প্রেমময় আসক্তি ২ পর্ব-০৭

0
1245

#প্রেমময়_আসক্তি_২
#পর্ব_৭
#নন্দিনী_চৌধুরী

৭.
নীলাদ্র রোদেলার ডাকে পিছনে ঘুরলো তারপর রোদেলাকে বললো,

নীলাদ্র: জ্বী বলেন।
রোদেলা: আচ্ছা আপনি কি RJ Niladro?
নীলাদ্র: জ্বী কিন্তু আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?
রোদেলা: আমি আপনার সো শুনি। একটা কুইজে আমি বিজয়ি হইছিলাম।
নীলাদ্র: অহ আপনি মিস রোদেলা?
রোদেলা: জ্বী। আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতাম।
নীলাদ্র: হ্যাঁ বলুন।
রোদেলা: আপনার সাথে সো তে আরেকজন থাকে সে কি উনি যে আমাকে বাঁচালো?
নীলাদ্র: হ্যাঁ, উনি আমার বড় ভাই আরিয়ান। আমার চাচাতো ভাই সে।
রোদেলা: ওহ আচ্ছা ঠিক আছে।

নীলাদ্র তারপর চলে আসে রোদেলাদের থেকে। রাফসান রোদেলাকে বকা দেয় একা একা পাহাড়ের কাছে যাওয়ার জন্য। রাফসান রাতকে বলে দিয়েছে রোদেলাকে আর একা না ছাড়তে। বাকিটা সময় রোদেলার সাথে ছিলো রাত। পাহাড় দেখে বাহিরে থেকে খেয়ে রাফসানরা বাসায় আসে। রোদেলা অনেক ক্লান্ত থাকায় ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে যায়।

আরিয়ানরা হোটেলে ফিরে আসে। আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে খাটে বসে। আরিয়ান মনে মনে ভাবতে লাগে,,,

“যখন কেউ কারো জন্য কাঁদে,, সেটা হলো আবেগ”
“যখন কেউ কাউকে কাঁদায় সেটা হলো প্রতারণা”
“আর যখন কেউ কাউকে কাঁদিয়ে নিজেও কেঁদে ফেলে,,
“সেটাই হলো প্রকৃত ভালোবাসা”
[হুমায়ুন আহমেদ স্যার🥀]

আমিও তো তোমাকে কাঁদিয়ে কেঁদে ফেলি। আমিতো পারিনা তোমার থেকে দূরে থাকতে। কিন্ত তোমার জন্য আজ আমি তোমার থেকে দূরে।

“যার রাগ বেশি সে নীরবে অনেক ভালোবাসতে জানে ”
“যে নীরবে ভালোবাসতে জানে তার ভালোবাসার গভীরতাও বেশি”
“আর যার ভালোবাসার গভীরতা বেশি তার কষ্টটাও বোধহয় অনেক বেশি”
[হুমায়ুন আহমেদ স্যার]

আমার রাগ বেশি ছিলো কিন্তু ভালোবাসাটাতো কম ছিলোনা। কিন্তু তুমি আমাকে বিশ্বাস করলোনা। কেন এমন করলা আমার সাথে?

“ভালোবেসে তাকে যদি বিশ্বাস না করতে পারো, তবে তাকে ভালোবেসোনা। জানোতো মেরুদন্ড ছাড়া মানুষ চলতে পারেনা, বিশ্বাস ছাড়াও ভালোবাসা টিকতে পারেনা।”
[নন্দিনী]

আরিয়ান কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে।

~এদিকে~

রুহি নিজের রুমে বসে ভাবছে,,

রুহি: আজকে আরিয়ান ওই মেয়েটাকে বাঁচানোর পর থেকে ওই মেয়েটাকেই শুধু দেখে যাচ্ছিলো। ইভেন মেয়েটা পরতে নিলে আরিয়ান ধরে ফেলে। ওর চোখে আমি ভয় দেখতে পাচ্ছিলাম ওই মেয়েটার জন্য। আরিয়ান মেয়েটাকে নিয়ে এতো পজিসিব কেন হচ্ছিলো তাহলে কি আরিয়ান! না না কি ভাবছি আমি এসব। অই মেয়েটা বিবাহিত প্রেগন্যান্ট। আরিয়ান এসব ছিহ ছিহ। না আমাকে জানতে হবে আরিয়ান কাকে ভালোবাসে। আমার আরিয়ানকে আমি কাউকে দেবোনা।

রুহি গিয়ে নন্দিনীর পাশে শুয়ে পরে।

সকালে,,
রোদেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় আসে। বারান্দায় চেয়ারে বসে সকালে বাতাস নিচ্ছে। যেহতু শীত পরেছে এখন তাই হালকা কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। রোদেলা শরীরে একটা চাদর জরিয়ে নিয়েছে। এই সময় ঠান্ডা লাগলে বেবিদের সমস্যা হবে। রোদেলা বাহিরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো তখন ওর নজর গেলো জগিং স্যুট পরা আরিয়ানের দিকে। আরিয়ান জগিং করার সময় মাস্ক পরে এসেছে এটা দেখে রোদেলা আরো অবাক হয়েছে।

রোদেলা: জগিং করতে এসেও মাস্ক পরে কেউ জানতাম না। কি আজব লোকরে বাবা।

রোদেলা আরিয়ানকে খুব ভালো করে অভজার্ব করলো। আরিয়ান জগিং শেষ করে হোটেলের দিকে চলে গেলো। আর রোদেলাও উঠে রুমে চলে আসলো।

মুন উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানালো সাথে রুবাও হেল্প করলো। রাত এসে রোদেলার খাবার নিয়ে গিয়ে ওকে খাওয়ালো তারপর বাকিরাও খেয়ে নিলো। রুবা আজ অনেকদিন পর ফেসবুকে এসেছে। ফেসবুকে এসেই দেখে আরাভ মেরিড স্টেটাস দিয়েছে কিন্তু কার সাথে সেটা দেয়নি। রুবা এটা দেখে হাত থেকে ফোনটা পরে যায়। শরীরটা কেমন কাঁপছে ওর। রুবা ধপ করে বিছানায় বসে পরে। অবশেষে আরাভ সারাজীবনের মতো হারিয়ে গেলো ওর জীবন থেকে। রুবা শব্দ করে কান্না করে দিলো। আজ ওর বাবার কথা রাখতে গিয়ে ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেললো। রুবার বাবা রুবার বাবাকে নিজের কসম দিছে তার পছন্দে বিয়ে না করলে রুবা তার মরা মুখ দেখবে। রুবা তাই আরাভের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলো। আর আজতো হারিয়ে ফেললো আরাভকে একেবারের জন্য।

“ভালোবেসে তাকে পেতেই হবে এটাই কথা নয়। নাহয় মানুষটা হলোনা আমার! নাহয় সে বাস্তবে অন্য কারো! কিন্তু কল্পনায় সে শুধুই একান্ত আমার।”
[নন্দিনী]

রুবা নিজেকে শান্ত করে বাহিরে আসে। যা হয়েছে তা কাউকে জানানো যাবেনা।

____________________________

আশরাফের আরেক কালো টাকার গোডাউন পুরে ছাই হয়ে গেছে। আশরাফের এবার মাথায় হাত দেওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। আশরাফ মাথায় হাত দিয়েই বসে আছে তখন ওর এক লোক আসে ওর কাছে।

লোক: বস!
আশরাফ: কি?
লোক: বস ওই আদ্রিয়ানের মতো দেখতে লোকটার খবর পাইছি।
আশরাফ: কি খবর পাইলি বল।
লোক: বস লোকটার নাম আরিয়ান খান। হাসান খানের ছেলে। এতোদিন অস্ট্রেলিয়া ছিলো এখন বাংলাদেশে আসছে। পেশায় একজন গায়ক। দেখতে আদ্রিয়ানের মতো কিন্তু আমার মনে হয়না এটা আদ্রিয়ান।
আশরাফ: তুই আদ্রিয়ানকে চিনস না। আমার থেকে ভালো। এটা আরিয়ান না আদ্রিয়ান তা জানার উপায় আছে আমার কাছে।
লোক: কি?
আশরাফ: রোদেলা! রোদেলা শুনছি প্রেগন্যান্ট। আদ্রিয়ানের জান রোদেলা আর এখন তো বাচ্চাও আছে। কোনো বাপ নিশ্চই তার সন্তানকে মরতে দেবেনা আর কোনো স্বামীও স্ত্রীকে মরতে দেবেনা। খোজ লাগা রোদেলারা কোথায় আছে।
লোক: আচ্ছা বস।

লোকটা যাওয়ার পর আশরাফ একটা বিশ্রি হাসি দেয়।যদি তুই আদ্রিয়ান হয়ে থাকিস তবে আমার হাতে তুই আবার মরবি।

~এদিকে~

আরিয়ান নতুন গানের সিডি নিয়ে কাজ করছে আর নীলাদ্র বসে বসে বাদাম খাচ্ছে। দূরে নন্দিনী আর রুহি বসে আড্ডা দিচ্ছে।

নীলাদ্র: ব্রো আমি একটা জিনিশ ভাবতেছি?
আরিয়ান: কি?
নীলাদ্র: ভাবছি গতকাল অই রোদেলা মেয়েটা তোমাকে চিনলো কিভাবে?
আরিয়ান: কিভাবে মানে সো দেখে তাই শুনছে।
নীলাদ্র: ব্রো আমাদের সো দেখা না শুনা যায়। সে তো জাস্ট তোমার কন্ঠ শুনেছে দেখেনি। মাস্ক পরা অবস্থায় তোমাকে চিনে ফেললো।
আরিয়ান: ছাগল তোকেও তো চিনছে,, তো তোকে কি দেখছে নাকি!
নীলাদ্র: 🌚

___________________

আজকার হাসপাতাল টু বাড়ি এই নিয়েই কাটছে জীবন আরাভের। সবাইকে ইগনোর করে নিজের মতো থাকছে সে। যাকে ভালোবাসলো সেও ধোঁকা দিলো ওকে।

এক নিমিষে ভেংগে দিলো ওর ভালোবাসা। আরাভ বাসায় এসে কলিং বেল চাপ দিলে এক রমনী দরজা খুলে। আরাভ তাকে দেখে মিষ্টি হাঁসে।

জুঁই: এতো লেট করলা ভাইয়া?
আরাভ: রোগী ছিলো অনেক।
জুঁই: ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।
আরাভ:আচ্ছা।
জুঁই: ওহ হ্যাঁ দিপা আপু কল দিছিলো। তোমাকে দেখা করতে বলছে।
আরাভ: আচ্ছা ঠিক আছে।

আরাভ নিজের রুমে চলে আসে ফ্রেশ হতে।
ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দিপাকে কল দেয় আরাভ। কথা বলে তারপর একটু ঘুমাতে যায়।

~অন্যদিকে~

রোদেলা পেটে হঠাৎ করে বেথা হচ্ছে। রোদেলা বিছানার চাদর খামছে ধরে চিৎকার দিলো। ড্রইং রুমে বসে থাকা সবাই দৌড়ে ওর রুমে আসলো। রোদেলা চিৎকার করে কান্না করছে।

মুন: কি হলো রোদেলা?
রোদেলা: আমার পেটে কেন জানি ব্যাথা করছে অনেক।
আদৃতা: কি বলো ৬মাসে তো পেইন হবার কথা না।
রাত: আরে আপনারা আগে মেডামকে হাসপাতালে নিয়া চলেন।

রাতের কথা শুনে আদনান রোদেলাকে কোলে নেয় মুন, রুবা, আদৃতা একটা গাড়ি মিল করে তারপর রোদেলাকে নিয়ে হাসপাতালের জন্য বের হয়। মুন গাড়িতে বসেই রাফসানকে কল দিয়ে জানিয়েছে। রাফসান জানিয়েছে ও আসছে।

রোদেলাকে নিয়ে হাসপাতালে আসলো সবাই। ডাক্তার রোদেলাকে চেকাপ করার জন্য ভিতরে নিয়ে গেলো। বেশ অনেকটা সময় পর ডাক্তার আসলো।

ডাক্তার: বাচ্চাগুলো একটু নরে গেছে পজিসন থেকে। আমার মনে হয় ওনার চলাফেরায় ভুল আছে ওনাকে সোজা ঘুমাতে বলবেন বসতেও বলবেন সোজা। তাহলে ঠিক আগের পজিসনে বাচ্চা গুলো আসবে। বাচ্চা পজিসন থেকে নড়ে গেছে তাই কিক করায় ব্যাথা বেশি লাগে। ওনাকে ভিটামিন গুলো খাওয়াবেন সময় মতো আর টেনশন ফ্রি রাখবেন। তাহলে সব ঠিক থাকবে।
মুন: আচ্ছা ডাক্তার
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর রোদেলার কাছে গেলো সবাই। রোদেলাকে সেলাইন দিছে শরীল দুর্বল ওর তাই। মুন রাফসানকে কল দিয়ে জানায় আসতে হবেনা বেশি সিরিয়াস কিছুনা।

রাতের দিকে রোদেলাকে নিয়ে বাসায় চলে আসে সবাই। রোদেলাকে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দেয় রাত। তারপর ফোন নিয়ে বারান্দায় যায় আর ডায়াল করে একজনকে।

#চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে