প্রেমময় আসক্তি ২ পর্ব-০৬

0
1188

#প্রেমময়_আসক্তি_২
#পর্ব_৬
#নন্দিনী_চৌধুরী

৬.
রোদেলা বারান্দায় বসে আছে মুন কিছুক্ষন আগে এসে ওকে খাবার খাইয়ে দিয়ে গেছে। রোদেলার শরীলের গ্রোথ আগের থেকে একটু ভালো হইছে। রোদেলা বারান্দায় বসে আকাশ দেখছে আকাশে কিছু সময় পর পর বাজী ফাঁটছে রোদেলা সেগুলা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। অনেকটা সময় পর রোদেলা রুমে এসে শুয়ে পরলো। আজকাল অল্পতেই ক্লান্ত লাগে ওর।

রাত ১০টায় আদৃতারা বাসায় আসে। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। বাহির থেকে ওরা খেয়ে আসছে আর খাবার নিয়ে আসছে। রাফসান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে ওদের সাথে রুমে বসে কথা বলছে।

রাফসান: তারপর কেমন মজা করলে আজকে?
রুবা: আর বলোনা যেই গায়কের আজকের সো ছিলো সে আসেনাই তার জায়গায় আরেকজন এসেছে। আজকে আরিয়ানের সো ছিলো কিন্তু পার্সোনাল সমস্যার কারনে সে আসেনাই। তবে ভালো লেগেছে আজকে অনেক। ঘুরেছি অনেক।
মুন: তোদের সাথে রোদেলাকে নিয়ে গেলে ভালো হতো। মেয়েটা সারাদিন ঘরে একা বসে থাকে।
রাফসান: ভাবছি কাল রোদকে নিয়ে পাহাড় দেখতে নিয়ে যাবো। সবাই যাবো আমরা। একটু ঘুরলে ওর ভালো লাগবে।
রুবা: কিন্তু পাহাড়ে নেওয়া ঠিক হবে? না মানে আমি কেন বললাম এটা বুঝতেই পারছো!
রাফসান: হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি। কিছু হবেনা এতে।
মুন: আচ্ছা।

এরপর সবাই সবার রুমে ঘুমাতে চলে গেলো। রোদেলা ঘুমিয়ে আছে রাত আরেক পাশে ঘুমানো। রোদেলা আজকেও অনুভব করছে ওর পেটে কেউ মুখ গুঁজে আছে। রোদেলা চোখ খুলে দেখে আদ্রিয়ান। রোদেলা আদ্রিয়ানকে দেখে আজকেও অবাক হয়। রোদেলা উঠে বসতেই আদ্রিয়ান রোদেলার কপালে চুমু দিয়ে বলে,

আদ্রিয়ান: আমার বউটা আর আমার বাচ্চারা কেমন আছে?
রোদেলা: ভালো নেই। আপনাকে ছাড়া ভালো নেই আমরা।
আদ্রিয়ান: ভালো যখন থাকতে পারবেনা আমাকে ছাড়া তবে কেন মারলে আমাকে।
রোদেলা:………..।
আদ্রিয়ান রোদেলার পেটে অনেক গুলো চুমু দিয়ে পেটে কান পেতে রাখে। বাচ্চাদের অনুভব করছে সে। তার বাচ্চারা তাকে জানান দিচ্ছে বাবা আমরা ভালো আছি। আদ্রিয়ান উঠে রোদেলার সামনে বসে ওর গালে হাত রেখে বলে,

আদ্রিয়ান: কেন করলা এমন রোদেলা? একবার মনে হয় নাই আমাকে ছাড়া তুমি অচল! আমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবা তুমি? আমাকে মেরে দেখো আজ তুমি কি ভালো আছো? নেইতো ভালো। আজ দেখো আমার বাচ্চারাও তার বাবার ভালোবাসা পাচ্ছেনা। এটা কি অন্যায় করলেনা তুমি তাদের সাথে? কেন করলে এমন?
রোদেলা এবার মুখ খুললো,

রোদেলা: আপনি আমার বাবা-মাকে মেরেছেন। আমাকে ঠকিয়েছেন। তাই আমি আপনাকে শাস্তি দিয়েছি। লিজার পেটেও তো আপনার সন্তান ছিলো। তাকে আপনি ঠকিয়েছেন।
আদ্রিয়ান রোদেলাত পেটে হাত রেখে বলে,
আদ্রিয়ান: আমার বাচ্চাদের কসম করে বলছি লিজার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিলোনা। তাকে শুধুই আমি আমার বন্ধু মনে করতাম। সিডনিতে তার সাথে আমার পরিচয়। ওর সংসারের অনেক খরচ আমি বহন করেছি। ওর দিকে আমি কোনোদিন কোনো খারাপ নজরে তাকাইনি। আমি শুরু থেকেই শুধু আর শুধু তোমাকে ভালোবেসেছি। তুমিই সেই নারী যাকে আমি ছুঁয়েছি। আর তুমিই সেই নারী যার গর্ভে এখন আমার সন্তান আছে। লিজার সাথে আমার যখন কোনো রিলেশন হয়নি সেখানে ওর পেটের বাচ্চা আমার কিভাবে হবে?
রোদেলা: ঠিক আছে মানলাম লিজা মিথ্যা বলছে। কিন্তু আমার বাবা-মা তারা কি ক্ষতি করেছিলো আপনার? তাদের কেন মারলেন আপনি? কেন আমাকে এতিম করে দিলেন বলেন কেন?
আদ্রিয়ান: তুমি কিভাবে বিশ্বাস করলে যে আমিই তাদের মেরেছি?
রোদেলা: আমার কাছে প্রমান এসেছিলো। সেখানে দেখাই যাচ্ছিলো আপনি ওদের মেরেছেন।
আদ্রিয়ান: তোমার কাছে কি প্রমান আছে? এখনো সেগুলো আছে?
রোদেলা: হ্যাঁ, আমার পার্সের ব্যাগে ভিডিও রেকোর্ডারটা আছে।
আদ্রিয়ান: আমাকে দেওতো।
রোদেলা উঠে গিয়ে পার্স থেকে রেকোর্ডারটা এনে দিলো।
আদ্রিয়ান: খুব তাড়াতাড়ি আসলে সত্যি তুমি জানবে। সেদিন তুমি হাজার চাইলেও আমাকে পাবেনা রোদেলা।

রোদেলা আবার কিছু বলবে কিন্তু সেদিনের মতো আবার সব ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে গেলো। আর রোদেলা আবার সেদিনের মতো জ্ঞান হারালো।

~পরেরদিন সকালে~

রোদেলা আজকেও সকাল উঠে রাতকে আদ্রিয়ানের আসার কথা বলছে। কিন্তু রাত আজকেও তা হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু রোদেলা এটা এড়িয়ে যেতে পারছেনা। সে তার ব্যাগ চেক করে দেখে যে আসলেই কাল রাতে সে আদ্রিয়ানকে ভিডিও ক্লিপ দিয়েছে। মানে সত্যি আদ্রিয়ান এসেছিলো। কিন্তু এটা রাত বিশ্বাস করছেনা। রোদেলা বুঝতে পারছেনা আদ্রিয়ান শুধু তার সামনে কেন আসে। আর আদ্রিয়ান আসলে রাতকে হাজার ডাকলেও সে ঘুম থেকে উঠেনা। রোদেলাকে রাত নাস্তা করিয়ে মুনের কাছে যায়।

_____________________________

আরিয়ান, নীলাদ্র, নন্দিনী, রুহি মিলে নাস্তা করছে। আজকাল রুহি আর আরিয়ানের দিকে তেমন তাকায়না তাকালেই সেদিনের অপমানের কথা মনে পরে যায়। রুহি মাথা নিচু করে নাস্তা করছে তখন নন্দিনী বলে,

নন্দিনী: আচ্ছা শুনো। চলোনা আজকে পাহাড় দেখতে যাই। এখানে আসলাম কিন্তু এখনো পাহাড় দেখা হলোনা।
আরিয়ান: হুম যেতে চাইলেও যাওয়া যেতে পারে।
নীলাদ্র: তাহলে চলো আজকে যাই।
নন্দিনী: হ্যাঁ আজকে যাই চলো।
আরিয়ান: আচ্ছা ঠিক আছে।

আরিয়ান নাস্তা করে উঠে চলে আসে। বাকিরাও নাস্তা করে যার যার মতো চলে যায়।

~এদিকে~

রাফসান রোদেলার রুমে এসে দেখে রোদেলা বসে আছে। রাফসান এসে রোদেলার মাথায় হাত রাখে। মাথায় কারো হাত টের পেয়ে রোদেলা তাকিয়ে দেখে রাফসান। রোদেলা মুচকি হাসে ভাইকে দেখে। রাফসান রোদেলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

রাফসান: বিকালে রেডি থাকিস আজকে সবাই মিলে পাহাড় দেখতে যাবো। আর শোন কোনো বাহানা চলবেনা ওকে। তুই যাবি মানে যাবি।
রোদেলা: 😒আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলেই না বাহানা করমু।
রাফসান: এই জন্যতো সুযোগ দিলাম না, যাতে তুই বাহানা করতে না পারিস।
রোদেলা:😒

রাফসান রোদেলার সাথে আরো কিছুটা সময় কথা বলে চলে আসে।

___________________________

দীর্ঘসময় লিজাকে খুবলে খেয়ে আশরাফ এখন শুয়ে আছে। পাশে লিজা গায়ে চাদর টেনে বসে আছে। আশরাফকে তার অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছে তাই আশরাফকে জিজ্ঞেশ করে,

লিজা: কি হয়েছে তোমার? তোমাকে এতো চিন্তিত লাগছে কেন?
আশরাফ: লাখ টাকার ক্ষতি হয়েগেছে আমার। তার উপর ওই আদ্রিয়ানের মতো দেখতে ছেলেটার এখনো কোনো পেলাম না।
তো চিন্তা হবেনাতো কি হবে।
লিজা: আচ্ছা তুমি অহেতুক চিন্তা করছো কেন ওই ছেলে যে আদ্রিয়ান হবে এমন কোনো মানে নেই। দুনিয়ায় অনেক মানুষ আছে যাদের দেখতে একই রকম লাগে কিন্তু আসলে তারা এক নয়।
আশরাফ: হুম বুঝলাম।

লিজা উঠে শাওয়ার নিতে যায় আর আশরাফ আবার চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়।

~এদিকে~

বিকালে আরিয়ানরা বের হলো পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। এদিক দিয়ে রাফসানরাও বেরোলো পাহাড়ের জন্য। আরিয়ান মাস্ক আর হুডিওয়ালা জ্যাকেট পরেছে। যাতে আসে পাশের কেউ তাকে চিনতে না পারে।

আরিয়ানরা পাহাড়ে আসে নীলাদ্র নন্দিনী ও রুহিকে ছবি তুলে দিচ্ছে। রাফসানরাও আসছে এখানে। রোদেলা একটা মিষ্টি কালারের গোল জামা পরেছে সাথে কালো হিজাব। দেখতে ভালোই লাগছে ওকে। রোদেলা পাহাড়ের আসে পাসের জায়গাটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। হঠাৎ অসাবধানতায় পিছলে পরে যেতে নিলে কেউ ওকে খুব শক্ত করে টেনে জরিয়ে ধরে। রোদেলা আচমকা এমন হয়ায় খুব ভয় পেয়ে যায়। আসতে করে রোদেলা চোখ খুলে দেখে একজন মাস্ক পরা লোক ওকে বাঁচিয়েছে। আরিয়ান কণ্ঠ শক্ত করে বলে,

আরিয়ান: Are You Crazy! আর একটু হলেই আপনি সোজা নিচে পরে যেতেন। এই অবস্থায় পাহাড়ের এতো কাছে আসার কি দরকার আজব! সাবধানে চলা ফেরা করতে পারেন না?
রোদেলা আরিয়ানের বকার থেকে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই চোখ যে ওর খুব চেনা। রোদেলা আরিয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আসতে করে বলে,

রোদেলা: জ্বী ধন্যবাদ আমাকে বাঁচানোর জন্য। আসলে বুঝতে পারিনি যে এমন হবে।

ওদের কথার মাঝে নীলাদ্র আসলো সেখানে। নীলাদ্র এসে আরিয়ানকে বলে,
নীলাদ্র: হেই কি হয়েছে এখানে?
আরিয়ান: কিছুনা নীলাদ্র। এই মেয়েটা আর একটু হলেই অসাবধানতায় পরে যেতো নিচে আমি বাঁচিয়েছি।
নীলাদ্র: ওহ আচ্ছা। তা আপু আপনি কি একা আসছেন?
রোদেলা: না ওইযে আমার ভাইয়া আর বাকিরা।
নীলাদ্র: তাহলে চলেন তাদের কাছে আপনাকে দিয়ে আসি।

নীলাদ্র রোদেলাকে নিয়ে রাফসানদের কাছে দিয়ে আসে আর বলে আসে ওকে সাবধানে রাখতে একটু আগের ঘটনাও বলে ওদের। রাফসান দুঃখিত জানায় আর বলে এখন আর রোদেলাকে একা ছাড়বেনা।

নীলাদ্র চলে আসতে নিলে রোদেলা পিছন থেকে ওকে ডাক দেয়,,,,

“এইযে শুনেন ভাইয়া।”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে