হৃদয় সায়রে প্রণয়ের ছন্দ পর্ব-৪১ এবং শেষ পর্ব

0
351

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৪১|
#শার্লিন_হাসান
(অন্তিম পার্ট)

আজকে সেরিনের কনসার্ট। বিকেলের দিকেই রওনা হয় সে তার টিমের সাথে। এবারের কনসার্টে শুভ্র থাকবে না। তবে সেরিন তাকে ভীষণ মিস করছে। একটু রাগ জমেছে। শুভ্র চাইলে আসতে পারতো। কিন্তু আসেনি।
সন্ধ্যা আটটায় কনসার্ট শুরু হয়। সেরিন ও মনোযোগ সহকারে গান গায়। সুন্দর একটা সময় কাটে সেরিনের। এই যে তার একটু,একটু পরিচিত বাড়ছে সেটা তাকে কী-যে আনন্দ দেয়।
কনসার্ট শেষে তাদের বরাদ্দকৃত রুমে চলে আসে সেরিন। রাত তখন বারোটা প্রায়। শুভ্রর কল আসতে সেরিন ধরে। শুভ্র তাকে জিজ্ঞেস করে,
“কেমন কাটলো আজকের কনসার্ট?”

“জানি না।”

“এই তোমার কী হয়েছে বলো তো?”

“কিছু না।”

“বউফুল রাগ করে না।”

“এই আহ্লাদ করতে আসবেন না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। কয়টা চুমু দিলে রাগ ভে’ঙে যাবে?’

” জানি না।”

“আচ্ছা আগামী কালকেই কুমিল্লায় চলে আসবা। তখন গুনে,গুনে দশটা চুমো দিবো।”

“লাগবে না বা’ল!”

“আবার গা’লি দিচ্ছো?”

“কই আর!”

“দেখো তোমার একটু ভদ্র হওয়া উচিত।”

“ঠিক আছে। যেদিন ভ্দ্র হবো সেদিন কল দিবো।”

“আগামী কালকে কুমিল্লায় আসবা।”

“ঠিক আছে।”

“গুড নাইট।”

“যা ঘুমা।”

সেরিন কল কেটে দেয়। ফোন রেখে সেও ঘুমিয়ে পড়ে।

পরের দিন ঢাকায় তার আন্টির বাসায় আসতে,আসতে এগারোটার মতো বেজে যায়। ফ্রেশ হয়ে বসতে শুভ্র কল দেয়। সেরিনকে জিজ্ঞেস করে,
“কী করছো?’

” ভদ্র হচ্ছি।”

“লাগবে না ভদ্র হওয়া।”

“লাগবে।”

“তোমায় নিয়ে পারা যায় না।”

“ঠিক আছে। যেদিব পারা যাবে সেদিন কল দিলেই হবে।”

“এই তুমি আবারো রাগ করছো?”

“এই আপনি আমায় আর কল দিবেন না।”

“ঠিক আছে।”

শুভ্র কল কেটে দেয়। সে তার অফিসের কাজে মনোযোগ দেয়। তখন আবার সেরিনের ফোনে কল আসে নিশাতের। মেয়েটার বিয়ে ঠিক। তার ভাইয়ের বন্ধুর সাথে। সেরিন কংগ্রাচুলেশনস জানায়। তবে মাহীর জন্য একটু আধটু খারাপ লাগছে তার। তবে সমস্যা নেই তার ভাইয়ের সাথে মেহেরের আকদ হবে সামনে। সেরিন একটা লম্বা ঘুম দেয়।

বিকেলের দিকে সে তার ভিডিও গুলো এডিট করতে বসে। ঘন্টাখানেকের মতো সময় যায় সব ঠিকঠাক করতে। একটা ভিডু আপ দিয়ে সে তার আন্টির কাছে যায়। তার আন্টি তখন কিচেনে রান্না করছে। সেরিন বুঝলো শুভ্র আসবে। কিন্তু তাকে বলবে না তারা কেউ। সেরিন চুপিসারে রুমে এসে বেলকনিতে চলে যায়।

সন্ধ্যার দিকে শুভ্র ঢাকায় আসে। হাতের জিনিসপত্র গুলো লিভিং রুমে রেখে,আয়াশ,সিদরাতের সাথে কথা বলে। সেরিনের আন্টি শুভ্রর জন্য হালকা নাস্তার আয়োহন করেন। শুভ্র সেসবের কিছুই মুখে নেয়নি। শুধু কফির মগটা নিয়ে সেরিনের রুমে প্রবেশ করে। সেরিন তখন খাটের উপর পা ছিটিয়ে ফোন স্ক্রোল করছিলো। আচমকা শুভ্রকে দেখে ফেনটা সাইডে রাখে। সেরিনের দিকে তাকিয়ে শুভ্র কফিতে চুমুক দেয়। দরজাটা হালকা ভিজিয়ে সেরিনের সামনেই গিয়ে বসে। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে সেরিনের দিকে দৃষ্টি স্থির করে বলে,
“দেখো কত কষ্ট করে, ক্লান্তি নিয়ে এতোটা পথ জার্নি করে এসেছি। বলতে হবে তোমার রাগের পাওয়ার আছে বেশ ভালো। যে আমায় কুমিল্লা থেকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে।”

“আমি কী বলেছি আসার জন্য?”

“তুমি না বললেও তোমার রাগ আর অভিমানরা আমায় বলে গেছে।”

সেরিন উঠে দাঁড়ায়। খাট থেকে নিচে নেমে বলে,
“ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি অপেক্ষা করছি।”

শুভ্র কফিটা শেষ করে ফ্রেশ হতে চলে যায়। সেরিন দরজাটা লাগিয়ে, খাটের উপর বসে পড়ে। শুভ্র আসতে সেরিন শুভ্রর কলার চেপে ধরে বলে,
“এরপর আমায় কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসার কথা বললে, খু-ন করবো কিন্তু!”

” আচ্ছা করিও খু-ন। যখন আমি থাকবো না তখন বুঝবে।”

সেরিন কলার ছেড়ে বলে, “আজে বাজে কথা বলছেন কেনো? আমি তো ওটা থ্রেট দেওয়ার জন্য বলেছি। আমি এমন কিছু করবো নাকী? দেখুন আপনি আমার দশটা না বিশটা না একটা মাত্র জামাই। আমি এমন কিছু করবো না।”

“পাগ’ল ওটা তো আমি জানি।”

“এই শুভ্র স্যার! আপনি আগের থেকে একটু মিষ্টি হয়েছেন।”

“আর কিছু বলার আছে?”

“না!”

“ঠিক আছে।”

“দশটা চুমু পাওনা আছি কিন্তু।”

সেরিনের কথায় শুভ্র হেঁসে দেয়। সেরিনের হাত ধরে নিচে দাঁড়ায়। সেরিন তখন প্রশ্ন করে, “এটা কী হলো?”

“চলো সিদরাত,আয়াশের সাথে গল্প করবো।”

“ওরা এখন পড়বে। আপনি আগে আমায় চুমু দেন।”

“আরে চুমু পাগলী মেয়ে।”

কথাটা বলে শুভ্র গুণে,গুণে দশটা চুমু দেয় সেরিনকে। সেরিন নিজের হাত ব্যাগটা গুছিয়ে নেয়, দরকারী জিনিপত্র নিয়ে। নাহলে আবার শুভ্রর গুলো নিয়ে টানাটানি করতে হয় কুমিল্লায় গেলে। অথচ তার ব্লুটুথ,চার্জার, ঢাকায় থাকে।
ব্যাগ টা গুছিয়ে সেরিন শুভ্রর কোলে বসে,গলা জড়িয়ে ধরে। শুভ্রর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলে, “জামাই ভালোবাসি।”

“ফাজিল হয়ে গেছো।”

“কোন লেভেলের আনরোমান্টিক আপনি?”

“এই আমি একটু আগেও দশটা চুমু দিয়েছি।”

“কেউ ভালোবাসি বললে, প্রতিত্তোরে ” আমিও ভালোবাসি” বলতে হয়। করলার জুশের মতো, “ঘুমাও,গুড নাইট,ফাজিল হয়ে গেছো, ফাজিল। এসব বলে না রে ভাই।”

“ঠিক আছে ধন্যবাদ বলে দেওয়ার জন্য।”

“এবার বলুন ” ভালোবাসি”!”

“সময় হয়নি।”

“এটা বললে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হবে?”

“সেরিন আগের থেকে বেশী ফাজিল হয়ে গেছে।”

“না আজকে আপনার মুখ থেকে ‘ভালোবাসি’ শুনেই ছাড়বো।”

“সময় হলে বলবো।”

“আমার ধৈর্য নাই।”

“তাহলে ঘুমাও।”

“এ্যাই!”

শুভ্র সেরিনকে পাত্তা দেয়নি। সেরিন বসে,বসে আফসোস করছে। তার আর এই জন্মে শুভ্রর মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দ শোনা হবে না। পরক্ষণে নিজেকে স্বান্তনা দিলো এই ভেবে যে, “জামাই টা আমার। ভালোবাসলেও আমার। না বাসলেও আমার। শুভ্র মানে আমার। যাই হোক ভালো তো ঠিকই বাসে। মুখে স্বীকার না করুক!”

বেশী কিছু বলেনা। আবার ধমক, বকা দিলে সমস্যা। সেরিন হার্ট হবে,কান্না কাটি করবে। তখন শুভ্র তাকে ছিঁদকাঁদুনি উপাধি দিবে।

*********

দেখতে,দেখতে কেটে যায় তিন তিনটা বছর। এই তিন বছরে অনেক কিছু চেন্জ হলেও সেরিন,শুভ্রর রাগে-অভিমান,খুনসুটি আগের মতো থাকলেও ভালোবাসা তার থেকে বহুগুণ বেড়েছে। তবে আজো শুভ্রর মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শোনা হলো না। সেরিন ট্রিপল হয়েছে। আটমাসের অন্তঃসত্ত্বা সে। শুভ্র একটু বেশী কেয়ার করে। সবাই বেশ খেয়াল রাখে সেরিনের। শশীর ছেলে বেবি হয়েছে ছয়মাস হবে। মেহেরের সাথে মাহির বিয়ে হয়েছে বছরখানেক হলো। নিশাতের বিয়ের তিনবছর চলছে। তবে তাঁদের বন্ধুত্ব এখনো আছে। সেরিন জানে না নিশাত তার বিরুদ্ধে গিয়েছিলো বা কিছু করতে চেয়েছিলো। বলা যায়, শুভ্রই জানায়নি তাকে। মূলত নিশাতের রিকুয়েষ্ট ছিলো। শুভ্রর কাছে ক্ষমা চেয়েছে। সেই সাথে বলেছে সেরিনকে এসব যাতে না বলে। তাঁদের বন্ধুত্ব সে ন”ষ্ট করতে চায় না। শুভ্র ও বলেনি। সেরিনকে সে কষ্ট পেতে দেখতে পারবে না।

সেরিনের গানের ক্যারিয়ার এগিয়ে। ছয়মাস হলো সে অবসরে। এই সময়টায় সেরিনের রিলেক্সে থাকা দরকার।
সময়টা সন্ধ্যা। জান্নাতুল ফেরদৌসে, মিরা ইসলাম, সুলতানা খানমের সাথে লিভিং রুমে বসে আছে সেরিন। এখন বাড়ীতে সবাই থাকে। সেরিনকে সবাই সময় দেয়। তখন শুভ্র আদিনকে (শশীর ছেলে) নিয়ে লিভিং রুমে আসে। ছেলেটা মাশাল্লাহ এক টুকরো চাঁদ। সবার ভীষণ আদরের। শুভ্র তো জেনো তাকে চোখে হারায়। আদিনকে নিয়ে সোফায় বসে শুভ্র। সেরিন তার শাশুড়ী দের সাথে কথা বলছে। মেয়েটার দিকে তাকালে শুভ্রর খারাপ লাগে। চঞ্চল মেয়েটাও এখন অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে। হাঁটতে চলতে অনেকটা কষ্ট হয়। শুভ্রর বেশ চিন্তা। তার বাবু আর বাবুর আম্মু যাতে সুস্থ থাকে। সুস্থ ভাবে সব সম্পন্ন হয়।

সবাই রাতের ডিনার করলেও, জান্নাতুল ফেরদৌস সেরিনকে নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দেয়। সবাই ডিনার করে রুমে গেলেও, শুভ্র,সেরিন, জান্নাতুল ফেরদৌস এখনো লিভিং রুমে। সেরিনের খাওয়া শেষের অপেক্ষায় আছে শুভ্র। এই সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হবে তাই কোলে নিয়ে রুমে যাবে। এরকমটাই করে যখন থেকে সেরিনের চলতে কষ্ট হয়। মেডিসিন খেয়ে সেরিন উঠে দাঁড়ায়। শুভ্র তাকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি পাড়ি দেয়। রুমে এনে খাটের উপর বসায় খুবই যত্ন সহকারে। সেরিনের কপালে চুমু খেয়ে বলে, “বাবুর আম্মু তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও।”

সেরিন হাসে শুভ্রর কথায়। শুভ্রর বুকে মাথা দিয়ে রাত পার হয়ে সেরিনের। সকালে উঠে নামাজ আদায় করে নেয় সেরিন। সকাল,সকাল শুভ্র সেরিনের ব্রেকফাস্ট রুমে নিয়ে এসেছে। যদিও সেরিন তেমন খেতে পারে না। তবে শুভ্র তার খাবারের দিকেও বেশ এলার্ট। সকালের নাস্তাটা নিজ হাতে খাইয়ে দেয় সেরিনকে।

দেখতে,দেখতে সেরিনের ডেলিভারির দিন চলেই আসে। সকাল বেলায়ই তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুভ্রর চিন্তায় ভালো লাগছে না। চৌধুরী পরিবারের মোটামুটি সবাই হসপিটালে। যেহেতু এমপির পরিবার এসেছে আলাদা একটা প্রায়োরিটি, এবং সন্মান দেওয়া হয়। অপারেশন থিয়েটারের সামনে সবাই অপেক্ষা করছে। শুভ্র চিন্তিত মুখে বসে আছে। সে তো সেরিনকে আজোও মুখ ফুটে “ভালোবাসি” বললো না। অথচ মেয়েটার কত আশা ছিলো শোনার। শুভ্রকে এই চিন্তাটাই কুঁড়ে, কুঁড়ে খাচ্ছে। যদি বলতে না পারে সেরিনকে। সে তো প্রকাশ না করলেও ভীষণ ভালোবাসে মেয়েটাকে। শুভ্রর চিন্তার মাঝে একজন নার্স তার বাবুকে নিয়ে আসে। শুভ্র সবার আগে সেরিনের কথা জিজ্ঞেস করে। নার্স হাসি মুখেই বলেছে, “সুস্থ আছে।” শুভ্র তার মেয়েকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খায়। তার বউফুলের আরেকটা মেয়েফুল হয়েছে। শুভ্রর দু’টো ফুল। একটা প্রথমে মেয়ে ফুল ছিলো কারণ সেটা বাচ্চা,বাচ্চা ছিলো। তারপর হলো বউফুল। এখন এই ফুলের থেকে আরেকটা মেয়ে ফুল।

শুভ্রর মেয়েকে নিয়ে বাকীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেরিনকে রুমে আনা হলে শুভ্র তার কাছে যায়। সেরিনের হাতে,কপালে চুমু খেয়ে বলে, “বউফুল ভালোবাসি।”

“আমিও ভালোবাসি।”

“আমায় এতো সুন্দর একটা মেয়েফুল দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ তোমায়।”

সেরিন হাসে। শুভ্র ঝুকতে শুভ্রর কপালে,ঠোঁটে চুমু খায় সেরিন। শুভ্র ও পুনরায় সেরিনের ঠোঁটে চুমু খায়। তখন আবার কোথা থেকে আর্থ আসে শুভ্রর মেয়েকে কোলে নিয়ে। শুভ্রকে জ্বালানোর জন্য বলে,
“বিশ্বাস করো ভাইয়া। আমি ঠোঁট কাটা ছিলাম তবে তোমার মতো ওতো রোমান্টিক না। দেখো কোন লেভেলের রোমান্টিক হলে মানুষ হসপিটাল রোগী হয়ে থাকা বউয়ের থেকে চুমু নিতে এবং দিতেও ভুলে না।”

“এই তুই চুপ থাকবি? আমি কত চিন্তায় ছিলাম তুই জানিস? আমার বউয়ের কিছু হয়ে গেলে আমার কী হবে?”

শুভ্রর কথায় আর্থ হাসে। সেরিন শুভ্রর দিকে তাকিয়ে হাসে। এই যে মানুষটার চোখে,মুখে তাকে হারানোর ভয় দেখলে এতেই জেনো সেরিনের সর্বাঙ্গ জুড়িয়ে গেলো। শুভ্র মেয়েকে কোলে নিয়ে সেরিনকে দেখায়। সেরিন মেয়ের গাল টেনে দিয়ে বলে, “মাশাল্লাহ আমার মেয়েফুল।”

“আমার মেয়ের নাম কী রাখবো?”

“আপনি বলুন?”

” সেহেরিশ চৌধুরী পুষ্প’কুমারী।”

” পুষ্পকুমারী এই নামের অর্থটাও মেয়েফুল।”

“আমার মেয়ে ফুল তো।”

এক সপ্তাহ পর পুষ্পকুমারীর জন্য অনুষ্ঠান করা হয়। পাটওয়ারী বাড়ীর সদস্য থেকে শুরু করে চৌধুরী পরিবার। সবাই মিলে একটা সুন্দর সন্ধ্যা কাটানোর ব্যবস্থা কর হয়। শুভ্রর মেয়েকে বাকীরা সেরিনের নামের সাথে মিলিয়ে রাখা ‘সেহেরিশ’ বলে ডাকলেও শুভ্র,সেরিন দুজন তাকে ‘পুষ্প কুমারী’ বলে ডাকে।

পুষ্প কুমারীর জন্য এতিমখানার বাচ্চাদের টানা দুইদিন খাবার দেওয়া হয়। এছাড়া দোয়া মিলাদ সবই পড়াবো শেষ এই একসপ্তাহে। আজকে শুধু ফ্যামিলি মিলে ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান। শুভ্র মেয়ের জন্য ডায়মন্ডের লকেট কিনে এনেছে গিফ্ট হিসাবে। সেরিন গোল্ডের চুড়ী এনেছে।

সন্ধ্যায় সদ্য আট দিনে পা রাখা ‘সেহেরিশ চৌধুরী পুষ্পকুমারী’ কে আনা হয়। তারা বাবা-মা, মেয়ে ম্যাচিং পড়েছে। সেহেরিশ অনেকটা তার বাবার মতো চেহারা পেয়েছে। এই নিয়ে সেরিন হিংসায় জ্বলে। দশমাস সে গর্ভে রাখলো আর চেহারা পেলো বাবার। দিস নট ফেয়ার! সবাই মিলে কেক কাটে তাদের লিটল প্রিন্সেসকে নিয়ে।

পাটওয়ারী বাড়ী,চৌধুরী পরিবারে প্রত্যেকটা সদস্য তাদের চৌধুরী ভিলার লিটল প্রিন্সেসকে গিফ্ট দিয়েছে। আট দিনের বাচ্চাকে বেশীরভাগ গোল্ডের গিফ্ট দিয়েছে। শুধু তার দুই নানা, তিন দাদা, বাবা এই তিনজন ডায়মন্ড দিয়েছে। অধরা,আদ্রিতা তারা সেরিনের মেয়ে নিয়ে ঝগড়া করে। কে বেশী কোলে নিবে, কে আগে কোলে নিবে। সেরিন তাদের ঝগড়া খুনসুটি গুলো দেখে আর হাসে।

রাতের ডিনার করে সবাই গল্পের আসর জমায়। সেরিনকে রুমে নিয়ে দিয়ে আসা হয়। এখনো সে পুরোপুরি সুস্থ না। শুভ্র আর থাকেনি। তার বউ,কন্যাকে নিয়ে রুমে চলে আসে। সেরিন বাবুকে ঘুম পাড়ায়। শুভ্র বসে,বসে দেখছে তা। কে বলবে চারবছর আগে এই মেয়েটাও একটা বাচ্চার মতোই ছিলো। হাতে পায়ে বড় হলেও ব্যবহারে বাচ্চামী ছিলো। আজ সেই আরেকটা বাচ্চার মা। শুভ্রর মনে পড়ে বাবুর পাপা আর বাবুর আম্মুর কাহিনী। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে তার। বাবু ঘুমাতে শুভ্র সেরিনকে তার কাছে টেনে নেয়। কপালে চুমু খেয়ে বলে, “বউ ফুলের বাবুর আম্মু হওয়ার ইচ্চেটা পূরণ হলো। থ্যাংকস দাও আমাকে।”

“বাবুর পাপা!”

“হ্যাঁ! চারবছর আগের ডাক। এখনো বুকের বা পাশে লাগে। কী সুন্দর ছিলো সেই দিনগুলো।”

“আসলেই সুন্দর ছিলো। কী ফাজিল ছিলাম আমি।”

“ফাজিল না হলে বুঝি আমি বউ ফুল আর মেয়ে ফুলকে পেতাম?”

“আরেকবার বলুন বাবুর আম্মু ভালোবাসি।”

“বাবুর আম্মু ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি।”

“জানেন একটা কথা?”

“কী?”

” আপনার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা আজন্ম কাল শোনলেও আমার কানের তৃষ্ণা মিটবে না। এই শব্দটা শুনতে আমার কী পরিমান ভালো লাগে বলে বুঝাতে পারবো না।”

“তাই?”

“হ্যাঁ ভীষণ!”

“বউফুল ভালোবাসি।”

“ভালোবাসি আমার ব্যক্তিগত জ্বীনকে।”

“হয়নি!”

“উঁহু!”

“বলো?”

“আগে চুমু দেন?”

“হায়রে চুমু পাগ’ল মেয়ে। কয়দিন পর আমার মেয়ে ও তোমার থেকে শোনে,দেখে শিখবে। কথায়,কথায় বলবে ” পাপা আগে আদর দাও।”

“দিন তো!”

শুভ্র সেরিনের মুখশ্রী তে অসংখ্যা চুমোয় ভড়িয়ে দেয়। পুনরায় বলে,
“আমার একমাত্র বউফুল, আমার মেয়েফুলের মাম্মাম আমার বাবুর আম্মু, তোমাকে আমি ভালোবাসি,ভালোবাসি এবং ভীষণ ভালোবাসি।”

“মেয়েফুলের বাবা,আমার বাবু পাপাকে আমিও ভীষণ ভালোবাসি। আমার প্রথম এবং একমাত্র প্রেমিক পুরুষ এবং ভালোবাসার মানুষ।”

#সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে