মনের গহীনে শুধুই তুমি পর্ব-৩৩

0
1233

#মনের_গহীনে_শুধুই_তুমি
#পর্ব_33
#Mst_Meghla_Akter_Mim

জোৎস্নাসিক্ত রাতের বিচ্ছুরিত রশ্মি পৃথিবী কে আলোয় আলোকিত করে দিয়েছে। একটু হালকা শীতল বাতাস পরিবেশ কে আরো রোমাঞ্চকর করতেই যেনো বহমান। দূর থেকে শিয়ালের ডাক ভেসে আসছে। এর মাঝে চার তোলা ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে রোদ আর মেঘ। রোদ চোখ বন্ধ করা অবস্থায় আর মেঘ মিটমিট করে হাসছে রোদের দিকে তাকিয়ে। মাঝে মাঝে রোদের ঘড়ির দিকে নজর দিচ্ছে। রোদ বিরক্তির ভান করে বললো,

–” মেঘপরী আর কতক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকবো বল তো? ছাদে আসতেই চোখ কেনো বন্ধ করতে বললে? মেঘপরী তুমি আমার থেকে পালিয়ে যেতে চাইছ না তো মেঘ! কই তুমি…”

বলেই রোদ চোখ খুলতে যেতে মেঘ রোদ কে স্পর্শ করে বললো,

–” উম হুম!”

আর কিছু বললো না। রোদ ও চোখ খোলার সাহস পেলো না। মেঘ ছাদে এসেই কড়া নির্দেশ দিয়েছে চোখ খোলা যাবে না। এমনিতেই মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে তাকে আর কষ্ট দিতে চায় না রোদ। শান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে রোদ। মেঘ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললো। রোদের পায়ের উপরে দুবার রাখতেই রোদ মেঘ কে ধরে ফেললো শক্ত করে যাতে পরে না যায়। ভয় ভয় কন্ঠে বললো,

–‘কি করছো মেঘ?”

মেঘ কোনো উত্তর দিলো না। রোদের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রোদের কপালে চুল পড়ছে একটু পর পরই বাতাসের জন্য। মেঘ ঠোঁট বাড়িয়ে দিয়ে আলতো করে কপালে একটা চুমু দিলো। রোদের হৃদয়ে এক শীতল বাতাস বয়ে গেলো, ভালোবাসার মানুষের প্রথম পরশ ছিল। রোদ চোখ খুলে দেখলো মেঘ লজ্জা মাখা মুখে ঠিক রোদের বুকের কাছে। রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,

–” শুভ জন্মদিন!”

বলেই রোদের বুকে মাথা লুকানো। রোদের মুখে শান্তির হাসি ফুটে উঠলো। দু হাতে মেঘ কে জড়িয়ে ধরলো। মেঘ চুপটি করে রোদের বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ নীরবতা শেষে রোদ মেঘ কে জড়িয়ে রেখেই বললো,

–“আজ আমার জন্মদিন আমার কিন্তু মনে ছিল না। এতদিন আমার বউ ছিল না তো তাই এইভাবে জন্মদিনে কেউ উইশ ও করেনি।”

মেঘ মুখ তুলে রোদের থেকে হুট করে সরে গিয়ে বললো,”কেন এইভাবে অন্য কেউ আপনাকে স্পর্শ করলে আপনার ভাল লাগত তাইনা? আক্ষেপ এতো কিসের! যান না যান ওই জান্নাতের কাছে! যে আপ্নার পায়েলের ছদ্মবেশে!”

–” ঠিক আছে তাই করি।”

বলে রোদ শয়তানী হাসি দিলো। মেঘ মুখ গোমরা করে অন্য দিকে ঘুরে গেলো। রোদ আস্তে করে মেঘ কে পেছন থেকে জড়িয়ে বললো,

–” তোমাকে রাগ করলে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে মেঘপরী।”

–” এই জন্য ই আমায় রাগান আপনি তাইনা?”

রোদ মুচকি হাসল। মেঘের হাত ধরে একটা দোলনায় বসিয়ে দিয়ে রোদ হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসলো। মেঘ বললো,

–“আপনি নিচে কেনো বসলেন? আমার পাশে বসলে কি হয়?”

রোদ মুচকি হাসল। মেঘের হাত দুটো নিজের হাতের মাঝে নিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,” পাশে বসলে তোমার কোলে মাথা রাখবো কিভাবে? মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবে? জানতো শান্তির ঘুম হয়নি এতো বছর।”

রোদের চাহনির দিকে অপলক তাকিয়ে আছে মেঘ। চোখ ধাপসা হয়ে আসছে মেঘের, কান্না ভর করছে চোখে। কান্না আটকানোর চেষ্টা করে মেঘ রোদের হাতে হাত রেখে মাথা নাড়াল। রোদ শান্তির নিশ্বাস নিলো কিন্তু মেঘ হঠাৎ উঠে পড়লো। রোদ অবাক চোখে বললো,

–” উঠলে কেনো?”

–” আপনি মাটিতে আর আমি উপরে এইটা হবে না। অন্য কোনো উপায় আছে?”

রোদ একটু ভেবে বললো, “এক মিনিট!”

বলেই ছাদ থেকে যেতে নিলো, মেঘ জিজ্ঞেস করলো কই যায় কিন্তু তার কোনো উত্তর দিলো না। কিছু সময়ের মধ্যেই রোদ একটা মাদুর নিয়ে মেঘের সামনে দাঁড়াল। মেঘ মাদুরের দিকে তাকিয়ে বললো,

–” এইখানে মাদুরও আছে!”

রোদ মাদুর বিছাতে বিছাতে বললো, “হুম মেঘপরী। শুধু মাদুর নয় আরো অনেক কিছু ই আছে।”

মেঘ রোদ বসলো, রোদ মেঘের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। মেঘ ও কোনো প্রশ্ন করলো না। রোদ চোখ বন্ধ করে বললো,

–” এইটা কি স্বপ্ন নাকি সত্যি? যখন আমি প্রথম সিআইডি তে জয়েন করলাম তখন ভেবেছিলাম যখন কাজের খুব চাপ হবে তখন আমার পায়েল কেউ আমার সাথে অফিসে আনব। রাতে ছাদে দুজন চন্দ্রবিলাস করব। কিন্তু তখন আমি জানতামও না তুমি আছো কি না!”

মেঘ রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, “সত্যি এইটা রোদ। আপনি আমাকে এতো ভালবাসেন আমি কল্পনাও করিনি। জানেন তো আমি ভেবেছিলাম আমি হয়তো কখনো কাউকে ভালোবাসতেই পারবো না। সবসময় মনে হতো ছেলেদের ভালোবাসা কি সত্যি সম্ভব।”

মেঘ আনমনে কথা গুলো বলছিল। এদিকে রোদ চোখ খুলে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘের কথা শেষ হতেই রোদ উঠে মেঘের সামনে বসে একদম মেঘের মুখের সামনে গেলো। মেঘ প্রায় ভয় পাওয়া পাওয়া অবস্থা! মেঘ জোরে নিশ্বাস নিলো। রোদ মুখে হাসি টেনে বললো,

–” ভালোবাসো?”

মেঘ লজ্জায় কথা বলতে পারছে না। দু হাতে মুখ ঢেকে বললো, “জানি না।”

রোদ মেঘের পাশে বসে মেঘ কে বুকের মাঝে নিলো। মেঘ কেমন যেনো কেঁপে উঠলো। রোদ বললো,

–” লজ্জা পেলে সোজা আমার বুকে এসে মুখ লুকাবে, হাত দিয়ে নয় বুঝলে।”

মেঘ এমনিতেই লজ্জা পাচ্ছে তার মধ্যে রোদের দুষ্টমি কথায় মেঘের ভালো লাগার সাথে রাগও লাগছে। মেঘ রোদের পাঞ্জাবীর একটা বোতাম আস্তে করে খুলল রোদের বুকে জড়িয়ে থেকেই কিন্তু রোদ বুঝতে পারেনি। মেঘ ঠোঁটে শয়তানী হাসি ফুটিয়ে তুলে রোদের বুকে একটা চিমটি কাটলো। রোদ আহ্ করে উঠলো আর মেঘ রোদের বুক থেকে মাথা তুলে মুখে হাসি রেখে বললো,

–“আর সাথে চিমটি ফ্রি।”

রোদ মুখে হাসি ফুটে তুললো, এইটা মেঘের রাগ বাড়িয়ে দিলো। এই মানুষটা রাগ করছে না কেনো তাই ভেবে পাচ্ছে না মেঘ। রোদ মেঘ কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু দিয়ে বললো,

–“তুমি আমার বুকের মাঝে থাকলে একটা কেনো হাজার টা চিমটি খেতে রাজি আমি।”

মেঘ মুখ চেপে হাঁসল। বুকে মাথা রেখে বললো,-“ভালোবাসি।”

মেঘের মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনে রোদের আরো ভালো লাগা কাজ করল। এই মেয়েটার ভালোবাসা তার যে খুব দরকার। এই মেয়েটার রাগ, কিংবা ভালোবাসার অন্য রকম প্রকাশ রোদের বেশি ভালো লাগে।
______________

ঈশান ঘরের মাঝে পায়চারী করছে। রাত বারোটা পার হয়ে গেছে তবুও চোখে ঘুম আসছে না। মাথার ভেতরে চিন্তা হানা দিচ্ছে। একদিকে বেস্ট ফ্রেন্ড এর সংসার শেষ হতে বসেছে আরেক দিকে যার জন্য ভাঙছে সেই মেয়েটা কে ঈশান পছন্দ করেছিলো। নিজের উপরে প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে কিভাবে তার পছন্দ এমন মেয়ে হল যে কি না মেঘের দুঃখের কারণ হবে। রাগে দেয়ালে হাত আঘাত করলো ঈশান। এর মাঝেই কিছু একটা পড়ার শব্দ ঈশানের কানে ভেসে আসলো। ঈশান কে কে? বলে উঠার পরেও উত্তর না পাওয়ায় দরজা খুলতেই দেখতে পেলো ছদ্মবেশী পায়েল মাটিতে পড়ে যাওয়া ফুলদানী তুলছে। ঈশানের রাগ আরো দ্বিগুণ হয়ে গেলো। জান্নাতে সামনে গিয়ে কড়া গলায় বললো,

–” এই মেয়ে তুমি এখানে কি করছো এত রাতে?”

জান্নাত হঠাৎ ঈশানের গলায় কেঁপে উঠলো। দাঁড়িয়ে বললো, “না.. মা… মানে আ…”

ঈশান জান্নাত কে থামিয়ে বললো, “তুতলিয়ে কথা বলছো কেনো? কে তোমাকে এই বাড়িতে আসতে বলছে বল।এই মেয়ে তোমাকে প্রথম দেখে তো বুঝতেই পারিনি ভেতরে এতটা জঘন্য তুমি! ”

জান্নাত কোনো উত্তর দিলো না। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশান জান্নাতের বাহু শক্ত করে ধরে বললো,

–” উত্তর দিতে বলেছি। তুমি মিথ্যা বলেছ আমি জানি। আর তুমি সকালে যে ওষুধ গুলো কিনেছ সেগুলো সব ক্যান্সারের ওষুধ ছিল আমি গুগলে সার্চ করে দেখেছি। তবে মিথ্যা কেনো বললে? প্লিজ আনসার মি!”

জান্নাতের চোখ থেকে এক ফোটা পানি পড়লো। ঈশানের দিকে তাকিয়ে বললো, “লাগছে আমার ছাড়ুন প্লিজ।”

ঈশান কিছু বলতে গিয়েও না বলে জান্নাত কে ছেড়ে দিলো। জান্নাত করুন ভাবে ঈশানের দিকে তাকিয়ে বললো,

–” ক্ষমা করবেন আমায় আমি আপনাকে কিছুই বলতে পারব না। কিন্তু আমি ইচ্ছা করে কিছুই করছি না।এইখানে আপনি আর আমি একা আর আপনি জানেন আমি মিথ্যা বলেছি তাই আপনার থেকে সত্য আড়াল করলাম না।”

ঈশান মাথায় হাত দিয়ে শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে বললো,”কার কথায় এইসব করছো তা বল আমায়। আমি কথা দিচ্ছি তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। ট্রাস্ট মি! ”

জান্নাত রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,” আমি এখন কিছু বললে আপনি নিজে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাবেন! আর আমি সেটা চাই না। ”

জান্নাতের কথা ঈশানের মাথার উপর দিয়ে গেলো। এইসব কি বলছে সে? জান্নাত কে ঈশান কিছু বলতে যাবে তার আগেই জান্নাত পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। ঈশান ডাকতে চেয়েও ডাকল না। এখন মাথায় শুধু শেষের কথাগুলো ঘুরছে ঈশানের। জান্নাত কিছুদূর গিয়ে ঈশানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো,

–‘আপনার মা বাবার কথায় আমি এখানে তা জানলে আপনি মানতে পারবেন না হয় তো। আপনাকে দেখার পর এইটুকু বুঝতে পেরেছি আপনি খুব ভালো তাই কষ্ট দিতে পারলাম না। ”
____________

সূর্য অর্ধ উদয়মান। আলোক রশ্মি বিচ্ছুরিত হতে শুরু করেছে মাত্র। কিছু আলো রোদের চোখে এসে পড়তেই রোদ মিটমিট করে চোখ খুলল। চোখ খুলতেই চোখের সামনে আকাশ দৃশ্যমান হল। কাল রাতে দুজন চন্দ্রবিলাস করতে গিয়ে কখন ঘুমিয়ে গেছে খেয়ালই করেনি।রোদ বুকে ভারী কিছু অনুভব হল। রোদ খেয়াল করলো মেঘ রোদের পাঞ্জাবী খামছে ধরে ছোট বাচ্চার মত ঘুমিয়ে আছে। রোদ মুগ্ধ হয়ে মেঘের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। হাত বুলিয়ে দিতেই মেঘ নড়ে উঠলো কিন্তু আরো শক্ত করে রোদের পাঞ্জাবী ধরে ঘুমের ঘোরে বললো,

–‘সত্যি বলছি আমি আপ্নার পায়েল। আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে ছাড়া কিছুই নয়। ”

মেঘের ঘুমের মাঝে কথাগুলো রোদের বুকে এসে লাগলো যেনো। মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে তা বুঝতে রোদের বাকি রইলো না। রোদের চোখে এক বিন্দু পানি জমা হলো। তৎক্ষণাৎ রোদের খেয়াল হলো তার তো বাড়িতে ফিরতে হবে। সবাই জানে আদিল চৌধুরী তাঁকে ঘরে আটকে রেখেছে। আস্তে করে মেঘের মাথা সরিয়ে উঠলো রোদ আর মেঘ কে না ডেকে কোলে তুলে নিলো। মেয়েটা একটু শান্তিতে ঘুমিয়েছে কয়েকদিন পর। তাই আর এই ঘুম নষ্ট করতে ইচ্ছা হল না রোদের। রুমে নিয়ে দিয়ে শুয়ে দিলো মেঘ কে তারপর সরে আসতে নিতেই দেখলো মেঘ এখনও তাঁকে ধরে আছে। এইদিকে রোদের দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই আস্তে করে মেঘ কে ডাকতেই মেঘ ঘুম ঘুম চোখে তাকালো। রোদ মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

–” মেঘপরী এখন আমার একটু যেতে হবে।”

এই কথায় মেঘের চোখের ঘুম যেনো উড়ে গেলো মুহূর্তেই লাফ দিয়ে উঠে উদ্বিগ্ন মুখে বললো,

–“কোথায় যাবেন আপনি? আপনাকে কোথাও যেতে দিবো না। আমি আপ্নার সাথেই যাবো।”

-“বাড়িতে যাবো মেঘ। এখনও যে অনেক কাজ বাকি আছে তবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্তর অপেক্ষা শুধু। আব্বু আমাকে ঘরে আটকে রেখেছে তা জানে সবাই।”

মেঘের উত্তেজনা কিছু হলেও কমলো। শান্ত গলায় বললো,”আমার জন্য অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে আপ্নার তাইনা? ”

–” উম হুম একটুও না। কষ্ট তো তোমাকে দিয়েছি আমি মেঘপরী। ”

–” তার জন্য তো আপনাকে শাস্তি দিবো ই চিন্তা করেন না।”

রোদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” আবার শাস্তি! কি শাস্তি দিবে?আচ্ছা আগে এইটা বল ওই মেয়েটার নাম জান্নাত তুমি কিভাবে জানলে? ”

মেঘ কিছুক্ষণ ভেবে বললো,” একদিন রাস্তায় দেখা হয়েছিল মেয়েটির সাথে। আমার কি মনে হয় জানেন তো মেয়েটি কোনো বিপদে পড়েই চাচ্চুদের কথায় অভিনয় করছে।”

–“হুম হইতে পারে কিন্তু ওই মেয়েকেও আমি ছাড়ব না। এতদিন চুপ ছিলাম শুধুমাত্র প্রমাণ ছিল না বলে।”

মেঘ রোদের হাত ধরে বললো, “এতো রাগ পুষিয়ে রাখতে নেই। জান্নাত কে আমার কাছে নিয়ে আসবেন আজকে একটু? মেয়েটি এমনি সবকিছু বলে দিবে মিলিয়ে নিবেন।”

রোদ মেঘের দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি টেনে বললো,” তুমি যা বলবে মেঘপরী। শুন এখন এইখানে কেউ আসেনি আমি যাওয়ার পর রুদ্র আসবে আর সাথে আরো কয়েকজন সিআইডি আসবে। যদিও কেউ এই রুমে আসবে না সবাই জানে তুমি আছো এখানে। রুদ্র কে বলেছি অর্চি কে যেনো নিয়ে আসে এইখানে তাহলে তোমার বোরিং লাগবে না। তবে হ্যাঁ অর্চি নিজেও কিছু জানে না। আমি যাওয়ার পর ই রুদ্র আসবে, তুমি কি uncomfortable ফিল করবে? ”

মেঘ মুচকি হেসে বললো,” রুদ্র ভাইয়া তো আমার ভাইয়ের মত তাই কোনো প্রবলেম নেই ।আর অর্চি আসতে তাও তো একটু দেরি হবে আমি না হয় রুদ্র ভাইয়ার থেকে আপ্নার গল্প শুনব ততক্ষণ। ”

রোদ মুচকি হেসে বললো,” রুদ্র খাবার নিয়ে আসবে বাসা থেকে। বাহিরের খাবার এখন তোমার খাওয়া যাবে না। ভালো মেয়ের মত খেয়ে নিবে কিন্তু দরকার হলে আমি ভিডিও কল দিয়ে দেখব খাইছ কি না। ”

–‘হ্যাঁ বাবা খেয়ে নিব এত চিন্তা করবেন না। তবে আমি এইসব ওয়েস্ট টার্ন ড্রেস পরে ভাইয়ার সামনে যেতে পারবো না। অন্য ড্রেস আছে?”

রোদ কাবার্ট খুলে বললো, “এইখানে শাড়ি আছে পড়ে নিও।”

মেঘ অবাক হয়ে গেলো এতগুলো শাড়ি কেনো সেটা ভেবে। মেঘ জিজ্ঞেস করার আগেই রোদ বললো,

–” ওয়েস্ট টার্ন আর শাড়ি এইসব ড্রেস তোমার জন্য কিনে রেখেছিলাম বিয়ের পরে। রাতে শাড়ি পড়ানো সম্ভব ছিল না তাই ওয়েস্টটার্ন ড্রেস পড়িয়ে দিয়েছিলাম।”

মেঘ কিছু না বলে নীরবে হাসল। এই ছেলেটা কত পাগল মেঘের জন্য তা ভাবতেও মেঘের ভালো লাগছে। মেঘ কে নিয়ে যেনো এক কল্পনার জগত ছিল রোদের। যেখানে মেঘ না থেকেও মেঘ যেনো সবসময় ছিল। মেঘের ভাবনার মাঝে রোদ কয়েকটা বক্স দেখিয়ে বললো,

–” মেঘ এইগুলো তে কিছু স্নাকস আছে খেয়ে নিবে একটু পর পর ই। আর এইযে ফ্রিজের ফ্রুটস আছে। কফি মেকার আছে ফ্রেশ হয়ে এসে কফি খেয়ে নিবে।”

মেঘ রোদের কাছে গিয়ে মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো, “স্যার সবকিছু আমার মনে থাকবে। আপনি সাবধানে থাকবেন আর তাড়াতাড়ি ফিরবেন কেমন? আর খেয়ে নিবেন। ”

রোদ মুচকি হেসে মেঘের কপালে চুমু দিলো।

.
চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে