হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-০৭

0
237

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৭|
#শার্লিন_হাসান

এরই মাঝে কেটে যায় বেশ কয়েকদিন। শশী আর্থর প্রেম জমে ক্ষীর। শুভ্র আর বলেনি সেরিন যে এতোদিন সবাইকে বোকা বানিয়েছিলো। কেন বলেনি কারণটাও শুভ্রর অজানা। শুধু সেরিনের ইস্টুপিট মার্কা কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছে সে। সময়টা ভোর। শুভ্র নামাজ আদায় করে বাইরে হাঁটতে বের হয়। সাথে আর্থ ও আছে। তারা কলেজের পুরো মাঠ চত্বর দিয়ে পেছনের বিশাল দীঘির পাড়ে যায়। দুই ভাই সকালের শীতল বাতাস উপভোগ করে বাড়ী ফিরে।

নাস্তা করে রেডি হয়ে নেয় শুভ্র। আজকে সে কলেজের কিছু কাজে কুমিল্লা যাবে। আর্থ ও নাকী কুমিল্লা যাবে। তবে আর্থ লেট করে যাবে। শুভ্র নিজের সময় মতো বেড়িয়ে পড়ে।

আর্থ কাবাড থেকে নিজের পোষাক নামিয়ে নেয়। আজকে শসীর সাথে মিট করবে। সাথে তার বোন আর দু’জন ফ্রেন্ড আসবে। সেদিন শশীকে বকা দিয়ে কড়া কথা শোনালেও পরে সব ঠিক করে নেয় আর্থ। আর যাই হোক মেয়েটাকে সে ভালোবাসে।

শশী,সেরিন,সিনহা,নিশাত তারা সবাই বাজারে এসে একসাথ হয়। সেরিন,নিশাত তারা শুভ্রর কলেজের ইউনিফর্ম পড়া। শশী তাদের কলেজের। তবে সেরিন ভয়ে আছে একবার কমপ্লেন গেলে জামেলা হবে। শুভ্রর যা কড়া রুলস তার কলেজের ইউনিফর্ম পড়ে কোন ছেলের সাথে দেখা করতে যাওয়া যাবে না। আর না টিকটক করা যাবে। যদিও সেরিন টিকটক চালায় না। আর্থ ও কিছু বলতে পারবে না কারণ বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেলে তারই সন্মান যাবে। কী এক রাজনীতিতে ঢুকেছে যে প্রেমটাও শান্তিতে করতে পারে না।

যথা সময়ে তারা কুমিল্লায় ধর্ম সাগর নগর উদ্যান গেট দিয়ে প্রবেশ করে। তারা একটা জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়ায়। সেরিন নিশাতকে নিয়ে অন্য সাইডে যায় পিক তোলার জন্য। আর্থ আসতে শশী সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সেরিন পাটওয়ারী নাম শুনতে তার ভাই শুভ্রর কথা মনে পড়ে। শুভ্রর বাবুর আম্মুর সাথে আর্থর দেখা হয়ে গেলো। যদিও কিছু বলছে না আর্থ। বাড়ী গিয়ে তার ভাইকে পচানো যাবে। ধর্মসাগর পাড়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করে,পিকচার, ভিডিও করে তারা মেইন শহরে যায়। সেখানের একটা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। আর্থ প্রবেশ করতে দেখে শুভ্র সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছে তার সাথে কয়েকজন টিচারের সাথে। শুভ্রকে একদম আশা করেনি সেরিন আর নিশাত। সেরিন দো’আ দুরুদ পড়ার আগে শুভ্রর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে নেয়। নিশাত সেরিনকে টেনে টুনে বাইরে নিয়ে আসে। শশী থাকলে সমস্যা হবে না কারণ তাঁদের কলেজ ভিন্ন সাথে আর্থ আছে। সেরিন আর নিশাত ধরা খেলে সমস্যা আছে।

আর্থ শশীকে ইশারা করে আগে চলে যেতে। শসী সিনহার হাত ধরে আগে চলে যায়। আর্থ কিছুটা ভাব নিয়ে শুভ্রর কাছে যায়। আর্থকে দেখে শুভ্র বলে,

‘তুই এখানে? কী করে জানলি আমিও এখানে আসবো আজকে।’

‘তেমন কিছু না আসলে…

‘আসলে কী?’

‘অন্য রেস্টুরেন্ট নেই? এটাতে কেনো সবসময় আসো?’

আর্থর কথায় শুভ্র অবাক হয়ে তাকায়। সে যতবার কুমিল্লায় আসে ততোবার এই রেস্টুরেন্টে আসে। এমনকি আর্থ ও মাঝেমধ্যে আসে। রিভিউ ও ভালোই দেয়। তখন শুভ্র শুধায়,
‘এটাতে আসলে সমস্যা কোথায়?’

‘একদম বাজে খাবার এই রেস্টুরেন্টের। ভাই হয়ে কীভাবে ভাইকে জেনেশুনে বাজে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারি?’

তখন সেই রেস্টুরেন্টের ম্যানাজার আসে। শুভ্রকে চেনে আর্থকেও মোটামুটি চেনে। তাঁদের রেস্টুরেন্টের নামে বাজে রিভিউ শুনে কিছুটা রেগে যায় ম্যানাজার।

‘শুভ্র স্যার আর্থ স্যার এসব কী বলছে? আমাদের রেস্টুরেন্টের খাবার একদম ফ্রেশ। কোন ভেজাল নেই।’

তখন আর্থ শুধায়,
‘আমি তো বলিনি ভেজাল আছে খাবারে। আমি বলেছি রান্না ভালো না। বাবুর্চি চেন্জ করা উচিত।’

আর্থর কথায় শুভ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তার কাছে আর্থকে চোর, চোর লাগছে। লাইক আর্থর অবস্থা চোরের মনে পুলিশ,পুলিশ। আর্থ আমতাআমতা করে বলে,
‘বাবুর্চি টা চেন্জ করে নিয়েন। ভাইয়া চলো অন্য রেস্টুরেন্টে খাবে আজকে।’

‘আমাদের খাওয়া শেষ এখন কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হবো।’

‘ওহ্, তাহলে যাও।’

শুভ্র আর কথা বাড়ায়না। তার সাথের টিচার দুজনকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। শুভ্র যেতে আর্থ জেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে।

ওইদিকে শসী আর তার বান্ধবী সিনহা বসে আছে। আর্থ যেভাবে বলছিলো না জানি আজকে রেস্টুরেন্ট বন্ধের ব্যবস্থা করে দেয়। কী জানি কী জামেলায় পড়লো। শশীর মনে হচ্ছে আর্থ সেরিনের দলেরই একজন। যে যেখানেই যাবে ভেজাল আর বাঁশ ফ্রিতে খাবেই খাবে।

সেরিন নিশাতকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের থেকে এক মাইল দূরে চলে আসে। তার রেস্টুরেন্টে যাওয়ার আর মুড নেই। শশী কল দিয়ে যাচ্ছে সেরিন কল তুলছে না। তার তো রাগে মাথা ব্যথাই শুরু হয়ে গেছে।

‘কেন? কেন ভাই সব কিছুতে এই শুভ্রর হাতেই আমি হাতে নাতে ধরা খাইই.. ধরা খেতে যাই। এই লোকটা মোটেও সুবিধার না।’

নিশাতকে বলে সেরিন। তখন নিশাত শুধায়,
‘জানি না ভাই। আমরা যা আজা ইরা কাজকর্ম করি। শুভ্র স্যারের হাতে ধরা খাই বা খাইতে,খাইতে বেচে যাই। না জানি বাকী দেড় বছরে আরো কত হাজার বাঁশ খাই।’

‘বইন আমার মাথা ব্যথা করে। প্লিজ চল চলে যাই।’

‘আমার তো বুক ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। আর রিস্ক নিতে চাই না।’

নিশাত, সেরিন বাড়ীর জন্য রওনা হয়। ফোন কভারে বেশী টাকা নেই। তাই তারা লোকাল বাসে করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বাস স্টেশন থেকে বাসে উঠে দাউদকান্দির। বাসের সীটে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বসে সেরিন। শশীর কল রিসিভ হতে সেরিন বলে,
‘আমি বাসে আছি। বাড়ীতে চলে গেলাম।তুই তাড়াতাড়ি চলে আসিস।’

‘কিন্তু তুই চলে যাচ্ছিস কেন?’

‘শুভ্র স্যার একবার জানতে পারলে খবর করবে। কলেজ ফাঁকি দিয়ে ছেলে নিয়ে কুমিল্লা। তারউপর ভাইয়ার কাছে বিচার দিলে সেটা বাবার কানে তুলে দিবে। আর বেডার যা ভয়েস একটা ধমক দিলে আমি সেরিন সেখানে কাত।’

‘তোর অভিযোগের শেষ নাই। আসলে তোর কপালে বাঁশ আর বাঁশ এবং বাঁশ ছাড়া কিছুই নেই।’

শশী কল কেটে দেয়। সেরিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বাস ছাড়ার সময় হতে কোথা থেকে শুভ্র বাসে উঠে। শুভ্রকে দেখে নিশাত সেরিনকে ধাক্কা দিয়ে দেখায়। সেরিন এবার পারছে না শুভ্রকে ধাক্কা মেরে বাস থেকে ফেলে দেয়। তাড়াতাড়ি গলায় ঝুলানো হিজাব ওরনা দিয়ে বড় করে গোমটা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। নিশাত ফোনে কথা বলার ভান ধরে মুখ ঢেকে রেখেছে।

শুভ্র সেরিনদের পেছনের সীটে বসে। শুভ্র খুব একটা লোকাল বাসে আসে না। তবে মাঝেমধ্যে আসে। তার কলেজে স্টুডেন্ট আবার কলেজের নাম করে কলেজ ইউনিফর্ম পরিধান করে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে কুমিল্লায় ঘুরতে আসে কীনা। যদিও এর আগে দু’চার জন ধরা পড়েছে।

সেরিন তো নিশাতের সাথে বলতে শুরু করে,
‘ভাই আমি কলেজ থেকে টিসি নিয়ে চলে আসবো। এই শুভ্র স্যার দেখি আঠার মতো পেছনে পড়ে আছে।’

‘বুঝিনা ওনার সাথেই কেন আমাদের দেখা হয়। এনার কী খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? আমরা যেখানে যাই সেখানে ওনার ও যাওয়া লাগে?’

‘ভালোয়,ভালোয় বাড়ী যাই। আমাদের জন্য বাইরে বের হওয়া মানে বাঁশ। সেখানে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে কখনো ঘুরতে আসার স্বপ্ন তো স্বপ্নই।’

সেরিনের ভয়েস শুনেই শুভ্র চিনে ফেলে। ভাগ্যিস ওদের কথা বলার সময় হুশ থাকে না। নাহলে শুভ্র কখনো ওদের চালাকি ধরতে পারতো না। শুভ্র ভাবছে কীভাবে সেরিনকে ডেকে নিয়ে আচ্ছা মতো ধোলাই দেওয়া যায়। মেয়েটা এতো আজা ইরা কেন? আর সবসময় তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে কেন? শুভ্র কী তার পাকা ধানে মই দিয়েছে? একদম না। তাহলে মেয়েটার তার প্রতি এতো ক্ষোভ কেন?

দাউদকান্দি আসতে কোন রকম বাস থেকে এক প্রকাশ তড়িঘড়িতে নেমে পড়ে সেরিন,নিশাত। তাদের পেছন দিয়ে শুভ্র ও আস্তে ধীরে নামে। বাস থেকে নেমে বাড়ীর জন্য সিএনজি ধরবে দু’জন। তখন আবার শুভ্র ও আসে সিএনজি স্টেশনে। সেরিন তাকে দেখে আমতাআমতা করে বলে,

‘আসসালামু আলাইকুম স্যার। আপনি এখানে?’

শুভ্র একবার সেরিনের দিকে তাকায়। অন্য দিকে নজর সরিয়ে নেয়। সেরিনের ঠোঁটের কোণের কৃত্রিম হাসি মূহুর্তে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সেরিন আবারো বলে,

‘স্যার আমরা আমরা আসি তাহলে।’

কথাটা বলে নিশাতের হাত ধরে সিএনজিতে উঠে পড়ে। সেরিনের এমন ভয় আর্থর চমকানো আবার তারা কুমিল্লায় একসাথে!ব্যপারটা শুভ্রকে ভাবাচ্ছে। এমনটা নয়তো সেরিন নিজেই আর্থর সাথে প্রেম করছে শশীর নাম বেচে?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে