টক_মিষ্টি_ঝাল পর্ব_৩

0
3492

টক_মিষ্টি_ঝাল পর্ব_৩

” বুইড়া লোকের মনে প্রেম জাগলেও, আপনার মনে তো‌ আর জাগে না।”
আদনান বলে উঠলো,
–: আমি তো আর বুইড়া না। বুইড়া হলে হয়তো জাগতো।
–: থাক , আর প্রেম জাগতে হবে না। চলুন বাসায় যাব। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।

আনিলা কয়েকবার এসে আমার রুমে ঘুরে গেছে। মনে হচ্ছে কিছু বলবে। কিন্তু আদনান থাকায় বলতে পারছে না। তাই আদনানকে রুম থেকে বের করার জন্য বললাম,
–: আমার খুব ফুসকা খেতে ইচ্ছা করছে। প্লিজ , এনে দিন না।
–: উহু, ফুসকা খাওয়া‌ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যত যাই হোক না কেন, আমি আমার একটা মাত্র বউয়ের জীবনে কোনো ক্ষতি হতে দিব না।
–: ইস!! কি আবেগ। শুনুন, গবেষনায় বলছে , একজন মেয়ের কোনো‌ ছেলের সাথে একসাথে, একই রুমে থাকা খুবই ক্ষতিকর। সেটা জেনেও কিন্তু আমি আপনার সাথে থাকছি। তো, ফুসকা খেলে কিছু হবে না।
–: তাই নাকি। তো গবেষনাটা করলো কে? আর ছেলেদের সাথে থাকলে কি ক্ষতি হয়?
–: অনেক ক্ষতি হয়।যেমন, মেয়েরা মহিলা হয়ে যায়, ছেলেদের ছোঁয়া পেলে। তারপর আরো অনেক কিছু..।
–: বলো, আর কি?
–: দূর,প্যাঁচাবেন না। আপনি ফুসকা এনে দিন।
–: নতুন বিয়ে হইছে । একটু সেঁজে- গুজে বের হতে হবে না ,বলো।
–: আহা! জামাই- বউ , একে অপরের স্বত্বা। তাই, আমি সাঁজলেই আপনার সাঁজা হয়ে যাবে। রাত হয়ে যাচ্ছে। যান তো।

আদনান চলে গেল ফুসকা আনতে। এর মধ্য আনিলা আবার আসছে।
–: কী গো ননদিনী, কিছু বলবি মনে হয়।
–: জ্বী, ভাবি-সাহেবা।
–: দেখলি, আমার আধ্যাতিক ক্ষমতা অনেক বেশি। তোকে দেখেই বুঝলাম কিছু বলবি, কিন্তু তোর ভাইয়া থাকায় বলতে পারছিস না। তাই আদনানকে ফুসকা আনতে পাঠালাম।
–: হুম, আপনার আধ্যাতিক ক্ষমতা অনেক বেশি। এখন শোন, মারুফ দেশের বাহিরে যাবে। ও চাচ্ছে পরের শুক্রবার বিয়েটা করে ফেলতে। কারণ বাহিরে গেলে, এক বছর পর আসবে। সবাইকে বলে ম্যানেজ করে দে না।
–: আচ্ছা বলবো, কিন্তু ট্রিট দিতে হবে আগে।
–: সব দিব, তুই শুধু একটু ম্যানেজ কর।
–: ওকে ডিয়ার।
আনিলা আমার‌ কপালে চুমু দিয়ে বললো, তুমি আমার ভালো ভাবি। রুমে গেলাম, মারুফ কল দিবে।

আদনান ফুসকা এনে আনিলা আর আনিসা আপুকে দিল। আর বাকি গুলো রুমে নিয়ে একা একা খাচ্ছে। আমি যখন খেতে চাইলাম, বললো..
” আহা! তোমাকে কষ্ট করে খেতে হবে না। আমি খেলেই তো ,তোমার খাওয়া হয়ে যাবে। জানোই তো, স্বামী- স্ত্রী এক স্বত্বা।”
কেমনটা লাগে। এই‌ লোক এমন কেন? আমার কথা আমাকেই ‌শোনাচ্ছে।আমি এতোটাই পছন্দ করি ফুসকা,সারাদিন কিছু না খেয়ে শুধু ফুসকা খেয়ে কাটিয়ে দিতে পারি। আর এই‌ লোক আমাকে না দিয়ে, একা একা খাচ্ছে আর বলতেছে,
” আহ! কি ঝাল। সত্যিই ফুসকা অনেক মজার খাবার।”
আমি ভাবছি, শেষে হয়তো কয়েকটা রাখবে। কিন্তু সবগুলোই খেয়ে ফেললো। এমন ছ্যাঁচড়া কেন এই লোক। আমি যে রুমে আছি, তার সেদিকে কোনো খেঁয়ালই নেই। জেদ করে, আমি‌ আনিসা আপুর রুমে চলে গেলাম।

আনিসা আপুর মেয়ে আরিহা আমাকে বললো,
” মামী ,‌মামা তোমাকে অনেক ভালবাসে। দেখো, তোমার জন্য কতোগুলা ফুসকা এনে আমাদের রুমে রেখে গেল।”
আমি‌ বললাম, না ওগুলো তোমার জন্য এনেছে।
তখন আনিসা আপু বললো,
” না, আমরা খেয়েছি। এগুলো তোমার জন্য এনে রেখে‌ গেছে। আদনান বলছে, রুমে গিয়ে আগে তোমাকে লোভ দেখাবে। তারপর এগুলো নিয়ে তোমাকে দিবে।
জানো, আমার ভাইটা খুব ভালো। ওকে বুঝে মানিয়ে নিতে পারলে, তুমি অনেক সুখী হবা।”
আমি মনে মনে বললাম, ” হ্যা,সত্যিই অনেক ভালো ও।

শাশুড়ি মা আসলো ,আনিসা আপুর রুমে। আমি শাশুড়ি মাকে বললাম,
” মা, আমাদের ভোলার নিয়ম তো, বিয়ের দুই দিন পর মেয়েকে তার বাড়ির লোক‌ এসে নিয়ে যাবে। কাল তো‌ আমাদের বাসা থেকে লোকজন আসবে।”
শাশুড়ি মা বললো,
” না, কাল তোমাকে যেতে দেওয়া হবে না। ভোলা থেকে খুলনা জার্নি করা অনেক কষ্টের। কাল আসছো। সেই ধকল ই এখনো কাটাতে পারোনি। আবার জার্নি! কাল এসে কাউকে দেখে যেতে বলো। এক‌ মাস পর যাবা। তোমার মাকে আমি‌ বলে‌ দিব।”
“আচ্ছা মা।” বলে আমি‌ রুমে চলে আসলাম।

খুব খারাপ লাগছে। বিয়ে হলেই দূরত্ব চলে আসে। আজ যে কয়বার আম্মুর সাথে কথা বলছি, ততবারই আম্মু কান্না করছে। ছোট বোনটার জন্য ও খারাপ লাগছে। আবার কতোদিন পর দেখব। ভাবতেই কান্না আসছে। আদনান এসে কাছে দাড়াতেই ওকে ধরে কান্না করে দিলাম।
ও বলতেছে, আহা ! কাঁদছো কেন? ফুসকা দেইনি বলে। আচ্ছা এনে দিচ্ছি।
আমি চোখ মুছে বললাম, “ফুসকার জন্য কেউ কাঁদে? মা বললো , এক মাস পর বাড়ি যেতে । খুব খারাপ লাগছে।”
” হ্যা, মা আমাকেও বলছে।কান্না থামাও। আর কিছুদিন যাক, তারপর নিয়ে যাব।

আজ আমাদের বাসা থেকে, মামা- মামী আর আব্বু আসছে আমাকে দেখতে। খুব ভালো‌ লাগছে। শাশুড়ি মা মামীকে বললো,
” বউমা , আমার খুব ভালো। খুব সকালে উঠে নামাজ আদায় করে। কাজেও সাহায্য করে। দুইদিনেই মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছে।”
মামী বললো,
” ও তো আপনাদের খুব প্রসংসা করছে। আপনাদের কাছে আসছে, আপনারাই এখন ওর সবকিছু। ভুল কিছু করলে, মেয়ে ভেবে ক্ষমা করে দিবেন।”
শাশুড়ি মা বললো,
” ভুল মানুষ করতেই পারে। আমি ওকে আমার মেয়ের মতো করেই আগলে রাখবো। চিন্তা করবেন না।”

আমাদের বাসার লোক, একদিন থেকে চলে‌ গেল। যাওয়ার সময় আব্বু আমাকে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদলো। মেয়েদের জীবন আসলেই অনেক কষ্টের। কতো কিছু ত্যাগ করতে হয়।

আদনান দুপুরে একটা নীল রঙের শাড়ি নিয়ে আসলো। শাড়িটা দেখেই মন ভালো হয়ে গেল। আমি আদনানকে বললাম,
–: আপনি কীভাবে বুঝলেন, নীল রঙ আমি পছন্দ করি।
–: তোমার মনে লুকিয়ে আছে, অনেক বিরহ-কষ্ট। আর নীল হচ্ছে বিরহের প্রতীক। তাই নিয়ে আসলাম।
–: জানেন,আমার নীল রঙ এতোটাই পছন্দের, সব সময় নীল রঙের ড্রেস পড়তাম। একবার ফ্রেন্ডরা সবাই মিলে ভাবলাম, এক রকম ড্রেস কিনব। আনিলা বলছিল, ড্রেস যে কোনো রঙের হোক তাতে সমস্যা নেই। শুধু নীল না হলেই হলো। পরে‌ ড্রেস মিল করতে না পেরে, শেষে নীল রঙের ড্রেসই কিনতে হয়েছে। আমি সেদিন খুব খুশিঁ হয়ে ছিলাম।
–: বিকালে আমরা বের হব। শাড়ি পড়ে তৈরি থেকো।

আদনান আমাকে নিয়ে ওদের বাসার কাছের রুপসা নদীতে নিয়ে গেল। খুব ভালো লাগছে। প্রচুর বাতাস। পাশে প্রিয় মানুষ। নদীর কিনারে কাশঁফুল।
ও আমাকে ভালবাসে কিনা জানিনা। তবে আমার মন ভালো করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ও। ছোট ছোট ইচ্ছাগুলোকে গুরুত্ব দেয়। আব্বু যাওয়ার সময় যখন আমাকে ধরে কাঁদছিল, তখন ও আব্বুকে বলছিল,
” কাঁদবেন না। ও সুখে থাকবে এখানে।”
জানিনা কতোটা সুখে থাকবো। তবে ও যে ভরসা দিয়েছে এটাই অনেক।

ওর হাত ধরে উঠছি। কেমন যেন এক অনুভূতি হচ্ছে। বুকের ভেতরটা এক অজানা ভালো লাগায় কেঁপে উঠছে। আমি মনে মনে একটা কবিতা রচনা করে ওকে‌ বললাম,

“পড়ন্ত বিকালে, নদীরও কিনারে –
হাতে রেখে হাত, হাটতেছি একসাথে,
সৃতি হয়ে থাকবে, হৃদয় পটে-
হারিয়ে যাবে যখন , কালের প্রবাহে।”

“বা!! সুন্দর তো। আর যদি না হারাই তাহলে।” বলে উঠলো আদনান।
আমি বললাম, সুন্দর মুহূর্ত সবসময়ই‌ মনে থাকবে। হারাও বা না হারাও।
যাই হোক আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল।
–: বলো।
–: মারুফ ভাইয়ের সাথে , আনিলার বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিলে ভালো হতো। মারুফ ভাইকে তার কোম্পানি থেকে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য দেশের বাহিরে পাঠানো হবে, এক বছরের জন্য। সামনের মাসেই চলে যাবে। মাকে বলে পরের‌ শুক্রবার বিয়ের ব্যাবস্থা করলে ভালো হতো।
–: আচ্ছা, দেখি।
–: উহু, কোনো দেখাদেখি নেই। কনফার্ম করতে হবে।
–: আচ্ছা , বাসায় যেয়ে নেই।

বাসায় ফিরে দেখি, আদনানের চাচা-চাচী, আর ওর চাচার ছেলে‌ আবির আসছে। ওরা বিয়েতে যেতে পারেনি। দেশের বাহিরে ছিল। আমাকে দেখে চাচী বলতেছে,
–: তোমার তো ভাগ্য ভালো। আদনানকে পেয়েছ। তোমার চেয়ে সুন্দরী কতো মেয়ে ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু ও করলো না। শেষ পর্যন্ত তোমাকে করলো। আমার বোনের মেয়ে তোমার চেয়ে অনেক সুন্দরী, আর ধনী। ওকে না করে তোমাকে করলো। কি জানে, তোমার মাঝে কি খুজেঁ পেয়েছে।
আদনানের রাগ রাগ ভাব নিয়ে বললো,
” চাচী, এসব তোমার না জানলেও হবে। সুন্দরী বউ হলেই যদি সব মানুষ সুখী হতো, তাহলে সবচেয়ে বেশি সুখী, চাচার হওয়ার কথা ছিল। অথচ , সেই সবচেয়ে অসুখী মানুষ। আর জুঁই যথেষ্ট সুন্দরী। আর ওর মনটা অনেক‌ ভালো। ও আমার পরিবারকে দুইদিনেই আপন করে নিয়েছে। যেটা আপনার বোনের মেয়ে‌ পারতো না।”
চাচী বলে উঠলো,
” তুই আমার সাথে এভাবে কথা বললি? আমিও দেখে নিব কতোটা ভালো এই মেয়ে।

আমি ভাবতেছি,
“এক সমস্যার মধ্য আরেক সমস্যা উপস্থিত। আমি কি‌ পারবো, সব বাধা অতিক্রম করে সফল হতে?”

চলবে…

Saifa adnan

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে