তুমিময় নেশার আসক্তি পর্ব-০৩

0
1289

#তুমিময়_নেশার_আসক্তি
#আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_৩

রিমঝিম ওদের পরিচয় বলতে যাবে ঠিক তখনই তারা স্টুডেন্টদের চিৎকারে ও ভাঙচুরের আওয়াজ শুনতে পায়। তখনই রিমঝিম নেশাকে জিজ্ঞেস করে-
“দোস্ত এই আওয়াজ গুলো কোথা থেকে আসছে?”
“আমি কী জানি? তুই ও এখানে আমিও এখানে”-কিছুটা বিরক্তি নিয়ে কথাটি বললো নেশা। তারপর সে আবার বললো-
“মনে হয়তো ভার্সিটির মাঠ থেকে আওয়াজ গুলো আসছে, চল গিয়ে দেখে আসি।”
অতঃপর তারা মাঠের উদ্দেশ্য গেলো।সেখানে গিয়ে দেখল হট্টগোল বেঁধে গেছে। ছেলেরা মারামারি করছে, কেউ হকি স্টিক দিয়ে মারছে, আবার কেউ কাঁচের বোতল ছুড়ে মাড়ছে। কোথা থেকে একটা বোতল এসে নেশার পায়ে লাগে, ফলে পা থেকে গলগল করে রক্ত পড়তে থাকে। এটা দেখে নেশা ভয় পেয়ে গেল। তখনই কোথা থেকে একটা ছেলে ছুটে এসে বললো-
“তোমরা এখানে কী করছো?এখানে থাকা সেফ না।চলো এখান থেকে।”- এই কথাটি বলে ছেলেটা নেশার হাত ধরে টেনে ভার্সিটির বাহিরে নিয়ে গেল।

“ভাইয়া! এখানে এসব কী হচ্ছে?”- নিচু স্বরে প্রশ্নটি করলো নেশা।
“এখানে দাঙ্গা হচ্ছে। কিছুদিন আগে ঢাকার সব ভার্সিটি মিলে একটি কম্পিটিশন আয়োজন করেছিল। যেখানে আপনি আপনার ট্যালেন্ট দেখাতে পারবেন যেমনঃ নাচ, গান, অভিনয় ইত্যাদি। প্রত্যেকবার এই কম্পিটিশনে সেন্ট জেভিয়ার কলেজ( কাল্পনিক নাম) জিতে। জিতেছে বলে এটা ভেবো না যে ট্যালেন্টের জোড়ে জিতেছে। তারা অন্যান্য ভার্সিটির ট্যালেন্টেড স্টুডেন্টদের ভয় দেখিয়ে কম্পিটিশনের আগে কম্পিটিশন থেকে নাম কাটিয়ে ফেলে। আর সবাই সব কিছু জানার পরও কিছু করে না কেন জানো? কারণ তাদের কাছে পাওয়ার ছিলো, পলেটিকাল পাওয়ার। সেই জন্য কেউ তাদের বিরুদ্ধে যেতে চেত না। কিন্তু কথায় আছে না, সৃষ্টিতে কোনো কিছু স্থায়ী না। সবকিছুর একটা শেষ আছে, তাই হয়েছে। আমাদের নতুন ভিপির জন্য। তিনি আমাদের কলেজে আসার পর আমাদের কেউ ভয় দেখাতে পারেনি। সে ভালোদের সাথে যেমন ভালো, খারাপের যম।”-এটুক বলে ছেলেটি থামলো। আশেপাশের অবস্থা পরক্ষ করে নিলো তারপর আবার ওদের দিকে তাকিয়ে বললো-
” এখন তোমরা যাও এখানে বেশিক্ষণ থাকা সেফ না। আর সামনে ফার্মেসি থেকে পা ব্যান্ডেজ করে নিও।”- এটুকু বলে ছেলেটি চলে গেল।

“উনিতো চলে গেলেন কিন্তু ওনার নামটা তো জানা হলো না”- রিমঝিমের দিকে তাকিয়ে বললো নেশা। “এসব বিষয়ে পড়ে কথা হবে, এখন এখান থেকে চল।”
“হমম চল”

ছেলেটি এতোক্ষণ দূর থেকে ওদেরই দেখছিলো।ওরা দৃষ্টি সীমানার বাহিরে যেতেই ছেলেটি নিজের ফোন দিয়ে কাকে জানি ফোন লাগালো। উক্ত ব্যক্তি ফোন ধরলে ছেলেটি মুচকি হেসে বললো-
“ভাই ভাবীকে ভার্সিটির থেকে সেফ জায়গায় দিয়ে এসেছি।”-এই বলে ফোনটা কেটে দিলো।

অপরদিকে কয়েকটা ছেলেকে গোদাম ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। ছেলেগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে কেউ তাদের খুব হিংস্রভাবে মেরেছে। সবগুলো একটু পর পর ব্যাথায় কুকরিয়ে উঠছে। তখনই এক অচেনা ব্যক্তি সিটি বাজাতে বাজাতে গোদামে প্রবেশ করে। অতঃপর ছেলেগুলোর সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। তারপর বলে-
” তোদের এতো বড় কলিজা আমার কলিজার দিকে হাত দিয়েছিস। তোদের তোহ এভাবে ছাড় দেওয়া যাবে না। যাকে আমি সারা জীবন আগলে রাখবো বলে পণ করেছি তাকে তোরা রক্তাক্ত করেছিস। এর শাস্তিতো তোদের পেতেই হবে।”-এই বলে লোকটি বাঁকা হাসলো। সেই হাসি ছিলো ভয়ংকর। তার হাসিটা দেখে ছেলেগুলোর আত্মা কেঁপে উঠলো। একটা গার্ডকে হাতের ইশারা দিয়ে ডাকলো লোকটি তারপর বললো-
“এদেরকে হসপিটালে নিয়ে যা। ভালোমতো ট্রিটমেন্ট করবি। যখনই ঠিক হবে আবার ধরে ধোলাই দিবি। এভাবে ক্রমানয়ে ৩ মাস ধোলাই দিবি। তিনদিন পরপর খেতে দিবি। আর হ্যাঁ! আজ থেকে পানি এদের জন্য হারাম।”

~পরেরদিন~
নেশা ভার্সিটিতে আসছিলো তখন তার মনে হচ্ছিল কেউ তাকে ফলো করছে। কিন্তু পরে ভাবলো ওকে আবার কে ফলো করবে,এই শহরে কেউতো তাকে চিনে নাহ। তাই এসবে আর পাত্তা দিলো না।

কলেজে পৌঁছে দেখলো একটা ছেলে আরেকটা ছেলেকে মাড়ছে। মারামারির এক পর্যায়ে ছেলেটা
ইট দিয়ে অপর ছেলেটার মাথা ফাটিয়ে দিয়ে দিলো। এসব দেখে নেশা নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না আবার যখন ছেলেটাকে ইট দিয়ে আঘাত করতে যাবে ঠিক তখনই নেশা দৌড়ে গিয়ে ব্যক্তিটার হাত ধরে ফেললো। অতঃপর কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
“আপনি এভাবে ভাইয়াটাকে মারছেন কেন? এভাবে কেউ কাউকে মারে?”

অতঃপর ব্যক্তিটি পিছনে ফিরে তাকালো। লোকটিকে দেখে নেশা একটা ঝটকা খেলো। এতো সুন্দর ও কী কোনো মানুষ হয়। যেমন তার উজ্জ্বল গায়ের রঙ,ঠিক তেমন তার চাপ দাঁড়ি। কিন্তু তাকে আকর্ষণ করছে উক্ত ব্যক্তিটির জোড়া ভ্রু এবং চোখের কোণার ছোট্ট কালো তিলটা। তখনই সে কারো হুংকারের আওয়াজ পেলো শুনতে ফলে তার ধ্যান ভেঙ্গে গেল।

“হাতটা ছাড়ো।”

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে