প্রিয় জিপিএ-৫ – Orshiya Shohid Anu

0
392

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
~চিঠিঃ- ০৪

প্রিয় জিপিএ-৫,

তুমি কেমন আছো তা আমার জানা নেই,তবে তোমাকে পাওয়ার জন্য যে হাজারো শিক্ষার্থী নিত্য লড়াই করে চলেছে,তারা যে একেবারেই নিশ্চিন্ত মনে ভালো নেই সে কথা আমি শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। বর্তমানের এই সময়ে দাড়িয়ে তোমার গুরুত্ব শিক্ষার্থীদের মাঝে এতোটাই বেশি যে, তাদের রাতের ঘুম থেকে শুরু করে,নিয়মিত নাওয়া-খাওয়া, আনন্দ,অনুভূতি,সুখ সাচ্ছন্দ্য সবকিছুকে সংকীর্ণ গণ্ডিতে মাটি চাপা দিতেও প্রস্তুত তারা।

তুমি কি জানো-তোমার কতোটা মূল্য আমাদের এই প্রতিযোগিতার যুগে?তোমাকে যারা নিজেদের নামের পাশে স্থান দিতে সক্ষম হয়ে ওঠেনা আমাদের এই জ্ঞানী সমাজের কাছ থেকে তারা কতোখানি তুচ্ছতাচ্ছিল্য পেয়ে থাকে তা যদি তুমি জানতে তবে হয়তো নিজেই এসে ধরা দিতে। আচ্ছা তুমি কি জানো-একজন বাবার কাছে তার সন্তানের গুরুত্ব বৃদ্ধিতে তোমার অবদান কতোখানি?তুমি কি জানো-একজন মায়ের ইচ্ছে পূরণের জন্য তোমার প্রয়োজন কতোটুকু?

তোমাকে পাওয়ার লড়াইটা এক দিনের জন্য নয়, তোমাকে পাওয়ার লড়াইটা শুরু হয় সেই ছোট্ট বেলা থেকে।পরিষ্কার শিশু মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তুমি যদি আমার না হও,তবে আমি হয়ে যাবো মূল্যহীন। তুমি হীনা এ সমাজে আমার কোন দাম রইবে না। আচ্ছা তুমিই বলো-এরকম হলে তখন কি আর তোমাকে পাওয়ার যুদ্ধে না নেমে পারা যায়? তোমাকে পেলে বাবার আদর পাবো, মায়ের মুখে হাসি ফুটবে,তোমাকে পেলে ভবিষ্যৎ এর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে রইব। তোমার এতো এতো উপকারীতা সম্পর্কে হয়তো তুমিও অজ্ঞই রয়েছো।

আচ্ছা তোমাকে না পেলে কি হয় তা কি জানো তুমি? হয়তো জানোনা,জানলে কি আর তুমি এতো দূর্লভ্য হতে বলো? তোমাকে না পাওয়ার কষ্টে কত মায়ের কোল খালি হচ্ছে! তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রণায়, ডিপ্রেশনের মতো কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া ছোট ছোট প্রাণগুলো। তোমাকে পাওয়ার লড়াইটা যেমন কঠিন তেমনি আবার সহজ ও। তুমি কতোটা সিকিউর থাকো বলতো? তোমাকে পেতে হাজারো মানুষ হাজারো পদ্ধতি অবলম্বন করে চলে নিত্য প্রতিদিন। তুমি হয়তো ভাবো যে এই মানুষের মধ্যে তোমাকে পাওয়ার জন্য এতো যুদ্ধ কেন? আসলে তুমি যে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার একমাত্র উপায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছো। যার কাছে তুমি নেই তার কাছে কোন সুযোগ নেই,তোমাকে হারিয়ে ফেললে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ কেউ দেয়না। তুমি যার সঙ্গে রবে সুযোগ আপনা আপনিই তার কাছে ধরা দিবে।

তোমাকে ছোয়া যায়না,দেখা যায়না,তুমি কোন বস্তু নও,না আছে তোমার জীবন,তবুও তোমাকে পাওয়া নিয়ে এই সৃষ্টার সৃষ্টি প্রাণীগুলোর মাঝে লড়াইয়ের শেষ নেই। বন্ধুত্বের মতো বড় আত্মার সম্পর্ক দ্বিতীয়টি হয়না, আর সেই বন্ধুত্বের মাঝেও দূরত্ব বাড়াতে তোমাকে পাওয়ার জেদই যে যথেষ্ট সেটাও হয়তো তোমার জানা নেই। শুধু মাত্র তোমার জন্য আত্মিক সেই বন্ধুত্বের সম্পর্ককে এক নিমেষে ভুলে যেতেও অনেকেই পিছ পা হবেনা।

তুমি কি জানো-তোমাকে পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র সৎ পথেই সংগ্রাম চলে না, তোমাকে পেতে অল্পবয়সী মস্তিষ্ক গুলো ছল চাতুরির কৌশল অবলম্বন করা শিখে যায় যেন পারদর্শীর মতোন। তোমাকে না পেলে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবেনা সেই ভয় যখন জেঁকে বসে বাবা মায়ের মনে,তখন পিতৃহৃদয় আর যেন কোন উপায় খুঁজে পায়না! সন্তানের ভালোর জন্য অসৎ পথের সন্ধানী হয়ে ওঠে তার অস্থিরতা গুলো। তোমাকে পাওয়া নিয়ে হাজারো জীবনের হাজারো নতুন গল্প থাকে। তোমাকে পাওয়ার জন্য মেধার নানারকম অপব্যবহার হয়ে চলেছে রোজ দিন, অথচ যাদের কাছে তুমি আছো তাদেরকেই আমরা সর্বোচ্চ লেবেলের মেধাবী বলে জানি।

আমাদের পারিপার্শ্বিক বাস্তবতা আমাদের বুঝতে শেখায়, তুমি নেই মানে আমি জীবনে একেবারে হেরে গেছি। তুমি ছাড়া আমি যেন মেরুদন্ড সোঁজা করে দাড়াতে পারবো না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় তোমাকে এতোটাই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, তোমাকে অর্জন করতে না পারলে আমি যোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগটিও পাবোনা। এই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার কারণে হেরে যায় শত শত মেধাবীর কলম,তোমার কাছে নিজের হারকে অনায়াসে স্বীকার করে জীবনের বাকি লড়াইগুলোকে এক মূহুর্তের মধ্যেই ভুলতে বসে তারা,অথচ জীবনের কতো শত কঠিন লড়াই পড়ে আছে আমাদের। সেখানে সামান্য তোমাকে না পেলে সবকিছু ছেড়ে আআত্মহত্যার পথ বেঁছে নিচ্ছে সতেজ প্রাণ গুলো,কখনো এ ভাবে ভেবে দেখেছো কি তোমার গুরুত্ব কতোখানি আমাদের জীবনে?

যখনই কেউ পরিশ্রম এর পরিশেষে তোমাকে নিজের নামে অর্জন করে নেয়,তার কাছে তুমি যেন অমর এক পাওয়া। আবার,অনেকের কাছেই তুমি আকশের চাঁদের ন্যায়, যাকে নিজের করে পাওয়ার ইচ্ছে সকলেরই মনে জমে কিন্তু পেয়ে ওঠা হয়না।

ইতি,
“তোমাকে না পাওয়াদের দলের একজন”

-Anu

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে