প্রেমময় আসক্তি ২ পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
1801

#প্রেমময়_আসক্তি_২
#সমাপ্তি_পর্ব
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৪.
আদ্রিয়ান বসে আছে মিস্টার হাসান, মিস্টার খানের সামনে। বাকি সবাইও এখানে উপস্থিত। আদ্রিয়ান অনেকটা সময় ধরে চুপ করে আছে তাই মিস্টার হাসান নিজেই বললেন,

মিস্টার হাসানঃআরিয়ান তুমি কি কিছু বলতে চাও?
আদ্রিয়ানঃজ্বি।
মিস্টার হাসানঃবলো তাহলে।
আদ্রিয়ানঃ আমি জানি আপনারা এটা কিভাবে নেবেন। বা কিভাবে আপনারা বুঝবেন কিন্তু আমি আরিয়ান নই এটা আপনারা জানেন। আমি আদ্রিয়ান। আমাকে আপনারা সেদিন বাচিঁয়েছিলেন। আপনারা আমায় না বাঁচালে আমি আজকে এখানে আরিয়ান হয়ে আসতে পারতাম না। আমাকে বাঁচিয়েছেন নতুন জীবন দিয়েছেন এর জন্য আমি আপনাদের কাছে চিরো রীণি থাকবো। কিন্তু সত্যি এটাই আমি আমার আসল পরিচয় অনেক আগেই আমার মনে চলে এসেছিলো। কিন্তু আমি চুপচাপ আরিয়ান হয়েই ছিলাম। আমি বাংলাদেশে আসার অপেক্ষায় ছিলাম। আমার স্ত্রীকে কে ষড়যন্ত্র করে আমাকে মারিয়েছে তাকে ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আজ আমি তাকে শাস্তি দিতে পেরেছি। রোদেলা আমার স্ত্রী। রোদেলার বাচ্চার বাবা আমি। আমাকে এভার ফিরতে হবে আমার পরিবারের কাছে আমার স্ত্রীর কাছে।

আদ্রিয়ানের কথা শুনে চুপ করে রইলেন মিস্টার হাসান। মিস্টার হাসান কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বললেন,

মিস্টার হাসানঃআমার ছেলে আরিয়ান মারা যাওয়ার পর আমি তোমাকে পেয়েছিলাম। ভুলে গেছিলাম আরিয়ান যে নেই। তোমাকেই আরিয়ান মনে করে নিয়েছিলাম। আরিয়ান ভেবে অনেক শাষন করেছি হয়তো কোনো কিছু জোরও করেছি। তার জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি তোমার কাছে। তবে তোমার জন্য আমার এই বুক সব সময় খোলা। তুমি যখন চাও এসো আমাদের কাছে। কোনো সমস্যা হলে তোমার এই বাবাকে বলো। আর হ্যা বেটা বউমাকে নিয়ে আর আমার নাতী নাতনীদের নিয়ে কিন্তু আসবে একদিন।

আদ্রিয়ান মিস্টার হাসানের কথা শুনে অবাক হয়। মিস্টার হাসান হেঁসে আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে। আদ্রিয়ান ও জরিয়ে ধরে মিস্টার হাসানকে।
সম্পর্ক শুধু রক্তের হলেই হয়না সম্পর্ক হতে হয় মনের। তাইতো মিস্টার হাসান আদ্রিয়ানকে নিজ সন্তানই ভাবেন। হয়তো প্রথমে তিনি ভুল করতে যাচ্ছিলেন রুহিকে আদ্রিয়ানের সাথে বিয়ে দিতে চেয়ে। কিন্তু এখন তিনি সেই ভুলটা বুঝতে পারছেন।

~এদিকে~

রোদেলা বসে আছে রুমে। বাড়ির কেউ তার সাথে কথা বলছেনা। মুন একবার এসে রাতের কাছে ওর খাবার দিয়ে গেছে। রাত বাদে কেউ ওর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেনা। সবাই সব শোনার পর স্তব্ধ হয়ে গেছে। রোদেলা এমন করবে কেউ ভাবেনি এটা। আদ্রিয়ানের ভালোবাসার ফল যে এভাবে দেবে তা ভাবনার বাহিরে ছিলো। আদ্রিয়ান রোদেলাকে যাওয়ার আগে বলেগেছে,,

“আমি তোমাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসতাম এখনো ভালোবাসি। কিন্তু তুমি আমাকে এই বুকে যে আঘাত দিয়েছো তা কোনোদিন ভুলার নয়। আমিতো মরেই গিয়েছিলাম কিন্তু আল্লাহ ফিরিয়ে নিয়ে আসছে। তবে আগের আদ্রিয়ানের মৃত্যু সেদিন ওই পাহাড় থেকে পরে হয়েগেছে। আজ যে তোমার সামনে আছে সে তোমাকে চরম ঘৃণা করে। তোমার মুখ ও আমি আর দেখতে চাইনা। আমার সন্তান এই দুনিয়ায় আসার পর তাকে আমি নিয়ে যাবো। তার বাবাই তার জন্য যথেস্ট হবে। কোনোদিন তোমাকে আমি আমার আর আমার সন্তানের কাছে আসতে দেবোনা। তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনি। আমার ভালোবাসাকে অপমান করেছো তুমি। তোমাকে আমি চাইনা আর রোদেলা আর চাইনা।”

আদ্রিয়ান এই কথাগুলো বলেই বেরিয়ে চলে গেছিলো। রোদেলা আদ্রিয়ানের কথা শুনে শুধু চুপ করে চোখের পানি ফেলেছে।

রোদেলা এসব ভাবছে আর এখনো কান্না করছে। রাত এসে ওকে শান্ত করছে কিন্তু লাভ হচ্ছেনা। খুব কষ্টে রাত রোদেলাকে শান্ত করে ঘুম পাড়ালো। আদ্রিয়ান কল করে রাতের থেকে খবর নিলো রোদেলার। রাত সব বললো ওকে। আদ্রিয়ান সবটা শুনে মনে মনে এটাই বললো,

“একটু কষ্ট পাও রোদেলা। দেখো ভালোবাসার থেকে দুরে থাকা কত যন্ত্রনার। ”

______________________________

এভাবেই যেতে লাগে দিন। রোদেলা একদম একা হয়ে যায়। একই ছাদের নিচে থাকলেও কেউ ওর সাথে কথা বলেনা। ও কথা বলতে চাইলে সবাই ওকে এড়িয়ে যায়। রোদেলা নীরবে কষ্ট পাচ্ছে।
আদ্রিয়ানের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলো কিন্তু সেটাও পারেনি।

একদিনে রাতের বেলার,,,,

রোদেলার ঘুম হয়না এখন ভালো। বাবু গুলার নড়াচড়া ইদানিং বেড়ে গেছে। ৯মাসে পা দিয়েছে রোদেলা। পেট অনেক বড় হয়েছে। দুটো বাবু বলে কথা। রোদেলা বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেলো। ওয়াশরুমের দরজা খুলে পা দিতেই পানিতে স্লিপ কেটে পরে গেলো রোদেলা। একদক সোজা উপুর হয়ে পরেছে আঘাত পায় পেটে। রোদেলা সাথে সাথে চিৎকার দেয়৷ রোদেলার চিৎকারে ঘুম ভেংগে যায় রাতের। রাত জলদি উঠে গিয়ে দেখে রোদেলা পেট ধরে চিৎকার করে কান্না করছে আর পুরো ফ্লোর রক্তে মাখামাখি। রাত তাড়াতাড়ি চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডাকলো। এতো রাতে চিৎকার শুনে রাফসানরা সবাই রুমে এসে এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায়। রাফসান তাড়াতাড়ি বোনের মাথাটা কোলে নেয়,, রোদেলা চিৎকার করে বলছে,

রোদেলাঃভাইয়া আমার বাচ্চা! ভাইয়া আমার বাচ্চাদের বাঁচাও।
রাত তাড়াতাড়ি আদ্রিয়ানকে কল দেয়। আদ্রিয়ান খবর শোনা মাত্র থমকে যায়। হাওয়ার গতিতে চলে আসে সে রোদেলাদের বাসায়। আদ্রিয়ান এসে রোদেলার এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়। তবুও নিজেকে সামলে রোদেলাকে কোলে করে বেরিয়ে পরলো হাসপাতালের জন্য। রাফসান গাড়ি ড্রাইভ করছে সামনে মুন বসা। আদ্রিয়ান আরাভকে কল করে দিয়েছি আরাভ জেনেগেছে আদ্রিয়ান জীবিত আছে আর আরিয়ান আদ্রিয়ান। রোদেলা চিৎকার করে কান্না করছে। আদ্রিয়ানের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ভয়ে। রোদেলা আদ্রিয়ানের হাত চেপে ধরে বলে,,,
রোদেলাঃজানি আমি অপরাধী আমাকে মাফ করতে পারবেননা। কিন্তু যদি আমি মরে যাই আমার বাবুদের আমার কথা একটু হলেও বলিয়েন। আর হ্যা যদি এমন পরিস্থিতি হয় মা বা বাচ্চা দুজনের মধ্য একজন বাঁচবে তবে আপনি আমাদের বাচ্চাকেই বেছে নিবেন। আমার জন্য কষ্ট পাবেননা একদম। আর একবার শেষ বারের মতো বলবেন প্লিজ ভালোবাসেন।
আদ্রিয়ান রোদেলার কথা শুনে চোখ ভিজে গেছে। আদ্রিয়ান রোদেলাকে ধমক দিয়ে বলে,
আদ্রিয়ানঃচুপ একদম চুপ। কিছু হবেনা তোমার আর আমাদের বাবুদের। সব ঠিক হয়ে যাবে।

রোদেলা হালকা হাঁসলো। রোদেলা ব্যাথা আর সয্য করতে পারছেনা। চোখে সব ঝাপসা হয়ে আসছে। চোখের সামনে আদ্রিয়ানের সাথে কাটানো দিন গুলো ভাসছে।

আদ্রিয়ান রোদেলাকে চোখ বন্ধ করতে দেখে বার বার ওকে চোখ বন্ধ না করার জন্য বলছে।

২০মিনিটের মাঝে হাসপাতালে এসে পৌছালো আদ্রিয়ানরা। আরাভ অলরেডি বিশেষ গাইনি ডাক্তার বেস্ট সিজারিয়ান ডাক্তারকে নিয়ে আসছে। ডাক্তার রিমির আন্ডারে যাবে রোদেলা। রোদেলাকে স্টেচারে করে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো। আদ্রিয়ান,রাফসান,মুন,রুবা, কাশু,আরাভ দাঁড়ানো বাহিরে। এর মাঝে আদ্রিতাও চলে আসছে।
একটু সময় পর ডাক্তার রিমি বেরিয়ে আসলো।

আদ্রিয়ান এগিয়ে গেলো তার দিকে।
আদ্রিয়ানঃকি অবস্থা ডাক্তার?
রিমিঃ ইমার্জেন্সি সিজার করতে হবে। বাচ্চাদের পজিশন ঠিক নাই। বাচ্চারা উল্টিয়ে গেছে। আর রোদেলার বিলিডিং বন্ধ হচ্ছেনা। তার ওপর সেন্স নেই ওর। আপনারা রক্তের ব্যবস্থা করে রাখুন। আর পেসেন্টের হাজবেন্ড কে?
আদ্রিয়ানঃআমি!
রিমিঃ আপনাকে একটা বন্ড সাইন করতে হবে। যেহিতু এটা খুব ক্রিটিকাল সিজার। মা বা বাচ্চার মাঝে যেকোনো একজন বাঁচবে। হয় আপনার স্ত্রী। নয়তো আপনার বাচ্চারা। ৯মাসে ডেলিভারি হচ্ছে রিস্ক অনেক৷

আদ্রিয়ান সব চুপ হয়ে যায়। নার্স এসে ওকে একটা পেপার দেয়। আদ্রিয়ান পেপারটার দিকে তাকালো। বার বার রোদেলার বলার কথাটা মনে পরছে,,,
“আমার আর বাবুর মাঝে বাবুকে বেছে নিবেন।”
না আদ্রিয়ান পারবেনা রোদেলাকে ছাড়া থাকতে। আল্লাহ চাইলে তারা আবার বাবা মা হতে পারবে। আদ্রিয়ান এক শ্বাসে মা তে সই করে দেয়।

অপারেশন শুরু হলো। মিস্টার হাসানরাও আসছে সবাই। আদ্রিয়ান তাদের জানিয়েছে। সবাই অনেক টেনশন করছে। মুন,রুবা, কাশু নামাজে বসে দোয়া করছে রোদেলার জন্য।

২ঘন্টা পর ডাক্তার রিমি বেরিয়ে আসলো। অপারেশন থিয়েটারের লাইট বন্ধ হতেই আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে গেলো। ডাক্তার রিমি আদ্রিয়ানের কাছে এগিয়ে গেলো আর মিষ্টি হেঁসে বললো,

রিমিঃকংগ্রেচুলেশন মিস্টার আদ্রিয়ান। আল্লাহ আপনার ঘরে এক রাজকন্যা আর রাজপুত্র দিয়েছে। বাচ্চাদের আপাদত অবজারভেশনে রাখা হয়েছে আগামীকাল সকালে আপনাদের কোলে দেওয়া হবে।

কথাটা শুনে সবাই একটু সস্তি পেলো। আদ্রিয়ান রিমিকে জিজ্ঞেশ করলো,

আদ্রিয়ানঃআমার ওয়াইফ?
রিমি মুখটা মলিন করে বললো,
রিমিঃঅনেক বিলিডিং হয়েছে। আর লাস্ট মোমেন্টে মনে হয়েছিলো সে আর পারবেনা কিন্তু মিরাক্কেল করে আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আল্লাহর রহমতে সেও ভালো আছে। তবে জ্ঞান যদি ২৪ ঘন্টার মাঝে না দেরে তবে সে কোমায় চলে যাবে।

কথাটা বলে রিমি চলে গেলো। আদ্রিয়ান ওখানেই দাঁড়িয়ে পরলো।

রোদেলাকে কেবিনে দেওয়া হলো। আদ্রিয়ান বাবুদের দেখেনি এখনো। রোদেলার পাশে বসে আছে আদ্রিয়ান।

আদ্রিয়ানঃআর কত জ্বালাবে আমাকে। দুই বাচ্চার মা হয়ে গেছো তাও আমাকে জ্বালানো বন্ধ করবানা। কোথায় বাচ্চারা আসছে আমরা এখন হ্যাপি ফ্যামিলি হবো তা না উনি ঘুমিয়ে আছেন। উঠো তাড়াতাড়ি আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে অনেক। ভালোবাসিতো রোদেলা। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।

আদ্রিয়ান কথাটা বলে কান্না করে দেয়।

__________________________________________________

আল্লাহর অনেক রহমতে আদ্রিয়ানের ভালোবাসার জোরে রোদেলার জ্ঞান ফিরেছে। আদ্রিয়ান সারা রাত জেগেছিলো। রোদেলার জ্ঞান ফিরেছে দেখে খুশিতে আত্মহারা আদ্রিয়ান। রোদেলা আদ্রিয়ানকে এভাবে দেখে আসতে করে বলে,,
রোদেলাঃআমাদের বাচ্চারা?
আদ্রিয়ানঃআছে আমাদের বাচ্চারা। আমাদের একটা রাজকন্যা আর রাজপুত্র এসেছে।
রোদেলা আদ্রিয়ানের কথা শুনে হাঁসলো।
রোদেলাঃআমি দেখবো বাবুদের।
আদ্রিয়ানঃবাবুরা এখন অন্য কেবিনে আছে। আগে তুমি উঠো কিছু খাও তারপর বাবুদের দেবে।

আদ্রিয়ান একটা নার্সকে ডাকলো। নার্স এসে রোদেলাকে ফ্রেশ করিয়ে খাইয়ে দিলো৷

এরপর নার্স বাবুদের নিয়ে আসলো রোদেলার কাছে। আদ্রিয়ান একটু দুড়ে দাড়িয়ে আছে। নার্স রোদেলার কোলে বাচ্চাদের দিলো। রোদেলা বাচ্চাদের কোলে নিয়ে ওদের কপালে চুমু দিলো। রোদেলার চোখে আজ সুখের পানি। রোদেলা বাচ্চাদের আদর করতে লাগলো। নার্স রুম থেকে চলে গেলো। রোদেলা বাবুদের আদর করে এবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো তারপর ইশারা করে ডাকলো। আদ্রিয়ান রোদেলার কাছে আসতেই রোদেলার বাবুদের আদ্রিয়ানের কোলে দিয়ে বললো,

রোদেলাঃনিন আপনার প্রিন্স আর প্রিন্সেস কে। জানি আপনিও ওদের এখনো দেখেননি।
আদ্রিয়ান বাবুদের দিকে তাকালো। একদম আদ্রিয়ানের কপি দুজনে। আদ্রিয়ান দুজনের কপালে চুমু দিলো।
রোদেলাঃনাম কি হবে ওদের?
আদ্রিয়ানঃ আদ্রিশ খান রৌদ্র, আদ্রিফা খান রৌদ্রশী।
রোদেলাঃবাহ!

বাবুরা এর মাঝে কান্না করে দিলো। আদ্রিয়ান ওদের রোদেলার কোলে দিলো আর রোদেলা ওদের খাওয়াতে লাগলো।

৪দিন পর রিলিস দেওয়া হলো রোদেলাকে।
আদ্রিয়ানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে রোদেলা আর বাবুদের।

আজ প্রায় ১০ মাস পর রোদেলা সেই চেনা বাড়িতে আসলো। তার সংসারে আসলো। আদ্রিয়ান এখন বাবুদের নিয়ে অনেক বিজি থাকে। রোদেলার খেয়াল রাখলেও সেভাবে রোদেলার দিকে ফিরে তাকায় না। অফিস থেকে এসে বাবুদের নিয়ে খেলা করে খেয়ে ঘুমিয়ে পরে। রোদেলা আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলতে চাইলেও আদ্রিয়ান এড়িয়ে যায়।

একদিন সকালে,,,,,

আদ্রিয়ান ঘুম থেকে উঠে দেখে রোদেলা বাসায় নেই। বাবুরা দোলনায় ঘুমাচ্ছে কিন্তু রোদেলা বাসায় নেই। পুরো বাড়ির কোথাও নেই রোদেলা।
আদ্রিয়ান রুমে এসে দেখে টেবিলে একটা চিঠি,,

আদ্রিয়ান চিঠিটা খুলে পরে,,,

প্রিয় আদ্রিয়ান,,
জানিনা আপনি আমাকে প্রিয় ভাবেন কিনা। তবে আপনি আমার অনেক প্রিয়। আপনাকে ছাড়া নিজেকে ভাবতে পারিনা আমি। সেই আপনাকে আমি একটা ভুলের জন্য হারিয়ে ফেলেছি। জানি ভুলটা অনেক বড়। আপনাকে বিশ্বাস করা উচিত ছিলো আমার কিন্তু আমি করিনি। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি প্রতিনিয়ত মরেছি আপনাকে মেরে। যখন নিজের মাঝে রৌদ্র,আদ্রিফার অস্তিত্ব জানলাম সেদিন কত কষ্ট লাগছিলো আপনি কাছে নেই বলে। আজ আপনি ফিরেছেন। কিন্তু সত্যি আমাকে নিজের মন থেকে মুছে দিয়েছেন। দোষ আপনাকে দেবোনা। দোষ আমার ভাগ্যের। আমি চলে যাচ্ছি বাবুদের নিয়ে আপনি ভালো থাকবেন। আর ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবেন সই করে দেবো

ইতি
রোদেলা।

আদ্রিয়ান চিঠিটা পরে বাবুদের নিয়ে চলে গেলো রাফসানদের বাসায়। রাফসান জানায় যে রোদেলা এখানে আসেনি। আদ্রিয়ান বাবুদের ওদের কাছে রেখে রোদেলাকে খুঁজতে গেলো।

আদ্রিয়ান রোদেলাকে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে তার খোঁজ পেলো। রোদেলা একটা এতিম খানায় আছে। আদ্রিয়ান ওখান থেকে রোদেলাকে নিয়ে আসতে গেলে রোদেলা আসতে চায়না। তাই এক প্রকাস উঠিয়ে নিয়ে আসে রোদেলাকে সে।

বর্তমানে আদ্রিয়ান রোদেলা দাঁড়ানো একটা ব্রিজের ওপর। একদম ফাকা ব্রিজ৷ ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বলছে।

আদ্রিয়ানঃ আমাকে ছেড়ে আমার বাবুদের ছেড়ে যাওয়ার সাহস হয় কিভাবে তোর?
আদ্রিয়ানের হুংকারে ভয় পেয়ে যায় রোদেলা। নিজেকে তাও সামলে বলে,

রোদেলাঃআপনার মনের ইচ্ছাটাই তো পূরণ করলাম। আপনি এটাই চেয়েছেন আমি সেটাই করেছি।

আদ্রিয়ান রোদেলার দুই বাহু চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,

আদ্রিয়ানঃকোনটা আমার ইচ্ছে কোনটা আমার ইচ্ছে নয় সেটা কি তুমি বুঝোনা? তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ছাড়া ভালো থাকবো। তোমাকে ভালোবাসি আমি। আমার সব তুমি। হ্যা রাগ আছে আমার তোমার প্রতি। কিন্তু তার মানে এইনা আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো।
রোদেলাঃতবে আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন কেন। আমি স্বিকার করছি আমি অপরাধী কিন্তু আমাকে একটা সুযোগ দিন। আমি কোনোদিন আর এমন করবোনা। আমি মরে যাচ্ছি আদ্রিয়ান আপনার অবহেলায়।
বলেই রোদেলা আদ্রিয়ানের বুকে মুখ গুঁজে কেঁদে দেয়। আদ্রিয়ান জরিয়ে ধরে রোদেলাকে।

আদ্রিয়ানঃ কেঁদে নেও। আজকের পর আর কান্না করবেনা। এখন থেকে আমরা সুখি একটা পরিবার হবো।

__________________________________

দেখতে দেখতে ২বছর চলে গেলো। আরাভ রুবার বিয়ে হয়ে গেছে। মুন রাফসানের একটা ছেলে হয়েছে। কাশু কাউসারেরও বিয়ে হয়ে গেছে। আদ্রিতাও বিয়ে হয়ে গেছে আহানের সাথে। রাতকে আদ্রিয়ান বিয়ে দিয়েছে সায়মনের সাথে। রাত ও এখন রোদেলাদের সাথে থাকে।

রোদেলা সেই কখন থেকে তার দুই বিচ্ছুবাহীনিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তারা খাচ্ছেনা। রোদেলা ওদের নিয়ে চলে আসে এলেক্স রেইনের কাছে। রৌদ্র,রৌদ্রশী এলেক্স রেইনের সাথে খেলছে আর রোদেলা ওদের খাওয়াচ্ছে।

এলেক্স রেইনকে রৌদ্র রৌদ্রশী একটুও ভয় পায়না। এলেক্স রেইনের সাথে কত মজা করে খেলে ওদের ঘাড়ে পিঠে উঠে বসে থাকে। আর এলেক্স রেইন ও কিছু বলেনা ওরাও যেনো এটাতে অনেক মজা পায়। আদ্রিয়ানের মতো ওর ছেলে মেয়েও এদের ভয় পায়না। আদ্রিয়ান ওদের নিয়ে এলেক্স রেইনের কাছে এসে কত বসে থেকেছে তাইতো ভয় পায়না ওরা। রোদেলাও অবশ্য ভয় পায়না এখন আর।

মিস্টার হাসানদের সাথে আদ্রিয়ানের সম্পর্ক এখনো অনেক ভালো। আদ্রিয়ান যাওয়া আশা করে তাদের বাসায়। তারাও আসে নাতী নাতনিদের দেখতে। নীলাদ্র নন্দিনীর একটা মেয়ে হয়েছে। রুহি চলে গেছে বাহিরে দেশের। সব মিলিয়ে অনেক সুখি আছে আদ্রিয়ানরা।

রাতে,,,,,
আদ্রিয়ান বাসায় আসার পর বাচ্চারা ঘিরে ধরলো ওকে। আদ্রিয়ান বাচ্চাদের সাথে খেলে ওদের খাওয়ালো। তারপর ওদের সাথে করে নিয়ে এলেক্স,রেইন,টাইগার, টুইংকেলকে খাবার দিয়ে আসলো। তারপর বাচ্চাদের ঘুম পারালো আদ্রিয়ান। রোদেলা রুমে আসলে আদ্রিয়ান ওকে জরিয়ে ধরে।

আদ্রিয়ানঃসো।
রোদেলাঃকি সো?
আদ্রিয়ানঃতুমিতো দেখি আরো সুন্দর হয়ে গেছো আগের থেকেও[শয়তানি হাসি দিয়ে]
রোদেলাঃতাই নাকি ভালোতো।
আদ্রিয়ানঃহ্যা। চলো বাবুদের জন্য আরেকটা ভাই / বোন নিয়ে আসি।
রোদেলাঃ নায়ায়ায়ায়া। আর না। এদের জ্বালায় আমি শেষ। আর না মাফ চাই।
আদ্রিয়ানঃকিন্তু আমার চাই আমি ক্রিকেট টিম বানাতে চাই।

আদ্রিয়ান রোদেলাকে আর কিছু বলার সময় দিলোনা। ডুব দিলো রোদেলার মাঝে। রোদেলাও ডুব দিলো তার আদ্রিয়ানের মাঝে।

ভালোবাসার আসক্তি থেকে কেউ কি আসক্ত না হয়ে পারে। আদ্রিয়ানের প্রেমময় আসক্তি যে তার রোদেলাময়। তার নেশা রোদেলা।

“মানুষের জীবনের ভয়ংকর আসক্তি প্রেমের আসক্তি”
“মাদকের নেশার থেকেও ভয়াবহ এটা”

তাইতাও আদ্রিয়ানের রোদেলাই তার এক মাত্র…..

❣️প্রেমময় আসক্তি❣️

#সমাপ্তি
অবশেষে শেষ হলো। দীর্ঘ ১টা সময় ছিলো এটার সাথে। অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন সবাই তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। ভালোবাসা সবার প্রতি।

প্রেমময় আসক্তি সিজন-০১ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে