ভালোবাসার অন্যরূপ পর্ব-০৭

0
1054

#ভালোবাসার_অন্যরূপ🍁

#লেখিকা:- Nishi Chowdhury

#সপ্তম_খন্ড

আরিশার বেডরুমে কিং সাইজ এর একটি ফ্যামিলি ফটো ফ্রেম লাগানো ছিল। আরিশার বাসার কাজের মেয়েটা তার রুম পরিস্কার করতে গিয়ে হাতের ধাক্কা লেগে ফটো ফ্রেম টা নিচে পড়ে গিয়ে কাচগুলো তো ভেঙেছিল তার সাথে সাথে ছবিটার চারপাশে যে কাঠের পাতলা ফ্রেম লাগানো ছিল।

সেটাও মাঝখান থেকে ক্র্যাক হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনাগুলো যখন ঘটে ছিল তখন আরিশা শ্বশুর বাড়ি ছিল। তাই আরিশার আম্মু ছবিটা যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন আর কাজের মেয়েটা কে বলেছিলেন কাচগুলো খুব সাবধানে পরিষ্কার করে ফেলে দিতে আর পাতলা কাঠের এই ফ্রেম টা খাটের পেছনে রেখে দিতে। সময়মতো আরিশার আব্বুকে দিয়ে ঠিক করিয়ে আনবেন তিনি।

[] কিন্তু পাতলা কাঠের ফ্রেম টা যে এমন একটা কাজে ব্যবহৃত হবে তা কে জানতো……..!

সেই কিং সাইজ এর কাঠের ফ্রেমটা এখন কয়েক টুকরো হয়ে মেঝের এককোণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। আর তার পাশেই মেঝেতে কাত হয়ে চোখ বুঁজে পড়ে আছে আরিশা। সারা পিঠে, হাতে ও পায়ের কিছু অংশে মারের দাগ। কিছু কিছু জায়গায় চামড়া ছিড়ে রক্ত বেরোচ্ছে। মুখে কোনও শব্দ নেই। শব্দ করে কাঁদার জন্য গলার জোর বা শরীরের জোর কোনটাই এখন তার নেই।

শুধু ব্যথার ঝাঁঝে চোখ জোড়া দিয়ে পানি ঝরছে। চোখ জোড়া এখনো বন্ধ তার হয়তো পুরোপুরি জ্ঞান নেই তার। কারন একটা মানুষের পক্ষে এতটা মার খাওয়ার পরেও অজ্ঞান হয়ে না যাওয়াটাই অস্বাভাবিক কিছু।

তারপাশেই খাটের নিচের অংশ ঘেঁষে বসে আছে আরিসার আম্মু। মেয়েকে আঘাত করতে গিয়ে তার হাতেও কয়েক জায়গায় চামড়া ছিঁড়ে গেছে। পাতলা রক্তের আস্তরণ পড়েছে কাটা জায়গা গুলোতে। কিন্তু তাতে তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। ঘামে তার সারা শরীর ভিজে গেছে।ডান হাতে কপালটা শক্ত করে চেপে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন তিনি।

তাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি তার নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নিজের ভেতরের অবশিষ্ট রাগ ক্রোধ বের করে দিতে চাইছেন। কারণ এর পরে মেয়েটাকে মারলে ও হয়তো মরেই যাবে।

নিজের পেটের মেয়েটাকে এমন নির্দয়ভাবে প্রায় ২০ মিনিটের মত পেটালেন কিন্তু এতে তার চেহারায় বিন্দুমাত্র মেয়ের জন্য শোক,তাপ, খারাপ লাগা কিছুই তার চেহারায় দেখা গেল না।

কাজের মেয়েটা আরিশার রুমের দরজার পেছনে বসে বসে হেঁচকি তুলে তুলে কাঁদছে। সে তার পুরো জীবনের চোখের সামনে এমন বেধড়ক মার কখনো কাউকে খেতে দেখেনি।

পুরো রুমজুড়ে বিরাজ করছে পিনপতন নীরবতা।

🌺 🌼 🌺

কিছুক্ষণ আগে,

আহনাফের আম্মুর সাথে কথা শেষ করে আরিশার আম্মু ফোনটা রেখে দিলেন। পেছনে হাতড়ে শক্তপোক্ত একটা বসার জায়গা খুঁজছেন তিনি। মাথাটা তার হঠাৎ ঘুরে উঠলো। তারপরেও নিজেকে সামলে নিয়ে বিছানার পাশে বসে বেড সাইড টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি তুলে ঢকঢক করে খেয়ে নিলেন। তার কানের শুধু আহনাফের আম্মুর কথাগুলো বেজে চলেছে।

____ ____ _____

আহনাফের আম্মু আরিশার আম্মুকে, আহনাফ এবং আরিশার ব্যাপারে সবকিছু খুলে বলেছেন।

তাদের আলাদা থাকা,গতকালকের আরিশার ফোনালাপের ব্যাপারটা পুরোপুরিভাবে খুলে বলেছেন তিনি। আরিশার ফোনের অপর পাশে কে ছিল সেটা আহনাফের আম্মু বুঝতে না পারলেও এতোটুকু আন্দাজ করতে পেরেছেন যে আরিশা হয়তো বিয়ের পূর্বে অন্য কাউকে পছন্দ করতো কিন্তু এখন করে কিনা সেটা তিনি বুঝতে পারছেন না তাইতো আরিশার আম্মুর কাছে সবকিছু খুলে বললেন। পরিশেষে এটাও বললেন,

—- বিয়ে হয়েছে বলে এতটাও দেরি হয়ে যায়নি। আপা। আরিশা যদি অন্য কাউকে পছন্দ করে তাহলে এই সম্পর্কটাকে এখানেই ইতি টানা ভালো। আদারোয়াইজ মনে অন্য কাউকে রেখে সংসার অন্য কারো সাথে করা যায় না। এতে আমার ছেলে টাই বেশি কষ্ট পাবে। আর আমি আমার ছেলের কষ্ট বরদাস্ত করব না। তাই আপনি আরিশার সাথে পরিষ্কার ভাবে কথা বলুন। সে কি চায়? আমাকে জানান। তারপর আমার যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমি নেব।

আহনাফের আম্মুর কথা শুনে আরিশার মায়ের বুঝতে বাকি রইলো না যে আরিসাকে ফোনটা আসলে কে করেছিল? মুহূর্তে রাগের সারা শরীরের রক্ত টগবগ করে উঠলো তার তার পরেও মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে আরিশার আম্মু বললেন,

— আপা আপনাকে এই বিষয় নিয়ে এত চিন্তা করতে হবে না ব্যাপারটা তেমন নয় যেমনটা আপনি ভাবছেন হয়তো, তার পরেও আমি ওর সাথে কথা বলে দেখছি।

শুধু এইটুকু নিশ্চিন্ত থাকুন এরপর যা হবে আমাদের ছেলে-মেয়ের ভালোর জন্য হবে রাখছি আপা। পরে কথা হবে।

🌼 🌺 🌼

এতক্ষণের ঘটনা গুলো পরপর মনে পড়তেই সারা শরীর রিরি করে জ্বলে উঠলো তার রাগের দাপটে তিনি তার হিতাহিত জ্ঞান ভুলে গেছেন মাথায় শুধু একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে তার মেয়ের এত বড় অধঃপতন হলো কবে থেকে এত নিচে কিভাবে সে নামলো।

স্বামীর সাথে এক বিছানায় ঘুমায় না তারপর আবার ওই বেয়াদব ছেলেটার সাথে কথা বলেছ…..

আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালেন না আরিশার আম্মু। ছুটে বেরিয়ে গেলেন তার রুম থেকে তার মেয়ের রুমের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে তার বাসার কাজের মেয়েটা এসে বলল,

— খালাম্মা আপনি যা যা কই ছিলেন। সব কাম কাজ শেষ করে ফেলেছি। ভাত চড়িয়ে দিয়েছে রাইস কুকারে। আর কি কিছু করন লাগবো।

মুখে কোনো জবাব না দিয়ে হাত দিয়ে সরিয়ে দিলেন কাজের মেয়েটাকে। তারপর ঢুকে গেলেন আরিশার রুমে। আরিশা কখন শাওয়ার নিয়ে চুল শুকাচ্ছিলো ফ্যানের বাতাসে বসে। মেয়ের সাথে কোন রূপ কথা না বলে দ্রুত পায়ে বিছানার পাশে থেকে আরিশার ফোনটা হাতে তুলে নিলেন তিনি। আরিশা চমকে দাঁড়িয়ে গেল। সে বুঝতে পারলো না তার মা এভাবে হঠাৎ দৌঁড়ে এসে কেন তার ফোনটা হাতে নিল‌।

আরিশার আম্মু ফোন হাতে নিয়ে অন করে দেখলেন লক করা। মেয়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বললেন,

পাসওয়ার্ড কি?

আকস্মিক এমন ঘটনা গুলো জন্য আরিশা প্রস্তুত ছিল না। তার কেমন যেন মুখের কথা আটকে গিয়েছিল। সে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।

আনিসার আম্মু এবার ধমকে উঠলেন মেয়েকে,

— তোমার মুখে কি হয়েছে? কথা বলতে পারছনা নাকি তোমার ফোনের পাসওয়ার্ড কি?

— ত্ তোমার নাম আম্মু।

আরিসার আম্মু নিজের নাম টা টাইপ করলেন ফোনের পাসওয়ার্ডে। সাথে সাথে ফোনটা আনলক হয়ে গেল। তিনি আরিশার ফোন ঘাটতে শুরু করলেন। প্রথমে কললিস্টে গেলেন। সত্যি গতকাল বিকেলে একটি নাম্বার থেকে কয়েক বার রিং এসেছে আরিশার ফোনে। শেষবার আরিশা রিসিভ করেছে এবং প্রায় 20 মিনিট কথা হয়েছে তাদের মধ্যে।

এবার তিনি বেরিয়ে এসে ম্যাসেজ অপশনে গেলেন। মেসেজ অপশনে তৃতীয় মেসেজটা ওপেন করতেই যেন আরিশার মায়ের মাথায় বাজ পরলো। পুরো ম্যাসেজটা পড়লেন তিনি। অভি আরিশাকে দেখা করতে বলেছে বিকাল পাঁচটার সময়।

তাদের ইউনিভার্সিটির পাসের কফিশপে। তার প্রতি উত্তরে আরিশা হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছে। এটুকুই যথেষ্ট ছিল আরিশার এর মায়ের মাথায় আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য। কেটে দিলেন তিনি মেসেজ অপশন। গ্যালারিতে ঢুকলেন তিনি। একটা ফোল্ডারে ঢুকে দেখতে পেলেন। অভির কয়েকটা ছবি এখনো আরিশার ফোনে সুরক্ষিত অবস্থায় আছে।

আর সহ্য করতে পারলেন না তিনি ফোনটা এক আচরে ভেঙে ফেললেন। তারপর মেয়ের দিকে তেড়ে এসে। কষিয়ে থাপ্পড় মারলেন মেয়ের বা-গালে। আরিশা তাল সামলাতে না পেরে উবু হয়ে গিয়ে পড়ল মেঝেতে। চুলের মুঠি ধরে টেনে তুললেন মেয়েকে। এবং বললেন,

— এই মেয়ে তোর সাহস কি করে হলো? তুই আবার ওই বেয়াদব ছেলেটার সাথে কথা বলেছিস? আবার দেখা করতে চেয়েছিল কোন সাহসে। দুদিন আগে বিয়ে করেছিস যাকে তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছিস এই বাসায়? বল নিয়ে এসেছিস অনুমতি।

বলে আরেক থাপ্পর মেরে ফেলে দিলেন মেয়েকে মেঝেতে। (শেষের লাইনটা চিৎকার করে বলে উঠলেন আরিশার আম্মু)

আরিশা কোনরকমে দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে উঠে বসে মায়ের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল,

— আম্মু তুমি বিশ্বাস করো। আমি প্রথমে ওর সাথে দেখা করতে চাইনি। কিন্তু অভি বলেছি ও নাকি নির্দোষ তার প্রমাণও দেবে আজকে। তাই….আহহহ

আরিশার মা মেয়ের চুলের মুঠি ধরে বললেন,

— ওহ তার মানে তুই আমাকে মিথ্যাবাদী বলছিস

—না আম্মু।

— ওই ছেলে সম্পর্কে আমি যা যা বলেছি সব মিথ্যে নাকি সত্যি তার প্রমাণ আনতে যাচ্ছিস তুই?

এই মেয়ে নয় মাস 18 দিন আমি তোকে আমার এই গর্ভে ধারণ করেছি। নিজের বুকের দুধ খাইয়ে মানুষ করেছি। তোর জীবনের বাইশটা বছর আমি নিজের হাতে করে তোকে মানুষ করেছি। আর সেই মা আমি তোকে বলেছি অভি ছেলেটা ভালো না। ও বিবাহিত। তুমি আমার কথা না শুনে তুমি ওর কাছে দৌড়াচ্ছিস ওমান আনার জন্য যে আমি সত্যি বলছি না কি মিথ্যা।

দীর্ঘ বাইশ বছরের সম্পর্কের থেকে তোর ওই সামান্য সামান্য দুই বছরের সম্পর্ক এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল যে ওই বেয়াদব ছেলের জন্য তুমি আমাকে অবিশ্বাস করতেছিস?

আরিশা এবার কেঁদে দিয়ে বলল,

— তো কি করব আম্মু ? তোমরা তো আমাকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাওনি। তোমরা চেয়েছিলে আমাকে বিচারপতি তৈরি করবে। একি ইচ্ছা আমারও ছিল। আমি সেইভাবে পড়াশোনা করছিলাম। কিন্তু মাঝখান থেকে হঠাৎ করে তোমরা এই ছেলেটাকে এনে বলা নেই কওয়া নেই কয়েকদিনের মধ্যে আংটি বদল আর এক সপ্তাহ পরে বিয়ে দিয়ে দিলে।

তাহলে কি ধরে নেব অভি ঠিক কথা বলেছে তোমরা ডাক্তার ছেলে পেয়ে আর লোভ সামলাতে পারেনি। এক প্রকার আমার হাত-পা বেঁধে তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছো। আমি তো এই বিয়ে করতে চাইনি, তুমি আমাকে জোর করে দিয়েছে বিয়ে।

এতকিছু নিজের চোখে দেখার পরেও আরিশার আম্মু অনেক কষ্টে নিজের ক্রোধটাকে সামলে নিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ের শেষের কথাগুলো তার সকল ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে। আরিশা কে ছেরে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। দিক বেদিক কিছু খুঁজে চলেছেন তিনি হঠাৎ খাটের পেছনে ফটো ফ্রেম এর ভাঙ্গা অংশ দেখে

সেদিকে এগিয়ে গিয়ে এক টানে বের করে আনেন তিনি । হাত দিয়ে ভেঙে লাঠির আঘাত তৈরি করে তা দিয়ে পেটাতে শুরু করেন আরিশাকে। মারের দাপটে মেঝেতে শুয়ে চোখ বন্ধ করে উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগল আরিশা। কিন্তু তাতে আরিশার মায়ের মনের মধ্যে কোন দয়ার সৃষ্টি হচ্ছে না।

কাজের মেয়েটা রান্নাঘর থেকে কোন রকমের ছুটে বেরিয়ে আরিশার রুমের সামনে এসে দেখে তার খালাম্মা তার আপাকে ধরে খুব জোরে মারছে লাঠি দিয়ে। এসব ঘটনা দেখে সে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠে বলল,

খালাম্মা আপারে মাইরেন না। আপা মইরা যাইবো। আমার আপাডারে মাইরেন না।

রুমের ভেতরে ঢুকে আরিশা কে ধরতে গেলে, আনিসার আম্মু ধাক্কা মেরে তার দরজার সামনে ফেলে দিল। তারপর উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বলল,

— একদম এদিকে আসবি না। না হলে তোর আপাকে যা মারছি তার দ্বিগুণ মার তোকে মারবো। দরদ দেখাচ্ছিস তোর আপাকে? এমন দরদ দেখাস না যাতে ওকে চরম মূল্যের মুখোমুখি হতে হয়। ওকে এখন দরদ দেখালে ওকে সারা জীবন কাঁদতে হবে। সেই কান্না আমি সহ্য করতে পারবো না। তাই তার ই ব্যবস্থা করছে।

মেঝেতে সুয়ে কাতরাচ্ছে আরিশা। চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ধারা ঝরে পড়ছে। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট কিছু গোঙানির আওয়াজ বেরোচ্ছে। তাতেও যেন মারের কোনো খ্যান্ত নেই। আরিশার আম্মুর হাত চলছে অনবরত তার সাথে তাল মিলিয়ে চোখ থেকেও যেন অশ্রুকণা বেয়ে বেয়ে মেঝেতে পড়ছে।

তার মেয়ে, পেটের সন্তান, যে মেয়ের গায়ে একটা টোকা মারতে ও তার হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠতো আজ তাকে এমন বেধড়ক মার মারতে তার কি কষ্ট হচ্ছে না, অবশ্যই হচ্ছে। কলিজাটা হয়তো তার ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু তার মেয়ে যে ভুল পথে পা বাড়িয়েছে। এই কষ্ট তার কাছে কিছুই না। বরং ওই ভুল পথটা নরক যন্ত্রণার মতো মারাত্বক যাতে একবার ফেসে গেলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হবে তাকে।

প্রায় 20 25 মিনিটের মত মেরে ক্লান্ত হয়ে খাট ঘেঁষে মেঝেতে বসে পড়লেন আরিশার আম্মু। বাসায় আরিশা, তার মা ও কাজের মেয়েটা ছাড়া আর কেউ নেই। কাজের মেয়েটা আরিশার রুমের দরজা ঘেসে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। সে তার তিন বছর এই খালাম্মার বাসায় কাজ করে।

অনেক ভুলভাল কাজ করেছে সে। খালাম্মা হাতে ধরে ধরে শিখিয়ে দিয়েছে। মুখ একটু বকেছে ঠিকই কিন্তু তার গায়ে একদিন হাত তুলেনি। কিন্তু তার নিজের মেয়েকে আজকে এমন মারতে দেখে কেমন উন্মাদের মতো আচরণ করেছে দরজার কাছে বসে। বারবার শুধু চিৎকার করে বলেছে খালাম্মা খালাম্মা আর মাইরেন না। আপার ডা মইরা যাইবো। কিন্তু আনিসার আম্মু তার একটা কথা শুনিনি।

🌺 🌼 🌺

এখন,

নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে আরিশা নড়াচড়া করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা বা শক্তি কোনটাই তার মধ্যে নেই। আনিসার আম্মু এবার উঠে মেয়ের কাছে গেলেন। তারপর হাত ধরে টেনে তুলে বিছানার উপরে বসা লেন। আরো সঠিকভাবে বুঝতে পারছে না বারবার হেলে পড়ছে। তাই বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলেন। বেড সাইড ডেক্স থেকে পানি গ্লাসটা হাতে নিয়ে মেয়েকে যত্নসহকারে খাইয়ে দিলেন। তারপর মেয়ের পাশে বসে বললেন,

— ও আচ্ছা এই জন্য তুই আহনাফকে মেনে নিস নি? নিজের মনে তো দূর নিজের বিছানাতেও জায়গা দিসনি আহনাফকে?? তোর কি মনে হয় রে এই দুনিয়ায় সবাই ভুল আর ওই রাসকেলটা একাই ঠিক।

তোকে কতবার কত ভাবে বুঝিয়েছি যে ওই ছেলেটা একটা ফ্রট, জোচ্চোর, মেয়েদের সাথে টাইম পাস করা ওর স্বভাব।

তোর কি মনে হয় রে তুই দুই বছর ধরে প্রেম করছিস আর আমি কিছু জানি না। আমি সব জানতাম। সব জেনেও তোকে কিছু বলিনি আমি। গোপনে অভির ব্যাপারে খোঁজ লাগিয়ে ছিলাম। অভি ছেলেটা যদি সত্যি ভালো হতো তুই বিশ্বাস কর আমি ওর সাথে তোকে বিয়ে দিতাম।

কিন্তু ও আগে থেকেই বিবাহিত। আল্লাহই জানে আর কত মেয়ের সাথে ওইভাবে পরক্রিয়া সম্পর্ক করে বেড়াচ্ছে। আমি জেনে বুঝে কখনো আমার মেয়ে কে এই নরকের মধ্যে ঠেলে দিতে পারব না। তাই আমি গোপনে ছেলে দেখছিলাম ওই বেয়াদব এর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আর আল্লাহ আমাকে একদম আমার মনের মত একটা ছেলেকে পাইয়ে দিয়েছে আমার মেয়ের জন্য।

শুনতে পাচ্ছিস তুই….!

ওই বেয়াদবটার হাত থেকে তোকে বাঁচানোর জন্য আমি এত তাড়াতাড়ি তোকে আহনাফ এর সাথে বিয়ে দিয়েছি। তারপরও আমি ওকে শর্ত দিয়েছিলাম যে তোকে যেন তোর গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার সুযোগ দেওয়া হয় এবং তোর স্বপ্ন পূরণ মানে সাব জজ হওয়ার সুযোগ যেন তোকে দেওয়া হয়। আহনাফ ও তার পরিবার এক বাক্যে কথা মেনে নিয়েছিল। তাই আমি আর দেরি করিনি।

তুই তো আবার আমার মুখের কথাই বিশ্বাস করবে না তাই দাঁড়া তোকে প্রমাণ দেখাচ্ছি। কথাগুলো বলে বিছানা থেকে উঠে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা খাম বের করলেন আরিশার আম্মু। খামটা হাতে নিয়ে মেয়ের সামনে এসে বললেন,

— এই প্রমাণটা আমি তোকে বিয়ের দিন সকালে দেখাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিয়ের দিন সকালে তোর মধ্যে আমূল পরিবর্তন দেখে আমি মনে করেছিলাম আমার কথা গুলোই তোর জন্য যথেষ্ট। এসব প্রমাণ প্রমাণ তোকে আর দেখানো লাগবে না। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি রে যে তুই তোর মার থেকেও বাইরের একটা ছেলে কে এত বড় বিশ্বাস করে ফেলবি।

এই নে ধর। বলে খামটা মেয়ের সামনে ছুড়ে মারলেন আরিশার আম্মু। খামটা ছেঁড়া থাকায় ছবি গুলো বেরিয়ে গেছে খাটের উপর।

আরিশা দুর্বল কাঁপা কাঁপা হাতে ছবিটা তুলে নিয়ে দেখল। চোখের মনি জোড়া স্থির হয়ে গেল। চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে না। ছবিগুলো দেখে তার মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না।

শুধু কিছুক্ষণ একনাগাড়ে ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে ছবিগুলো বিছানার উপর ঠাস করে ফেলে দিল। তারপর ক্লান্ত শরীরটা আস্তে আস্তে বিছানায় এলিয়ে দিতে গিয়ে যন্ত্রণায় মুখটা বিকৃত হয়ে গেল। তারপরেও ধীরে ধীরে বিছানায় শুয়ে পড়ল আর তার ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো যা অনুশোচনা আর ঘৃণায় পরিপূর্ণ।

চলবে…..❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে