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে মুখ ভার করে বললো, -” হ্যাঁ কত যে বলবেন জানি আমি। কাকে ভালবাসেন তাই তো বললেন না কাল কে আর ছবি ও দেখালেন না। কিন্তু এখন একটা কথা জিজ্ঞেস করব উত্তর দিবেন?”

রোদ গ্লাসে মেঘের মুখ দেখে চাপা হাসি দিয়ে বললো,” জী ম্যাম উত্তর দিব আপনি জিজ্ঞেস করুন।”

–“রুদ্র ভাইয়া অর্চিকে ভালোবাসে?”

রোদ মেঘের দিকে এক পলক তাকালো। তার পর আবারো ড্রাইভ করায় মনোযোগ দিয়ে বললো,” আমি সঠিক জানিনা মেঘ। তবে রুদ্র অর্চির পেছনে ঘুরছে তা আমি জানি।”

মেঘ আনমনে হয়ে বললো, “ও… আচ্ছা শুনুন উনাকে বলে দিবেন অর্চির সাথে ফ্ল্যাট যেনো না করে। যদি সত্যি ভালোবাসে তাহলে যা খুশি করুক কিন্তু না ভালোবেসে মিথ্যা অভিনয় যদি করে তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”

শেষের কথা গুলো বলতে মেঘের মধ্যে এক দৃঢ় মনোবল প্রতিলক্ষ হল। রোদ মনে মনে বললো,” আমি কি জানিনা নাকি। এই কয়েকদিনে ঠিক বুঝে গেছি।”

রোদ একটু কেশে বললো,” আমি বলতে পারব না। দেখা হলে তুমি বলে দিও। ভাইয়ের চেয়ে ভাবীর কথা বেশি কার্যকর কোথায় যেনো শুনেছিলাম।”

মেঘ অদ্ভুত ভাবে হাসি দিয়ে বললো, “তাহলে আমাকে আপনার ভাবি ভেবে এইটার উত্তর দিন কাকে ভালবাসেন? ছবি দেখান।”

রোদ বিড়বিড় করে বললো,” আর যাই হোক নিজের বউ কে ভাবি ভাবতে আমি পারব না।”

মেঘ রোদের দিকে হেলে বললো,” কি যেনো বললেন?”

রোদ আমতা আমতা করে বললো,” কিছুনা। বলছি বউ কে ভাবি ভাবতে নেই। কিন্তু তুমি যে কথা জিজ্ঞেস করলে এর উত্তর আমার কাছেও নেই। আমি যাঁকে ভালোবাসি তাঁকে আমি দেখিনি!”

মেঘ কথাটা শুনে খুব খুশি হল। কিন্তু রোদের মুখে হাসি নেই তাই মেঘ ও নিজের খুশি লুকানোর চেষ্টা করলো। বললো, “ফেসবুকে প্রেম?”

রোদ ফিক করে হেসে উঠে বললো,” না মেরি বিবি জান। এখন এই কথা থাক একসাথে সব শুনলে হয় নাকি হুম?”

মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো। মেরি বিবি জান কথাটা মেঘের বুকে এসে যেনো লাগলো। এক আকাশ ভালোলাগা কাজ করলো এক মুহূর্তেই। মেঘ আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না তার আগেই রোদ গাড়ি ব্রেক করলো। রোদ মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,

–” বাসায় এসে গেছি। তুমি যাও আমার কাজ আছে আবার যেতে হবে।”

মেঘ হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় দুইটা বাজবে। মেঘ গাড়ি থেকে না নেমেই বললো,” দুইটা বাজবে দুপুরে খেয়ে নিলে হয় না? সারাদিন তো বাহিরে থাকেন ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করেন না। চলুন খেয়ে নিবেন তারপরে যাবেন।”

–” না মেঘ আমার কাজ আছে একটু বুঝার চেষ্টা করো।”

মেঘ হাতের মাঝে হাত দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো, “তাহলে আমিও যাব না। এইযে বসে আছি নামব ও না কোথায় যাবেন চলুন আমিও যাবো।”

রোদ সিট বেল্ট খুলতে খুলতে বলছে,” মেয়েটা এতো….”

মেঘের তাকানো দেখে থেমে গিয়ে বললো,” চলো আমিও যাচ্ছি তোমার সাথেই। এত জেদি কেন তুমি?”

মেঘ মুখে হাসি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বললো, “একটু জেদী হতে হয়। নাহলে আপনার মত ঘাড় ট্যারা মানুষকে কথা শুনানো যাবে না তো।”

রোদ মেঘের দিকে এগিয়ে এসে বললো,” তবে রে।”

যেই মেঘ কে ধরতে নিবে তখনই মেঘ দৌড় দিলো বাড়ির ভেতরে। রোদ ওর পেছনে দৌড়ে গেলো। মেঘ বাড়ির দরজায় গিয়ে কিছু অচেনা মানুষ দেখে থেমে গেলো। পেছন ফিরে তাকালো। রোদ এসে ভ্রু কুঁচকে বললো,

-” দাঁড়িয়ে গেলে কেনো? আমার কাছে তো ধরা দিতেই হবে।”

মেঘ বিরক্তি মুখে নিয়ে বললো, “উফ আবার বেশি বুঝেন। ওই দেখুন কে উনারা? আমি তো চিনি না তাই একা যায় নি।”

রোদ উঁকি দিয়ে দেখল একজন মধ্য বয়স্ক দম্পতি আর একটা চৌদ্দ পনেরো বছরের ছেলে। মহিলা টি কে দেখতে বেশ সুন্দর, হাসছে উনি আর উনার গালে টোল পড়ছে। উনাদের দেখেই রোদের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মেঘ কে রেখেই ভেতরে প্রবেশ করে বললো,

–” আন্টি!আঙ্কেল! ”

রোদের গলা শুনেই ভদ্র মহিলা আর ছেলেটি উঠে এলো। মহিলা টি রোদের গালে হাত দিয়ে বললো, “কেমন আছিস?আর কোথায় গেছিলি?”

–“আমি ভালো আছি। মেঘ কে কলেজ থেকে আনতে গেছিলাম আন্টি।” বলেই জিবে কামড় দিয়ে রোদ মেঘ কে নিয়ে আসলো।

মেঘ মহিলা টি কে সালাম দিলো। রোদ মেঘ কে বললো,”মেঘ এইটা আমার একটা আন্টি। আম্মুর বেস্ট ফ্রেন্ড মিসেস মৌ ইসলাম! আর ওই যে বসে আছেন উনি আঙ্কেল মিস্টার নীল ইসলাম আর এইটা প্রিন্স উনাদের ছেলে।”

বলে রোদ মিসেস মৌ কে বলতে নিবে কিছু তার আগেই মিসেস মৌ বললো, “আর তোকে বলতে হবে না। এইটা তোর স্ত্রী মেঘলা তাইনা?”

মেঘ মুচকি হাসি দিয়ে বললো,” জী।”

প্রিন্স হা করে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ কারো দিকে খেয়াল করেনি এখনও। মিস্টার নীল উঠে মেঘের কাছে আসলেন। প্রিন্স আগেই বলে উঠলো,

–“মাম্মা সি ইজ দ্যাট লেডি!”

মেঘ কণ্ঠ শুনে প্রিন্স এর দিকে তাকিয়ে দেখল যাঁকে ও রাস্তায় দেখেছিল সেই ছেলেটাই। মেঘের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মেঘ প্রিন্স এর গাল টেনে বললো,

–“তখন নাম না বলেই চলে আসলে। যদি আর দেখা না হতো?”

প্রিন্স হঠাৎ ই মেঘ কে জড়িয়ে ধরে বললো,” আমি জানতাম দেখা হবেই তোমার সাথে আপু।”

সবাই তাকিয়ে আছে কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না। রোদ বললো, “তোমাদের কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমায় একটু খুলে বলবে?”

মেঘ মুখে হাসি রেখে সবকিছু বললো। মিস্টার নীল মেঘের মাথায় হাত রাখতেই মেঘ উনাদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। মিস্টার নীল বললো,

–” অনেক মিষ্টি মেয়ে তুমি মেঘ।”

আদিল চৌধুরী বসে বসে বললো,” হুম নীল আমার বউ মা হাজারে একজন কিন্তু।”

মিসেস মৌ কেনো যেনো মেঘের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে। উনার চোখের কোণে পানি জমেছে। মেঘ উনার দিকে খেয়াল করে উনার হাত স্পর্শ করে বললো,” আন্টি আপনার চোখে জল মনে হচ্ছে।”

মিসেস মৌ চোখের জল মুখে নিয়ে মেঘ কে নিয়ে বসে বললো, “এইটা আনন্দের কান্না মা। আমি তোকে তুই করে ডাকতে পারি? আর তুই আমাকে মামনি বলে ডাকবি প্লিজ?”

মেঘ উনার এই কথায় একটু অবাক হলো। তারপরই হেসে বললো, “অবশ্যই মামনি।”

রোজা চৌধুরী ঠান্ডা শরবত নিয়ে এসে মেঘের হাতে দিয়ে বললো, “মেঘ মা খেয়ে নাও শরবত টা। বেলের শরবত শরীরের পক্ষে ভাল।”

মেঘ শরবত টা রেখে বললো,” মা আমি বেল পছন্দ করি না। আমি শুধু গ্লুকোজের শরবত খাই।”

মেঘের কথায় মিসেস মৌ আর মিস্টার নীল যেনো থমকে গেলো ।মিস্টার নীল বললো,” কেনো পছন্দ করো না মেঘ?”

–“জানি না। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই খেতে পারি না।”

মিসেস মৌ বললো,” আহা এখন এত প্রশ্ন কেনো করছো? মেঘ যা মা ফ্রেশ হয়ে নে। আমি নিজে তোকে একটা স্পেশাল শরবত বানিয়ে দিবো।”

মেঘ একটু হাসল। ইশা চৌধুরী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে,”চলে এলো আরেক আপদ! আর পারি না বাপু।”

মেঘ উপরে যেতে নিলো তার আগেই প্রিন্স উঠে বললো,”আপু তোমার সাথে তো আমার কথায় হল না তার আগেই কোথায় যাও?”

মেঘ বললো,” আসব তো ভাইয়া। আজ সারাদিন তোমার সাথে গল্প করব কিন্তু আগে ফ্রেশ হয়ে আসি?”

–“ওকে আপু।”

রোজা চৌধুরী বললো,” প্রিন্স মেঘ কে আপু না ভাবি বলে ডাকো। ভাইয়ার বউ ভাবি হয়।”

প্রিন্স একবার রোজা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আবারো মেঘের দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি টেনে বললো, “না আন্টি আমি তো আপু ই বলব। মাম্মা বলেছিল আর আমিও ছবি তে দেখেছি আপুর চুল গুলো ঠিক মেঘ আপুর চুলের রঙের মত। আপু কে তো কখনো দেখিনি তাই আমি মেঘ আপু কেই আপু বলে ডাকব।”

প্রিন্স হুট করে এই কথা বলায় সবাই সবার দিকে চোখাচোখি করলো। মেঘ কিছু না বুঝে বললো,” মানে কে তোমার আপু?”

রোজা চৌধুরী প্রিন্স কে রোদের কাছে দিয়ে বললো,” পরে সব শুনবে এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো মেঘ। তারপর সব জানবে।”

মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। মেঘ চলে যাওয়ার পরেই ইশা চৌধুরী ও চলে গেলো। মিসেস মৌ হঠাৎ কেঁদে উঠলো। আদিল চৌধুরী মিসেস মৌ এর কাছে গিয়ে বললো,

–” আজকের দিনে আর কান্না করো না শালীকা ।”

–“দুলাভাই ওকে দেখে আমার মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেলো। ওর হাসি, ওর চুল একদম আমার মেয়ের মত। আর ওর বেল পছন্দ না করা এইটাও তো মিলে গেলো।”

মিস্টার নীল মিসেস মৌ এর কাঁধে হাত রেখে বললো,”আমাদের মেয়ে তো আর নেই। ওকে ই না হয় মেয়ে ভেবে নিজে একটু হাসিখুশি থাকো প্লিজ।”

আদিল চৌধুরী বললো,” হুম নীল ঠিক বলেছে। মেঘের মাঝেই পায়েল কে খুঁজে নিয়ে তোমরা ও ভালো থাকো আর রোদও।”

রোদ এতক্ষণ মিসেস মৌ এর কথাগুলো শুনছিল। ওর চোখেও পানি জমেছে। রোদ আদিল চৌধুরীর কথা শুনার পরই বললো,

–” তোমরা থাকো আমি আসছি আমার একটু কাজ আছে।”

প্রিন্স বললো,” ভাইয়া আমিও তোমার সাথে যাব। বাংলাদেশ তো আমি কখনো আসিনি এইটাই প্রথম। ঘুরতে নিয়ে চলো।”

রোদ প্রিন্স এর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,” নিয়ে যাব ঘুরতে কিন্তু এখন তোমরা রেস্ট নাও রাতে নিয়ে যাব।” বলেই রোদ চলে গেলো।

মিসেস মৌ বললো,” রোদ কোথায় যাবে?”

রোজা চৌধুরী বললো, “জানি না রে। চল তুই রান্না ঘরে চল। কি স্পেশাল শরবত বানাবি বললি।”

–” হুম চল। ”

.
.

মেঘ ঘরে গিয়ে প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে গোসল করলো।শরীর প্রচণ্ড ব্যথা করছিলো তাই এতক্ষণ শাওয়ার নিলো। এখন অনেকটা ভালো লাগছে। মাথার চুল মুছতে মুছতে মেঘ ওয়াশ রুম থেকে বেরোতে ই চোখে পড়লো খাটে মৌ ইসলাম বসে আছে। মেঘ কে দেখেই মৌ ইসলাম মেঘের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন,

–“এতক্ষণ গোসল করছিলি! এইখানে বস আমি চুল মুছে দেই।”

মেঘ মুচকি হেসে উনার সামনে বসে বললো, “আসলে মামনি শরীর একটু খারাপ লাগছিল তাই গোসল করতে দেরি হলো। তুমি কখন এসেছ ঘরে?”

মৌ ইসলাম পরম যত্নে চুল মুছে দিচ্ছে। বললো, “আমি অনেক আগেই এসেছি শরবত নিয়েই।”

মেঘ কথাটা শুনেই উল্লাসিত মুখে বললো,” কই দাও আমায়।”

মৌ ইসলাম তাওয়াল রেখে গ্লাস টা মেঘের হাতে দিলো। মেঘ শরবত এক ঢোক খেয়ে মৌ ইসলামের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো,

-” দারুণ তো!”

মৌ ইসলাম একটু হাসল আর বললো, “পুরোটা শেষ কর আগে।”

–” হুম হুম.. ”

মেঘ পুরো শরবত শেষ করে বললো, “মামনি এই শরবত বেশ মজার তো। কি দিয়ে তৈরি করছো?”

মৌ ইসলাম মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, “কিভাবে তৈরি করেছি তা বলব না! একদিন বানানো শিখে দিবো। জানিস মা আমার মেয়েটাও এই শরবত খুব পছন্দ করত। কিন্তু আজ তো আমার মেয়েটা ই নেই। ”

শেষ কথাটা বলতে গিয়ে মৌ ইসলাম আনমনে হয়ে গেলো। মেঘ আলতো করে মৌ ইসলামের হাত স্পর্শ করে বললো, “কি হয়েছিলো তোমার মেয়ের? আর তোমরা কোথায় থাকতে? ”

মৌ ইসলাম বললো,” আমার মেয়েটা যখন তিন বছরের সেদিন আমার মেয়েটা হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজার পরেও পাইনি। আসলে হারিয়ে যায় নি কেউ কিডনাফ করেছিলো। সবাই ধরেই নিয়েছে আমার মেয়ে বেঁচে নেই। ওর স্মৃতি গুলো আমাকে তারা করে নিয়ে বেড়াত তাই আমার মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য আমি আর নীল নিউইয়র্কে চলে যায়। তার পরে আর আসিনি একবারও বাংলাদেশে। প্রিন্স ওখানেই জন্ম নেয় ওর জন্মের পর কিছুটা আমি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু নিজের প্রথম সন্তান কে কি কখনো ভুলে যাওয়া যায়? ”

মৌ ইসলামের বুকের মাঝে যেনো হাহাকার হানা দিয়ে উঠলো। মেঘের চোখে জল এসেছে। মৌ ইসলামের কষ্ট মেঘ যেনো সত্যি অনুভব করছে। মৌ ইসলাম মেঘের দিকে তাকিয়ে ওর চোখে জল দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করে একটু মুচকি হাসল। মেঘের চোখের জল মুছে দিয়ে বললো,

–” কান্না করছিস কেনো? আমার এক মেয়ে নেই তো কি হয়েছে তুই তো আছিস! তুই আমার মেয়ে হয়ে থাকবি তো?”

মেঘ মৌ ইসলামের বুকের মাঝে গিয়ে হঠাৎ ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।এই কান্নার মানে আসলেই কি মেঘ নিজেও জানে না। কেনো তার এত কষ্ট হচ্ছে?মেঘ কান্না মাখা কন্ঠে বললো,

–“আজ থেকে আমি তোমার মেয়ে। তুমি আর কখনো উদাসীন হয়ে থাকবে না। তোমার মলিন মুখ আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে কিন্তু কেনো তা জানিনা।”

মৌ ইসলাম মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বললো,” আর আমার কষ্ট নেই মা। তোকে অনেকটা আমার মেয়ের মতই দেখতে যে।”

–“তোমার মেয়ের নাম কি ছিল?”

–“আমার মেয়ের নাম….

“আসবো আমি?” – মৌ ইসলামের কথা শেষ না হতে ই নীল ইসলাম ঘরের সামনে এসে কথাটা বললো।

মেঘ মুখে হাসি টেনে বললো, “আসুন আঙ্কেল। জিজ্ঞেস করতে হবে কেনো? ”

নীল ইসলাম ঘরে এসে বসে বললো, “বাহ ঘর টা বেশ সুন্দর করে সাজানো তো। তুমি সাজিয়ে রাখছো মেঘ? ”

–“না আঙ্কেল। আমি এই বাড়িতে আসার পর থেকেই এই ঘর এমন ই দেখেছি। শুনেছি রোদ ঘর টা সাজিয়ে রেখেছে। ও আচ্ছা মামনি উনি কি চলে গেছেন? ”

–“হুম ও তো চলে গেছে তখনই। ”

–“খেয়েছেন উনি? ”

নীল ইসলাম বললো,” না খেয়ে যায় নি ও। খুব চিন্তা হয় ওর জন্য? এখন চলো তুমি খেয়ে নিবে। তোমার জন্য প্রিন্স নিচে বসে আছে। ”

মেঘ মুচকি হেসে বললো, “আঙ্কেল – মামনি তোমরা নিচে যাও আমি একটু পরেই আসছি। ”

–“তুমিও আমাদের সাথেই চলো। ”

মৌ ইসলাম নীল ইসলামের হাত ধরে বললো, “উফ তুমি চলো না নিচে। ও একটু পরেই আসবে বললো তো। ”

নীল ইসলাম কে আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে মৌ ইসলাম উনাকে ঘর থেকে নিচে নিয়ে আসলেন। নীল ইসলাম নিচে এসে বললো, “এভাবে কেনো নিয়ে আসলে? মেয়েটা কে একসাথে নিয়ে আসলে কি হতো? ”

–“অনেক কিছু হতো। বুড়ো হয়ে যেতে যেতে তোমার মনেও বুড়োমি ধরেছে বুঝতে পারছ? রোদ না খেয়ে চলে গেছে শুনে মেয়েটার মুখ দেখেছিলে তুমি?”

–“হুম দেখেছি তো?”

–“তো কিছু না থাকো তুমি।”

বলে হাসতে হাসতে মৌ ইসলাম ডাইনিং এ গেলো। গিয়ে রোজা চৌধুরী আর উনি উপরের ঘটনা বলে হাসছে।
.
মৌ ইসলাম ঘর থেকে যাওয়ার পরেই মেঘ ফোন হাতে নিয়ে রোদ কে কল করলো। একবার রিং হল কিন্তু ধরলো না। মেঘ একা একা বলছে,” শালা রোদের বাচ্চা বাহিরে কি গার্ল ফ্রেন্ড রেখে এসেছিস যে না খেয়েই চলে গেছিস? আবার ফোন ও ধরছে না।”

বলে আবারো কল করলো। এইবার কল করতেই রোদ কল ধরে বললো, “কিছু বলবে? একটু ব্যস্ত ছিলাম।”

এমনিতেই রেগে ছিল মেঘ। রোদের ব্যস্ত থাকার কথাটা শুনে মেঘ আরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললো,” থাপ্পড় খাইছেন মেয়েদের হাতে কখনো? থাপ্পড় দিয়ে বত্রিশ টা দাঁত ফেলে দিবো আপনার। নিজের বউ কে এত কিসের ব্যস্ততা দেখান আপনি? আরো চার পাঁচটা বউ আছে যে তাদের সময় দিচ্ছেন তাই ব্যস্ত আছেন?”

রোদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো হঠাৎ মেঘের এমন কথায়।বুঝতে পারলো প্রচণ্ড রেগে গেছে মেঘ। আর মেয়েরা রাগলে তার সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে নেই তা রোদ একটু হলেও বুঝে গেছে কয়েক দিনেই। রোদ বললো,

–” এতো রেগে গেছো কেনো? আমি তো কাজে আছি এখন। ”

–” আপ্নার কাজের নিকুচি করেছি। আপনাকে খেয়ে যেতে বলেছিলাম কেনো খেয়ে যান নি? কি কাজ আপনার এতো? একটা কথা মানতে পারেন না? খাবেন না তো রোজা থাকবেন তাহলে যাইহোক সোয়াব পাবেন। এই আপনি নামাজ পড়েন তো? নাকি নামাজ ও পড়েন না? ”

–” আমি নামাজ পড়ি মেঘ। ”

মেঘ একটু শান্ত হয়ে মিষ্টি করে বললো,” তাহলে আমার একটা কাজ কমে গেলো। কিন্তু আপনি কেনো খেয়ে যান নি বলুন তো? এভাবে না খাইলে হয় নাকি? বাহিরের খাবার শরীরের জন্য ভালো না। ”

এই প্রথম মেঘ এত মিষ্টি করে কথা বললো রোদের সঙ্গে। রোদের মনে হচ্ছে এ এক অন্য মেয়ে। যার পুরোটা জুড়ে শুধু মিষ্টতা। রোদ মুচকি হেসে বললো,” আর হবে না। একটা জরুরী কল এসেছিল তাই চলে এসেছিলাম। তুমি খেয়েছ? ”

–” না খাই নি। শুনুন তাড়াতাড়ি আসবেন। ”

–” যাও খেয়ে নাও তুমি। আর পাঁচটার সময় আমি যাবো বাসায়। তোমাদের নিয়ে ঘুরতে বেরোব। আয়রা আসলে ওকে বল।”

–“ঠিক আছে রাখলাম।”

মেঘ নিচে এসে সবার সাথে খেয়ে নিলো তারপর প্রিন্স এর সাথে গল্প করছে। প্রিন্স বাংলাদেশ সম্পর্কে মেঘের থেকে শুনছে আর মেঘ শুনছে নিউইয়র্কের কথা। ওদের দেখে মনে হচ্ছে কত জনমের চেনা দুজন।
_____________

আয়রা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। কলেজ টাইম শেষ এখনও গাড়ি আসেনি ওকে নিতে। ড্রাইভার আঙ্কেল কে কল করলে উনি জানান মাঝ রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। আসতে আসতে অনেক সময় লাগবে তাই আয়রা আজ একা যাবে ভেবেছে সেজন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। কখনো একা যায় নি আয়রা তাই কোথায় থেকে রিকশায় উঠতে হবে তাও জানে না। রাস্তা দিয়ে দিহান যেতে নিয়েই আয়রা কে চোখে পড়লো ওর। গরমের উত্তাপে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। বারবার চশমা ঠিক করছে। গাল গুলো লাল হয়ে গেছে রোদে। দিহান আয়রার সামনে বাইক ব্রেক করলো। আয়রা একটু চমকে উঠলো কারণ দিহান হেলমেট পরে ছিল। হেলমেট খুলতে ই আয়রা আরেক দফা হটচকিয়ে গেলো। যে মানুষের থেকে দূরে থাকতে চায় সে মানুষ তার সামনে বারবার আসছে কেনো? আয়রা চোখ নামিয়ে নিচের দিকে তাকালো। দিহান মৃদু হেসে বললো,

-” রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”

আয়রা দিহানের দিকে না তাকিয়ে ই বললো, “বাসায় যাবো তাই জন্য রিকশার জন্য দেরি করছি কিন্তু একটা রিকশাও দেখতে পেলাম না।”

দিহান হেসে বললো, “কখনো কার ছাড়া কোথাও বের হয়েছ বলে তো মনে হয় না। এখানে রিকশা পাওয়া যায় না।”

আয়রা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,” ও… ধন্যবাদ আমি সামনে এগিয়ে যাই তাহলে।”

–“না দাঁড়াও। যেতে হবে না আমি তোমায় বাসায় রেখে আসি চলো। ”

–” না যেতে হবে না আমি একা যেতে পারবো।”

–“তা বললে তো হবে না। আমি তোমায় একা ছাড়তে পারি না। আমিও ওই রাস্তায় যাচ্ছিলাম তাই কোনো সমস্যায় নেই।”

–“তবুও…. ”

–” কি তবুও? এত কিসের সংকোচ শুনি? হেলমেট নাও আর উঠে পড় গাড়িতে। ”

আয়রার মন বলছে দিহানের সাথে যাবে আরেকবার মন বাঁধা দিচ্ছে। কিন্তু এইটাও ঠিক এই রোদে আর থাকার মতো শক্তি আয়রার নেই। কাঁপা হাতে হেলমেট নিলো কিন্তু পড়তে পারছে না। দিহান পড়িয়ে দিলো। বাইক স্টার্ট করার পর আয়রা আস্তে করে বললো,

–” এক্সট্রা হেলমেট আপ্নার কাছে সবসময় থাকে নাকি? মনের মানুষের জন্য বুঝি?”

লুকিং গ্লাসে আয়রার মুখ দেখছে দিহান। দিহান মজা করে বললো,” হুম সে ছাড়া আর কে আছে আমার যে তার জন্য রাখবো।”

কথাটা শোনার সাথে সাথে আয়রার চোখ ছলছল করে উঠলো। দিহান ব্যাপার টা দেখে একবার চোখ বন্ধ করে আবারও হেসে উঠে বললো,” আমার আবার মনের মানুষ কোথায় বল! এখনো কেউ নেই কিন্তু ইচ্ছা আছে যে আমার হবে তাঁকে বাইকে নিয়ে প্রতিদিন লং ড্রাইভে যাবো। ”

আয়রা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো, “মিথ্যা বললেন কেনো আগে? সব মিথ্যা বলতে নেই।”

–“কেনো কেউ থাকলেই বা কি আর না থাকলেই কি?”

আয়রা মনে মনে বললো,” অনেক কিছু। আমি আপনাকে যে ভালোবেসে ফেলেছি। এক মুহূর্তে কাউকে ভালোবেসে ফেলা যায় তা আমি ভালো না বাসলে বুঝতাম না।”

আয়রার চুপ থাকায় দিহান বললো, “চুপ কেনো? তোমার কেউ আছে? ”

আয়রা অস্পষ্ট ভাবে বললো,” না! সবার জীবনে কেউ থাকতে নেই। ”

–” কাউকে ভালোবাস তোমাকে দেখলে বুঝা যায়! ”

–” কাউকে ভালোবাসলে তা কি মুখে লেখা থাকে যে বুঝা যায় আজব আজব কথা বলেন তো। আমারও মনে হয় আপনি কাউকে ভালবাসেন।”

দিহান ব্রেক করে বললো,” নামুন আপ্নার বাড়ি চলে এসেছে।”

আয়রা নেমে বললো,” আমার কথায় উত্তর পেলাম না। আর বাসায় চলুন। ”

দিহান মুচকি হেসে বললো,” আজ বাসায় যাব না। আর হ্যাঁ আমিও একজন কে মনে হয় ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু তাঁকে এখনও বলে উঠতে পারিনি। কারন সে তো বড্ড ছোট আর অভিমানী। সময় হলেই বলে দিবো “ভালোবাসি” ।”

ভালোবাসি কথাটা দিহান যেনো আয়রা কেই বললো । আয়রা মুখ চেপে কষ্ট লুকানোর চেষ্টা করে বাসায় গেলো। বাসায় গিয়ে মৌ ইসলাম, নীল ইসলাম আর প্রিন্সের সঙ্গে আলাপ হল। আয়রাও কখনো ওদের দেখেনি।
…………
বিকেলে রোদ চলে আসলো কিন্তু এখনও মেঘ রেডি হয় নি। প্রিন্স আর আয়রা বসে বসে গল্প করছে। মেঘ সবার সাথে গল্প করছে। রোদ এসে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,

-“তোমাকে রেডি হয়ে থাকতে বলেছি আর তুমি এখনও গল্প করছো?”

মেঘ উঠে বললো, “আমাকে কখন রেডি হতে বললেন? আমি যাবো না! প্রিন্স, আয়রা আর ইহানা যাবে তাই তো বললেন আপনি।”

রোদ রেগে বললো, “উফ কোথায় আমি তা বললাম? আমি বলেছি তোমরা মানে তার মাঝে তুমিও আছো। রুমে আসো এখনই।”

মেঘ অসহায় চোখে সবার দিকে তাকালো। মেঘের হাত ধরে উপরে নিয়ে গেলো রোদ। ঘরে গিয়ে বললো,

–” তুমি ইহানা কে কেনো বলেছ? ওই মেয়েকে আমি নিয়ে যেতে পারবো না। আর তুমি শাড়ী পড় এখনই!”

মেঘ চোখ বড় বড় করে ফেললো। এ ছেলে বলে কি শাড়ী পড়বে মেঘ তাও আবার ওর সাথে ঘুরতে যাবে! মেঘ বললো, “আমি শাড়ী পড়ব না। আর ইহানা কে না বললে হয় নাকি? আহ কত ভালোবাসে ও আপনাকে।”

রোদ মেঘের হাত চেপে ধরে বললো,” ওই মেয়ে আমার গায়ে পড়ে সবসময়। আমার ভালো লাগে না তুমি বুঝতে পারছো না।”

মেঘ বিড়বিড় করে বললো, “আর আপনি আমার কাছে চলে আসেন সবসময়।”

রোদ বললো,” কি বললে তুমি? ”

মেঘ হাসি দেয়ার চেষ্টা করে বললো,” কিছুনা কিছুনা। ”

রোদ একটা শাড়ী আলমারি থেকে বের করলো। মেঘ কে দিয়ে বললো,” বাবা যে শাড়ী এনেছে ওগুলো আমার পছন্দ হয়নি। এই শাড়ী পড় যাও। ”

মেঘ অবাক হয়ে ভাবছে আলমারি তে শাড়ী কেমন করে আর আলমারি তে আর কি আছে কিছুই দেখতে পেলো না মেঘ। মেঘ শাড়ী নিয়ে দেখলো বেশ সুন্দর শাড়ী টা কিন্তু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে শাড়ী নিয়ে। রোদ ধমক দিয়ে বললো,

-“কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? কি এত ভাবনা?শাড়ী টা বাবাই এনেছে আমার ভালো লাগছিল তাই আলমারি তে রেখেছি এ নিয়ে এত ভাবতে হবে না। আমার আগে দু চার টা বউ ছিল না সে চিন্তা করো না।”

মেঘ ভ্রু কুঁচকে বললো, “সেইসব বলেছি আমি? আমি শাড়ী পড়তে পারি না আপনি জানেন না?”

রোদ শান্ত হয়ে নিশ্বাস ছেড়ে বললো,” আম্মু কে আসতে বলছি উনি পড়িয়ে দিবেন। ”

–” আচ্ছা। ”

রোজা চৌধুরী মেঘ কে শাড়ী পড়িয়ে দিলো। ড্রয়িং রুমে মেঘের জন্য ওয়েট করে আছে সবাই। ইহানা পাখা দিয়ে মুখে বাতাস করতে করতে বলছে,

–” কখন আসবে আরো? আমার ম্যাক আপ তো এই গরমে নষ্ট হয়ে গেলো। রোদ তোমার বউ এত কি সাজছে!”

রোদ বিরক্তি মুখে বললো,” আমি তোর ভাই! রোদ রোদ করিস কি জন্য?”

–“আমার সব কথা তোমার ভুল লাগে। কিন্তু আমাকে কেমন লাগছে তা বলতো?”

বলে রোদের সামনে দাঁড়ালো। ওদিকে সিরি দিয়ে মেঘ নামছে নীল শাড়ী, মুখে একটুও ম্যাক আপ এর ছোয়া নেই হালকা লিপস্টিক, খোলা চুল। রোদ উপরের দিকে তাকাতেই মেঘের দিকে চোখ পড়ে বললো,

–” অপূর্ব! ”

এদিকে ইহানা কথাটা শুনে ভেবেছে ওকে বলেছে। ও খুশিতে বলতে নিলো,” সত্যি রোদ! আহ আমার লজ্জা করছে।”

আয়রা ইহানার কানের কাছে এসে বললো, “তোকে বলেনি উপরের দিকে তাকিয়ে দেখ কে আসছে।”

ইহানা মেঘ কে দেখে মুখ ফুলিয়ে ফেললো। মেঘ নিচে আসতেই প্রিন্স মেঘের কাছে এসে বললো, “আপু তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।”

মেঘ মুচকি হেসে বললো, “তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে ভাই। ”

ইহানা বললো, “চলো অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

সবাই যেতে নিলো কিন্তু ইহানা আগে আগে যেতে নিলো যাতে রোদের পাশে বসতে পারে। কিন্তু বাড়ির চৌকাট পেরোতে ই হঠাৎ……..

.
.
চলবে……..

ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ইহানার কি হয়েছে ভাবুন তো একটু!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে