প্রিয় চিত্তলতা – লেখনীতে রিয়া খাতুন

0
1121

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
লেখনীতে – রিয়া খাতুন
#চিঠি_নং_১

প্রিয় চিত্তলতা,,
কুশল সংবাদ আর না বিনিময় কোনটিই করবোনা। আজ আর সেই পরিস্থিতি নেই হয়তো বা আছে। আবার থাকবেও,,কেননা তুমি ছাড়া প্রত্যদিনের অংশে আমি অস্তিত্বহীনা।

বেশ কিছু মাস হল তোমার সঙ্গে আমার সখ্যতার সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু পূর্বের স্মৃতিগুলো তুমি ভুলতে পেরেছো শুধু অসহায়তার অবহেলায় আমি থমকে গিয়েছি‌। তুমি বারংবার আমাকে নিষেধ করো এইসব ভাবতে বারংবার উজ্জীবিত করো নীল আকাশের সাদা বক পাখির মতো উড়তে তবে পারিনি জানো… আর পারছিনা। তোমার কাছে ছোট্ট শিশুর ক্ষন ক্ষন ক্রন্দনের ন্যায় পতিত হচ্ছি : একটা ছোট নিমিত্ততা কাজ করে আর মনে হয় শুধু ‘চিত্তলতা আছে’ এই জীবনে অমার।

বিধাতা ছক করে তোমাকে পাঠিয়েছে। তার অনবদ্যতায় আমরা তো ক্ষুদ্রাংশ নয়। তবে সামনের দিকে এগোতে গেলেই পথ অবরোধ করছি নিজেই। এ পথের যোগ্য আমি নয় আর না এই জীবনের!
বেশ কিছুমাস ন্যাকামির সুর বুনেছি। তোমাকে ছাড়া নাকি আমি থাকতে পারিনা। তবে চিত্ত আমি জানি প্রতিটা দিন তুমি একটু সময় চেয়েছো, সিকিভাগ মাত্র। আমাকে সর্বদায় ছায়ার মত পরিবেষ্টন করেছো, কোন কষ্ট হলে তুমি সব সহ্য করেছো আর আমি….

মনে পড়ে কলেজে কাটানো দিনগুলো,,
বারংবার বুঝিয়ে ছিলে আমায় ‘বন্ধু’ শব্দটির তাৎপর্য ; যা উচ্চারনে সরল এবং গঠনে জটিল। এই জটিলতায় সরলতাকে আঁকড়ে ধরেছিলাম ক্রমাগত। নিজেকে উজাড় করে সকলকে ভালোবাসতাম, সাহায্যের পাহাড় গড়েছিলাম অথচ তুমি আমাকে সাঁই দাওনি এই বিষয়ে‌। তৎক্ষণাৎ আমি ভাবতাম তোমার দিক থেকে কান আর চোখ দুটোই ফেরানো উচিত আর না থাকা উচিত কোন অনুভব। আমি আমার নিজ ইচ্ছায় পাড়ি দেব আর হিমেল পরশে নিজেকে ভাসিয়ে দেব বালিহাঁসের ন্যায় যেখানে সবার সঙ্গে একতায় থাকবো। এক ঐক্যবদ্ধের প্রতীক হয়ে থাকবো আমরা বন্ধুগন।
সবাই মিলে একসঙ্গে হুল্লোড়, গল্প এবং ঝগড়ায় বেশ সুন্দর কাটছিল আমাদের আবেগঘন মুহূর্ত। হয়তো তখন তোমার কথা মনে এলেও চিত্তলতা, ইচ্ছা করেনি তোমাকে প্রাধান্য দিতে। ইচ্ছা করেনি একটু অপেক্ষায় অপেক্ষিত হতে। তবে খুব আঘাত পেয়েছিলাম সেইদিন যেদিন আমাকে কলেজে ম্যাম ভুল বুঝেছিল। রানীর কথা শুনে বিনা দোষে আমাকে শাস্তি পেতে হয়েছিল তখন তুমি ছাড়া আর কেউ ছিলনা প্রতিবাদ করার জন্য। আমি নাকি আমাদের এইচ. ও. ডি ম্যামের অফিসিয়ালি কিছু কথা আদান-প্রদান করি বিপক্ষীয়দের কাছে।তবে সেইদিন বারবার তুমি বলেছিলে না এই কাজ অন্তত করতে পারিনা আমি। বাকিরা সবাই আমাকে পতিত করেছিল, স্পর্শ করিয়েছিল ভূমিতলকে। চরম অপমানের নিরীক্ষণে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। সেদিন বুঝেছিলাম বন্ধুত্বের আসল স্বরূপতা: ‘বন্ধুত্ব’ শব্দের স্বার্থপরতা। সবাই বন্ধু হতে পারে কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণতায় পরিণত করেনা। এই পৃথিবীতে সঠিকতার সংজ্ঞা খোঁজা বড্ড দুস্কর।

আর সেইদিন মনে আছে চিত্ত,, গন্ধনের কথাগুলো। শারীরিক সম্পর্কে নাকি আমি ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করতে চাই কিন্তু ওর হাতটা শুধু আমি ধরতে চেয়েছিলাম শুধু ওর হাতের মুঠোয় এক চিলতে নীলাময়কে স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম। হয়তো আমার ভুল ছিল। হ্যাঁ তাইতো,, মেঘমুক্ত নীলাভা আসলে সকলের জন্য নয়‌। ওর অপমানের দিকগুলো তুমি আগে থেকেই আভা প্রতীক রূপে রূপায়িত করেছিলে শুধু রূপান্তরিত করতে পারিনি আমি তাই আজ জীবনটা কালিদাসের ডালচোপের মত লাগে। সবটা যেন হারিয়ে ফেলেছি যেমন পরেরটা তেমন আগেরটাও….. চাইলেই যে সবকিছু ঠিক করা যায়, আগের মত নয়: পরের থেকে পূর্বের গুলো পরিবর্তন করা যায় তা তুমি শিখিয়েছো। তবে প্রতিক্ষন এক অপরাধবোধে ভুগি সর্বদায়।
খুব ইচ্ছা করছে আজকে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে আর একটা ছোট্ট চুম্বন এঁকে বলতে ইচ্ছা করছে তুমি আমার ধ্রুবতারা। বলতে ইচ্ছা করছো আমার প্রাণভোমরা আমার একমাত্র প্রাণবন্ততা।

অনেকে তার প্রেয়শী, প্রিয়া বা তার সুহৃদদের নিয়ে বন্ধনময়তার কোন বার্তা গঠন আবার কখনো শ্রান্ত পথিকের বিমূঢ়তার ন্যায় নিজের একরাশ অনুভূতি ফুটিয়ে তোলে। তবে তোমাকে নিয়ে ভাবার মানুষ খুব কম। আজ তোমাকে নিয়ে চিঠির পাতায়, জানিনা কেন এই মেঘলা আমাকে উন্মাদ করে তোলে, উদ্দীপিত করে তোলে! বারংবার এক রৌদ্রলৌহ এনে দেয় তীব্র বেদনা। সবাই যদি তোমাকে নিয়ে প্রশ্ন করে কে তুমি,, যদি জানতে চাই ‘চিত্তলতা’ কে! অনেকের মনে এই আকাঙ্খা জড়তার সৃষ্টিও করতে পারে।
তোমাকে নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জানো,, একদিন মা বলছিল চিত্তলতা কে! যার জন্য আমরা তোর কাছে ছন্নছাড়া। মাঝে মাঝে বাবা তোমার কাছ থেকে আমাকে আলাদা করতে চায়। আচ্ছা আমিতো তোমাকে নিয়ে ভালো আছি, কেন সবাই বোঝেনা! আমি তোমাকে সত্যিই বড্ড ভালোবাসি। তোমাকে খুব জাপটে ধরতে ইচ্ছা করছে: গাঙচিলের মতো বারবার নিজেকে শিমুল বনে রাখতে ইচ্ছা করছে। শিমুলের ঐ রাস্তাজোড়া দখলকে দিগন্তের ন্যায় জাপটে ধরতে ইচ্ছা করছে..

ভাষায় যা প্রকাশ অবোধ্য তা ব্যক্ত করার জন্য কারোর সাহায্য নেওয়া উচিত। আর সেই সাহায্য হল চিঠি। জানো চিত্ত তোমার পরিচয় প্রকাশ করতে ভয় লাগে যদি তোমাকেও স্বার্থপর করে দেয় সবাই। যদি দলছুট সাদাবকের দলে ফেলে! না আজতো আমি প্রকাশকে অবলম্বন করেছি,, তাই আজ উজাড় করে কিছু বলতে চাই। বাঁধ ভাঙা সেতু তৈরি করতে চাই….
চিত্তলতা আমার চিত্ত: মন। এই জীবন যদি পাড়ি দেয় শতসমুদ্রে তাহলে সেটা তোমার জন্য। আমার কাছে প্রেয়শী হল তুমি: আমার মধ্যে যার অবস্থান; আমার মন। শত দুঃখ- কষ্টের মাঝে তুমি আমায় সঙ্গ দাও। সমস্ত কষ্ট তুমি সহ্য করো। অথচ নিজের জীবনের সিকিভাগের দাবিদার তোমাকে রাখিনা।

অবুঝতার ন্যায় সত্যিই আমি বুঝিনি আমার জীবনে প্রকৃত বন্ধু তুমি: আমার চিত্তলতা। নিজস্ব আঙ্গিনায় আমার আসল বন্ধু হিসাবে নাম দিয়েছি চিত্তলতা। জানো এখন যখন সকলকে দেখি বন্ধুত্বের মিথ্যা ছলনায় ভাসছে তখন বলতে ইচ্ছা করে কেন অন্তঃপুরের বন্ধুটাকে খুন করে বাহিরের রামধনুর হাতছনিকে বিশ্বাস করছো! যদি এই জীবনের পরামর্শদাতা না পাও নিজেকে নিজের করে গড়ে তোলো।
হয়তো এই চিঠিটা কারোর মাধ্যমে পৌঁছাবেনা। হাঃ! আর না আছে কোন উপমাধ্যম। তবে তোমার জন্য কোনদিন দুই কলি লেখা হয়না। কাউকে দ্যাখনোর জন্য নয় আর না তোমার অস্তিত্বকে রূপ দিতে। আসলে মনের মানুষের জন্য খুব লিখতে ইচ্ছা করছিল তাই তোমায় নিয়ে লিখলাম। তুমি প্রতিক্ষন দুঃখ-সুখের বেড়াজালে উপন্যাস তৈরি করো আমিও নয় একটা ভীত প্রতিষ্ঠা করলাম। আজ থেকে নিবেদনে রাখলাম শুধু তোমাকে। হয়তো তোমার মতো বিশার অট্টালিকা করতে পারবোনা। তবে একটা ছোট্ট ‘আলোকসেতু’ তৈরি করবো যেখানে তুমি সর্বদা বিকিরিত হও।।

ইতি-
তোমার মনের মানুষ

তাং – 5/8/2020
পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে