প্রেমময় আসক্তি ২ পর্ব-১০

0
1155

#প্রেমময়_আসক্তি_২
#পর্ব_১০
#নন্দিনী_চৌধুরী

১০.
থরথর করে কাঁপছে রোদেলার শরীল। ঘামে ভিজে গেছে পরনের গোল জামাটা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার। পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে এক শ্বাসে পানি খেয়ে নিলো সে। এক ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছে সে। আদ্রিয়ান ফিরে এসেছে। তার বাচ্চাদের তার কাছে থেকে নিয়ে গেছে। রোদেলা উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। স্বপ্নের কথাটা কিছুতেই ভুলতে পারছেনা সে। আচ্ছা আদ্রিয়ান কি সত্যিই ফিরে আসবে? নিয়ে যাবে বাবুদের ওর কাছ থেকে? নাহ! এটা হতে পারেনা। আদ্রিয়ান কিভাবে ফিরে আসবে। রোদেলা গিয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলো ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ৪টা বাজে। একটু পরেই আজান দেবে। রোদেলা ওযু করে আসলো এর মধ্যেই দুরের মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি শুনা গেলো। রোদেলা জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো। নামাজ শেষ করে মোনাজাত করে একটু কোরয়ান পড়ে নিলো রোদেলা। তারপর গিয়ে আবার বিছানায় শুয়ে পরলো। এখন মনটা কিছুটা শান্ত হয়েছে।

~সকালে~

নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা করছে আরিয়ানরা সবাই। নীলাদ্র আর নন্দিনীর বিয়ে তারিখ ফিক্সড হয়ে গেছে। আগামী শুক্রুবার বিয়ে ওদের। হাতে আর ১সপ্তাহ সময় এর ভেতর সব এরেঞ্জ করতে হবে। আরিয়ান সব দায়িত্ব নিয়েছে। খাবার খেতে খেতে মিস্টান খান বলেন,

মিস্টার খান: আচ্ছা রাফসান গ্রুপ ওফ কোম্পানির মালিক মিস্টার রাফসানকেও তো দাওয়াত দেওয়া উচিত আফটার ওল সে আমাদের সাথে অনেক ডিল করে।
মিস্টার হাসান: হ্যাঁ, তাকেও দাওয়াত দে। ভালো হবে ছেলেটা বেশ ভালো এবং এক্সপার্ট একজন বিজনেসম্যান।
নীলাদ্র: এই রাফসানের সাথে আমাদের বান্দরবনে দেখা হয়েছিলো।
মিস্টার খান: বাহ! তাহলে তো ভালোই হলো। প্রথম কার্ড তাহলে তাকেই দেই।
আরিয়ান: হ্যাঁ ভালো হবে।
সবাই নাস্তা করে যে যার যার মতো বেরিয়ে গেলো।

______________________________

আরাভ আজকে হাসপাতাল থেকে এসে সোজা জুঁই তুর্যকে নিয়ে রুবাদের বাসায় যাচ্ছে। নিলয় ফোন করে আরাভকে জানিয়েছে কেন রুবা ওকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো। আরাভ যেভাবেই পারুক রুবার বাবাকে মানাবে। তাই আজকেই আরাভরা যাচ্ছে রুবাদের বাসায়।

~অন্যদিকে~

আশরাফের অবস্থা করুন। তার সব কালো সম্পত্তি সব ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন এই সম্বল ছাড়া আর কিছুই তার নেই।

আশরাফ: না এভাবে বসে থাকলে চলবেনা। আমার মনেই হচ্ছে অই ছেলেটাই আদ্রিয়ান। আর সেটা সত্যি হলে ওকে আমি ছাড়বোনা।

আশরাফ ওর ছেলেদের ডাক দেয় তারপর এক পরিকল্পনা সাজায় ওরা।

~২দিন পর~

এখন রোদেলার ৭মাস শুরু হয়েছে। পেট আগের থেকে বেশ ফুলে উঠেছে সেই সাথে বাচ্চাদের কিক তো আছেই। রোদেলার হাটতে চলতে বেশ অসুবিধা হয়। তাই রাত একদম ছায়ার মতো রোদেলার পাশে থাকে। যেনো রোদেলার কোনো সমস্যা না হয়। কাশু আজকে চলে আসছে রোদেলাদের কাছে। কাশু আর কাউসারের ফ্যামিলি ওদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। কাউসার দেশের বাহির থেকে ফিরে আসলেই ওদের বিয়ে দিয়ে দেবে।

রাফসান রেডি হচ্ছে মুন ওকে ওর সব প্রয়োজনীয় জিনিশ এগিয়ে দিচ্ছে। রাফসান রেডি হতে হতে বলে,,

রাফসান: আমাদের সাথে ডিল করে মিস্টার খানের এক মাত্র ছেলে নীলাদ্র খানের এই শুক্রুবারে বিয়ে। আমাকে সবার আগে বিয়ে কার্ড দিয়ে গেছে। আর বলেছে আমি যেনো অবশ্যই যাই বিয়েতে স্বপরিবার নিয়ে।
মুন:এটাতো ভালো কথা।
রাফসান:হ্যা রুবাকে কল করে চলে আসতে বলো। ওকে রেখে যাবোনা।
মুন:আচ্ছা ঠিক আছে।

রাফসান রেডি হয়ে মুনকে আদর করে চলে যায় অফিসে।

____________________

আরাভ পুরো ২দিন রুবার বাবাকে বুঝিয়ে রাজী করিয়েছে ওদের বিয়ের জন্য। রুবার বাবা চায়না তার গরিব বলে মেয়ে ধনী পরিবারে গিয়ে কোনো কষ্ট পাক। তাই সে আরাভকে প্রথমে মেনে নিতে চায়নি। কিন্তু আরাভ তাকে বুঝিয়েছে আরাভ কোনোদিন রুবার অমর্যাদা করবেনা। সারাজীবন রুবার পাশে থাকবে। অবশেষে রুবার বাবা আরাভ ও রুবাকে মেনে নেয়। দিন তারিখ মতে সামনের মাসেই ওদের বিয়ে দেবে তারা। এর মাঝেই মুন রুবাকে ফোন দিয়ে জানায় আসার জন্য। রুবা বাবাকে বলে অনুমতি নেয়। আরাভের সাথেই আসার জন্য বেরিয়ে পরে সে।

~রাতে~

রোদেলার আজকেও ফিল হচ্ছে ওর পেটে কেউ চুমু দিচ্ছে কথা বলছে। রোদেলা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ান ওর পেটে চুমু দিচ্ছে। রোদেলা নরেচরে উঠতেই আদ্রিয়ান সরে গেলো। রোদেলা উঠে বসতেই আদ্রিয়ান হেসে বলে,,

আদ্রিয়ান: এইযে পান্ডা কেমন আছো?
রোদেলা: পান্ডা?
আদ্রিয়ান: হুম পান্ডা। দেখোনা তুমি পান্ডার মতো গোলগাল হয়ে গেছো একদম।
রোদেলা: আমি গোলগাল হয়ে যাইনি। আপনার বেবিগুলা আমার ভিতরে দেখে আমি মোটু হয়ে গেছি। তাই বলে আপনি আমাকে পান্ডা বলবেন🥺!
আদ্রিয়ান: হুম তুমি পান্ডা। কিন্তু পান্ডা হলেও তোমাকে সেই কিউট লাগছে। উফফ রোদেলামই কবে যা আমার বেবিগুলা দুনিয়ায় আসবে। আর আমি তাদের দেখবো আমার আর অপেক্ষা সইছেনা।
রোদেলা: 😒😒।
আদ্রিয়ান: রোদেলার কোমর জরিয়ে ধরে শুয়ে পেটে কান পেতে বাচ্চাদের অনুভব করছে হঠাৎ আদ্রিয়ান এক্সসাইটেড হয়ে বলে,
আদ্রিয়ান: রোদেলামই বেবিরা কিক করেছে। ওমাই গড আমার বেবিরা কিক করেছে।
রোদেলা: হ্যাঁ, তো এটা নতুন কি? কিক তো রোজই ৬/৭টা মারে।
আদ্রিয়ান: আমার কাছে নতুন কারন আমি আজ প্রথম তাদের কিক অনুভব করলাম।
রোদেলা: হুহ।
আদ্রিয়ান: আচ্ছা রোদেলা আমাকে মিস করোনা। আমার আদরগুলা মিস করোনা।
রোদেলা:…………।
আদ্রিয়ান: জানি তুমি আমাকে মিস করো। আমার ছবি বুকে নিয়ে বসে থাকো। যখন আমাকে ছাড়া থাকতেই পারবেনা তাহলে কেন দূরে ঠেলে দিলে।

“তুমি বীরহে পোড়াতে চাও পোড়াও, কিন্তু এমন ভাবে পুড়িওনা যে পুনরায় ফেরত আসার কোনো উপায় থাকবেনা। ভালোবাসি বিধায় এই নয় তোমার সব মেনে নেবো। ভালোবাসি বলেই বীরহে পুড়ি। কিন্তু পোড়াইনা। ভালোবাসার বিষে রোজ মৃত্যু হয়। ”

রোদেলা আদ্রিয়ানের কিছু বললোনা। কেন জানি এই বিষয়ে সে কিছু বলতে পারেনা।
আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়ায় তারপর রোদেলার দিকে তাকিয়ে চলে যায়। না আজ কোনো ধোঁয়া নেই। আজ রোদেলার সামনে দিয়েই দরজা দিয়েই আদ্রিয়ান চলে গেছে। আর রোদেলা তাকিয়ে শুধু দেখে গেছে।

~সকালে~

মুনের হাতে ডাক্তারের রিপোর্ট। রিপোর্ট হাতে নিয়ে মুন বসে আছে চোখে তার পানি। না এই পানি কষ্টের না সুখের। এক নারীর বিশাল পূর্নতার খুশির। তার ভেতর রাফসানের একটা অংশ বেড়ে উঠেছে।
হ্যাঁ, সে মা হতে যাচ্ছে আর রাফসান বাবা। মুন বুঝতে পারছেনা কিভাবে জানাবে রাফসানকে এটা। রাফসান শুনলেতো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবে। মুন ভেবেছে খুব স্পেশাল ভাবে সে এটা জানাবে রাফসানকে

রুবা চলে এসেছে রোদেলাদের বাসায়। যথারিতি আবার ৪ বান্ধুবি এক সাথে।

আদৃতা আজকে এসেও রোদেলাকে দেখে গেছে। আদৃতা সামনের মাসে চলে যাচ্ছে আহনাফের সাথে ইউকে।

_________________________

আজকে নীলাদ্র আর নন্দিনীর বিয়ে। বিয়ে বাড়ি যতটা সুন্দর করে সাজানো যায় ঠিক ততটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আরিয়ান নিজে সব ডেকোরেশন করিয়েছে। নন্দিনীকে নিয়ে রুহি পার্লারে গেছে। বাকি সব কাজ হয়েগেছে। নীলাদ্রকে পাঞ্জাবি পরিয়ে রেডি করছে আরিয়ান।

নীলাদ্র: দুর! এইটা পাঞ্জাবি না চাইনিজ ওয়ালের কাপড়।এতো ঢোলা কেন রে বাবা!
আরিয়ান: চুপ চাপ দাঁড়িয়ে থাক কথা কম বলে।
নীলাদ্র:🙂।

আরিয়ান নীলাদ্রকে রেড়ি করে দিলো। যথাসময়ে বিয়ে শুরু হলো। নীলাদ্র নন্দিনীকে স্টেজে বসানো হলো। কাজীও চলে এসেছে। বিয়ে পড়ানো শুরু হলো। আসতে ধীরে বিয়ে সম্পুর্ন হলো। রাফসানরা সবাই এসেছে। মিস্টার খান আর হাসান রাফসানের সাথে কথা বলছে। রুবা কাশু ছবি তুলছে বর বউয়ের সাথে। রোদেলা, রাত, মুন এক জায়গায় বসা।

এর মাঝে একটা ছেলে সবার সামনে এসে বলে,,,,

লেডিস এন্ড জেন্টাল ম্যান। আজকে আমাদের RJ Niladro বিয়ে উপলখ্যে তার ভাই মানে আমাদের ফেমাস গায়ক আরিয়ান একটা গান গাবে ওকে।

সবাই সেটা শুনে অনেক এক্সসাইটেড হয়ে যায়।

আরিয়ান সবার মাঝে এসে গিটার নিয়ে দাঁড়ায়। সবাই আরিয়ানকে দেখে এক্সসাইটেড শুধু রাফসানরা বাদে। তাদের চোখে বিস্ময়। রোদেলা বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আরিয়ানকে দেখে। মুন, রুবা, কাশু, রাফসান সবাই অবাক। রোদেলার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,

“আদ্রিয়ান!”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে