প্রেমময় আসক্তি ২ পর্ব-০৫

0
1154

#প্রেমময়_আসক্তি_২
#পর্ব_৫
#নন্দিনী_চৌধুরী

৫.

সবার প্লানিং মতো আরিয়ানরা আজকে বান্দরবন যাচ্ছে। ওখানে ওরা প্রায় অনেক দিন থাকবে। আরিয়ান, নীলাদ্র, নন্দিনী, রুহি যাচ্ছে। রুহি, নন্দিনীতো খুব এক্সসাইটেড যাওয়ার জন্য। সকাল ৮ টায় ওরা বেড়িয়ে পরলো। আরিয়ানরা এখান থেকে গিয়ে একটা হোটেলে উঠবে। নিলাদ্রের ফ্রেন্ডের হোটেল ওটা। আগে থেকেই ওরা কল করে জানিয়ে রেখেছে ওদের ৩টা রুম লাগবে। একটায় আরিয়ান একা থাকবে। আর একটায় নীলাদ্র থাকবে। রুহি আর নন্দিনী এক সাথেই থাকবে বলছে। তাই আর ওদের জন্য আলাদা রুম নেয়নি।

অনেকটা পথ অনেকটা ঘন্টা জার্নি করে আরিয়ানরা চলে আসে বান্দরবন। পাহাড়ের উপরে ওদের হোটেল। হেঁটে হেঁটে ওরা উঠলো পাহাড়ে। হোটেলে গিয়ে নিজেদের রুমের চাবি নিয়ে যে যার যার মতো রুমে চলে গেলো। আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে রুমের জানালায় এসে দাঁড়ালো।

আরিয়ান: খুব ভয়ংকর কিছু অতীত জরিয়ে আছে এখানে। খুব শীঘ্রই ইতি টানবো তার।

আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে বাকিরা আসার পর ওরা চারজন ক্যান্টিনে যায় খাওয়ার জন্য।

~এদিকে~

রাফসানরাও আগামীকাল বান্দরবন যাচ্ছে। সাথে যাচ্ছে মুন, রোদেলা, রাত, রুবা। কাশু এখনো ওর বাসা থেকে আসেনি। পরিক্ষার আগে আর আসবেনা জানিয়েছে। রুবা আজকাল খুব বিষন্ন থাকে। আরাভের কথা খুব মনে পরে ওর। সত্যি আরাভ সেদিনের পর আসেনি রুবার সামনে। রুবাও চেয়েও পারছিলোনা আরাভের কাছে যেতে। রুবার বাবা রুবাকে বাসায় আসতে বলেছে। সে রুবার বিয়ে দিতে চাচ্ছে তাড়াতাড়ি। রুবা বাবাকে জানিয়েছে বান্দরবন থেকে এসে বাসায় যাবে। রোদেলা আদৃতাকেও ডেকেছে বান্দরবন যাওয়ার জন্য। আদ্রিয়ান নেইতো কি তাই বলে সে আদৃতাকে দূরে ঠেলে দিতে পারেনা। আদৃতা প্রথমে রাজী না হলেও রোদেলা রাজী করায়। আদৃতার সাথে আদনানও যাবে। আদৃতা সব প্যাকিং করে এই বাসায় এসেছে। এখান থেকেই সবাই এক সাথে যাবে।

_________________________

আশরাফ বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে। মাত্রই লিজার সাথে ঘনিষ্ট হয়ে উঠলো। লিজা চাদর গায়ে জরিয়ে শুয়ে আছে। আশরাফুলের ফোনে কল আসলো। আশরাফুল কল রিসিভ করতেই ওর লোকেরা ওকে জানায় ওর ঢাকার গোডাউনের সব মাল আগুনে পুড়ে গেছে। ওগুলা সব ওর চোরা মাল। প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েগেছে ওর। কথাটা শুনে আশরাফের মাথায় বাজ ভেঙে পরলো। আশরাফ বুঝতে পারছেনা ও কি করবে। আশারাফ তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে পরলো গোডাউনের উদ্দেশ্যে।

~অন্যদিকে~

আরিয়ান বসে আছে রুমে তখন ওর ফোনে ফোন আসলো। আরিয়ান কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একজন বলে,

অচেনা: স্যার কাজ হয়ে গেছে।
আরিয়ান: গুড। কোনো কিছু বাঁচেনি তো?
অচেনা: না স্যার। একদম সব শেষ।
আরিয়ান: ওকে। আর হ্যাঁ, সাবধানে থেকো তোমরা।

আরিয়ান কল কেঁটে বাঁকা হাসলো।

“তোমার সব শেষ করে তোমাকে পথের ফকির বানাবো। তারপর নিজের হাতে মারবো।”

আরিয়ান আবার একজনকে কল দিলো।

আরিয়ান: হ্যাঁ, সব ঠিক আছে? ওর খেয়াল রাখছো ঠিক করে?
…………………………..
আরিয়ান: আচ্ছা। আর ওকে বেশি টেনশন নিতে দিওনা। বাচ্চার ক্ষতি হবে এতে। ডাক্তার আমাকে জানিয়েছে ও অনেক দূর্বল। তাই পেশার যেনো না নেয়।
………………………..
আরিয়ান: আচ্ছা তাহলে তো ভালোই হলো। বান্দরবন যেহুতু আসছে তাহলে এখন আমিই রাখবো খেয়াল। আচ্ছা রাখো তাহলে।

আরিয়ান ফোন রেখে বাহিরে চলে আসে।

সন্ধ্যায়~

রুহি একটা শাড়ি পরেছে কালো কালারের। কিন্তু শাড়িটা পাতলা সিল্কের বলে পেট দেখা যাচ্ছে অনেকটা। রুহি বেশ সেজেগুজে আরিয়ানের রুমে আসে। আরিয়ান ল্যাপ্টপে কাজ করছিলো। রুহি রুমে নক না করেই চলে আসে। দেখে আরিয়ান ল্যাপ্টপে কাজ করছে। রুহি গিয়ে ওর কাছে ঘেষে দাঁড়ালো। আরিয়ানের পাশে তাকিয়ে দেখে রুহি দাঁড়ানো। রুহিকে দেখে আরিয়ান আবার কাজে মন দিলো। রুহি এবার বিরক্ত হচ্ছে। একটা সুন্দরী মেয়ে ওকে আকর্ষন করার চেষ্টা করছে কোথায় ও মেয়েটাকে কাছে টেনে নেবে তা না কি করছে! রুহি বিরক্ত হয়ে আরিয়ানের হাত থেকে ল্যাপ্টপটা ছোঁ মেরে নিয়ে নেয়। আরিয়ান রেগে বলে,

আরিয়ান: রুহি কি করছো? পাগল হয়ে গেছো নাকি?
রুহি: হ্যাঁ, পাগল হয়ে গেছি। তুমি আমাকে পাগল করে দিয়েছো। আমি তোমাকে কত করে বোঝানোর চেষ্টা করি আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তুমিতো আমাকে পাত্তা দেওনা। কেন আমাকে পাত্তা দেওনা তুমি। আমি কি দেখতে খারাপ! আমার মধ্যে কি নেই যে তুমি আমাকে ইগনোর করো?
আরিয়ান: দেখো রুহি, ফালতু কথা বলা বন্ধ করো। তোমাকে আমি নিজের বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবিনা।
রুহি: কেনো? কেনো আমাকে অন্য কিছু ভাবতে পারবেনা? তুমি কি অন্য কাউকে ভালোবাসো আরিয়ান?
আরিয়ান একটু চুপ করে বললো,
আরিয়ান: হ্যাঁ।
রুহি: কিহ! কে সে?
আরিয়ান:সময় হলেই জানতে পারবে। কিন্তু নেক্সট কোনোদিন আর এমন করলে তোমার সাথে আমার বন্ধুত্বটাও থাকবেনা।

বলেই আরিয়ান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আরিয়ানের কথা শুনে থমকে গেছে রুহি। আরিয়ান অন্য কাউকে ভালোবাসে। অন্য কেউ আরিয়ানের ভালোবাসা!

রুহি যেনো কথা বলতেও ভুলে গেছে। রুহি কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে আসে। নন্দিনী রুমে না থাকায় রুহি বালিসে মুখ গুঁজে চিৎকার করে কাঁদছে।

আজকে যে তার সব স্বপ্ন আশা ভালোবাসা আরিয়ান শেষ করে দিলো।

_________________________
ঠিক সকালে রাফসানরা বেরিয়ে পরলো বান্দরবনের উদ্দেশ্যে। রাফসান ওখানে ওর এক বন্ধুর ঠিক করা বাসায় থাকবে। পাহাড়ের মাঝে বাসা। রাফসানরা দীর্ঘসময় জার্নি করে ওদের বাসায় আসলো। বাসাটা চার রুম, তিন ওয়াশরুম, দুই বারান্দা বিশিষ্ট। রোদেলাকে এটাচড ওয়াশরুম আর বেলকোনি যুক্ত রুমটা দেওয়া হয়েছে। রোদেলার সাথে রাত থাকবে। রুবা আর আদৃতা এক রুমে থাকবে। আদনান অন্য রুমে আর রাফসান মুন এক রুমে। রাফসান সব সবাইকে বুঝিয়ে বাসায় কাজের লোক আগেই ঠিক করে রেখেছে সব ঠিক করে রাফসান ওর কাজে চলে যায়। রোদেলা রেস্ট নিয়ে খেয়ে ব্যালকনিতে আসে। ব্যালকনি দিয়ে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। সামনে হোটেল আছে সেটাও দেখা যাচ্ছে। রোদেলা বসে ছিলো রাত হাতে করে ফুসকা নিয়ে আসে রোদেলার জন্য। রোদেলা ফুসকা দেখে অনেক খুশি হয়। রাত রোদেলাকে ফুসকা বেড়ে দেয় তারপর রোদেলা ফুসকা খেতে থাকে।
রোদেলাদের বাসাটা দোতালা পর্যন্ত তাই নিচ থেকে উপরে সব দেখা যায়। রোদেলা খুশি হয়ে ফুসকা খাচ্ছে আর আড়ালে কেউ সেটা দেখে খুশি হচ্ছে।

~বিকালে~

আদৃতা অনেক গুলো বাচ্চাদের জামা কাপড় খেলনা কিনে নিয়ে আসছে বান্দরবনের মার্কেট থেকে। রোদেলা সহ সবাই তো তা দেখে অবাক। রোদেলাতো আদৃতার কান্ড দেখে হা। আদৃতা হেঁসে বলছে,,

আদৃতা: প্রথম ফুপি হচ্ছি। ভাতিজি /ভাতিজির জন্য এসব না করলে হয়!
আদৃতা সব জিনিশ রোদেলার রুমে রেখে ফ্রেশ হতে যায়। রোদেলা জিনিশ গুলো দেখছে আর ভাবছে।

“আজকে আপনি থাকলেও এসব করতেন তাইনা? বেবিদের জন্য জামা কাপড় খেলনা সব কিনে রাখতেন। এই সেই জায়গা আদ্রিয়ান! যেখানে আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে। এখান থেকেই তো আপনাকে আমি আলাদা করে দিয়েছিলাম।”

রোদেলা নিজের পেটে হাত বুলাচ্ছে আর বাচ্চাগুলোকে অনুভব করছে।

রোদেলার এখন ৬মাসে পা দিয়েছে। পেটের ভেতরের পুচকুরা নড়েচড়ে জানান দিচ্ছে তারা বড় হচ্ছে আস্তে আস্তে।

~এদিকে~

রুহি কালকের পর আর আরিয়ানের সামনে আসেনি। আর আরিয়ানও রুহির খবর নেয়নি। আরিয়ানের একটা সো পরেছে এখানে। আজকে সন্ধ্যায় সো। আরিয়ান সো এর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

আদৃতা, রুবা, মুন, রাত বসে গল্প করছে।

আদৃতা: হেই শুনেছি এখানে আজকে একটা সো হবে। একজন ফেমাস সিংগারের। রুবা, রাত যাবা তোমরা?
রুবা: আমিতো এখানের কিছু চিনিনা।
রাত: উম যাওয়া যেতে পারে।
আদৃতা: হ্যাঁ। আমি, রুবা, রাত আর আদনান যাই কি বলো?
মুন: আচ্ছা যাও ভালো কথা তবে সাবধানে যাবা।
আদৃতা: আচ্ছা।

~সন্ধ্যা ৭টা~

আদৃতা, রুবা, রাত, আদনান বেরিয়ে পরেছে শোতে যাওয়ার জন্য। এদিকে রোদেলার ঘরে বসে খুব অসস্তি হচ্ছে। কেন জানি ওর মনে হচ্ছে আজ আবার কিছু হতে চলেছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে