তুমিময় নেশার আসক্তি পর্ব-০২

0
1540

#তুমিময়_নেশার_আসক্তি
#আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_২

নেশা ও নীরব দাড়িয়ে আছে গার্লস হোস্টেলের সামনে। গার্লস হোস্টেলের হোর্ডিং দেখে নীরব একটা ছোট নিঃশ্বাস ত্যাগ করল।আর মনে মনে ভাবল ( কীভাবে থাকবে সে তার আদরের ছোট বোনকে ছাড়া? পরমুহূর্তে নিজে নিজেকেই জবাব দিলো তার কষ্ট হলেও তাকে পারতে হবে। নিজের বোনের স্বপ্ন পূরণের জন্য হলেও তাকে পারতে হবে। কথায় আছে পুরুষ মানুষ নাকি কান্না করতে জানে না, তাহলে আজ তার এতো কান্না আসছে কেনো। না! এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে নাহ।আমাকে ভেঙে পড়তে দেখলে বোনও ভেঙে পড়বে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে।) নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে নিয়ে নীরব নেশার উদ্দেশ্য বললো-
“বোনু আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তুই নিজের খেয়াল রাখিস। কোনো সমস্যায় পড়লে আমাকে আগে বলবি।”
নেশা ভাইয়ের আবেগময়ী কথা শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না হাও মাও করে কেঁদে দিলো।

আকস্মিক এলার্মের শব্দে নেশার ঘুম ভেঙে গেল। তাও সে কাঁথাটা গায়ের উপর একটু টেনে আবার শুয়ে পড়ল আর ঘুমু ঘুমু কণ্ঠে বললো-
“চাচী মা! এলার্মটা একটু বন্ধ করে দাও আমি আরও কিছুক্ষণ ঘুমাবো।”-এই বলে কাঁথাটা নিজের সাথে আরো ভালোভাবে মিশিয়ে শুয়ে পড়ল। হঠাৎ কিছু একটা মনে হতে সে এক লাফে ঘুম থেকে উঠে গেল। তড়িঘড়ি করে এলার্মে টাইম দেখে নিলো। ১০ টা বাজে তার ক্লাস। এখন রেডি না হলে নির্ঘাত আজ প্রথম দিন তার লেট হবে। তাই সে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে পড়ল। জামা কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল, তাড়াহুড়ায় বের হলো এবং আয়নার সামনে বসে হিজাব বাঁধতে লাগল। পড়ার টেবিলের উপর থেকে ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্য।ভাগ্য ভালো ছিলো তাই আজ অটো পেয়ে গেছে। অটো থেকে নেমে, অটোওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে দিলো। এরপর দৌড়ে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল। তাড়াহুড়ায় ভিতরে প্রবেশ করার সময় তার মনে হলো সে কারো চিৎকার শুনল কিন্তু দেড়ি হওয়ার কারণে সে ডাকটা আমলে নেই নি। করিডোর দিয়ে তাড়াহুড়ায় যাওয়ার সময় আকস্মিক একজনের সাথে ধাক্কা খেলো। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে অজানা ব্যক্তিকে সরি বলে সামনে এগিয়ে চলে গেল। সে যদি পিছনে ফিরে একবার তাকাত তাহলে সে দেখতে পেত কেউ একজন মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নেশা অজানা ব্যক্তিটির চোখের আড়াল হতে ব্যক্তিটি তার মুখের উপর থেকে মাস্কটি খুলে ফেলল, ফলে তার ঠোঁটের বাঁকা হাসিটা দেখা গেলো। ব্যক্তিটি তার জিনসের পকেটে হাত ঢুকিয়ে গুনগুন করে গান গেতে গেতে উল্টো দিকে ঘুরে চলে গেল।

নেশা যখন ক্লাসে ঢুকল সে দেখলো তার ক্লাসের ছেলে-মেয়েরা সবাই একসাথে হাসি-ঠাট্টা করছে, কথা বলছে।আবার কেউ কেউ তো কথা বলতে বলতে একে অপরের গায়ের উপর পড়ে যাচ্ছে। তাদের গ্রামে ছেলে-মেয়ে একসাথে কথাতো দূরের কথা তাকাতো পর্যন্ত না। তাই এসব দেখে তার মধ্যে অস্থিরতা দেখা গেল। সে এসব বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে বসার জন্য একটা খালি জায়গা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। অতঃপর পেয়েও গেল, তাই সে সেই জায়গায় গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ল।

এর মধ্যে কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে তাকে জিজ্ঞেস করল-
“আমি কী এখানে বসতে পারি?”
মেয়েটির প্রশ্নের জবাবে কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না নেশা। তাকে বসতে দিবে নাকি বলবে অন্য কেথাও যেয়ে বসতে। এরই মধ্যে মেয়েটা তার চেহারা সামনে হাত নাড়িয়ে বলল-
“কোথায় হাড়িয়ে গেলে তুমি?”
এতে নেশার ধ্যান ভেঙে যায়, সে নিজেকে যথাসম্ভব সামলে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো-
“হ্যাঁ! তুমি বসতে পারো।”
অতঃপর মেয়েটি বললো- “আমি রিমঝিম মজুমদার । তোমার নাম কী?”
“আজমিরা মুনতাসীর নেশা”
“তাহলে আজ থেকে আমরা দু’জন বন্ধু? আর আমি বন্ধুদের তুই বলে ডাকি তাই তোমাকেও তুই বলে ডাকব”-আমার দিকে হাত বাড়িয়ে কথাটা বললো নেশা। আমিও মুচকি হেসে ওর সাথে হাত মিলিয়ে ফেললাম। ও আর কিছু বলতে যাবে তখনই ক্লাসে প্রফেসর প্রবেশ করল। এরপর আর কেউ কিছু বললো না।

ক্লাস শেষে নেশা আর রিমঝিম কথা বলছিলো আর ক্যাম্পাসটা ঘুরে ঘুরে দেখছিল এমন সময় নেশা একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খায় এবং দু’জনে পড়ে যায় এবং মনে মনে ভাবে( আজকের দিনটাই খারাপ। সকাল থেকে খালি মানুষের সাথে ধাক্কাই খেয়প যাচ্ছি। আজ ধাক্কা দিবস নাতো?) কিন্তু তার ভাবনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না এর আগেই মেয়েটি চেচিয়ে বলে উঠল-
“এই বেয়াদব মেয়ে! চোখ কোথায় রেখে হাঁটো? দেখে চলতে পারো না।”
“সরি আপু! ভুল হয়ে গেছে”- আমতা আমতা করে বলল নেশা।
তোমার সরি দিয়ে আমি কী করব? আমার যে এতো দামী ড্রেস নষ্ট করে দিয়েছ তার ভরপাই কীভাবে করবে?বাপের জন্মে এতো দামী ড্রেস চোখে দেখছিলো নাকি কী জানি?”
এতোক্ষণ সে তার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছিলো কিন্তু এই কথাটা শোনার পর তার রাগ উঠে গেল
সে তাও রাগকে সংবরণ করে ঐ মেয়েটার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ভালো করে চোখ বুলিয়ে বললো-
“আপু আমি ভুল করেছি তার জন্য আমি ক্ষমা ও চেয়েছি। কিন্তু আপনি আমার বাবার জন্য যে কথাটা বলেছেন তার জন্য আমার আপনার প্রতি যে খারাপ লাগা ছিলো তা নিমেষে শেষ হয়ে গেল।আর আপনি যে ধরনের পোশাক পড়ে আছেন আমাদের বাসার কাজের মেয়েরা এর চেয়ে ভালো পোশাক পড়ে।” (আসলে রিখিয়া একটা অফ শোল্ডার ড্রেস পড়ে ছিলো তাই নেশা কথাটি বলেছে।)এই কথাটি শুনে মেয়েটির রাগ উঠে গেল সে বললো-
” তোর সাহস কী করে হয় আমাকে এই রিখিয়া রহমানকে অপমান করার এর শাস্তি তোকে পেতেই হবে। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”- এটা বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না রিখিয়া হনহন করে চলে গেল।

এসব দূর থেকে একজন দেখছিলো তার ঠোঁটে ছিলো অদ্ভুত এক হাসি, সে আস্তে আস্তে বিরবির করে বলল-
“নেশাময়ী। আমার নেশাময়ী।”

রিমঝিম এতোক্ষণ হাতের নখ চেবোচ্ছিলো আর নেশা আর রিখিয়ার ঝগড়া দেখছিলো। রিখিয়া চলে যেতেই রিমঝিম নেশার হাত ধরে টনে বললো-
“তুই জানিস তুই এখন কী করলি? কাদের সাথে পাঙ্গা নিলি?”
নেশা মুখটা কাচুমাচু করে বললো- “না।”
“এতো কথা বলার আগে তাদের ব্যাপারে একবার ভাবতি?”
“ওরা কী বাঘ নাকি ভাল্লুক যে ওদের থেকে ভয় পাবো।”-মিনমিন করে কথাটি বললো নেশা।
“বাঘ বা ভাল্লুক হলেও তোর বাঁচার চান্স থাকত”- হতাশার নিঃশ্বাস ছেড়ে কথাটি বলে রিমঝিম।অতঃপর আবার বলে-
“মানুষের চেয়ে ভয়ংকর কোনো জীব পৃথিবীতে নেই। আর মানুষ যদি এদের মতো হয় তাহলে জীবন আল্লাহ ভরসা।”
“ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলে যা বলবি ঠিকভাবে বল”- কিছুটা বিরক্তি নিয়ে কথাটি বললো নেশা।
“তাহলে শুন”

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে