শোভা পর্ব-০১

0
1391

#শোভা
#পর্ব_১

( আমার দেখা সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে আর বাকিটা আমার কল্পনা)

জহির এর লাশ দেখতে আত্মীয়-স্বজন যারাই আসছে, সবার মুখে শুধু একটাই কথা,

– কিরে! জহির এর মরা মুখ দেখতেও কি বউ বাচ্চাদের খবর দেওয়া হয় নাই? শেষবারের মতোও কি ওরা জহিররে দেখবে না? লাশ লইয়া আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবে? মারা গেছে সেই ভোরে আর এখন আসরের আযান দিছে। আহারে! আরো যে গরম পড়ছে। ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা। ওরা কি শেষ বারের মতন ওর বাপের মুখটা দেখতে পারবে না?

পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠল, কেমন বউ অসুস্থ স্বামীরে এইভাবে হাসপাতালের আইসিইউতে ফেলায় রাইখা বাপের বাড়ি যাইয়া উঠছে। মায়া মহব্বত কি দুনিয়া দিয়া উইঠা গেল নাকি? চিন্তা করা যায়! যার স্বামী এরকম মরমর অবস্থা, সেই মানুষ রে রাইখা এই এক মাস ধইরা বউ বাপের বাড়ি! আজব দুনিয়া।

আরেকজনে আবার বলে উঠলো, বউ বাচ্চা দেখবে কেমনে? খবর কি পাঠাইছে ওর বাপের বাড়িতে?
আরে আপা, যা জানেন না তা নিয়ে কথা বলবেন না। আমরা অনেক কিছুই জানি যা আপনারা জানেন না। আপনারা আত্মীয় স্বজন মানুষ। থাকেন দূরে দূরে। আপনারা কি ঘরের খবর জানেন? আপনাদেরকে যতটুকু জানানো হয় আপনারা ততটুকুই জানেন। কিন্তু, আমরা পাশাপাশি থাকি। আমরা ওদের সব সব খোঁজ খবরই জানি। আপনি নিজের কথা চিন্তা করে দেখেন, আল্লাহ না করুক, আজকে যদি আপনি দূরে থাকতেন আর আপনার স্বামীর কোনো বিপদের খবর পাইতেন সে আপনাকে ভালো বাসুক আর নাই বাসুক তাও কি আপনি না আইসা পারতেন?

আরেকজন আবার বলে উঠলো, হুম,ঠিকই বলছেন, আপা। আমিও তো তাই ভাবি যে এত বড় পাষাণ দিল কেমনে হয় মানুষের? আসলে কি হয়েছে আপা? ঘটনা টা একটু খুলে বলেন তো! এরা তো কিছুই বলবেনা! দেখেন না, কয় মায়ে- ঝিয়ে মিলে দরজা দিয়ে কি শলা-পরামর্শ করতেছে। আমাদের কোনো আত্মীয় স্বজন ভিতরে ঢুকতেও দিচ্ছে না। কি জানি কি আলাপ আলোচনা চলছে ভিতর?

– আপা, কি আর বলব বউটা একদম মাটির মানুষ। আপনারাও তো হয়তো দেখছেন তাকে। ওরকম মেয়ে বর্তমান যুগে পাওয়া যায় না। এত সহজ সরল আর বাধ্য বউ কয়জনের ভাগ্যে মিলে। কিন্তু ওর এই সরলতাই ওর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এইযে দেখেন আমরা এক বিল্ডিং এ কয় বছর ধরে থাকি, অথচ ওর ফোন নাম্বার টা পর্যন্ত আমাদের কারো কাছে নেই। থাকলে ভাবির এই দুর্দিনে অবশ্যই তাকে ফোন দিয়ে আমরা আনতাম। অল্প বয়স, বুদ্ধিও বেশি পাকেনি। ওর শাশুড়ি ননদ রা ওর ফোন নাম্বার কাউকে দিতে নিষেধ করছে। ওদের ভয়ে ও কাউকে ফোন নাম্বার ও দেয়নি। মাঝে মাঝে ছাদে যে একটু দেখা সাক্ষাত বা কথা হইত এই আলাপচারিতা তার সাথে। বিল্ডিং এর অন্য ভাবিদের সাথে যেমন একজন আরেকজনের বাসায় যাওয়া আসা, চা নাস্তা খাওয়া, গল্প করা, একসাথে শপিংয়ে যাওয়া বা সকালে হাঁটতে যাওয়া বিভিন্ন ভাবে আড্ডা হয় কিন্তু উনার সাথে আমাদের ওরকম কোন সম্পর্ক ছিল না। কারণ তার পরিবার থেকে এটা পছন্দ করত না। বলতে পারেন টোটালি কারো সাথে মেলামেশা করাই তার জন্য নিষিদ্ধ ছিল। সারাদিন শুধু মাত্র তার ঘর সংসার নিয়েই তার দুনিয়া। আমরাও সবাই খুব বেশি কিছু জানিনা তবে যতটুকু জানি তা খুব বেশি ভালো কোন জানার পর্যায়ে পড়ে না। আমরা যতদূর জানি ওনার স্বামী জহির ভাই আইসিউতে ভর্তি হওয়ার চার দিনের মাথায় শোভা ভাবি কে তার দুই মেয়ে সহ বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
আমার এখনো মনে আছে। সেদিন আমি সকালে আমার ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম, উনাদের গেটের সামনে দুই তিনটা ব্যাগ বাইরে রাখা। আর ভিতর থেকে শোভা ভাবির কান্নাকাটির আওয়াজ আসছিল। কৌতূহলবশত আমি মিনিট দুয়েক ওনাদের দরজার সামনে দাঁড়াই। ভয়ে বেশি সময় দাঁড়াতেও পারেনি। কারণ, ওনারা যদি কেউ টের পেত যে আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আড়ি পেতে তাদের কথা শুনছিলাম তাহলে আমার চৌদ্দগুষ্টি গালাগালি করে উদ্ধার করে দিত। ওদের মুখ এবং ওদের ব্যবহার এত খারাপ, যে বিল্ডিং এর সবাই ওদের ভয় পায়। ওরা যদি ফ্লাটের মালিক না হয়ে কোন ভাড়াটিয়া হতো তাহলে অনেক আগেই গলাধাক্কা দিয়ে এখান থেকে আমরা বের করে দিতাম। যা বলছিলাম, ভিতর থেকে ওনার ননদদের এবং শাশুড়ির অনেক চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসছিল। তাদের কথাবার্তা শুনে আমি যেটা বুঝতে পেরেছিলাম তা হলো শোভা ভাবি কে একরকম জোর করেই বাসা থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। ভাবি তার স্বামী মানে জহির ভাই ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা তার কোন কথাই শুনে নি। পরে দুপুর বেলায় স্কুল থেকে ছেলেকে নিয়ে আসার সময় দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম শোভা ভাবি কি বাসায় আছে নাকি বাইরে কোথাও গেছে? দারোয়ানের কাছে শুনলাম, শোভা ভাবি তার দেশের বাড়িতে চলে গেছে। যাওয়ার সময় অনেক কান্নাকাটি করেছিল। ছোট ছোট মেয়ে দুটির হাত ধরে অসহায়ের মতো কাঁদতে কাঁদতে চলে গিয়েছিল।

– ভাবি, এটা ঠিক বলেছেন ওদের এই ব্যবহারের কারণেই আমাদের কোন আত্মীয় স্বজনের সাথে ওদের কোনো ভালো সম্পর্ক নেই। নিজেদেরকে ওরা কি মনে করে এটা আমরা ভেবে পাইনা। একদম না পারতে ওদের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়। অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের সাথে আমাদের যেমন ওঠাবসা, চলাফেরা বা সম্পর্ক সে রকম সম্পর্ক জহিরদের পরিবারের সাথে আমাদের নেই। কেমন যেন এক ঘরে টাইপের।

হঠাৎ করে আরেকজন বলে উঠল, আচ্ছা চুপ করো, চুপ করো! ওই যে জহির এর মা বোন বের হয়েছে। আবার কি শুনবে কি হবে? বিপদে পড়ে যাবেন।

– কি খবর খালাম্মা, জহির এর বউ বাচ্চা তো এখনো আইলো না? কি সিদ্ধান্ত নিলেন? ওগো কি খবর দেন নাই?

– কেমন কথা কও, নাজু? আমার সামনে আমার একমাত্র জোয়ান পোলাডা চইলা গেছে। এমনিতেই আমার মাথা ঠিক নাই। আর এ সমস্ত উল্টোপাল্টা কথা বার্তা জিজ্ঞেস করবা না। ওদেরকে খবর দেবো না কেন? ওগো খবর দিছি সেই সকালে! আটটার দিকে। এখন হ্যাঁগো যদি মায়া দয়া না থাকে হেরা যদি না আসে সেই দায়িত্ব তো আমার না। জমিনের উপর আমার পোলার লাশটা এইভাবে আমি আর কষ্ট দিতে পারব না। আমরা সগলডি মিলা সিদ্ধান্ত লইছি যে আসরের নামাজের পরই আজিমপুর গোরস্থানে জহিরুল এর বাপের কবরের পাশে জহিরুল রে দাফন করা হইবে। কে আসলো আর কে না আসলো, কে দেখলো আর কে না দেখলো তাতে আমার বা আমার জহির এর কিছু আসেও না যায়ও না।

– কিন্তু, বু! জহির তো মারা গেছে সেই সকাল বেলা! সেই সময় খবর না পাঠাইয়া ৮ টার দিক খবর দিলা ক্যান? আর ৮ টার সময় খবর দিলেও তো এত সময় আসার কথা। ওর বাড়ি তো পাবনা। ওইখান দিয়া আসতে কি আট নয় ঘন্টা লাগে নাকি?

– সাহেরা, আমি কি তোর ধারে কৈফত দিতে আসছি নাকি? কারে কখন খবর পাঠাইলাম কিনা পাঠাইলাম, এইটা তো তোগোর জানানোর দরকার নাই। আমার পোলার লাশ দেখতে আসছো লাশ দেখা শেষ। এবার বাড়ি যা। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়া লাগবে না।
বলেই জহিররে…… আমার বাজান! আমার বুকটা খালি কইরা তুই ক্যান গেলিরে বাজান? আমি ক্যামনে বাঁঁচবোরে বাপ? বলে বলে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো জহিরের মা আলেয়া খাতুন।

– ফিসফিস করে কয়েকজন বলে উঠলো, দেখছেন! দেখছেন! কথার কি তেজ! যার পোলাডা মারা গেছে, লাশ এখনো জমিনের উপর। তার কি এখন এইসব কথা কওনের সময়? আমার তো মনে হয় কোন খবরই পাঠায়ই নাই বউডারে! আহারে ছোট ছোট দুইটা মাইয়া! শেষবারের মতন ও বাপের মুখ খান দেখতে পারলো না! চলেন, চলেন! নিচে নামেন। গ্যারেজে যাই! আমরা শেষবারের মতন ওর মুখ খান দেইখা আসি। নামাজ শেষ হইলেই মুসল্লীরা আইসা লাশ লইয়া যাইবে। আহা রে হতভাগা! শেষ বিদায়ের কালেও বউ-বাচ্চার সাক্ষাৎ পাইলি না। এইরকম কপাল যেন আর আমাগো কোনো শত্রুরও না দেয়। পোলাডা এত্ত ভালো ছিলো। অই রকম জল্লাদের প্যাটে এমন পোলা আল্লাহ ক্যামনে দিছিলো। মাইয়া গুলান হইছে মায়ের ছায়া একদম।

হুড়মুড় করে জহির কে দেখতে আসা সব আত্মীয় স্বজন নিচে গ্যারেজে এল। যেখানে জহির এর লাশ রাখা আছে। গোসল করানো, কাফন পড়ানো সব শেষ। এখন শুধু মসজিদে নিয়ে গিয়ে জানাযা দিয়েই গোরস্থানে নিয়ে যাবে । সবার মুখে একই কথা, আর সবার দৃষ্টি শুধু রাস্তার দিকে ! শেষ সময়ও যদি জহিরের বউ-বাচ্চা এসে একবারের মত তাকে একটু দেখতে পেত! কিন্তু, না! জহির এর লাশ নিয়ে যাচ্ছে। তার বউ বাচ্চার আর দেখা মিলল না! জহির এর তিন বোনের আর মায়ের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠলো! সবচেয়ে বেশি কান্নাকাটি করছে জহিরের বোন ছোটটা। তাদের কান্নায় না যতটুকু সবার কষ্ট হচ্ছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে জহির এর শেষ যাত্রায় তার বউ আর সন্তান দুটি একবারের মত তাকে দেখতে পেল না। হয়তো তার স্ত্রী খবর পর্যন্ত জানে না যে তার ভালোবাসার মানুষ, তার চিরদিনের সাথী তাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গিয়েছে ওপারে। তার চার বছরের মেয়ে জান্নাত আর দুই বছরের মেয়ে জিনাত এখনো পর্যন্ত জানতে পারেনি যে তাদের মাথার উপরের ছায়া, স্নেহের পরশে মাথায় হাত বুলিয়ে আর বলবে না, আয় মা একটু বুকে আয়।

রাতের বেলা জহির দের বাসায় জহির এর মিলাদ নিয়ে কথা বার্তার জন্য মিটিং বসেছে। কিছু কিছু আত্মীয় স্বজন এখনো তাদের বাড়িতে আছে আর অনেকেই চলে গেছেন। আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কানাঘুষো এখনো চলছে।

– আচ্ছা, জহির এর শশুরবাড়ির দিকের কাউকেই কি কেউ চেনেন না আপনারা কেউই ? যার মাধ্যমে খবর পাঠানো যায় যে জহির মারা গেছে! ওরা যতই বলুক যে ওরা খবর পাঠাইছে, আমার মনে হয় জহির এর মা বোনরা কোনদিনই খবর পাঠায় নি। ওরা যদি খবর পাঠাত তাইলে বউটা একবারের জন্য হলেও শেষবারের মতন স্বামীরে দেখতে আসতো।

– আরে! জহির এর বাড়ি হয়েছে ফরিদপুর। আত্মীয়-স্বজন সব এদিকের। আর শ্বশুরবাড়ি হয়েছে পাবনায়! ওখানে কেমনে চিনব আমরা। আর ওই দিকটায় আমাদেরও কোন আত্মীয়-স্বজনও নাই। তাছাড়া ওর ফোন নাম্বার আমাদের কারো কাছেই নাই। ও কারো সাথে তেমন কোন দিন কথাবার্তা বলত না বা মিলতোও না। শাশুড়ির হুকুম ছাড়া এক পা নড়ার ক্ষমতা ছিল না বউটার।

– অতদূরে ওইখানে বিয়ে হইল কেমনে জহিরের?

– যতদূর শুনেছি যে জহির এর কলেজ জীবনের কোন এক বন্ধুর ভাগ্নি হয় শোভা। শোভা আর জহিরের বিয়ের বছর দুয়েক পরে ওর বন্ধু মানে শোভার মামা ইতালিতে চলে যায়। সেখানেই থাকে সে। মা মরা মেয়ে তার উপর বাপ টা প্যারালাইসড। আর ঢাকায় ওদের তেমন কোনো আত্মীয়-স্বজন ও নেই যে জহির এর মৃত্যু সংবাদটা শোভার কানে কেউ পৌঁছাবে। আহারে জীবন রে!

হঠাৎ করে পিছন থেকে জহির এর মা এসে তাদের কথা গুলো শুনতে পেল।

– কি শুরু করছো তোমরা? পোলা গেছে আমার। কষ্টে আমার বুকটা ফাইটা যাইতেছে। আল্লাহ আমার পোলারে রাইখা আমারে কেন নিয়ে গেল না! আর তোমরা সেই সকাল থেকে শুরু করছো শোভা, শোভা, শোভা! কেন? ওই মাইয়া কি জহির এর সব? আমরা কি কেউ কিছু না? নয় মাস প্যাটে ধরছি। ওই মাইয়ার নাম এই বাড়িতে একবারও কেউ উচ্চারণ করবা না। ওর নাম শুনলে আমার পোলা হারানোর কষ্ট আরো বাইড়া যায়।

– কিন্তু বুবুজান, জহির এর বউ এর কথা না চিন্তা করো, জহির এর শেষ চিহ্ন ওর মাইয়া দুইটার কথা তো একটু ভাববা।

– খবরদার, খালাম্মা। ওই মাইয়া দুইটার কথাও বলবেন না। আমরা আমাদের ভাই হারাইছি। আমাদের একমাত্র ভাই। আমাদের বড় ভাই। যে ভাই কোন দিন আমরা কষ্ট পাইতে পারি এরকম কোন কথা বলার আগে দশবার ভাবছে। ছোটবেলায় বাবাকে হারাইছি। সে ই বাবার দায়িত্ব পালন করছে। আমার বড় ভাই আমাদের তিন বোন রে আগলাই রাখছে তার কলিজা দিয়ে, তার বুক দিয়ে। এরকম ছিলো আমার বড় ভাই। আপনি কি বোঝেন আমরা কি হারাইছি! যদি বুঝতেন তাহলে এইসব আজাইরা প্যাচাল এইখানে পারতেন না। একটা মাস আইসিউতে আমার ভাই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। কই তখন তো কেউরে পাই নাই এ সমস্ত প্যাচাল পারতে।

– কণা, মা আমার। রাগ হইস না। আমি বুঝি তোর কেমন লাগতেছে। তুই ছিলি জহিরের প্রাণ। তোরা তিন বোনের মধ্যে তুই সবাইর ছোট। তোদের তিনজনরেই জহির প্রাণ দিয়া ভালোবাসতো। তার মধ্যে তোরে সবচাইতে বেশি। রিনা আর বিনার চাইতে তোরে সবসময়ই জহির বেশিই ভালোবাসতো। এই যুগে এই রকম ভাই পাওয়া চারটি খানিক কথা নয়। সেই ভাই যখন চোখের সামনে এইভাবে চইলা যায় তখন তোদের কেমন লাগে সেইটা আর বোঝানোর অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু মা, জহির এর ও যে কিছু দায়িত্ব এই পৃথিবীতে রাইখা গেছে সেইগুলো দেখার কিন্তু দায়িত্ব কিন্তু এখন তোদের। আইজকে যদি জহিরের বউ-বাচ্চা রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে তাহলে কিন্তু এর জন্য জহিরকে কবরে জবাবদিহি করতে হবে। তোরা কী চাইস তোদের এত ভালোবাসার ভাই কবরে যাইয়া আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করুক। আর জবাবদিহি করতে না পাইরা শাস্তি পাউক । জহির এর দুইটা ছোট ছোট মাইয়া আছে। মাইয়া দুইটা তো তোদের দায়িত্ব। ওরা তো তোদের বংশেরই রক্ত।

– ওইগুলা শুধু আমার ভাইয়ের রক্ত হইতে যাবে কেন ওদের শরীরে ওদের মায়ের রক্ত নাই? আর ভাইয়া যতদিন ছিলো ততদিন ওদের দায়িত্ব ভাইয়াই পালন করছে, এখন ভাইয়া নাই ওদের দায়িত্বের ভার ওদের মায়ের উপর। এইটা নিয়ে আমাদের টেনশন করার কোনো কারণ নাই। আর সবার উদ্দ্যেশে একটা বলি, যদিও মুখ খুলতে চাইনাই কিন্তু এখন খুলতে বাধ্য হচ্ছি। আমার ভাইয়ার মৃত্যুর একমাত্র কারণ ওই বাচ্চা আর ওদের মা যার জন্য আপনাদের দরদ উথলে উঠছে। আমার ভাই এই অল্প বয়সেই পরপর দুইবার ব্রেইন স্ট্রোক করছে শুধুমাত্র ওই মহিলা আর ওর বাচ্চাদের জন্য। একটা মাস আইসিইউ তে যে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করছে সেইটা শুধুমাত্র ওই লোভী আর অশিক্ষিত মহিলার জন্য। আমি একমাস আমার ভাইয়ের সাথে ছিলাম। আমি দেখছি তার কষ্ট। আপনারা দেখেন নাই। তাই ওই মহিলার নাম এইঘরে কেউ নিলে আমার ভাইয়ার কষ্টে ভরা মুখটা মনে পড়ে যায়। তাই দয়া করে কেউ ওদের নাম এইঘরে নিবেন না।
এটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ নিয়ে আপনারা কোন কথা বলবেন না দয়া করে।

থেকে থেকে কিছুক্ষণ পরপর কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠছে জহিরদের বাসার।
সবচেয়ে বেশি কান্না করছে জহিরের ছোট বোন কণা।

চলবে……………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে