প্রেমময় আসক্তি ২ পর্ব-৮+৯

0
1147

#প্রেমময়_আসক্তি_২
#পর্ব_৮
#নন্দিনী_চৌধুরী

৮.
সকালের মিষ্টি রোদে ঘুম ভেংগে যায় রোদেলা। ভালোভাবে ঘুমের রেশটা কাটিয়ে আসতে করে উঠে বসে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ৬:৩০ বাজে। নামাজটা আজকে পড়া হলোনা তার। রোদেলা উঠে ফ্রেশ হয়ে আসে তারপর গায়ে একটা চাদর দিয়ে বের হয় বাহিরে। হাঁটতে ইচ্ছে করছে ওর। রাত ঘুমিয়ে আছে তাই ও একাই এসেছে। রোদেলা হেঁটে হেঁটে চারিপাশটা দেখছে। খুব কম লোক বের হয়েছে কেউ কেউ অনেক গরম কাপড় গায়ে জরিয়ে বেরিয়েছে, কেউ আবার কিছুই গায়ে নেয়নি রোদেলা সব চেয়ে চেয়ে দেখছে। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূরে এসেছে রোদেলা। হঠাৎ পা মচকে পরে যেতে নেয় রোদেলা,তখনি কেউ ওকে ধরে ফেলে। কিন্তু পায়ে ব্যাথা পাওয়ায় রোদেলা চিৎকার দেয়,

রোদেলা:আহহ!
রোদেলা লোকটার কাধে ভর দিয়ে বসে পরে। রোদেলার চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো আসতে করে চোখ খুলে দেখে আরিয়ান। আজকেও আরিয়ান কালো মাস্ক কালো হুডি পরা। আরিয়ান রক্তচক্ষু দিয়ে তাকিয়ে আছে রোদেলার দিকে রেগে বলে,,,

আরিয়ান: What The F***** এতো কেয়ারলেস কেন আপনি? সেদিনও পরে যেতে নিয়েছিলেন আজকেও। আইডিয়া আছে আপনার কোনো এই সময়টা কত রিস্কি হয়। তাও কত কেয়ারলেস আপনি। একা একা এখানে কি করছেন। আপনার সাথে আপনার কেয়ার করা মেয়েটা কই?
রোদেলা ভয়ে কোনো কথা বলতেপারছেনা। আরিয়ান সেটা বুঝে ওর হাতের পানির বোতলটা রোদেলার দিকে এগিয়ে দেয়। রোদেলা গটগট করে পানি খেয়ে নেয়। তারপর আসতে আসতে বলতে লাগে,

রোদেলা: আসলে আমার বাসায় একা ভালো লাগছিলোনা তাই একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। আসলে রাত ঘুমিয়ে আছে তাই ওকে ডাকিনি। বুঝতে পারিনি আমি যে এমন হবে। ধন্যবাদ আপনাকে আমাকে বাঁচানোর জন্য।

রোদেলা উঠে দাঁড়াতে গেলে পায়ের ব্যাথার কারনে আবার বসে পরে।

রোদেলা: আহ!
আরিয়ান: কি হলো?
রোদেলা: পা মচকে গেছে।
আরিয়ান হাঁটু গেড়ে বসে পা দেখে যে আসলেই মচকে গেছে।
রোদেলা: এবার কি করবো। আমিতো ফোনও আনিনি সাথে।
আরিয়ান কিছু না বলে রোদেলাকে কোলে তুলে নেয়। ঘটনা হঠাৎ হওয়ায় চমকে যায় রোদেলা।
রোদেলা: আরে আরে কি করছেন? নামান আমাকে।
আরিয়ান: মচকে যাওয়া পায়ে কি উড়ে উড়ে যাবেন বাসায়।
রোদেলা আর কিছু বলেনা। আরিয়ান ওকে নিয়ে হাঁটছে আর মনে মনে বলছে,

আরিয়ান: আগে ছিলো বিড়ালের বাচ্চা এখন হয়ে গেছে গোলগাল পান্ডা। আর এখন এই পান্ডার ভেতরেই দুইটা পান্ডার বাচ্চা আছে। গোলুমলু হয়ে গেছে একদম।

আরিয়ান রোদেলাকে নিয়ে ওদের বাসায় আসে। দরজায় বেল দিতেই মুন দরজা খুলে দেয়। রোদেলার আরিয়ানের কোলে দেখে অবাক হয়ে মুন বলে,

মুন: কি হয়েছে রোদেলার? ও আপনার কোলে কেন?
আরিয়ান: আগে ভেতরে আসি তারপর বলি?
মুন: হ্যাঁ, আসুন।

আরিয়ান রোদেলাকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দেয়।
মুন এর মাঝে রাফসান আর বাকিদের ডাক দেয়।
রাফসান এসে রোদেলাকে আরিয়ানকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
রাফসান: কি ব্যাপার? কি হয়েছে?
আরিয়ান: উনি বাহিরে একা একা গিয়েছেন।অসাবধানতায় চলতে গিয়ে পা মচকে পরে যেতে নিয়েছিলেন কিন্তু আমি ধরে ফেলেছিলাম। পায়ে ব্যাথা পাইছেন উনি।
রাফসান: সকালে উঠে তোকে না দেখেই বুজেছিলাম তুই বাহিরে গেছিস। রাততো যাচ্ছিলোই এখোনি। কেন এমন করিস বলতো! এই সময় সাবধানে থাকা লাগে জানিসনা?
মুন: তোকে কালকেই ডাক্তার বললো সাবধানে চলা ফেরা করতে। আর তুই আজকেই, আরে গেছিস রাতকে নিয়ে যাবিতো নাকি সাথে।
আরিয়ান: আচ্ছা এখন আগে ওনার পাটা ঠিক করেন। বাকি কথা পরেও বলতে পারবেন।
রাফসান: হ্যাঁ, দেখিতো দেখা আমাকে পায়ে কোথায় লেগেছে।

রাফসান রোদেলার পায়ে হাত দিতেই চিৎকার দেয় রোদেলা।

রোদেলা: অনেক ব্যাথা ভাইয়া।
রাফসান: মচকে গেছে তাই ব্যাথা। আমাকে দেখতে দে।
রোদেলা: না না আমার পা দেখাবোনা যাও সরো।

রোদেলা কিছুতেই পা দিচ্ছেনা দেখে আরিয়ান রোদেলার সামনে বসে তারপর ওকে বলে,

আরিয়ান: আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকুন একদম চোখ সরাবেননা।
রোদেলা আরিয়ানের চোখের দিকেই তাকিয়ে থাকে। একদম হারিয়ে যাচ্ছে চোখের গভীরতায়। আর এদিকে আরিয়ান রোদেলার মচকানো পা চাপ দিয়ে ঠিক করলো আর রোদেলা টেরও পেলোনা।

কাজ হয়ে গেলে আরিয়ান বলে,
আরিয়ান: হয়ে গেছে।
আরিয়ানের কথা শুনে হুস আসে রোদেলার।ইসস!এতোক্ষন ওনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম না জানি কি ভাবছেন উনি আমাকে। রোদেলা খেয়াল করলো ওর পায়ের ব্যাথাটা এখন নেই।

আরিয়ান উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

” এখন তাহলে আমি আসি। ”

রাফসান আরিয়ানকে বললো

” এখনি চলে যাচ্ছো করছো! আমাদের সাথে নাস্তা করে যাও।”

আরিয়ান: না আজকে না। অন্য আরেকদিন আসবো। আজকে আমার একটু দরকারি কাজ আছে। তাই আমাকে এখন যেতে হবে।
রাফসান: তাহলে ঠিক আছে। আরেকদিন কিন্তু আমাদের বাসায় আসবে আর খেয়েও যাবে সেদিন।
আরিয়ান: আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর আরিয়ান চলে গেলো। আরিয়ান যাওয়ার পর রাত মুন কে বললো রোদেলার জন্য নাস্তা আনতে। মুন নাস্তা আনতে গেলো। আর রাত রোদেলাকে নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দিলো। তারপর মুন রোদেলার জন্য নাস্তা নিয়ে এলো।আর রোদেলা নাস্তা করে নিলো।

_________________________

রুহি নিজের রুমে বসে আছেম আজকে সকালের পুরো ঘটনাটা সে দেখেছে। আরিয়ানের পিছনে সেও বেরিয়েছিল হাঁটার জন্য। তখন সে খেয়াল করল কিছু পথ যাওয়ার পর আরিয়ান ওই সেদিনের মেয়েটাকে আজকে পরে যাওয়া থেকে বাঁচালো। তারপর সেই মেয়েটার জন্য আরিয়ান আজকেও কত কেয়ার দেখালো। সবশেষে মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলো শুধুমাত্র মেয়েটা পায়ে ব্যথা পেয়েছিল বলে।

রুহি: আরিয়ানের ওই মেয়েটার জন্য এত কেয়ার কেন? কি হয় আরিয়ানের ওই মেয়েটা? যখোনই ওই মেয়েটা কোনো না কোনো বিপদে পড়ে তখনই আরিয়ান মেয়েটাকে বাঁচিয়ে নেয়। আচ্ছা মেয়েটার সাথে কি আরিয়ানের কোনো যোগাযোগ আছে।

রুহি এসব ভাবা বাদ দিয়ে ওর আরিয়ানের বাবাকে কল দিলো। এক মাত্র এখন সেই পারবে আরিয়ানকে তার করতে। ওদের বিয়ে আরিয়ানের বাবা ছাড়া কেউ দিতে পারবেনা।

~এদিকে~

আরিয়ান রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। খুব রাগ লাগছে ওর। রোদেলা এতো বেখেয়াল যে কেন সেটাই ও বুঝেনা। আরিয়ান রেডি হচ্ছে বাহিরে যাওয়ার জন্য আবার। আজকে ওর খুব দরকারি একটা কাজ আছে। আর মাত্র ৩দিন ওরা এখানে থাকবে তারপর চলে যাবে।

রোদেলা আদ্রিয়ানের ছবি নিয়ে বসে আছে। এই আরিয়ান আর আদ্রিয়ানের চোখের কতটা মিল তাই দেখছে রোদেলা।

রোদেলা নিজের পেটে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,

“তোদের বাবা কত হ্যান্ডু ছিলো😇। তোরাও তোদের বাবার মতো হবি বুঝলি।”

রোদেলা আদ্রিয়ানের ছবিটা দেখছে আর বাবুদের এগুলা বলছে।

__________________________

২দিন পর,,,,,
পরশু এখান থেকে চলে যাচ্ছে আরিয়ানরা। রাফসান যাবে আরো ৪দিন পর। এক মাস লাগার কথা ছিলো ওর কিন্তু কাজ তাড়াতাড়িই হয়ে গেছে। তাই ৪দিন পর ওরা চলে যাবে। রোদেলারা সবাই সোফার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে তখন বাসায় কেউ বেল দেয়। রাত গিয়ে দরজা খুলে দেখে কুরিয়ার ম্যান দাঁড়ানো। রাতকে দেখে রোদেলার কথা জানতে চায় আর জানায় রোদেলার নামে পার্সেল আছে। রাত পার্সেল নিয়ে রুমে আসে। রাতের। হাতে এতো বড় বক্স দেখে সবাই তাকিয়ে আছে।

রাত: রোদেলা আপু এটা তোমার জন্য আসছে?
রোদেলা: আমার জন্য! কে দিয়েছে?
রাত: জানিনা কুরিয়ারের লোকে তো বললো তোমার নামে।

রোদেলা বক্সটা ওপেন করলো। অনেক কালারের শাড়ি, গোল ঢিলাঢালা জামা, গাউন, অনেক জুয়েলারি, চকলেট, ফুল, গাজরা দিয়ে ভরা বক্স।
রুবা: এতো কিছু কে পাঠালো?
মুন: হ্যাঁ, তাইতো কে?
রোদেলা সাথে একটা চিরকুট পেলো।

চিরকুটটায় লেখা,,,

“এইযে বাবুদের আম্মু,,আপনিতো এখন পান্ডা হয়ে গেছেন। একদম পান্ডার মতো লাগে আপনাকে গোলগাল। শুনেন বাবুদের আম্মু এতো টাইফফিট জামা এখন আর পরা চলবেনা। ঢিলাঢালা জামা পরবেন তাহলে আরাম পাবেন। হাঁটাচলা করতেও সুবিধা হবে। মা হচ্ছেন এখন সচেতন হোন। আর বাচ্চাদের মতো কইরেন না। আপনার সন্তান আপনার সৌভাগ্য বয়ে আনুক দোয়া করি।”

রোদেলা চিরকুটটা পরে হা হয়েগেছে। কে পাঠালো এসব বুঝতে পারছেনা সে।

~এদিকে~

ক্যামেরায় রোদেলার এমন হা মুখ দেখে হাঁসছে একজন। তার পান্ডাটা ভালোই চিন্তায় পরেছে এসব পেয়ে।

“তুমি আমাকে যত দূরে ঠেলে দিয়েছোনা কেনো। আমি আছি সব সময় তোমার পাশে তোমার কাছে। ছায়া হয়ে হলেও তোমার পাশেই থাকবো। কারন আমি যে তোমাতেই সিমাবদ্ধ। তুমি যে আমার প্রেমের আসক্তি। ভয়ঙ্কর আসক্তি। তুমি আমার “প্রেমময় আসক্তি”।
[নন্দিনী]

#চলবে

#প্রেমময়_আসক্তি_২
#বোনাস_পর্ব
#নন্দিনী_চৌধুরী

🥀

আরিয়ানরা আজকে ফিরে এসেছে ঢাকা। এসে সবাই ক্লান্ত তাই ফ্রেশ হয়ে যে যার মতো রুমে চলে যায় খেয়ে। আরিয়ান রুমে এসে কল লাগায় একজনকে,,,

আরিয়ানঃহ্যা কি করছে? খেয়েছে রাতে? আর কোনো ব্যাথা উঠেনিতো?

……………….

আরিয়ানঃআচ্ছা ঢাকা আসছে কবে সবাই?

……………

আরিয়ানঃআচ্ছা খেয়াল রেখো।

আরিয়ান ফোন রেখে বারান্দায় এসে বসে। আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর উঠেছে। আরিয়ান চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,,

আরিয়ানঃ”তুমি চাঁদ সবার কাছে সুন্দর হলেও আমার কাছে তুমি তত সুন্দর না যতটা আমার পান্ডা আমার কাছে সুন্দর। এক আলাদা মাদকতা আছে তার মাঝে যা তোমার মাঝে নেই চাঁদ। ”

আরিয়ান বসে ছিলো তখন ওর রুমে মিস্টার হাসান আসেন। মিস্টার হাসান রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে নোক করলেন,,

মিস্টার হাসানঃআরিয়ান কি ঘুমিয়ে গেছো বেটা?
আরিয়ান বাবার কণ্ঠ শুনে বারান্দা থেকেই বললো,
আরিয়ানঃনা ড্যাড আমি বারান্দায় তুমি আসো।
মিস্টার হাসান রুমে ঢুকে বারান্দায় গেলেন। আরিয়ানের পাশের সোফায় বসে পরেন তিনি। আরিয়ান বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,

আরিয়ানঃবলো ড্যাড এতো রাতে তুমি। কোনো জরুলি দরকার?
মিস্টার হাসানঃহ্যা ব্যাপারটা অনেকটা জরুলিই তাই দেড়ি না করে এখন আসলাম।
আরিয়ানঃহ্যা বলো ড্যাড।
মিস্টার হাসানঃ দেখো আরিয়ান আমার বয়স হয়েছে তোমার মায়ের ও বয়স হয়েছে। সব বাবা মায়েরই ইচ্ছা থাকে তার সন্তানের বিয়ে দেখার। আমাদেরও তোমার বিয়ে দেখার ইচ্ছা আছে। তাই আমি চাচ্ছি তোমার আর রিয়ার বিয়েটা দ্রুত দিয়ে দিতে। রুহি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড তুমি ওকে পছন্দ করো রুহিও তোমাকে পছন্দ করে। তাই আমি আর দেড়ি করতে চাচ্ছিনা।

মিস্টার হাসানের কথা শুনে আরিয়ান চমকে গেলো। মিস্টার হাসান যে এমন কিছু বলবে সেটা সে আশা করেনি। আরিয়ান বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,,

আরিয়ানঃড্যাড বিয়ে!
মিস্টার হাসানঃহ্যা বিয়ে।
আরিয়ানঃকিন্তু ড্যাড আমি রুহিকে পছন্দ করি এটা তোমাকে কে বললো। হ্যা রিয়া আমার ফ্রেন্ড গত কয়েক মাস ধরে। অস্ট্রেলিয়ায় থাকার কারনে আমি ওকে ফ্রেন্ড বানিয়ে ছিলাম কিন্তু ওকে আমি পছন্দ করি এমন কিছু নয়। ড্যাড তুমি আমাকে বিয়ে দিতে চাও আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমি রিয়াকে বিয়ে করতে পারবোনা।
মিস্টার হাসানঃতাহলে কি তোমার কোনো পছন্দ আছে?
আরিয়ানঃহ্যা আছে।
মিস্টার হাসানঃকে সে?
আরিয়ানঃসময় হক। আমি নিজেই বলবো।
মিস্টার হাসানঃকিন্তু……
আরিয়ানঃপ্লিজ ড্যাড।
মিস্টার হাসানঃওকে।

মিস্টার হাসান উঠে আসলেন বারান্দা থেকে তারপর চলে আসেন তার রুমে।
আরিয়ান বারান্দায় বসে ভাবছে সে কি করবে। এটা নিশ্চই রুহির কথায় বাবা বলতে এসেছে। আরিয়ান নিজের ফোন বের করে আবার কাউকে কল লাগায়,,,,

আরিয়ানঃহ্যা কাজ কত দূর?
……………
আরিয়ানঃঠিক আছে আসছে ১৮ তারিখ মানে আজ ১০ তারিখ আর ৮দিন পর সব কাজ শেষ হবে Got It!

আরিয়ান ফোন রেখে বাঁকা হাঁসলো।

~এদিকে~

মুনকে তার বাবা জলদি বাসায় আসতে বলেছে কোনো বাহানা সে আএ শুনবেনা বলে দিয়েছে। তাই অজ্ঞাত মুনকে যেতেই হবে। মুন আজকে আবার ফেজবুকে এসেছে আরাভের আইডি লাইনে দেখে বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে লাইনে দেখলে খুব ইচ্ছা করে ম্যাসেজ দিতে কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য দেয়াল সেই ইচ্ছাকে চাপা দিয়ে দেয়। রুবাও পারছেনা আরাভকে ম্যাসেজ দিতে। আরাভের আইডিতে গিয়ে দেখলো অনেকে তার টাইমলাইনে পোস্ট করেছে অভিনন্দন দিপা ভাবি আর আপনাকে। রুবা বুঝতে পারলো আরাভের স্ত্রীর নাম দিপা। রুবা আর থাকতে পারলোনা আইডি অফ করে বিছানায় বালিশ চেপে কাঁদতে লাগলো।

এদিকে আরাভ রুবাকে লাইনে দেখে অবাক হয়েছে খুশিও হয়েছিলো কিন্তু ম্যাসেজ করতে যেয়েও করলোনা সে। আরাভ ফেজবুকে এসেছিলো দিপা আর ওর বন্ধ যাবেরকে উইস করতে। মজার ছলে মেরিড স্টাটাস সে দিয়েছে বলে অনেকে দিপাকে তার স্ত্রী ভাবছে। তাই সে স্টাটাস ডিলেট করে দিচ্ছে।

~সকালে~

আরিয়ান তার গানের স্টুডিওতে চলে গেছে নীলাদ্র অফিসে। নন্দিনী ভার্সিটি চলে গেছে। রুহি সকালে তার বাসায় চলে গেছে।

আরিয়ান গানের স্টুডিও থেকে গান রেকর্ড করে চলে গেলো নীলাদ্রের অফিসে। সেখানে গিয়ে নিলাদ্রকে নিয়ে বেরিয়ে পরে। আজকে ওরা দুজনে ঘুরবে।

~৪দিন পর~

রোদেলারা ফিরে এসেছে বাসায়। মুনকে রাফসান দিয়ে আসতে গেছে ওদের বাড়িতে। রোদেলা তো রুবাকে যেতে দিতে চাইনি কিন্তু কি করার আংকেল ডেকেছে যেতে হবে। রুবাকে বাড়িতে দিয়ে ফিরে আসে রাফসান।

এদিকে রুবা বাসায় আসার পর তার বাবা তাকে জানায় তার পছন্দের পাত্র তাকে আগামী শুক্রুবার দেখতে আসছে। পছন্দ হলে সেদিনেই ওদের বিয়ে করিয়ে দেবেন তিনি। রুবা শুধু পাথরের মতো শুনে গেছে কি বলার আছে ওর। না কিছু বলার নেই।

এদিকে মুনের শরীরটাও ভালোনা। বমি,মাথা ঘুরানো। আজকে রোদেলাকে ডাক্তার দেখিয়ে সেও ডাক্তার দেখাবে। রোদেলাকে ডাক্তার দেখিয়ে নিজেও ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় আসে দুজনে। রোদেলার বেবিরা সুস্থ আর হেলদি আছে। টুইন বাচ্চা রোদেলার ডাক্তার একদম কনফার্ম করে বলেছে। রোদেলা অনেকদিন পর আজকে কাশুর সাথে কথা বললো। কাশু আসতেছে ঢাকা দুইদিন পর। আদৃতা এসে দেখা করে গেছে ওদের সাথে।

~শুক্রুবার~

আজকে রুবাকে দেখতে আসবে নিলয়। নিলয় রুবার বাবার বন্ধুর ছেলে। রুবাকে ওর চাচি সাজিয়ে দিচ্ছে। আর রুবা পুতুলের মতো বসে আছে। যেনো কোনো অনুভুতি কাজ করছেনা ওর। যথাসময় নিলয়রা আসলো রুবাকে দেখতে। রুবাকে নিলয়ের সামনে বসানো হলো। নিলয়ের মা বাবার রুবাকে দেখেই পছন্দ হয়ে গেলো। রুবা আর নিলয়কে আলাদা কথা বলতে দেওয়া হলো।

নিলয় রুবাকে বললো,,,

নিলয়:আপনি আরাভের ভালোবাসা রুবা তাইনা?

নিলয়ের কথা শুনে চমকে গেলো রুবা।
রুবা:আপনি?
নিলয়:আরাভ আমার বন্ধু। আরাভের মুখে আপনার কথা শুনেছিলাম দেখেছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম না আমার মা বাবা যেই মেয়েকে দেখতে এসেছে সে আপনি।
রুবা:এখন এসব বলে আরকি লাভ। সেতো বিয়ে করে নিয়েছে।
নিলয়:কে বললো আপনাকে?
রুবা:আমি ফেজবুকে দেখেছি।
নিলয়:অহ সেটাতো আপনার উপর রাগ করে দিয়েছিলো। দিপা যাবেরের বউ, আরাভের না।
রুবা:কি সত্যি?
নিলয়:হ্যা।
রুবা:কিন্তু আমি বাবাকে কিভাবে বুঝাবো?
নিলয়:সেসব নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না আমি দেখে নিচ্ছি।

রুবা নিলয় কথা শেষ করে নিচে চলে আসলো। তারপর নিলয়ের বাবা মা রুবার বাবা মার সাথে কথা বলে। খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলো।

______________________________

রোদেলা দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ানের মুখামুখি। আদ্রিয়ানের চোখে রাগ আর রোদেলার চোখে পানি।

আদ্রিয়ান:আজ সব সত্যি জানার পর তোমার মনে হয়েছে তোমার ভুল হয়েছে। আর এতোদিন!এতোদিন যে আমি কষ্ট পেয়েছি আমি তিলে তিলে শেষ হয়েগেছি তার কি হবে বলো কি হবে। তোমাকে আমি মাফ করবোনা রোদেলা কোনোদিন মাফ করবোনা। আমার সন্তানদের কাছেও তোমার কারনে আমি থাকতে পারিনি। I haTe you Rodela. I hate You.

রোদেলা:প্লিজ এভাবে বলবেন না। একটা বার আমাকে সুযোগ দিন প্লিজ একটা বার। আমি আমার বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকতে পারবোনা প্লিজ। আপনাকে ছাড়াও আমি বাঁচবোনা প্লিজ।

আদ্রিয়ান রোদেলার কথা না শুনে চলে যায় বাবুদের নিয়ে আর রোদেলা সেখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।

#চলবে
🙊🙊🙊

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে