মনের গহীনে শুধুই তুমি পর্ব-৩২

0
1289

#মনের_গহীনে_শুধুই_তুমি
#পর্ব_32
#Mst_Meghla_Akter_Mim

রাত এগারো টা ছুঁই ছুঁই ঘড়ির কাঁটা। বৃষ্টি থামার পরের স্নিগ্ধ বাতাস হু হু করে জানালা দিয়ে ঢুকছে। বিশাল এক ঘরে শুয়ে আছে মেঘ! বাতাস খুব জোরে বইছে, মেঘ মিট মিট করে চোখ খোলার চেষ্টা করছে। চোখ খুলতেই সবকিছু আবার ধাপসা লাগতে শুরু করছে তাই মেঘ আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। চোখের সামনে ধাপসা একটা কাঁচের দেয়াল প্রতীয়মান হল। কিন্তু কোথায় সে তা জানে না। সে তো রাস্তায় ছিল আর কে যেনো ধাক্কা দিলো তারপর কি?সে কি হাসপাতাল এ? কিন্তু হাসপাতাল মনে হচ্ছে না। মেঘের কিছু মনে পড়ছে না, মাথায় ব্যথা অনুভব করে আহ্ করে শব্দ করে উঠলো। সাথে সাথে কেউ একজন মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

–“খুব কষ্ট হচ্ছে? বেশি চিন্তা করো না মাথায় চাপ পড়ছে তো।”

কন্ঠ টা শুনে মেঘের মনে হলো সে বোধহয় স্বপ্ন কিন্তু আবারো সেই কণ্ঠ কানে আসলো বলছে,

–” সরি মেঘপরী অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি কিন্তু আমার যে কোনো উপায় ছিল না।”

মেঘের হাতে কারো স্পর্শ পেলো আর হাতে দু ফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো। মেঘ এইবার নিশ্চিত হলো এইটা স্বপ্ন নয় কিন্তু রোদ এইটা কিভাবে হতে পারে? মেঘ চোখ খুলতেই দেখতে পেলো রোদের অশ্রু সিক্ত চিন্তিত মুখ। মেঘ নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে তো রাস্তায় ছিল তাহলে এখন কোথায়? রোদ কেনো? সব প্রশ্ন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে আবারো। রোদ কান্না করতে করতে বললো,

–“আমায় ক্ষমা করে দাও মেঘ।”

মেঘ তার কোনো প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছে না। রোদের উপর মায়া হচ্ছে খুব, তার চোখের পানি তে মেঘের বুকের মাঝে কষ্ট আস্টে পিস্টে হানা দিচ্ছে। কিন্তু মুহূর্তেই কিছুক্ষণ আগের কথা মনে হয়েই মেঘ নিজের হাত সরিয়ে নিলো। রোদ অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকালো। কিন্তু মেঘ কোনো কথা না বলে বেড থেকে উঠতে নিলো। বেড থেকে এক পা নামাতেই মাথা আরো ঝিম ঝিম করা শুরু করলো, মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলো। রোদ মেঘ কে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে বললো,

–“তুমি উঠছ কেনো? শুয়ে থাকো মাথায় চোট পেয়েছ এমনিতেই।”

মেঘ চোখ মুখ শক্ত করে রোদের থেকে সরে বসলো। কোনো কথা বলার ইচ্ছা হচ্ছে না তার। খেয়াল করলো মেঘের গায়ে একটা টি শার্ট আর পুরো ওয়েস্টার্ন ড্রেস তার শরীরে। রোদ একটা চেয়ার এগিয়ে নিয়ে মেঘের সামনে বসে অপলক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে চাইলো। মেয়েটা কে সে বেশ কষ্ট দিয়েছে তা বুঝতে পারছে আর সে যে বড্ড অভিমানী তা চেহারা দেখেই বুঝা যায়। রোদ শান্ত কন্ঠে বললো,

–“বৃষ্টিতে ভিজলে মাথা ব্যাথা করে তোমার তা তো তুমিও জানো। আর একা একা রাস্তার মাঝে উন্মাদের মত হাঁটছিলে কেনো? শরীর যে খারাপ তোমার তা মনে ছিল না? আর একটু হলেই তো….”

রোদ আর কিছু বললো না কারণ মেঘ রাগী দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ মেঘের চাহনি দেখে আর কিছু বলতে পারল না। মেঘ ঝাঝাল কন্ঠে বললো,

–” আমি উন্মাদ হয় না হয় মরে যাই তাতে আপনার কি মিস্টার রোদ্দুর চৌধুরী? আর আমাকে নিয়ে আপনার চিন্তার কোনো মানেই পেলাম না এতক্ষণ ভেবেও। এখন তো পায়েল কে নিয়ে ভাবার সময় আপনার। আর আমি কোথায় আছি? আপনি তো রাস্তায় আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া মানুষ টা ছিলেন না কারণ এই কতক দিনে আপনাকে এইটুকু আমি ভালো করে চিনি, হেলমেটেও চেনার মতো ক্ষমতা আমার আছে। আর আমার শরীর এই ড্রেস কিভাবে আসলো? স্পিক আউড রোদ্দুর চৌধুরী আপনি এখানে কেনো আর আমি কোথায়?”

শেষের কথাটা চিৎকার করে বললো মেঘ। অভিমান, অভিযোগ আর কষ্ট সবকিছু মিশ্রিত ভাবে চাপ দিচ্ছে মেঘের মাথায়। মেঘ হাসফাস করছে কথাগুলো বলে। রোদের মুখে আরো চিন্তার ছাপ। মেঘ কে শান্ত গলায় বুঝানোর চেষ্টা করে বললো,

–” তোমার ড্রেস আমি চেঞ্জ করিয়ে দিয়েছি! ”

মেঘ আরো রেগে গেলো। চিৎকার করে বললো,” কোন সাহসে আপনি আমার ড্রেস চেঞ্জ করিতেছেন?”

–“আমি তোমার স্বামী মেঘ!”

মেঘ আরো চিৎকার দিয়ে বললো, “কিসের স্বামী আপনি! কেউ না আপনি আমার।”

রোদ মেঘের মাথায় হাত দিয়ে বললো, “প্লিজ তুমি শান্ত হও। তোমার মাথায় চাপ পড়ছে তো।”

মেঘ হঠাৎ ই রোদের শার্টের কলার ধরে রাগী দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকালো । রোদ বুঝতেও পারেনি এভাবে মেঘ শার্টের কলার চেপে ধরবে। মেঘের মুখের রাগ মুহূর্তে ই কষ্টে রূপান্তরিত হল। কাঁপা কাঁপা গলায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,

–“যেখানে মনের উপরে এভারেস্টে পর্বত পরিমাণ অপমান, কষ্ট চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সেখানে এই আপনি আমার মাথায় সামান্য ব্যাপার নিয়ে চাপের কথা ভাবছেন? উত্তর দিন আমি কোথায় আর আপনি কেনো আমার সামনে!”

রোদ এখনও শান্ত। আর এই নিশ্চুপ, শান্ত রোদ মেঘ কে আরো অস্থির করে তুলছে। মেঘ আরো খামছে ধরলো রোদের শার্ট। চেহারায় কষ্টের আগুন স্পষ্ট, রোদ অপরাধীর চোখে তাকিয়ে আছে। এমন সময়ে কাঁচের দরজা খোলার শব্দ পাওয়া গেলো। রোদ মেঘ দুজনেই তাকালো। মেঘ অবাক হয়ে বললো,

–” রুদ্র ভাইয়া!”

রুদ্র একটু হাসার চেষ্টা করে দরজা থেকেই বললো, “সরি সরি ভাবি ভুল সময়ে চলে এসেছি মনে হয়।”

মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে রোদের শার্ট ছাড়ল। কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল যাতে রুদ্র কিছু না বুঝতে পারে। রোদ বললো,

–“আরে না আয় ভেতরে।”

রুদ্র ভেতরে এসে মেঘের সামনে দাঁড়িয়ে বললো, “এখন কেমন আছো ভাবি? কি চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলে বল তো? রাস্তায় আর একটু হলেই কি হয়ে যেতো।”

মেঘ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রুদ্রের দিকে তাকালো। রুদ্রের কথার উত্তর না দিয়ে উল্টে জিজ্ঞেস করলো,

–“আমি কোথায় ভাইয়া? আর কে আমায় ধাক্কা দিয়েছিলো? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

রুদ্র রোদের দিকে তাকালো ।বুঝলো রোদ কিছুই বলেনি। রুদ্র মেঘের পাশে বসে বললো,

–” আমি ধাক্কা দিয়েছিলাম নাহলে আর একটু হলেই তো accident হয়ে যেতো। ওটা কে accident নয় অবশ্য intentionally accident বলা চলে ।”

মেঘ হতভম্ব হয়ে গেলো intentionally accident মানে? মেঘ উত্তর দেয়ার আগেই রোদ বললো,

–“ড্রাইভার কে ধরতে পেরেছে? আর সাথে কে কে ছিল?”

–” হুম তুই চিন্তা করিস না। এই ব্যাপার টা আমি সামলে নিবো তুই একটু মেঘ কে সময় দে। ওকে বুঝিয়ে সবকিছু বল। তুই নিজেও কিন্তু ভুল করেছিস সেজন্য আজ মেঘের আরেকটা বিপদ হতে চলেছিল।”

রোদ মাথা নিচু করে মলিন মুখে বললো, “ধন্যবাদ রে। ”

–” থাক আমায় আর ধন্যবাদ দিতে হবে না সবকিছু তো তুই ই করেছিস! ”

মেঘ ওদের কথার কিছু ই বুঝছে না। এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও এখন আর চুপ না থেকে বললো,

–” কি করেছেন উনি? আপনাদের কথার কিছুই বুঝতে পারছি না। ”

রুদ্র শ্বাস নিয়ে বললো, “আমার বন্ধু তোমায় অনেক ভালোবাসে বলতে হবে। তোমাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলার পর ই ও আমায় জানিয়ে দেয় যাতে তোমাকে আমি সাবধানে বাসায় পৌঁছে দেয়। কিন্তু তুমি তো তার আগেই বৃষ্টির মাঝেই হাঁটতে শুরু করেছিলে। অবশ্য তোমার মনের অবস্থা ঠিক নেই সেজন্য ই এমন করেছো। তবে তোমার অনেক যত্ন নেয় আমার এই দুষ্ট বন্ধু টা। ”

মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ ছল ছল চোখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে যেনো সে অপরাধী। মেঘ অভিমানী সুরে বললো,

–” কেনো তার এত চিন্তা আমার জন্য? তার পায়েল তার কাছে চলে এসেছে। তাঁকে ছেড়ে আমার কথা চিন্তা করা কি তার মানায় হ্যাঁ? ”

রুদ্র মুচকি হাসল। আঙুল দিয়ে কপাল চুলকে রোদের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

–“ভাই এইবার তুই সামলা। এতদিন সব কেস সলভ করেছিস এখন নিজের বউ এর বেলায় ও তুই সামলে নে। আমি আমার কাজে গেলাম। ”

রুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মেঘ বেডে বসে রোদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেললো। রোদ ও মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। দমকা হাওয়া বয়ে চলেছে আর সেই হাওয়া দুটো মানুষের মান অভিমানের কুয়াশা যেনো কাটিয়ে দিতে সন্ধি নিয়ে এসেছে। রোদ কাঁপা গলায় বললো,

–” সরি পায়েল! ”

রোদের মুখে এই নাম শুনে মেঘ কিছুই বুঝলো না। এমনিতেই সবকিছু তাল গোল পাকিয়ে আছে। মেঘ ভ্রু কুঁচকে ঝাঝাল কন্ঠে বললো,

–” মজা করেন? আপনি আপনার পায়েলের কাছে যান এইখানে কেনো আপনি। আপনি ভালো থাকুন তাহলেই হবে আমার কথা আপ্নার চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই। ”

রোদ কিছু না বলে হুট করে মেঘ কে নিজের বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মেঘ আবারো অবাক হয়ে গেলো, নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর রোদ আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে। মেঘ বিরক্তি সুরে বললো,

–” ছাড়ুন আমায়। ”

সেই মুহূর্তে ই মেঘ অনুভব করলো তার পিঠ ভিজে যাচ্ছে, বুঝতে পারলো রোদ কান্না করছে। কিন্তু কেনো কান্না করছে? সে তো মেঘ কে অপমান করেছে। মেঘ নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো। মনে হলো রোদ কে বলার সুযোগ দেয়া উচিত। এমন সময়ে রোদ মেঘ কে জড়িয়ে ধরেই বলতে শুরু করলো,

–“ভালোবাসি আমি তোমায়। আমি জানি আমি তোমায় অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি কিন্তু বিশ্বাস করো যা করেছি তোমার নিরাপত্তার জন্য ই করেছি। আমি জানি তুমি ই আমার পায়েল সেটা তুমি বলার আগেই আমি জানতাম। কিন্তু মেঘ তার সাথে সাথে আমি যে এইটাও জানি কে তোমাকে সেই ছোট বেলায় মেরে ফেলতে চেষ্টা করেছিল। আজকে আমি খুব খুশি ছিলাম যখন তোমায় ছাদে দেখি। আমি নতুন করে আরও একবার যেনো তোমার প্রেমে পড়ে গেছিলাম কিন্তু তুমি যখন তোমার পরিচয় দিতে গেলে ঠিক তখনই দেখলাম কারো ছায়া। কেউ তোমার পরিচয় জানলে তোমার ক্ষতি হয়ে যেতো তোমাকে অনেকবার থামানোর চেষ্টা করে ইশারা করে কিন্তু তুমি বলেই ফেলেছিলে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তোমার সাথে অতোটা খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি আমি যাতে শত্রু পক্ষের নজর তোমার থেকে সরে যায়। আর আজকে তোমাকে আটকাই নি কারণ ওই বাড়িতে তুমি সেভ নয় এখন।প্লিজ বউ একটাবার ক্ষমা করে দাও আমায়। ”

এইবার কথাগুলো শুনে মেঘ থ মেরে গেলো। তাহলে সেই মানুষ টা সত্যি ভালোবাসে তাঁকে বিশ্বাস ই করতে পারছে না নিজের কান কে। নিজের অজান্তেই মেঘের চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু ঝরে পড়লো। রোদ মেঘ কে ছাড়ল।মেঘ অশ্রুশিক্ত চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,

–” কে সেই শত্রু? আমিও শুধু আপনাকেই জানাতে চেয়েছিলাম। আপনি কবে থেকে জানেন? তাহলে জান্নাত কে আপনি মেনে কেনো নিলেন?”

রোদ মেঘের হাত নিজের হাতের ভেতরে নিয়ে বললো, “সে শত্রু আমাদের চোখের সামনেই ছিল কিন্তু আমরা জানতাম না। সে আর কেউ না অবুঝ চৌধুরী! আর তোমার পরিচয় পেয়েছিলাম কিছুদিন আগে কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার এই মেঘ রূপে ই আমি ভালোবেসেছি। একবার সুযোগ দিবে ভালোবাসার নতুন করে? ভালবাসবে আমায়?”

মেঘ দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে কেঁদে ই ফেললো। রোদের কাঁধে মাথা রেখে জোরে কেঁদে উঠলো আর বললো,

–“কোনোদিন ছেড়ে যাবেন না তো আমায়? শুধু আমায় ভালবাসবেন কথা দিন?”

রোদ মেঘের চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে মুখে মুচকি হাসি ফুটে তুলে বললো, “কোনোদিন ছেড়ে যাবো না। আমার মনের গহীনে শুধুই তুমি তো মেঘপরী।”

মেঘ হঠাৎ ই রাগী রাগী মুখ করে রোদ কে ধাক্কা দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,

–” মিথ্যাবাদী একটা!”

রোদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়ে বললো, “আবার কি হলো? কি মিথ্যা বললাম আমি?”

মেঘ অন্য দিকে মুখ করে বললো, “এইযে এতদিন আমি পায়েল জেনেও একবার বলবেন তো আমায় তাইনা?”

রোদ হতাশ হওয়ার ভান করে বললো, “আমার মাথায় কি দুইটা মাথা নাকি যে সে কাজ করব? যদি বলতাম তুমি জীবনেও আমায় মেনেই নিতে না। বলতে ‘আপনি তো পায়েল নাম কে ভালবাসেন আমাকে ভালবাসেন না তাই চলে গেলাম আমি’। তখন কি করতাম আমি হ্যাঁ? নিজের বউ কে হারিয়ে দেবদাস হয়ে যেতে হতো তো।”

মেঘ এইবার হেসে ফেললো। রোদ সত্যি ই বলেছে মেঘ তাই করত। রোদ মেঘের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে মেঘের হাসি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মেঘ রোদের তাকিয়ে থাকা দেখেই হাসি থামিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,

” তো মিস্টার রোদ্দুর চৌধুরী আপনার পরিচয় কিন্তু আমি এখনো জানলাম না। আর কোথায় আমরা এখন?”

রোদ মেঘের হাত ধরে দরজা খুলে বাহিরে নিয়ে এলো। বাহিরে এসে মেঘ দেখলো এইটা এক বিশাল হল রুম, একপাশে একটা কঙ্কাল ঝুলছে, তার পাশেই বিভিন্ন বিক্রিয়ার জন্য রাসায়নিক পদার্থ। কয়েক টা ল্যাপটপ।আরো অনেক কিছু ই রয়েছে। মেঘ সবকিছুর দিকে খেয়াল করে রোদের দিকে তাকালো। রোদ হাতের ইশারা করে মেঘ কে ডান দিকে তাকাতে বললো। মেঘ ডান দিকে তাকিয়ে দেখলো বড় বড় করে লেখা আছে ‘CID’.
মেঘ লেখাটা দেখে বুঝলো তাহলে রোদ একজন সিআইডি! সেজন্য ই রোদের কাছে রিভলভার ছিল। মেঘের মুখে হাসি ফুটে উঠলো কারণ তার স্বামী অন্যায়ের শাস্তি দেয়ার মাধ্যম। রোদ মেঘের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

” কি চলবে তো?”

মেঘ হাসল। রোদের গলায় দু হাত দিয়ে জড়িয়ে মিষ্টি করে বললো, “একদম চলবে না। কারণ এই সিআইডি তে থেকেই তো আপনি একদম সময় দেন না বাসায় কাউকে। আর এখন তো আমাকেও দিবেন না।”

রোদ মেঘের নাক টেনে বললো, “তোমাকে সাথে নিয়ে আসবো। তোমার স্বামী তো সিআইডি হেড এইখানের, তাহলে সে কি করে টাইম পাবে বলতো।”

মেঘ আবারো মুচকি হাসি দিয়ে। সামনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এগারো টা পঞ্চান্ন! তারমানে রোদের জন্মদিন সেলিব্রেট করতে পারবে আর পাঁচ মিনিট পরেই রোদের সাতাশ তম জন্মদিন। মেঘ রোদের গলা ছেড়ে খুব চিন্তিত হওয়ার ভান করে বললো,

–” আচ্ছা একটু ছাদে যাওয়া যাবে?”

রোদ ভ্রু কুঁচকে বললো, “এই মধ্যরাতে ছাদে কেনো? শরীরের এই অবস্থা নিয়ে কোথাও যাওয়া না।”

–“উফ এত প্রশ্ন কেনো? একা যেতে চাইনি তো আপনি সাথে চলুন।”

রোদ কিছুক্ষণ ভেবে মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ বিড়বিড় করছে কি যেনো। মেঘ কে কিছু না বলে কোলে তুলে নিলো হঠাৎ ই। মেঘ বললো,

–“আরে ছাড়েন, নেমে দিন আমায়।”

রোদ আস্তে করে বললো,” যেতে হলে আমার কোলে করেই যেতে হবে মেঘপরী।”

বলে মুখে প্রাপ্তির হাসি ফুটিয়ে তুললো।

.
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে