তুমিময় নেশার আসক্তি পর্ব-০১

0
2414

#তুমিময়_নেশার_আসক্তি
#আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_১

রাত তখন বাজে ৮ টা। এই নিস্তব্ধতা ভরা রাতে মেয়েটি একা তার বাড়ির ছাদে মাদুর বিছিয়ে শুয়ে আছে আর গভীর মগ্নে আকাশে জ্বলজ্বল করা তারার দিকে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে ভাবছে (কাল থেকে তার জীবনে নতুন এক সংগ্রাম শুরু হবে, সে কী পারবে সেই জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে)। হঠাৎ কারো ডাকে মেয়েটির ধ্যান ভাঙে, মেয়েটি দেখে তাকে তার বড়ো ভাই ডাকছে।

“নিশু মণি! তাড়াতাড়ি ভিতরে আয় আব্বায় এখন গলির মোড়ে আছে, পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাসায় পৌছে যাবে। এসে যদি দেখে তুই এতো রাতে ছাদে তাহলে সবার কপালে দুঃখ আছে।”

মেয়েটি তার ভাইয়ের কথা শুনে তাড়াতাড়ি শুয়া অবস্থা থেকে উঠে বসলো । চোখ তার ভয়ে বড়ো হয়ে গেছে, জিহ্বা দিয়ে ঠোঁটকে হালকা ভিজিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে গেল। এক হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা মাদুরটা উঠিয়ে নিলো এবং বাড়ির ভিতর দৌড়ে চলে গেল।

[ এবার পরিচয়ে আসা যাক….মেয়েটির নাম হলো আজমিরা মুনতাসীর নেশা। কিছু মাস আগে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। নেশার গায়ের রং শ্যামলা, ওর ঠোঁটের কোণায় ছোট একটা তিল আছে যা খুব কাছ থেকে না দেখলে বুঝা যায় না, চোখের রং বাদামি । দেখতে নজরকাড়া সুন্দরী না হলেও তাকে মোটামুটি সুন্দরী বলা যায়। নেশা গম্ভীর ও অন্তর্মুখী। সে সহজে সবার সাথে মিশতে পারে নাহ, তাই মানুষ তাকে অহংকারী মনে করে। নেশা মেয়ে হিসেবে খুবই ভদ্র ও শান্তশিষ্ট এবং ভীতু। নেশা সবচেয়ে বেশি তার বাবাকে ভালোবাসে আর সবচেয়ে বেশি ভয়ও তার বাবাকে পায়। নেশা যৌথ পরিবারে বসবাস করে। তার বাবারা ২ ভাই ও ১ বোন। নেশার বাবা মুনতাসীর ইসলাম তাদের গ্রামের একজন মান্য গন্য মানুষ। সবাই তাকে অনেক সম্মান করেন। তার বাবা শুধু দুটো জিনিসকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন- ১মটি হলো তার পরিবারের সম্মান আর ২য়টি হলো নিজের প্রিয়তমা স্ত্রী। নেশার মা তাহেরা ইসলাম একজন গৃহিণী, সে গত হয়েছে আজ ১ বছর। নেশার চাচা মুজাহিদ ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। নেশার চাচী রাহেলা ইসলাম একজন গৃহিণী। নেশার ভাই নীরব ইসলাম, সে তার চাচার সাথে ব্যবসা করে। তার একটা চাচাতো ছোট ভাই আছে। নাম মেহেদী ইসলাম, সে ক্লাস সিক্সে পড়ে।নেশা ফুপু পরিবার সহকারে সিঙ্গাপুরে থাকে।তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ]

~সকালে~
“নেশা! এই নেশা মা! খেতে আয়। আর তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছানো শেষ কর। তোর ট্রেনের সময় হয়ে যাবে তো।”-কথাটি বললো নেশার চাচী।

“জী চাচী মা! আসছি।”

“আসসালামু আলাইকুম ভাবি”
আকস্মিক আওয়াজে ভরকে গেলেন নেশার চাচী। পিছনে ফিরে দেখলেন তাকিয়ে দেখলেন তাদের পাশে বাসার ভাবী এসেছেন। তিনি তার চেহারা স্বাভাবিক করে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললেন-

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছেন ভাবি?'”

“ভালো আছি ভাবি। কিন্তু এটা আমি কী শুনলাম আপনারা আপনাদের এমন জুয়ান একটা মাইয়াকে এতদূর শহরে পাঠাবেন। বলছিলাম কী ভাবি দিনকাল ভালো না। এরচেয়ে ভালো মাইয়াডারে বিয়া দিয়া দিন। এতো পড়াইয়া করবেন টা কী? সেই তো বিয়ের পর বাচ্চা-কাচ্চা পালতে হইব। আবার মাইয়া যদি পড়তে যাইয়া প্রেম পিরিতি করে তাহলে তো আপনাদের মান-সম্মান থাকব না। ঢাকা শহর ভালো না ভাবি, ভালো ভালো পোলাপাইন সেখানে গিয়ে খারাপ হয়ে যায়।”- কিছুটা ভেঙচিয়ে কথাটি বললো পাশের বাসার ভাবী। ততক্ষণে সেখানে নেশা চলে আসে, এসব তিক্ত বাক্য শুনে তার চোখ টলমল করছে যেনো একটু টোকা দিলে চোখের জল সব গড়িয়ে পড়বে। তার এই কথাগুলো শুনে রেগে গেলেন নেশার চাচী। তাও নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করে বললেন-

“ভাবি আমাদের মেয়ে আমাদের বুঝতে দেন তার সাথে আমরা কী করব। তাকে বিয়ে দেব নাকি বানের জলে ভাসাবো সেটা সম্পূর্ণ আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাছাড়া আমার মেয়ের উপর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে সে এমন কোনো কাজ করবে না যাতে আমাদের সম্মান নষ্ট হবে।”- নেশার দিকে তাকিয়ে কথাটি বললেন নেশার চাচী। এবার পাশের বাসার ভাবী রেগে গিয়ে চাচীকে উদ্দেশ্য করে বললেন –

“ভালো কথা কথা বললাম আপনাদের তা ভালো লাগলো না। যখন মেয়ে আপনাদের মান সম্মান ডুবিয়ে দিবে তখন আমার কথাই আপনার মনে আসবে, এই বলে গেলাম।”- কথাটি বলে তিনি চলে গেলেন। তিনি চলে গেলে নেশার চাচী নেশার সামনে দাড়িয়ে বললেন-

“নেশা মা মন খারাপ করিস না। এসব কথা যদি তুই মনে ধরে রাখিস তা তোর উন্নতি বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তোর শুধু একটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত তোর মায়ের স্বপ্ন পূরণ করা। সে চাইত তুই একদিন অনেক বড় হবি। তোর বাবাকে এতো কষ্ট করে শহরে যাওয়ার জন্য মানালি। তাই এসব কথা মাথা থেকে ঝাড়।”

“তুমি ঠিকই বলসো চাচী।এসব কথা নিয়ে ভাবলে কখনো নিজের লক্ষ্য পৌঁছাতে পারব না।”- নেশা হাত দিয়ে চোখের জলটুকু মুছে ফেলল। তখনই সিড়ি দিয়ে নিচে নামল নীরব। তাদের পর্যবেক্ষণ করে বললো- “কিছু কী হয়েছে?”

“কিছু হয় নাই, ভাই।”- কথাটি বললো নেশা। নেশার বাবা ও চাচা এসে পড়ল নিচে ড্রয়িংরুমে ততক্ষণে। নেশার চাচা ওর সামনে এসে বলল-

“নেশা জীবনে অনেক উন্নতি করো। যে কাজে যাচ্ছ সে কাজে সফল হও।”

অতঃপর নেশার বাবা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন-

“এমন কোনো কাজ করো না যাতে পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়। মন দিয়ে পড়ালেখা করবা। তোমার মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিলো তাই তোমাকে এতো দূর শহরে পাঠাচ্ছি। স্বাধীনতার সৎ ব্যবহার করো।”

“চল নিশু মণি! যাওয়ার সময় হয়ে গেছে”- দূর থেকে নেশার উদ্দেশ্য কথাটি বললো নীরব।
তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল নেশা ও নীরব।

ট্রেন চলছে নিজ গতিতে। ট্রেনের জানালা ধরে বসে আছে নেশা। শীতল হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে। তার দৃষ্টি জানালার বাহিরি নিবদ্ধ। সে মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করছে ( সে কী তার মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে?)

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে