সিঁদুর রাঙা মেঘ পর্ব-০৫

0
1305

#সিঁদুর_রাঙা_মেঘ
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

পর্ব_৫

নাকে-মুখে খাবার খাচ্ছে চিত্রা। মিজান সাহেব বললেন,,
—” মা আস্তে খা। এতো তারা কিসের?
চিত্রা খাবার মুখে নিয়ে বলল,,
–” কাজ আছে বাবা! একটা পড়া কমপ্লিট করতে হবে।”
—” পরেও পড়া যাবে আস্তে খা। আচ্ছা তোর সাথে আমার কথা ছিল।”
–” বলো বাবা!”
–” নাওয়াজের সম্পর্কে কি ভাবলি?”
চিত্রা পাতে তরকারি নিতে নিতে বলল,,
–“কোন নাওয়াজ বাবা?”
মিজান সাহেব ভ্রুকুটি কুচকালেন। চিত্রা দাঁতে জিভ কাটলো। একদম ভুলে গেছিলো সেই লোকটির কথা। সে খাবার প্লেটে হাত নাড়তে নাড়তে বলল,,
–“বাবা তোমাকে কিছু বলার ছিল!”
—“বল”
—“বাবা আমি তাকে বিয়ে করতে চাই না। ইনফ্যাক্ট এখন কাউকেই বিয়ে করতে চাই না। আমি চাই পড়াশোনা শেষ করতে। তার পরও তুমি যদি চাও, তাকে বিয়ে করি! তাহলে আমি অমত করবো না।”
খাবার ছেড়ে উঠে গেল চিত্রা। মিজানের মাথায় চিন্তার ভাজ পড়লো এক মাত্র মেয়ে তার। আগে-পিছে কেউ নেই। তার উপর শরীরটা ভাল থাকে না বেশি কবে দু চোখ বুঝে যায় আল্লাহ জানেন। তাই একটা গতি করে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মেয়ের অমতে এক পা বাড়াবেন না ।

চিত্রা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে স্ব স্ব বাতাসে শীত শীত করছে তবুও সরতে ইচ্ছে করছে না তার। নাওয়াজ ছেলেটিকে একদম তার ভাল লাগে না। গায়ে পড়া লাগে বরাবর তাকে। কিন্তু বাবাকে এভাবে মুখের উপর না বলাতে কষ্ট লাগচ্ছে তার। ইশশ! আজ যদি তার মা বেঁচে থাকতো? মনের কথা সব শেয়ার করতে পাড়তো।
বাতাসের দমকা হাওয়ায় টেবিলে পড়ে থাকা ডায়রির পেইজ গুলো উল্টে পাল্টে যেতে লাগলো। চিত্রা সেদিকেই তাকালো। এখন এসব চিন্তা বাদ দিয়ে ডায়রি পড়াটাই শ্রেয় মনে করলো।

কনকনে শীতের রাতে ইউসুফ এসে হাজির হয় কুহুর রুমে।পরনে তার কালো টি শার্ট, উপরে কালো জ্যাকেট আর পায়ে কের্ডস। কুহু তখন পড়ছিল।ইউসুফকে দেখে অবাক হয়ে গেল। সুদর্শন ও সুঠামো দেহী ইউসুফ এমনিতেই সুন্দর, কালোতে আরো মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর লাগছে। কুহুর শ্বাস আটকে আসলো। এত সুদর্শন ক্যান তার ইউসুফ ভাই? উফ!কুহু হা করে তাকিয়ে রইলো শুধু। ইউসুফ তখন কুহুর মাথায় টোকা দিয়ে বলল,,
—” হা করে গিলে খাচ্ছিস কেন? মুখ বন্ধ কর মশা ঢুকবে।”
বলেই তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দুটি দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিলো।কুহুর তখন হুশ ফিড়লো। বাসার সবাই খেয়ে দেয়ে সেই কখন শুয়ে পড়েছে। অসময়ে কুহু মোটেও ইউসুফকে আসা করেনি। যদি কেউ দেখে ফেলে কি হবে? কুহু ফিসফিস করে বলল,,
—” আপনি এখানে কেন ইউসুফ ভাই?”
ইউসুফ বলল,,
–“বুঝতে পারছিস না বের হব? ”
–“তাহলে এখানে কেন?” ভ্রু কুচকে বলল কুহু!
ইউসুফ কুহুর কাছে এসে আচমকা কোলে তুলে নিলো। আর হাঁটা ধরলো।কুহু চেঁচাতে নিয়েও মুখ হাত দিয়ে ফেলল। ফিসফিস করে আবার বলল,,
–” কই নিয়ে যাচ্ছেন? ”
ইউসুফ চোখ টিপে বলল,,
–“রোমান্স করতে!”
কুহু লজ্জা পেলো। গাল দুটি টমোটের মতো লাল হয়ে গেল। ইউসুফ লোভ সামলাতে না পেরে টুস করে চুমু খেয়ে ফেলল তার গালে। বলল,,
—“ইয়াম্মি! ”
কুহুর এবার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করলো। ইউসুফের বুকে মুখ গুঁজে ফেলল। ইশশ! কি লজ্জা। এত লজ্জা কেন দেয় তার ইউসুফ ভাই!

ইউসুফ কুহুকে গাড়িতে বসিয়ে সে পাশে বসে পড়লো। গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে ড্রাইভ করতে লাগলো। কুহু আবার প্রশ্ন করলো,,
–” আমরা কই যাচ্ছি?”
ইউসুফের নির্বিকার উত্তর,,
–” প্রেম করতে!”
কুহু এবার আবার লজ্জা রাঙ্গা হয়ে গেল। কিন্তু তা ইউসুফকে বুঝতে দিলো না কপাট রাগ দেখিয়ে বলল,,
—” মশকরা করছেন কেন?”
—” মশকরা কই করলাম? সত্যি বলছি। আজ প্রেম করবো রাতের আকাশের নিচে চাঁদ, তারাকে সাক্ষী রেখে ।”
—” আপনি পাগল হয়ে গেছেন ইউসুফ ভাই? ”
ইউসুফ গাড়ি সাইড করে রাখলো। কুহুর দিক ঘুরে বলল,,
—” হে তোর প্রেমে পাগল হয়ে গেছি আমি। যেদিন তুই আমার বাসায় পা রাখলি সেদিন তুই আমার মনের মনি কৌঠায় জায়গা করে নিলি। ”
ইউসুফ অপলক তাকিয়ে রইলো কুহুর দিক। কুহুও তাই। যেন কিছু খুঁজচ্ছে সে চোখ জোড়ায়। বলল,,
—” এ চোখের মায়ায় পড়েছিলাম আমি। তোর চোখে সেদিন নিজের সর্বনাশ দেখে ফেলেছিলাম রে।”
গাড়ির সীটের সাথে হেলে পড়লো ইউসুফ।যেন অনেক ক্লান্ত সে। কুহুর বাম হাতটা বুকের মাঝে ধরে বলল,,
—” ব্যথা হয় এখানে খুব ব্যথা। তোকে ছাড়া কিছু ভাবলেই তীব্র ব্যথা ঝেকে বসে এখানে আমার। কেন এমন হলো বলতো? মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানিস? তোকে মেরে ফেলি!”

কুহু চমকে তাকলো। ইউসুফের দৃষ্টি তখন বাহিরে। স্টেডিয়াম লাইটের হলদে আলোয় তার চোখের কোনে কেমন চিক চিক করছে পানি টুকু। তার ইউসুফ ভাই কি কাঁদচ্ছে? কিন্তু কেন? কুহু বলল,,
—” ইউসুফ ভাই আপনি কাঁদচ্ছেন কেন?”
ইউসুফ জবাব দিল না। উল্টো গাড়ি থেকে বের হয়ে ড্যাশবোর্ড এর সাথে লেগে দাঁড়ালো। ইশারায় কুহুকেও বের হতে বলল। কুহু বের হয়ে তার পাশে দাঁড়ালো। আকাশে আজ অনেক বড় চাঁদ উঠেছে তার সাথে তাল মিলিয়ে ফেরি লাইটের মত মিটমিট করে জ্বলছে তারামণ্ডল । ইউসুফ সেদিকে তাকিয়ে রইলো।কুহু আজ অবাক হয়ে দেখছে ইউসুফকে।ইউসুফ তার বাম হাত কুহুর কোমরে ধরে কাছে টেনে নিয়ে আসলো । ইউসুফের স্পর্শে সারা শরীর শিরশির করে উঠলো। ইউসুফ খুব শক্ত করে ধরে আছে তাকে। কুহুর কাছে আজ ইউসুফকে অন্যরকম লাগছে। কিন্তু কেন?কুহু বলল,,
—” আপনার কি মন খারাপ?”
ইউসুফ ম্লান হাসলো। বলল,,
—” একটা প্রশ্ন করি তোকে?”
—” হুমম!”
—” তুই কতটা ভালবাসিস আমাকে!”
কুহু চকিতে জবাব দিলো,,
—” যতটা ভালবাসলে তাকে ছাড়া শ্বাস নিয়া যায় না। আপনি আমার অক্সিজেন ইউসুফ ভাই। ”
ইউসুফ তাকালো কুহুর মায়া মায়া মুখখানির দিক। এক গালে হাত রেখে কাঁপা, কাঁপা কন্ঠে বলল ইউসুফ,,
—” কথা দে তাহলে অন্য কারো কখনো হবি না। আমায় ছেড়ে কখনো দূরে যাবি না। লুকেয়ে থাকবি আমার বুকের মাঝে!”
ইউসুফ তার হাত উঁচু করলো। কুহু হালকা হেসে তার হাতে হাত রাখলো। ইউসুফ তা মুষ্টিবদ্ধ করে বন্ধ করে ফেলল। তারপর কুহুর হাতে উল্টো পাশে চুমু খেয়ে বলল,,
—” ভালবাসি বাবুইপাখি। ”
কুহু এবার লাজুক হাসি দিল।প্রতিবারে ইউসুফের মুখে “বাবুইপাখি ” ডাক শুনলে আলাদা শিহরণ খেলে উঠে শরীরে।এবার ইউসুফ কুহুকে নিয়ে হাটা ধরলো। মধ্য রাতে খালি রাস্তার পাশ ধরে হাটছে তারা। ল্যাম্পপোস্টের আলো গুলোতে শুধু তাদের কালো ছায়া দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে রাস্তার সাইডে একটি দুটি গাড়ি চলে যাচ্ছে। ইউসুফ কুহুর হাত ধরে আনমনেই হেটে যাচ্ছে। কুহু বলল,,
—” ভাইয়া আপনার কি হয়েছে? আজ অন্যরকম লাগছে আপনাকে!”
ইউসুফ দাঁড়িয়ে পড়লো। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো,,
—” তোর থেকে দুটো বছর দূরে থাকতে হবে। বহু দূর! সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে।এত দূর চাইলেও আর তোকে ছুঁয়ে দেখতে পারবোনা । ভেবেই বুক ফেটে যাচ্ছে রে আমার।”
মুহূর্তে মন খারাপ হয়ে গেল তার। কিছু সেকেন্ডের ব্যবধানে তার চোখ সিক্ত হয়ে উঠলো। ক্রন্দনরত কণ্ঠ বলল,,
—” কি বলছেন এ সব! আপনি আমায় ছেড়ে চলে যাবেন? আমি কিভাবে থাকবো আপনাকে ছাড়া?? প্লীজ যাবেন না!”
কুহু কাঁদতে লাগলো। ইউসুফ বলল,,
—” যেতে হবেরে বাবুইপাখি! হায়ার এডুকেশন এর জন্য। ”
কুহু কি বলবে! ইউসুপের বাবা-মার ছোট থেকেই স্বপ্ন ছেলেকে বিদেশে পড়াবে। আর এখন তা পূরণ হচ্ছে। সে তো বাঁধা দিতে পারেনা। তাহলে তার বাবা-মার এত দিনের কষ্ট, স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাবে। সে পাড়বেই না এত স্বার্থপর হতে! কিন্তু সে কিভাবে থাকবে? দুটি বছর চলছে তাদের সম্পর্কের। লোকটির ভালবাসার জালে এভাবে ফেঁসেছে যে মুক্ত হতেই পাড়বে না। সব থেকে বড় কথা সে চায় না মুক্ত হতে।

ইউসুফের বুকেও এক রাশ কষ্টের ভার এসে জমা হল। কুহুর চোখের পানি দেখে তার দম আটকে আসতে চাইল। কুহুকে শক্ত করে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরল। কুহুও ধরলো। ইউসুফের বুকে মাথা রেখে হু হু করে কাঁদতে লাগলো।কিছু মুহূর্ত তেমন ভাবেই কেঁটে যেতেই ইউসুফ হুট করে বলে উঠলো,,
—” চল আইসক্রিম খাবো।
কুহু এই মুহূর্ত এমন কথা শোনে বিস্মিত হলো। ভুল শুনেছে ভেবে বুক থেকে মাথা তুলে চোখ মুছে বলল,,
—” কি!”
—” আইসক্রিম! ”
কুহু খুশিতে গদগদ হয়ে গেল। কারণ কুহুর ঠান্ডার ভাব বেশী। তাই ইউসুফের করা নির্দেশ কুহু ঠান্ডা জাতীয় কিছু খাবে না। একদম না। আজ সেই ব্যক্তি স্বয়ং অফার করছে আইসক্রিম খাবারের জন্য ভাবা যায়?

কুহু আর ইউসুফ আইসক্রিম পার্লারের সামনে এলো। ইউসুফ এত এত আইসক্রিম অর্ডার করে বসলো। কুহু হা হয়ে বলল,,

—” আপনিকি সত্যি আমার ইউসুফ ভাই? ”

ভ্রূকুটি কুচকে ইউসুফ টেনে টেনে বলল,,

—” মোটেও না..! আমি এলিয়েন !”

কুহু মুখ গুঁজা করে বলল,,

—” আপনি সব সময় আমার সাথে মজা করেন!”
মুখ ফিরিয়ে নিলো সে। ইউসুফ কুহুর মুখ তার দিক ঘুরিয়ে বলল,,

—” কেন মনে হচ্ছে আমি অন্য কেউ? ভুলে যাচ্ছিস? আমি তোর। শুধুই তোর।”

কুহু লজ্জুক হাসলো মাথা নত করে। ইউসুফ বলল,,

—“আমার সবটা জুড়ে তুই। আর তোর সবটা জুড়ে আমিই থাকতে চাই।”

বলে কুহুকে আইসক্রিম খাইয়ে দিলো। কুহুর মন আজ পুলকিত হলো। অপলক তাকিয়ে রইলো সামনে এই সুদর্শন বিলাই চোখ ওয়ালা পুরুষের দিক। ইউসুফ ঠিক সেই মুহূর্ত এক অভাবনীয় কাজ করে বসে। কুহুর ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা আইসক্রিম টুকু নিজের জিভ দ্বারা চেটে নেয়। কুহুর শরীরে ঠিক সেই মুহূর্তে ১৮০ বোল্ডের বিদ্যুৎ ঢেউ খেলে যায়। লজ্জায় আর সে তাকাতেই পারে না। এদিকে ইউসুফ কুহুর লজ্জা রাঙ্গা মুখখানি দেখে মিটমিট করে হেসে বলে উঠে,,

—-“এই টুকুতেই এই হাল? বিয়ে পর…”

কথার মাঝেই কুহু ইউসুফের মুখে আইসক্রিম ঢুকিয়ে দেয়। এ লোকের একটু ও লজ্জা নেই। একটুকুও না।এক প্রকার ছুটে বের হয়ে আসে সেখানে থেকে।

—” কি হলো কোথায় হারিয়েছিস? খাচ্ছিস না কেন?”

মিশুর কথায় ধ্যান ভাঙ্গে কুহুর দুষ্ট-মিষ্টি কিছু স্মৃতিতে হারিয়ে গেছিলো আইসক্রিম খেতে এসে! কুহুর এখানে আসার এক বিন্দু ইচ্ছে ছিল না। মিশু এক প্রকার টেনে টুনে নিয়ে এসেছে। কুহু সামনের দিক তাকালো। ইউসুফের পাশে হুর নামের মেয়েটি কুহুর হাত জড়িয়ে দাঁড়িয়ে। হাসি হাসি মুখে কথা বলছে নুশরা-বুশরা আর মিহুর সাথে। কি সুন্দর মানিয়েছে তাদের। মনে মনে আবার কোথাও হিংসে হচ্ছিল। তার ভালবাসার মানুষ নাকি অন্য কারো বাহুডোরে! কথাটি ভাবতেই বুকের ভিতর হু হু করে উঠে কুহুর। নিজেকে খুব কষ্টে সামলে দাঁড়িয়ে থাকে কুহু। কিন্তু তখনি লোকচক্ষুর আড়ালে হুর ইউসুফের গালে টুস করে চুমে খেয়ে বসলো।তা কুহুর চোখে এড়ায় না। ইউসুফও অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো হুরের এহেন কান্ডে। এ এক দৃশ্য কুহুর বুকে ফেঁটে হাসতে চাইলো। সে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না। মিশুকে বলল,,

—“মিশুপি আমার খুব খারাপ লাগচ্ছে আমি ফিরে যাচাছি। ”

মিশু হাত ধরে বলে,,

—” পাগল তুই? এত রাতে একা যাবি? একটু ওয়েট কর। এক সাথেই যাবো।”

কুুহু এবার মিনতি সুরে বলল,,

—” মিশুপি প্লীজ আমি পারবো যেতে।যেতে দাও!”

মিশু একা ছাড়তে চাইছেই না। এ সময় এলকার রাস্তা থাকে বড্ড শুনশান। তার উপর গাল কাঁটা রমিজ আর তার দল জেল থেকে ফিরেছে। এরা গলিতেই আড্ডা দেয় মধ্যরাত পর্যন্ত। এদের বেড রেকর্ড আছে বহুত। কিছু দিন আগেই একটি মেয়েকে রেপ করে মেরে লাশ গুম করে দিয়েছিল। তাদের বিপক্ষে কোন প্রুফ না পেয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। মিশু বলল,,

—“বোন বোঝার ট্রাই কর এই রাস্তা ভাল না। অনেক ডেঞ্জারাস। ”

কুহুর এ মুহূর্ত কেন জানি কোনো কিছুই মাথায় ঢুকছিল না। সে যাবেই। এদিকে ইউসুফ কুহুর দিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাকিয়ে আছে। রাগে তার গা জ্বলছে। এ মেয়েটিকে দেখার পর থেকেই হুট হাট কার তার মাথা রাগ চড়ে বসে। এ মুহূর্তে এমন ফালতু ঢং দেখে গা তার রি রি করছে। দু গালে দুটো থাপড় বসিয়েও দিতে ইচ্ছে করছে। ইউসুফ রাগ আর দমালো না। ধমকে উঠলো। তার ধমকে কুহু সহ সকলেই কেঁপে উঠলো।

—“এখানে কি ঢং করতে এসেছিস? রাস্তায় দাঁড়িয়ে টানা হেচরা শুরু করেছিস? এসব কি ভদ্র মেয়েদের কাজ! আর ওকে আটকাচ্ছিস বা কেন? বড় হয়েছে, জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে, নিজের ভাল-মন্দ বুঝে। এমনকি নিজের মতামত নিজে নিতে জানে! ছাড় ওকে যেতে দে। আর তুই! কে বলেছিল ঢেং ঢেং করে আমাদের সাথে আসতে। এখনে এসেই ন্যাকামো শুরু করেছিস। দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে। যতবস বালের সমস্যা। একটু শান্তি নেই!”

ইউসুফের কথায় সকলেই পুরো বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কুহুর সাথে ইউসুফে হুট করে এমন ভাবে কথা বলবে ভাবেনি কেউ। এখানে সব থেকে বিস্মিত দেখালো মিশুকে। সে অবাক হয়ে বলল,,

—” ভাইয়া তুমি কি বলছো এসব? তুমি জানো না এ রাস্তা সুবিধার নয়? কুহুর বিপদ হতে পারে?”

ইউসুফ তখন খেঁকিয়ে বলে,,

—” তা আমাকে বুঝাচ্ছিস কেন? ও যদি যেচে পড়ে বিপদ টেনে আনতে চায়, আমাদের কি করার আছে?”

বলেই ইউসুফ সামনের দিক এগিয়ে গেল। মিশু হতাশ হয়ে পাশে তাকাতেই দেখে কুহু নেই। খানিকটা চেঁচিয়ে বলে উঠে মিশু,,

—” ভাইয়া! কুহু নেই!”

ইউসুফ চকিতে তাকায়।সত্যি নেই। রাগ আরো বাড়তে থাকে ইউসুফে এ মেয়েটির কি আর বুদ্ধিশুদ্ধি হবে না, নাকি? যা ইচ্ছে হোক জাহান্নামে যাক। ইউসুফ ডোন্ট কেয়ার ভাব করে গাড়িতে উঠে পড়ে। সকলকে হুকুমের সুরে বলে,,

—” এক্ষুনি গাড়িতে উঠবি সব কটা। নয়তো তোদের ফেলে চলে যাবো।”

মিশু তখন অসহায় চাহনিতে চেয়ে থাকলো ইউসুফের দিক। ইউসুফ তখন রাগে তার চুল টেনে ধরে চেঁচিয়ে বলল,,

—“একদম ন্যাকা কান্না করবি না। সামনে থেকে তুলে নিবো চল।”

তখন নুশরা-বুশরা বলে উঠলো,,

—“ভাইয়া আমরা আর ঘুড়বো না? তুমি না বললে ঘুরাবে?”

ইউসুফ তখন বাজখাঁই ধমক দিয়ে বলল,,

—” একটা কথা বলবি না এখন কেউ। সব কটা চুপ করে বসে থাকবি। ঘুরতে যাবে!”

ইউসুফের পাশে হুর বসেছিল। ইউসুফের এমন ব্যবহারের সাথে অপরিচিত। তার মন আজ ক্ষুন্ন হলো অনেক। কুহু মেয়েটিকে তার প্রথম দেখাতেই ভাললাগেনি। সে ইউসুফের কাঁধে হাত রেখে বলল,,

—“ওই মেয়েকে এতটা ইম্পর্টেন্ট দিচ্ছো কেন? ওর জন্য এদের খুশি মাটি করছো কেন? দেখ মুখটা কত খানি ছোট করে রয়েছে!”

তার কথার মাঝেই মিশু বলল,,

—” কি বলছো ভাবি? আমাদের বোন? ওকে এভাবে একা ফেলে আমরা ঘুরতে চলে যাবে? ওটা কিভাবে সম্ভব? আর তার উপর শরীর খারাপ তার বলছিল!”

মিশুর কথা হুরে পছন্দ হয়নি মোটেও। সে এত রাতে ইউসুফের সাথে কিছুটা সময় কাঁটাতেই এসেছিল। ইউসুফ কখনো একা তার সাথে যাবে না বলে এই পুচকে মেয়েদের আনতে হলো।নয়তো সে কখনই আনতো না। তার পুরো প্ল্যানিং ভেস্তে গেলো। সে কিছুটা রেগেই বলল,,

—“তোমার বোন মোটেও ছোট বাচ্চা না! ফাইনাল ইয়ারে পড়ুয়া মেয়েরা অবশ্যই নিজের খেয়াল রাখতে জানে। ”

—“আপু তুমি সামন্য…”

মিশুর কথা কেঁটে ইউসুফ শক্ত কন্ঠে বলল,,

—” নো মোর ওয়ার্ডস। আমরা এখন বাসায় যাবো ব্যস।”

ইউসুফ গাড়ি স্টার্ট করল। মনে মনে তারো চিন্তা হচ্ছে। যতই হোক তার ভালবাসা সে!

কুহু ইউসুফের খোঁটা বেশ বুঝতে পাড়চ্ছিল। তার বলা সেদিনের কথা রিপিট করেছে আজ। কথা দিয়ে আঘাত করা ইউসুফের কাছে বড় কোনো ব্যাপার না। সে ঠান্ডা মাথায় কথার মাঝে যে কোনো মানুষকেই জুঁতা মারতে জানে। কথায় বলে না জুতা মেরে গরু দান ঠিক তেমন। ইউসুফের কথা গুলো সুইয়ের মতো গুতাচ্ছিল ঠিক বুকে ভিতরে। একেতো ওই হুরের সাথে দেখে সহ্য করতে পারছিল না তার উপর ইউসুফের তিক্ত কথা হজম করতে পাড়ছিল না। কুহু চোখ মুছলো। শরীরটা সত্যি খারাপ লাগচ্ছে। পুড়ো জায়গার ফোস্কাটা গলে গেছে। যার জন্য জয়গাটা আরো জ্বলছে। কুহু হালকা ফু দিতে লাগলো। তখনি মনে হলো কেউ তার পিছু নিয়েছে। তখন তার হুশ ফিরলো। শুনশান রাস্তা। চারিদিকে কুয়াশার জন্য ঘুটঘুট অন্ধকার ল্যাম্পপোস্টের আলোতেও যেন অন্ধকার দূর করতে অক্ষম। কুহু আশাপাশে তাকালে মানুষ কেন কুকুর বিড়াল ও নেই। কুহু ভয় করতে লাগলো। নিজেকে মনে মনে গালিও দিতে লাগলো। হুট করে রাগের মাথা চলে আসা উচিত হয়নি। কুহু একটা পাতলা চাদর গায়ে জড়ানো ছিল। কুহু টেনে নিলো। দোয়া ইউনুস পড়তে পড়তে এগিয়ে যেতে লাগলো। ঠিক তখনি চোখে সামনে অন্ধকার হয়ে গেল। শুধু মাথায় চিন চিন ব্যথা অনুভব করতে পারলো। মুহূর্তেই কুহু মাটিতে লুটিয়ে পড়তে নিতেই কয়েকটি হাত ধরে ফেললো তাকে। তা কুহু ভালই অনুভব করতে পাড়লো স্পট। আর তখনি জ্ঞান হারালো সে।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে