প্রতারক part 17

0
1286

প্রতারক part 17
#Roja_islam

আমাকে দেখেই মা চেঁচিয়ে উঠলো।
— আমায় কেনো বলিসনি হীর এসব?? রাহুল না হয় বিয়ের কথা বলে গেছে কিন্তু ওর মা কি মেনে নিবে হিরাকে??
.
আমি ভাইয়া মার এই কথার কি উত্তর দিবো খুঁজে পেলাম না। কারণ ঐ মহিলার সাথে রাহুলের কোনো মিল নেই। তাই রাহুলের ব্যাপারে কিছু বলা গেলেও ঐ মহিলার ব্যাপারে কিছু বলা বুঝা দায়। তাই দুজন চুপ করে আছি। মা ও গম্ভীর মুখ করে বসে আছে গভীর চিন্তা করছে বুঝাই যাচ্ছে। মার হাভভাব ভাইয়া কিছু বুঝতে না পেরে মাকে জরিয়ে ধরলো। কাঁদোকাঁদো অবস্থা ভাইয়ার বলতে লাগলো।
— প্লিজ মা তুমি অমত করো না বিয়েতে। আমি ভুল করেছি পূর্নির সাথে। আমায় সুধরাবার সুযোগ দাও প্লিজ। আমি পূর্নিকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। প্লিজ মা তুমি এমন কিছু বলোনা যেটা আমি রাখতে পারবোনা।
.
মা ভাইয়ার মাথায় হাত রেখে বললো।
— আমি অমত করিনি হিরা। তোরা আমায় আগে বলিস নি কিন্তু আমি সব জানি ঐ মহিলা আমায় ও নানা কিছু বলেছেন বাসায় এসে একদিন আমি তোকে কিছুই বলিনি চেয়েছি তুই নিজে বল আমায় সব। আমার কষ্ট এটাই তোরা আমায় কিছুই বলিস নি বললে আমি উত্তর দিতে পারতাম কিছু উনাকে। তাই আজ এভাবে জিজ্ঞেস করলাম। আমার কাছে তোরাই সব কখনো মার কাছে কিছু লুকাবি না মনে থাকবে।
.
আমি এবার এসব দেখে বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললাম।
— বাপ রে বাপ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। সত্যি মা তোমার বুঝানোর কি স্টাইল একদম জান নিয়ে নিবে ভাব। বাপ রে এখনি বুঝি জান টা গেলো আমার এক্টুর জন্য বেঁচে আছি উফফ।
.
ভাইয়া মাকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে বললো।
— হীর চুপ কর। মা তোমায় কি বলেছে ঐ মহিলা??
.
মা ভাইয়ার কথার জবাব না দিয়ে কথা ঘুরিয়ে বললো।
— তুই মহিলা কেনো বলছিস তোর শাশুড়ি হবে মহিলা না।
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


ভাইয়া মার কথা বিষম খেলো।আর আমি হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছি। আর মাকে বলছি।
— সো ফানি মা।
.
ভাইয়া রেগে গেলো।
— চুপ কর। মা তুমিও না।
.
আমার হাসি থামছেইনা। মা আবার বলছে।
— আমি ভুল কি বললাম? তোর শাশুড়ি ই তো হবে উনি??
.
ভাইয়া রেগে উঠে চলেই গেলো এই কথা শুনে। এবার আমি হাসি থামিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম।
— মা কথা ঘুরালে কেনো। কি বলেছে উনি??
.
মা আমার হাত ধরে বললো।
— বাদ দে হীর হিরা খুশী থাকলেই আমি খুশী। এসব কথা আর উঠাস না রাহুল যেহেতু এসেছে বিয়ের কথা বলতে তার মানেবই ঐ মহিলাও রাজী। তুই আর এসব কথা উঠাস না। আমি শুধু এটাই বলবো আমার কাছে কিছু লুকাশ না তোরা কেমন??
.
আমি মাথা নাড়ালাম মা উঠে ড্রইং রুম থেকে চলে গেলো। আমি টিভির দিকে তাকিয়ে আছি। বুঝতে বাকি নেই ঐ মহিলা কি কি বলতে পারে। বজ্জাত মহিলা একটা নিশ্চয় ভাইয়ার মতো মাকেও ছোট করেছে। ঐ মহিলা এমন কেনো বুঝিনা? মানুষ কে ছোট করে আনন্দ পায় কিছু রিচ মানুষ তেমনি এই মহিলা।
.
এসব নানান চিন্তার মাঝে হঠাৎ রাহুলের বলা সেই তিন ওয়ার্ড এর কথা মাথায় এলো।
ভাবছি মজা করলো রাহুল?? সব জেনেও কেনো এসব বললো। আমি তো গুন্ডাটাকে ফ্রেন্ড ও ভাবিনা।তার মধ্যে এসব কেমন জেনো লাগছে। যাইহোক যদি রাহুল সিরিয়াসলি ও বলে থাকে আমি নাই করবো। কারণ আর এসবে জড়াতে চাইনা। কিছুতেই না সিদ্ধান্ত একটাই।
________________________________
.
পরদিন সকালে ভার্সিটি চলে গেলাম। তিন তালায় আমার ক্লাস। দু তালায় উঠতেই দেখি শিহাব শিরির পাশে ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে।দেখেই আমার বেশ অস্বস্তি লাগছে। তাও পাশ কেটে চলে যাবো তার মধ্যেই শিহাব ডাক দিলো।
— হীর!!
.
ওর মুখে আজ নিজের নাম টা শুনতে ঠিক আগের মতো লাগছে। যখন সব ঠিক ছিলো আমাদের মধ্যে। মায়া ভরা ডাক শুনে বুক টা ধক করে উঠলো। আমি পিছনে ফিরে ওর দিকে তাকালাম। শিহাবকে দেখেই বুকে কষ্ট হচ্ছে আমার। কি হাল হয়েছে শিহাবের। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে ফর্সা মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। মাথা নিচু করে রেখেছে শিহাব কিছু বলছেনা ডেকেও তাই আমিই চলে যেতে ধরকাম। সে আবার ডাকলো।
— হীর প্লিজ শোনো।
.
আমি আবার ওর দিকে ফিরে বললাম।
— কিছু বলবে??
.
শিহাব আমার দিকে তাকালো। তারপর কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে বললো।
— প্লিজ হীর আমায় আজ লাস্ট ২ ঘণ্টা সময় দিবে প্লিজ?? আই নো আমার এই চাওয়ার কোনো মানেই হয়না তবুও প্লিজ না করোনা!! প্লিজ??
.
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম এ কোন শিহাব??? আমার অতি দুঃখে হাসি পাচ্ছে ৫ বছর রিলেশনে শিহাব আমার কাছে হাজার ভুল করেও নতো হয়নি। বরং শিহাব ভুল করলেও আমি কিছু বললে আমায় ই তাকে সরি বলতে হয়েছে। আর আজ সেই শিহাব আমার কাছে আকুতিমিনতি করছে। ২ ঘণ্টা সময় এর জন্য?? অবাক আমি অবাক বেশ অবাক। কিন্তু কিছু বললাম না এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। জেনো রাহুল কে খুজছি। কিন্তু কেনো ভাবতে লাগছাম।আমি কেনো রাহুল কে খুজছি?? আশ্চর্য!! কেমন একটা পরিস্থিতিতে পড়ে গেলাম। যাবো কি যাবোনা ভাবছি!! কিন্তু ২ ঘণ্টার জন্য কই নিয়ে যাবে। লনির মতো যদি কিছু করে তো??? থাপ্পড় মারার প্রতিশোধ নিতে আসেনি তো। এটা মাথায় আসতেই আমি বললাম।
— সরি শিহাব ক্লাস আছে………!
.
আমি আর কিছু বললার আগেই শিহাব বললো।
— জানি ট্রাস্ট করতে পারছো না। কিন্তু তুমি আমায় জানো আমি যা করি বলে করি। আর আমি বলছি। প্লিজ কোনো ক্ষতি করবোনা তোমার হীর জাস্ট……… প্লিজ হীর না করোনা প্লিজ।
.
শিহাবে ডেস্পারেট নেস দেখে।
কি জেনো হলো আমি রাজী হয়ে গেলাম। শিহাব আমায় নিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো।
.
.
এদিকে রাহুল আজ পূর্নিকে নিয়ে বিজি মেয়েটা জ্ঞান ফেরার পড় থেকেই শুধু হিরা হিরা করছে। রাহুল সব বলে পূর্নিকে সামলিয়েছে। এখন পূর্নি ঘুমের ইঞ্জেকশ ন দেওয়ায় ঘুমুচ্ছে তাই রাহুল ভাবলো। হীরকে কল দিবে হিরা কে নিয়ে এখানে আসতে!!না হলে পূর্নি উঠে আবার হাইপার হয়ে যাবে যা পূর্নির জন্য ঠিক না!! যেই ভাবা সেই কাজ। রাহুল ফোন দিলো হীরকে কিন্তু একের পড় এক কল দিচ্ছে কিন্তু ফোন অফ বলছে। কই গেলো মেয়েটা ফোন কেনো অফ ভার্সিটি গিয়েছে হীর কিভাবে জানবো আজ তো জেতেই পারলাম না ওর কাছে। রাহুল ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে এসব ভাবছিলো ঐ সময় ই আস্ফির কল এলো ফোনে। রাহুল কিছু চিন্তা না করে ফোন পিক করে কানে দিলো।
— হ্যালো??
— ব্রো আস্ফি!!
— ইয়াহ ব্রো……..!
— কিছু বলার ছিলো ব্রো??
— ছে প্লিজ।
— একচুলি হীর ভার্সিটি থেকে শিহাবের বাইকে করে কই জেনো গেলো!!
.
কথাটা শুনেই রাহুলে মেজাজ চট করে খারাপ হয়ে গেলো। রাহুল রেগে বললো।
— আস্ফি ফলো করো অদের কই যায় যানাও ওকে এখুনি।
— ওকে ব্রো আমার বাইক আছে প্রবলেম নেই জানাচ্ছি।
— ওকে ফার্স্ট জানাও এড্রেস দাও আমি আসছি।
— ওকে ব্রো।
.
রাহুল ফোন কেটে নার্স কে বুঝিয়ে পূর্নির কাছে রেখে। বেরিয়ে পড়ে। শহরের উদ্দেশ্য এই হস্পিটাল টা রাহুলের বাবা বানিয়েছিলো মনি পুড়ি গ্রামের জন্য। রাহুলের বাবাও ডক্টর ছিলো। তাই রাহুল বোনের চিকিৎসা বাবার হস্পিটালেই করায়। কিন্তু এখান থেকে হীরের কাছে যেতে সময় লাগবে। তাও রাহুল কিছু না ভেবে গাড়ী খুব স্পীডে ড্রাইভ করছে। রাহুলের একটাই চিন্তা হীর আবার বোকামি করে সব ভুলে ক্ষমা করে দিবেনা তো শিহাব কে?? ভাবতেই নিজের মাথার চুল টানলো পিছন দিয়ে আর ভাবতে পারছেনা রাহুল। তার মন চাইছে সব ভস্ম করে দিতে। হীর কি করে গেলো শিহাবের সাথে ভাবতেই রাহুলের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
.
.
আমি বসে আছি কিছুটা গেপ রেখে শিহাবের পিছনে। বাইক ছুটে চলছে এক দিকে। ঠান্ডা হাওয়া গাঁ বেশ জোড়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে। এসবের মাঝেও একটাও চিন্তা কি বলবে শিহাব?? আমার চিন্তার মাঝেই। শিহাব একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে দাড়া করালো বাইক আমি আস্তে করে নেমে পড়লাম। শিহাব কে জিজ্ঞেস করলাম।
— এখানে কেনো।
— কথা বলবো এখানে বসে। দাড়াও তুমি আমি বাইক রেখে আসছি।
— হু।
.
বলেই আমি আশেপাশে তাকালাম।না সব ইটপাথর এর রেস্টুরেন্ট এর মতো এই রেস্টুরেন্ট টা নয়। বাঁশ ঝারের ভিতর ছোট বড় টেবিল পাতা। অনেক কারুকাজ করা নকশা আকা মন ভালো করার মতো পরিবেশ। এক্টু পড়ে শিহাব এসে আমায় নিয়ে একটা টেবিলে বসে। মাথার উপর বাঁশঝাড় তার উপরে খোলা আশাক। অনেক ভালো লাগছে কিন্তু শিহাবের কাছে তা প্রকাশ করলাম না। শিহাব জিজ্ঞেস করে আমায়।
— জায়গাটা ভালো না??
— হু!! কি বলবে বলো??
— সরি হীর!!
— হাহা কেনো??
— হীর আজ তোমায় আমি সব খুলে বলতে চাই কেনো এসব হয়েছে।
— আমি ও জানতে চাই প্রতারণা করার কারণ তাও প্রতারক এর কাছেই কারণ তার থেকে ভালো কে জানে সত্যি টা কি??
.
.
চলবে??
Roja Islam

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে