প্রেমময় আসক্তি ২ পর্ব-১১

0
1144

#প্রেমময়_আসক্তি_২
#পর্ব_১১
#নন্দিনী_চৌধুরী

১১.
অবাক নয়নে রোদেলারা সবাই তাকিয়ে আছে আরিয়ানের দিকে। রোদেলা যেনো কথা বলতেও ভুলে গেছে আরিয়ানকে দেখে। রুবা মুনের কাছে এগিয়ে এসে বলে,

রুবা:মুন এ আমি কি দেখছি! আদ্রিয়ান ভাইয়া এখানে?
মুন:আমিওতো বুঝতে পারছিনা। উনি আদ্রিয়ান কিন্তু সবাই আরিয়ান বলছে কেন?

আরিয়ান গিটার নিয়ে বসে গান শুরু করলো,,

“Suraz huya Madham Chand zalne laga”
“asma iye hay,kiu pighalne laga”
“mein thera raha jami chalne lagi”
“dharka iye dil shans thamne lagi”
“sazna keya iye mera pehla pehla peyar hein”
“sazna keya iye mera pehla pehla peyar hein”

গান শেষ করে আরিয়ান চোখ খুললো। সবাই হাত তালি দিতে লাগলো আর প্রশংসা করতে লাগলো। রোদেলা বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। কেন যেনো ও আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা। মাথা কেমন ঘুরাচ্ছে। হাত পা একদম অবস হয়ে যাচ্ছে। রোদেলা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা জ্ঞান হারিয়ে পরে যেতে নিলো। কিন্তু রাত ওর পাশে থাকায় ওকে ধরে ফেললো।

রাত:রোদেলা! রোদেলা কি হলো।
রাতের কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো। রাফসান,মুন,রুবা,কাশু সবাই ওর কাছে গেলো। রাফসান রোদেলার গালে হালকা থাপ্পড় মেরে মেরে ডাকছে,

রাফসান:রোদ এই রোদ কি হলো তোর বোন।
মুন:রাফসান ওর হাত পা তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেও ওকে।
রাফসান তাড়াতাড়ি রোদেলাকে কোলে তুলে নিলো আর বেরিয়ে গেলো। রাফসানের পেছনে বাকিরাও গেলো। পুরো ঘটনায় উপস্থিত সবাই চুপ হয়ে গেলো। আরিয়ান বুঝতে পারলো হঠাৎ শকডে রোদেলা জ্ঞান হারিয়েছে। আরিয়ান অনুষ্ঠান রেখে বেরিয়ে গেলো ওদের পিছনে পিছনে। মিস্টান খান হাসান ডাকার পরেও পিছনে না ফিরে চলে গেলো।

রাফসান রোদেলাকে নিয়ে সিটি হাসপাতালে চলে আসে। ডাক্তার রোদেলা তাড়াতাড়ি কেবিনে শিফট করে। চেকাপ করে দেখে রোদেলার পেশার লো হয়ে গেছে। তাই হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। রোদেলা কেবিনে সেলাইন আর ঘুমের মেডিসিন দিয়ে দেওয়া হলো। তারপর ডাক্তার বাহিরে আসলো। আরিয়ান ততক্ষনে চলে আসে হাসপাতালে।

ডাক্তার বের হয়ে রাফসানকে বলে,

ডাক্তার:কোনো একটা কারনে তিনি খুব বড় শকড পেয়েছেন। মানে কোনো এমন কিছু যেটা উনি আশা করেনি কিন্তু তার সামনে হয়েছে। তাই তিনি খুব শকড পেয়েছেন। দেখুন এমন বার বার হলে কিন্তু বেবি আর ওনার জন্য রিস্ক হয়ে যাবে। তাই প্লিজ খেয়াল রাখবেন।

রাফসান ডাক্তারের কথা শুনে মাথা নাড়ালো। ডাক্তার চলে যাওয়ার পর আরিয়ান রাফসানদের কাছে আসলো। রাফসান আরিয়ানকে দেখে আবার অবাক হলো।
রাফসান:তুমি!
আরিয়ান:জ্বি রোদেলা কেমন আছে?
রাফসান:ভালো।
আরিয়ান:হঠাৎ এমন হলো কেনো?
রাফসান:তার আগে বলো কে তুমি?
আরিয়ান:আমি!
রাফসান:হ্যা তুমি।
আরিয়ান:আমি আরিয়ান খান। Son Of Hasan khan.
রাফসান:তুমি সত্যি আরিয়ান!
আরিয়ান:হ্যা এতে অবাক হবার কি আছে?
রাফসান:আসলে তুমি আমার বোনের স্বামী আদ্রিয়ানের মতো দেখতে হুবুহু। যে আজ থেকে ৬মাস আগে মারা গেছে। তোমাদের চেহারা একদম এক। আমি শুনেছি এতোদিন একই চেহারার দুজন মানুষ হতে পারে। কিন্তু তা যে এভাবে সত্যি হবে তা ভাবতে পারিনি। রোদেলা তোমাকে দেখে শকড হয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। জানিনা জ্ঞান আসার পর কি হবে।
আরিয়ান:আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আসছি সাবধানে থাকবেন।

আরিয়ান বেরিয়ে চলে আসে। গাড়িতে এসে বসে আরিয়ান হাঁসে। সেতো ইচ্ছা করেই সামনে এসেছে।

আরিয়ান:আদ্রিয়ান খান আমান এতো তাড়াতাড়ি মরবেনা। যে রোদেলাকে আমাকে মারতে বাধ্য করেছে তাকে তো আমি নিজ হাতে মারবো। রোদেলার সামনে এসেছি ইচ্ছে করেই। যাতে ও আমাকে দেখে আর জানার আগ্রহ বাড়ায়। আমি জানি আগামীকাল সকালে ও যখন জ্ঞানে আসবে তখন ও অস্থির হয়ে যাবে আমার জন্য। আর এটাই আমি চাই।

আরিয়ান গাড়ি নিয়ে চলে গেলো বাসায়। সব গেস্ট চলে গেছে। বাসায় ড্রইংরুমে সবাই বসে আছে। আরিয়ান যেতেই ওর বাবা ওকে বলে,

মিস্টার হাসান:কোথায় গেছিলে?
আরিয়ান: হাসপাতালে।
মিস্টার হাসান:কেনো?
আরিয়ান:ওই মেয়েটাকে দেখতে গেছিলাম। হঠাৎ এমন হলো তাই গেছিলাম।
মিস্টার হাসান:আচ্ছা যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।

আরিয়ান রুমে চলে গেলো।

মিস্টার খান এসে মিস্টার হাসানের কাছে এসে বললো,

মিস্টার খান:আমার কিন্তু আরিয়ানের হাবভাব ভালো লাগছেনা।
মিস্টার হাসান:মানে?
মিস্টার খান:মানে ও ওই মেয়ের জন্য এতো কেয়ারিং মনে নাই রুহিও তো সেদিন বললো।
মিস্টার হাসান:না এসব কি বলছিস তুই। আরিয়ান এমন কিছু করবেনা। পঁচা শামুকে মুখ দেওয়ার মতো ছেলে আমার আরিয়ান না।
মিস্টার খান:তাই যেনো হয়।

মিস্টার হাসান তার রুমে চলে গেলো আর মিস্টান খান তার রুমে।

____________________________

~সকালের দিকে জ্ঞান ফিরে আসে রোদেলার। আসতে করে চোখ মেলে তাকায় সে। চারিপাশে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলো সে হাসপাতালে আছে। রোদেলা পাশে তাকিয়ে দেখে রুবা ওর খাটের পাশে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে। রোদেলা নড়েচড়ে উঠতেই রুবার ঘুম ভেংগে যায়। রুবা রোদেলাকে জাগনা দেখে রোদেলাকে বলে,
রুবা:রোদ এখন কেমন লাগছে তোর?
রোদেলা:হ্যা ভালো লাগছে।
রুবা:দাঁড়া আমি আরাভকে ডেকে আনছি।

রুবা আরাভকে ডাকতে যায়। আর রোদেলা আসতে করে উঠে বসে। উঠে হেলান দিয়ে বসে খাটে। রোদেলা ভাবতে লাগে কালকের কথা। আরিয়ান আর আদ্রিয়ান এর চেহারা একদম এক। এটা কি কাকতালীও নাকি আসলে অন্য কিছু ভেবে পাচ্ছেনা রোদেলা।

এর মাঝে আরাভ রুমে আসে। এসে রোদেলাকে চেকাপ করে নেয় সব ঠিক আছে। রুবাকে বলে রোদেলাকে ফ্রেশ করিয়ে নাস্তা করিয়ে দিতে। রুবা আরাভের কথা মতো রোদেলাকে ফ্রেশ করিয়ে খাবার খাইয়ে দেয়। তারপর হাসপাতালের সব ফর্মালিটি শেষ করে রোদেলাকে বাসায় নিয়ে আসা হলো।

রোদেলাকে বাসায় আনার পর রোদেলা কারো সাথেই তেমন কথা বলছেনা, আর না কেউ কালকের ঘটনার কথা ওর সামনে উঠাচ্ছে। রোদেলার শরীল ক্লান্ত লাগায় সে আবার ঘুমিয়ে যায়। রাত রোদেলার ঘুমিয়ে যাওয়ার পর কল দেয় আরিয়ানকে।

রাত:হ্যালো স্যার।
আরিয়ান:হ্যা বলো।
রাত:স্যার মেডামকে বাসায় আনা হয়েছে।
আরিয়ান:আচ্ছা কোনো সমস্যা নেইতো?
রাত:না নেই মেডামতো কালকের বিষয়ে কোনো কথা বলছেনা আর না বাসার কেউ।
আরিয়ান:আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি ওর সাথে থাকো।
রাত:আচ্ছা স্যার।

রাত কল কেটে দিলো তারপর রোদেলার গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে রুমের বাহিরে চলে যায়।

~এদিকে~

সায়মন জন দুজনে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ানের সামনে। তারা যেনো বিশ্বাসই করতে পারছেনা তাদের সামনে তাদের আদ্রিয়ান স্যার দাঁড়ানো। আদ্রিয়ান দুজনের মুখ দেখে হাঁসছে। হাঁসতে হাঁসতে দুজনের দিকে হাত মেলে দিয়ে ইশারা করে। সায়মন আর জন দুজনে গিয়ে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দেয়। আদ্রিয়ান দুজনকে জরিয়ে ধরে।
সায়মন:স্যার আপনি! আপনি বেঁচে আছেন আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছেনা। আমাদের আদ্রিয়ান স্যার বেঁচে আছে।
জন:হ্যা স্যার আপনি বাইচ্চা আছেন এটা দেইখা আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে।
আদ্রিয়ান:আচ্ছা আর কাঁদিস না মেয়েদের মতো। এবার আগের ফর্মে ফিরে আয়। কাজে অনেক ফাঁকি মারছিস এবার আর না।

সায়মন জন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
সায়মন:খালি অর্ডার করেন স্যার কাজ আমরা করে দিচ্ছি।
আদ্রিয়ান:আমার এলেক্স রেইন,টুইংকেল টাইগার ওদের নিয়ে আয়।
সায়মন:ওকে স্যার।

আদ্রিয়ান সুইমিংপুলে চলে আসে। খাচায় করে নিয়ে আসা হয় এলেক্স রেইনকে আর পানি থেকে উঠে আসছে টুইংকেল টাইগার।
চারজনে এসে আদ্রিয়ানকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে। আদ্রিয়ান বসে ওদের আদর করতে লাগলো। আর ওরা আদর নিচ্ছে।

আদ্রিয়ান:আমার সোনা বাচ্চারা। বাবাকে এতোদিন মিস করছিস তাইনা সোনারা। ইসস কত শুকিয়ে গেছিস তোরা। কিরে তোরা ওদের ঠিক মতো খাবার দিস নাই।
সায়মন:স্যার ওরা কি আপনাকে না দেখে খায় বলেন। এই ছয়মাসে ওরা কত পাগলামি করছে আপনার জন্য। এদের নিয়ে তাই দেশে এসে এখানে থাকছিলাম। আর আজজে আপনাকে ফিরে পাবো তা ভাবতেই পারিনি। মেডাম আপনাকে ফিরে পেয়েতো অনেক খুশি হবে। মেডামের কাছে গেছেন স্যার।
আদ্রিয়ান:হুম। নে ওদের রেখে আয়।

সায়মন ওদের রেখে আসলো।

তারপর আদ্রিয়ান ওদের সব বললো আর বুঝিয়ে দিলো ওদের কি করতে হবে।

ওদের সাথে সব কথা শেষ করে চলে আসে।

__________________________

২দিন পর,,,,

রোদেলা বসে আছে ঘরে মাথায় তার একটা জিনিশই ঘুরছে আর সেটা হলো আরিয়ান। রোদেলা বুঝতে পারছেনা কি করবে।

রোদেলা:আচ্ছা উনিকি আরিয়ান নাকি আমার আদ্রিয়ান। আমার কি খবর নেওয়া উচিত ওনার ব্যাপারে।

রোদেলা বুঝতে পারছেনা কি করবে।

রোদেলা এসব ভাবছিলো তখন ওর ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো অচেনা নাম্বার থেকে,

“তোমাকে হাঁসি মুখে রাখবো প্রতিমূহুর্তে ভালোবাসার মুগ্ধতায়!
-তোমাকে সারাজীবনের বাঁধনে বাঁধবো
আমি ভালোবাসার পূর্ণতায়!”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে