টক_মিষ্টি_ঝাল পর্ব_৪

0
3519

টক_মিষ্টি_ঝাল পর্ব_৪

সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে আবিষ্কার করলাম আদনানের বুকে। প্রতিদিন তো মাঝখানে কোলবালিশ থাকে। তাহলে আজ গেল কোথায়।
তারপরই মনে পড়লো, কাল চাচীর সাথে কথা কাটাকাটি করে কিছু না খেয়েই‌ শুয়ে পড়ছে । আমার বা ওর কারোই মাঝখানে বালিশ দেওয়ার কথা মনে ছিল না।
ভালোই হয়েছে , মাঝখানে বালিশ দেইনি। এইভাবে, এতোটা কাছ থেকে এই প্রথম ওকে অনুভব করলাম।

কি ফর্সা বুক! মুখে হালকা দাড়ি। ঠোটের নিচে একটা তিল।থুতনিতে একটা টোল,যা ওর সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বুকেও একটা তিল। আমারও ঠিক একই জায়গায় তিল। মিল আছে ওর সাথে। তাই ওকে চিমটি কাটতে নিলাম। পরক্ষণেই মনে হলো, তাহলে তো ও জেগে যাবে।।
সত্যিই ছেলেটা অনেক সুন্দর। চাচী ঠিকই বলেছে। আমি ওর যোগ্য না। ও চাইলে আরো সুন্দরী কাউকে পেতে পারতো।

ওর বুকে মাথা রেখে থাকতে খুব ভালো লাগছে। সারাজীবন যদি এভাবেই থাকতে পারতাম। ও যদি ভালবেসে আমাকে, ওর বুকে জড়িয়ে নিতো, ওটাই হতো আমার সবচেয়ে প্রাপ্তি। জানিনা, আদৌ সেটা হবে কি না। আদৌ সে আমাকে ভালবাসবে কি না। তবে, ভালবাসুক আর না বাসুক, ও যে কাল‌ আমার হয়ে চাচীর সাথে কথা বলছে , এটাই অনেক।

উফ!! আমাকে‌ খেয়ে ফেলবা নাকি?” আদনানের কথায় চমকে উঠে ওর বুক থেকে উঠতে নিলাম। ছি: ও দেখে ফেলছে। তাহলে এতোক্ষণ এই লোকটা জেগেই ছিল।
আদনান টেনে আমাকে আরো বুকের সাথে চেপে ধরলো,
“উহু, উঠতে দিব না। এতোক্ষণ তো মনে হয় খেয়ে ফেলবা, এমন করে তাকিয়ে ছিলা । এখন লজ্জ্বা পাচ্ছ কেন?
–: ইস! লজ্জ্বা পাওয়ার‌ কি হয়েছে। আর আপনি কি খাওয়ার কিছু? কি করে খাব আমি।
–: মুখে না খেলেও, চোখে‌ তো পুরাই গিলছো। বলেই নাকে নাকে ঘষা দিলো।
কি ‌এক অজানা অনুভূতিতে শিহরিত হয়ে উঠলাম। নিজেকে সামলানোই দেখি কষ্টকর হয়ে পড়ছে। উনাকে ধাক্কা দিয়ে বললাম , ছাড়ুন আপনি। কি করছেন?
–: যা করার তা করছি।
–: আপনার দেখি লজ্জ্বা নেই। মেয়ে লোক পেলে ছাড়তে ইচ্ছা করে না বুঝি।
–: ইস! বউয়ের কাছে আবার কীসের লজ্জ্বা? অন্য লোক হলে তো বিয়ের রাতেই …। আর আমি কতোটা বীরপুরুষ দেখো। এখনো ঠিক আছি।
–: বীরপুরুষ না ছাই।
–: জড়িয়ে ধরলে , আমি ভালো না। আর না ধরলেও কাপুরুষ। কী মেয়েলোক রে বাবা!!
জানো,তোমাকে আমার কেন ভালো লাগে? এই যে দেখো,যখন বললাম আমি,” আমাকে তো দেখি খেয়েই ফেলবে”
তখন অন্য মেয়ে হলে লজ্জ্বাতেই শেষ হয়ে যেত। আর তুমি লজ্জ্বা পেলেও,তা চাপা দেওয়ার জন্য আমার সাথে ঝগড়া করছো। আমার বিশ্বাস, তুমি চাচীর কথাকে ভুল প্রমাণ করে দিবে।
বলেই ঠোঁটে একটা চুমু দিয়ে দিলো।

আনিলার রুমের দিকে যাচ্ছি, আর ঠোঁটে হাত বুলাচ্ছি। এখান‌েই তো চুমু দিয়েছে আদনান। আনিলা বললো,
–: কী ব্যাপার ঠোঁটে হাত দিয়ে রাখছিস কেন? এখানে ভাইয়া কিছু করছে নাকি।
–: আনিলা, আমি তোর ভাবি হই। সম্মান দিয়ে কথা বলবি।
–: ইস!! তোকে কি ভাবিজান বলে ডাকবো তাহলে। আর কীভাবে দিব সম্মান।
–: হইছে তোর আর সম্মান দিতে হবে না। ‌তোকে‌ একটা সুখবর দেওয়ার আছে।
–: নিশ্চয়ই, আমার আর মারুফের বিয়ের কথা ।
–: ইস!! এটা কোনো সুখবর হলো। সুখবর হলো আমি বাড়ি যাবো।
আনিলা মন খারাপ করে ফেললো। তারপর বললো,
–: তোকে একটা দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তুই সেটার কিছু না করেই চলে যাবি। আচ্ছা, যা।
আমি আনিলার নাক টেনে বললাম,
–: আহারে, আমার ননদিনী কষ্ট পাইছে। কিছুদিন পর বিয়ে করলে সমস্যা কি।
–: তুই এসব বুঝবিনা।
–: থাক, আর বুঝতে হবে না।
থাকুক না কিছুক্ষণ রেগে। পরে না হয় রাগ ভাঙ্গাবো।

বিকালে আদনানদের মোটামুটি সব আত্মীস্বজন আসছে। আনিলা এসে আমাকে বললল,
“বাড়িতে এতো লোকজন কেন?”
আমি বললাম,
“আমি চলে যাব তো। তাই বিদায় দিতে আসছে”
মনে হলো আনিলার কথাগুলো বিশ্বাস হয়নি। অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে কতোক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেল।

রাতে দুইটা হলুদ শাড়ি নিয়ে আনিলার রুমে গেলাম। আনিলা দেখি‌ মন খারাপ করে বসে আছে। আমি গিয়ে বললাম ,
–: কীরে , কি হইছে?
–: মারুফ রাগ করছে খুব। এখন বিয়ে না হওয়ার কথা শুনে ক্ষেপে গেছে খুব। আজ সারাদিনে কথা বলেনি একবারও।
–: হয়তো বিয়ের রাতে বলার জন্য জমিয়ে রেখেছে।
আনিলা রেগে গিয়ে বললল,
–: জুঁই , সবসময় মজা ভালো লাগে না।
আমি মিথ্যে কষ্ট পাওয়ার অভিনয় করে বললাম,
–: হ্যা, মানুষ পুরাতন হয়ে গেলে, তাকে আর ভালো লাগে না। তাই আমাকেও আর ভালো লাগছে না। সবাইকে বলে বিয়ের জন্য রাজি করালাম। আর এখন আমাকেই ভালো লাগছে না।
আনিলা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–: সরি,ডিয়ার। মারুফ কথা না বলায় মন খারাপ করছিল খুব। তাই এভাবে কথা বলে ফেলছি। আবারও সরি। দেখ , কান ধরে বলছি। দাড়াও, মারুফকে বলে নেই।
–: মারুফকে বলতে হবে না। ও জানে। তোর জন্য গাঁয়ে হলুদের শাড়ি আর যা লাগবে সব পাঠাইছে।
আনিলা অভিমান করে বললো,
” তার মানে, তোমরা সবাই জানো। শুধু আমিই জানি না । তোমরা সবাই অনেক খারাপ। আমাকে শুধু শুধু কষ্ট দিছো ।
–: আর কষ্ট পেতে হবে না। কাল তোমার হলুদ ছোঁয়া। মারুফ ভাই শাড়ি পাঠিয়েছে দুইটা। তোর আর আমার জন্য। দেখ কোনটা পড়বি।
আমি রুমে গেলাম।

আবির ছেলেটাকে আমার ভালো লাগছে না। বিভিন্ন অজুহাতে গায়ে হাত ছোঁয়ানোর চেষ্টা করে।রুমে আসলাম মাত্র। আদনান রুমে নেই। হঠাৎ অনুমতি ছাড়াই আবির রুমে ডুকে ‌পড়লো।
এসে বলতেছে,
–: ভাবি তুমি দেখতে অনেক কিউট, আর সবার সাথেও খুব ভালো ব্যবহার করো। তোমাকে অনেক ভালো লাগে আমার‌ কাছে। কাল মা যা বলছে , তার জন্য সরি।
–: আরে, সরি বলার কি হয়েছে। চাচীতো মায়ের মতো। ওনার উপরে কোনো রাগ নেই।
–: এজন্যই তোমাকে আমার অনেক ভালো লাগে। তোমার মতো যদি আমার একটা বউ হতো।
তবে, আমার একটা জিনিস খুব খারাপ লাগে। তুমি আমাকে এড়িয়ে চলো কেন?‌বলতে বলতে অনেকটা কাছে এসে দাড়াল।
–: আমি চাই পর্দা করে চলতে। কিন্তু পুরোপুরি হয়তো চলতে পারি না। আপনাকে দেখা দেওয়া ইসলামের নিয়ম বহির্ভূত। তারপরও দেখা দিচ্ছি। এই যে, আদনান রুমে নেই। আপনি আর আমি রুমে একা। এটাও ঠিক না।
ও এসে আমার হাত ধরে বললো,
–: সুন্দরী, তুমি অযথাই ভয় পাচ্ছ আদনানকে। ও কিছুই বলবেনা তোমাকে। তুমি আমার সাথে সহজভাবে কথা বলতে পারো।
আমি হাতটা টেনে নিয়ে চিল্লানি দিয়ে বললাম,
–: আমি তো আদনানকে ভয় পাই না। আমি তো ভয় করি আমার আল্লাহকে। আপনি এখন রুম থেকে চলে গেলে আমি খুঁশি হব।
–: ভাবি শুধু একটু হাত ধরছি। আর তো কিছু করি নি। এজন্য এমন করলা।
–: ভাই এসব আমি পছন্দ করি না। আপনি আমার সাথে আর কখনো এমনটা করার চেষ্টা করবেন না।
বলতেই, আবির রুম থেকে চলে গেল।

ওয়াশরুম থেকে আদনান বের হয়ে বললো,
” আমার বউটা অনেক ভালো। আবিরকে কথা শুনানোর জন্য ধন্যবাদ।
আমি চমকে উঠে বললাম,
” আপনি ওয়াশরুমে ছিলেন? বের হলেন না কেন।
–: হু, আমি ভাবছি আবিরের সাথে প্রেম করো। তারপর বের হব।
–: আপনি এতো খারাপ কেন? আমিতো ভয় পাচ্ছিলাম। আর আপনি মজা নিচ্ছিলেন।
–: আমার বউটা তো এমনিতেই অনেক সাহসী। যে বাসর রাতে জামাইর সাথে ভিলেন মার্কা আচরণ করতে পারে, তাকে আবির কি করতে পারে তা জানা আছে আমার।
বলেই জড়িয়ে ধরলো।
” ইস!! ছেড়ে দিন। আজ আনিলার হলুদ ছোঁয়া। অনেক কাজ আছে।”

আনিলা দেখতে আদনানের মতোই সুন্দর । হলুদ শাড়িতে যেন এক হলদে পাখি। আনিলার কাছে গিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললাম,
” তুই এতো সুন্দরী কেন, আনিলা। ঠিক রাজকন্যাদের মতো লাগছে । এজন্যই তো, মারুফ ভাই এতোটা পাগল হইছে।”
পেছন থেকে আবির ভাই বললো,
” আমার তো‌ , তোমাকে রাজকুমারীর মতো লাগছে। ”
আনিলা বললো,
আবির ভাই , তুমি একটু যাও। জুঁইয়ের সাথে কথা আছে আমার।
আবির ভাই চলে যেতেই আনিলা‌ বললো,
জুঁই, আবির বা চাচী কেউই মানুষ ভালো না।
সেদিন তোমাকে চাচী ওভাবে কথা শোনানোতে, আনিসা আপু রেগে গিয়েছিল। পরে মা তাকে নিষেধ করাতে আর কিছু বলেনি।
ওরা তোমাকে অপদস্থ করার চেষ্টা করবে।ওদেরকে আমার সুবিধার মনে হচ্ছে না। সতর্ক থেকো তুমি।

চাচীর রুমে গেলাম, চাচীকে ডাকার জন্য। হঠাৎ আবির ভাই রুমে এসে দরজা আটকে দিলো। একটু একটু এগিয়ে আসছে আমার দিকে।
আমি মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি আর বলছি, এই বদমায়েশ লোক থেকে আমাকে রক্ষা করো তুমি ।
চলবে..

Saifa adnan

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে