সিঁদুর রাঙা মেঘ পর্ব-০৪

0
1283

#সিঁদুর_রাঙা_মেঘ
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
পর্ব_৪

রাতে খাবার টেবিলে খেতে যেতে বলেছে আয়শা। কুহু তখন খাটে ঘাপটি মেরে বসে আছে। পুড়ে যাওয়া জায়গাটায় এখনো জ্বলছে। ফোস্কা পড়ে গেছে একদম। লোকটির একটু মায়া-দয়া হলো না ওর প্রতি?

—” কুহু চল খাবি!”

কুহুর ভাবনার সুতো কাঁটে মিশুর কথায়। কুহু একবার মিশুর দিক তাকিয়ে জানালার বাহিরে তাকালো। বলল,,

—” খিদে নেই মিশুপি।”

মিশু কুহুর পাশে এসে বসে বলল,,

—” কি হয়েছে তোর! খাবি না কেন? মন খারাপ?”

কুহু মাথা নত করে বলল,,

—” মিশুপি ভাইয়ার সামনে যেতে পারবো না আমি!”

—” কেন যেতে পাড়বি না? সে দিব্যি ভালো আছে। তুই এসেছিস যেনেও এমন ভাব করছে যেন সব স্বাভাবিক। ”

কুহু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। সত্যিকি সব স্বাভাবিক ? কুহু বলল,,

—” মিশুপি অনেক সময় চোখের সামনে আমাদের যা স্বাভাবিক মনে হয় তা অনেক সময় সত্যি হয় না।”

—” তুই কি দার্শনিকদের মতো কথা বলছিস বলতো? আমি বুঝতে পাড়ি না মাঝে মাঝে তোর কথা! এবার উঠ তো ক্ষুধা লাগছে আমার অনেক!”

মিশু এক প্রকার টেনে নিয়ে এলো খাবার টেবিলে কুহুকে। সেখানে আগে থেকেই সবাই বসে আছে। এমনকি কুহু বড় মামা মহসিন আর ছোট মামা তুহিন ও বসে আছে। তাদের দেখে হাত-পা কাঁপছে কুহুর। সেদিনের পর আজ মুখোমুখি হয়েছে সে। মিশু কুহুকে তার পাশে বসালো। কুহুর ঠিক উল্টো পাশে বসে খাবার খাচ্ছে ইউসুফ। কুহু আড় চোখে তাকালো তার দিক একবার। তখন মাইশা বলল,,

—” কিরে কুহু আসার পর থেকে তোকে দেখলামি না কইছিলি? শুধু শুনেছি এসেছিস আর এখন দেখা! তা কি খবর তোর?”

কুহু চাপা হাসলো বলল,,

—” ভালো বড় মামনী।”

তখন মহসিন বলল সুমিকে উদ্দেশ্য করে,,

—” কিরে তোর বাসার সবাই কেমন আছে?”

সুমি হেসে বলল,,

–“ভালো!”

মহসিন তারপর মিশুর সাথে কথা বলল। কুহু খেয়াল করলো। মহসিন তার সাথে কথা বলছে না। অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো। তাই সে নিজেই আগ বাড়িয়ে বলল,,

–” বড় মামা কেমন আছো?”

মহসিন তার কথা যেন শুনেইনি এমন ভাব করে মাইশাকে বলল তরকারির বাটি টা দিতে। এমন ব্যবহারে কুহুর খুব খারাপ লাগলো। সকলেই তা বুঝতে পেরেও আর কিছু বলল না। নিরবে খাবার খেতে লাগলো।

—” হাই এভরিওয়ান।”

একটি মেয়ের কন্ঠে সবাই সেদিকে তাকায়। মেয়েটিকে দেখেই বাসার সবাই উঠে গেলেন খাবার ছেড়ে তার কাছে। সুন্দর মতো গোলগাল চেহারা, কার্লি চুল, পড়নে তার সেলুয়ার সুট। কুহু পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে ফিসফিস করে বলল মিশুকে,,

—” মিশুপি সে কে?”

মিশু ও কুহুর মতো করেই বলল,,

—” ইউসুফ ভাইয়ার হুর!”

কুহু ভ্রূচকাতেই মিশু হেসে বলল,,

—” আরে আমাদের হবু ভাবি।”

কুহুর বুকে ছ্যাঁত করে উঠলো। কুহু আবার তাকালো। মেয়েটি আসার পর থেকেই সবাই তাকে নিয়ে মেত কুহু একবার চোরা চোখে ইউসুফকে দেখলো। সে ফোন স্ত্রল করায় ব্যস্ত। কুহু খাবেরে মন দিলো। কুহুর ছোট উত্তর,,

–“ওহো!”

খাবার শেষে উঠে গেল কুহু। নিজের রুমে এসে বেলকনিত চলে গেলো। আসার আগে ইউসুফের আর হুরের কিছু মুহূর্ত খাবার টেবিলে দেখে এসেছে সে।বড় মামনী তখন হুরকে খাবারের জন্য ইউসুফের পাশে বসিয়ে দেয়। হুর তখন এক প্রকার জেদ ধরেই ইউসুফের মুখে খাবার পুরে দিচ্ছিলো আর ইউসুফ তা সদরে গ্রহন করছে। আর এসব দেখে কুহুর ভিতরে না চাইতে হিংসে হতে লাগলো।

খাবার টেবিল গুছিয়ে রাখতে রাখতে বলল সুমি,,

–” বড় ভাবী মেয়েটি ভাড়ী মিষ্টি দেখতে। কোথায় পেলেন এই হিরাকে? ”

মাইশা হাসলো,,

—” আমার ছেলে কম কিসে? রাজপুত্র সে!আমাদের এলাকার কমিশনারের এক মাত্র মেয়ে হুর। গুনে, রূপে সব দিক থেকে পারফেক্ট ইউসুফের জন্য। ইউসুফ তো নাকচ করে ছিল কত এ সম্বন্ধে। কিছুতেই বিয়ে করবে না। মেয়ে তো পাগল প্রায়। বিয়ে করবেই তো ইউসুফকেই। জহির সাহেব মেয়ের পাগলামো সহ্য করতে না পেরে নিজেই দু তিন বার এসে হাজির। এত অনুনয়-বিনয় করলো আর না করতে পাড়লো না ইউসুফের বাবা।পরে ওর বাবাই বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করিয়েছে ইউসুফকে।”

—” আমাদের ইউসুফতো লক্ষে এক সবাই চাইবেই তার মতো এমন ছেলে মেয়ের জন্য।”

আয়শার কথায় মাইশা খানিকটা খোঁচা মেরে বলল,,

—” ঘরের মানুষ আমার ছেলেকে চিন্তে ভুল করেছে ঠিকিই! বাহিরের মানুষ ঠিকি চিনেছে!”

সুমি খোঁচা ধরতে পারলো। আর কিছু বলতেই পাড়লো না। শুধু মেয়ের উপর রাগ উঠছে তার। এ মুহূর্ত জুঁতা দিয়ে পিটাতে ইচ্ছা করছে কুহুকে।

তাদের কথার মাঝেই হাজির হলো হুর ” আন্টি মনি ” বলেই জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী সুরে বলল,,

—” আন্টি আমি সবাইকে নিয়ে আইসক্রিম খেতে যেতে চাই। তুমি তোমার ছেলেকে বলে দাও না। সে রাজি হচ্ছে না।”

—” কেন রাজি হবে না চল দেখি ও যাবে না ওর ঘাড় যাবে।”

বলেই হেসে উঠলো তারা। সুমি পাশে দাঁড়িয়ে আফসোস করলো মনে মনে। বলল,, আজ এ জায়গায় আমার কুহুর থাকার কথা ছিল। অথচ পোড়া কঁপাল কুহুর।

মাইশা ইউসুফের কাছে এসে বলল,,

—” কিরে তুই আমার বউমার কথা শুনছিস না কেন?”

ইউসুফ ফোনে গেইম খেলতে ব্যস্ত। বলল,,

—” কোন কথা মা?”
—“এদের আইসক্রিম খেতে নিয়ে যা।”

বিরক্ত হলো ইউসুফ। বলল,,

—” মা শীত পড়েছে বাহিরে। তার উপর এতো ন্যাকা আবদার আমি মানতে পাড়ছি না। ওদের মন চাইছে ড্রাইভারকে বলো নিয়ে যাবে। আমাকে বিরক্ত করো না।”

ইউসুফের কথা হুর মন খারাপ করে কিছুটা। প্রতিবার একটু সময় কাঁটাতে চায় কিন্তু ইউসফ তাকে এক প্রকার এড়িয়ে চলে।এর মাঝে কুহু আর মিশু নিচে নেমে এলো। ইউসুফ সেদিকে একবার তাকিয়ে কি ভেবে উঠে দাঁড়ালো। প্যাকেটে ফোন ঢুকিয়ে বলল,,

—” গাড়িতে ওয়েট করছি পাঁচ মিনিট সময়। যে যে যাবে চলে আয়। পাঁচ মিনিট ওভার হলেই মত পাল্টে যাবে আমার।”

খুশিতে গদ গদ হয়ে গেল সবার মন। সাথে সাথে বের হয়ে গেল তারা।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে