জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
992

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা-৪র্থ পর্ব
©শাহরিয়ার

— ঝুম বৃষ্টি ছাঁদের মাঝে দাঁড়িয়ে মনের সুখে বৃষ্টিতে ভিজছে ইকরা। কখন যে সোহান পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে সে দিকে কোন খেয়াল নেই তার গুনগুন করে গান গেয়ে চলেছে ইকরা আজ

“আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না।।
এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদ্‌ভ্রান্ত মেঘে মন চায়
মন চায় ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে॥
মেঘমল্লার সারা দিনমান।
বাজে ঝরনার গান।
মন হারাবার আজি বেলা, পথ ভুলিবার খেলা– মন চায়
মন চায় হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে॥”

— গান শেষে করে পেছনে ফিরে তাকাতেই ইকরা চমকে উঠলো সোহানকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে। তাড়াতাড়ি ওড়নাটা ঠিক করে নিয়ে।

ইকরা:- তুমি এখানে কখন এলে?

সোহান:- ইতস্তত করতে করতে বললো একটু আগেই তুই যখন গান গাচ্ছিলি। হ্যাঁরে তুই এতো সুন্দর গান গাইতে পারিস আগেতো বলিস নি?

ইকরা:- আরে কি বলো আমি অতো ভালো গান পারি না। আর এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকাটা তোমার মোটেও ঠিক হয়নি।

সোহান:- সামনে গেলেতো আর এতো সুন্দর গানটা শুনতে পেতাম না। তাই ইচ্ছে করেই সামনে যাইনি।

ইকরা:- ইস তুমি খুব পঁচা বুঝলে।

সোহান:- আর তোর মাথা মোটা।

ইকরা:- এই একদম এসব বলবে না। আমি জ্যামিতি কম পারলেও অংকে কিন্তু মোটেও কাঁচা না।

সোহান:- ওহ তাই বুঝি? খুব পেকে গেছিস।

ইকরা:- এখন রাস্তা ছাড়ো আমার ঠাণ্ডা লাগছে খুব নিচে নেমে যাবো।

সোহান:- যা না যা তোকে কি আমি ধরে রেখেছি। বলেই কিছুটা সরে দাঁড়ালো।

— ইকরা যাবার জন্য পা বাড়াতেই প্রচণ্ড জোড়ে বজ্রপাতের শব্দ হলো ইকরা চিৎকার করে সোহানকে জড়িয়ে ধরলো। সোহানও দু’হাতে ইকরাকে জড়িয়ে ধরলো। অনেকটা সময় সোহানের বুকের মাথা রাখার পর যখন ইকরা মাথা তুলতে যাবে তখন বুঝতে পারলো পিঠের উপর প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে সোহান চেঁপে ধরে রেখেছে।

ইকরা:- ছাড়ো মরে গেলাম। কি করছো এটা কি রোমান্টিক কোন মুভির সুটিং নাকি? যে এভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখছো? নাকি সুযোগের সৎ ব্যবহার করছো?

সোহান:- ওহ আমিওতো তাই বলি, এটা কি কোন সিনেমার সুটিং নাকি যে বজ্রপাতের শব্দে এভাবে তুই আমাকে জড়িয়ে ধরলি। নিশ্চই তুই সুবিদা নিতে চেয়েছিলি।

ইকরা:- তোমার মাথা বলে সোহানকে ধাক্কা মেরে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।

— সোহান অপলক ইকরা চলে যাওয়া দেখছে দাঁড়িয়ে আর মনে মনে বলছে কন্ট্রোল সোহান কন্ট্রোল। এভাবে একদিন তুই ধরা খেয়ে যাবি, ইকরা বুঝে ফেলবে তুই ওকে ফলো করিস ওকে ভালোবাসিস। অনেকটা সময় বৃষ্টির ভিতর ছাঁদে দাঁড়িয়ে অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে এতটা সময় সন্ধ্যায় পুরো আকাশ কালো হতেই সোহান নিচে নেমে চলে আসে

— ইকরা মনে মনে লজ্জা শরম বলতে কিছুই নেই, দিন দিন বড় হচ্ছে আর লজ্জা শরমের মাথা খাচ্ছে হুটহাট যখন তখন যেখানে সেখানে চলে আসে। আসে আসুক আমিতো মানা করিনি। তাই বলে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবে চুপ করে? ইস বৃষ্টিতে ভিজে শরীরের সাথে পুরো জামাটা লেপ্টে ছিলো। কি লজ্জা সব কিছু দেখে ফেলেছে। আচ্ছা সোহান যদি ছাঁদে না আসতো আমার কি ভালো লাগতো? ইস ওর বুকের মাঝে কি শান্তি। পাগলটা বুঝে না কা শক্ত করে চেঁপে ধরে মনে হয় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। একটু ভালোবেসে ধরতে পারে, একটু রোমান্টিক ভাবে ধরতে পারে। একটি হাত দিয়ে ধরে আমার থুতনিটা উপরে তুলবে আমার ভেজা চুল থেকে পানি কপাল গড়িয়ে নাকের ডোগা স্পর্শ করে যখন ঠোঁট পর্যন্ত আসবে তখন। ইস লজ্জা লজ্জা লজ্জা। না কিছুই না সে একটা আঙ্গুল দিয়ে তা মুছে দিতে দিতে বলবে তোকে খুব সুন্দরি লাগছে। হায়রে কোথায় আমার ভাবনা আর কোথায় সে পাগলের কাজ। কোন কিছুর সাথেই কোন কিছু মিলে না। আমি একাই শুধু স্বপ্ন দেখি একাই শুধু ভালোবাসি তাহারে।

— দু’জনের আবার মুখোমুখি রাতের খাবার টেবিলে সবার সাথে। পুরো পরিবার এক সাথে রয়েছে। রাতের খাবারের এই সময়টা সবার খুব প্রিয়।

সোহানের বাবা:- কোথাও বেড়াতে যাওয়া উচিৎ কি বলো তোমরা?

ইকরার বাবা:- তুমি যা ভালো মনে করো।

সোহানের বাবা:- তারপরেও সবার মতামত ছাড়া কি সম্ভব নাকি?

ইকরা:- আমার কোন সমস্যা নেই বড় আব্বু সমস্যা থাকলে তোমার ছেলের থাকতে পারে।

সোহান:- এই আমি কি তোকে বলছি আমার সমস্যা আছে? সব সময় বেশী পাকনামি করিস।

সোহানের বাবা:- আহা থাম থাম তোরা দু’জন কি শুধু সব সময় ঝগড়াই করবি নাকি? মনোযোগ দিয়ে কথা শোন এবার কোথায় যাবো তার জন্য পছন্দ মত জায়গা তোরা দু’জনই খুঁজে বের করবি। কাজ না থাকায় দুই জন খুব বেড়ে গেছিস, নে এই কাজ করবি তাও মাত্র তিন দিন সময় দিলাম। আর জায়গা পছন্দ মত না হলে টুর ক্যান্সেল। মনে থাকে যেনো কথা গুলো বলতে বণতে হাত ধুয়ে টেবিল থেকে উঠে হাঁটা শুরু করলো নিজের ঘরের দিকে।

— একে একে সবার খাওয়া শেষে যার যার রুমের দিকে রওনা হয়ে চলে গিয়েছে। টেবিলে এখন শুধুই সোহান আর ইকরা পরে রয়েছে। সোহান অগ্নী দৃষ্টিতে ইকরার দিকে চেয়ে রয়েছে দেখে ভয়ে ভয়ে ইকরা সোহানকে বললো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

সোহান:- কিছুটা রাগী রাগী ভাব নিয়েই তোর জন্য এমন কাজের দায়িত্ব কাঁধের উপর পরলো। এবার তুই খুঁজে বের কর কোথায় যাবি।

ইকরা:- আমার কি দোষ আর আমি কি তেমন কিছু চিনি নাকি? তুমিই খুঁজে বের করো না প্লীজ।

সোহান:- এই চুপ একদম চুপ এতটুও ন্যাকামি করবি না, মাথায় প্লেট দিয়ে বাড়ি দিবো।

ইকরা:- কি তোমার এতো সাহস?

সোহান:- সাহসের দেখেছিস কি?

ইকরা:- প্লেট গুছিয়ো রাখতে রাখতে কত যে সাহস আছে তা আমি ভালো করেই জানি, সাহস দেখাতে আসলে চিৎকার করবো এখুনি চাচা চাচীকে ডাকে দিবো।

সোহান:- তুই কি আর কিছু পারিস? পারিস শুধু বাবা মাকে ডাক দিতে আমিও চাচীকে ডাক দিতে পারি। তোর মুখ ভেঙে দিবে এখুনি এসে।

ইকরা:- হয়েছে এখন চিন্তা করো কোথায় যাওয়া যায়। আমি রুমে যাচ্ছি কিছুক্ষণ পর ছাঁদে যাবো ঐখানে এসে জানাইও কোথায় যাওয়া যায়।

— বলতে বলতে ইকরা উপরে উঠতে শুরু করলো। সোহান চেয়ারে বসে রইলো মাথায় কোন কিছুই ঢুকছে না কোথায় যাওয়া যায়। আর ভালো জায়গা খুঁজে বের না করলে খবর করে ছাড়বে বাবা। সবার ঘুরাঘুরি নষ্ট করা মানে পকেট খরচের জন্য একটা টাকাও বাবা দিবে না এটা নিশ্চিৎ। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে সোহানও নিজের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। রুমে এসে কোন কিছুই ভালো লাগছে না দেখে ছাঁদে উঠতে শুরু করলো। বৃষ্টির পর আকাশে সুন্দর চাঁদ উঠেছে। সেই সাথে হিম শীতল বাতাস মন জুড়িয়ে যাবার মত। চারিদিকে চোখ বুলালে মন ভালো হয়ে যাবে যে কোন মানুষেরই। নানান রকম চিন্তায় সোহান ভুলেই গেছে আসল কথা তাকে যে খুঁজে বের করতে হবে সুন্দর একটি জায়গা যেখানে এই বর্ষার মৌসুমে ঘুরতে যাওয়া যায়। যেখানে ঠিক এমনই জ্যোৎস্না রাত থাকবে চারিদিক আলোকিত হবে সে আলোয়।

ইকরা:- কখন আসছো ছাঁদে।

— ইকরার ডাকে কিছুটা চমকে উঠে সোহান পেছনে ফিরে এই অনেক সময় হয়েছে।

ইকরা:- খুঁজে পেয়েছো কোথায় যাবে?

সোহান:- সব জায়গায় তো কম বেশী ঘুরা হয়ে গিয়েছে। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সিলেট, রাঙামাটি, বিছানাকান্দি। সব জায়গায় কম বেশী ঘুরা শেষ। আমিতো তেমন কোন ভালো জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। এখন তুই বল কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়।

ইকরা:- এক কাজ কর নেটে ঢুকে সার্চ দিয়ে দেখো কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়।

সোহান:- এইটা তুই ভালো আইডিয়া দিয়েছিস, নেটে ঢুকার আগে একবার বন্ধুদের ফোন দেই ওদের জানা শুনা থাকতে পারে ভালো জায়গা সম্পর্কে। তুইও তোর বান্ধবিদের দিয়ে দেখতে পারিস।

ইকরা:- ওকে তুমি খোঁজ নাও আমিও নিচ্ছি।

— দু’জন দু’জনের বন্ধু বান্ধবিদের ফোন দিতে লাগলো। সকলেই সেই কক্সবাজার সিলেট কিংবা সেন্টমার্টিনের কথাই ঘুরে ফিরে বলছে। দু’জনে হতাশ হয়ে একে অপরের দিকে তাকালো। ইকরা সোহানকে বললো আসলে বন্ধু বান্ধবিদেে দিয়ে কিছুই হবে না। তুমি বরং নেটে ঢুকে সার্চ দাও।

সোহান:- হুম তাই করবো।

— সোহান নেটে ঢুকে সার্চ দিলো মোটামুটি সব জায়গায় পরিচিত এবং যাওয়া হয়েছে এমনই সব জায়গা ঘুরে ফিরে আসছে। সোহান মন খারাপ করে ইকরার দিকে তাকালো।

ইকরা:- আচ্ছা আমরা ঘুরতে যাই কেন বলোতো?

সোহান:- কেন আবার সুন্দর পরিবেশে মন ভালো করার জন্য।

ইকরা:- ঠিক তাই, শোন তবে আমরা এবার গ্রামে দাদা বাড়িতে বেড়াতে যাবো। সকলের সাথে দেখা হলে সকলের মন ভালো হয়ে যাবে। আর সুন্দর পরিবেশে ঘুরাও হয়ে যাবে।

সোহান:- ওয়াও! অসাধারণ একটা বুদ্ধি দিয়েছিসতো। কে বলে তোর মাথা মোটা এইতো তোর মাথায় চিকন বুদ্ধি আছে।

ইকরা:- এই আবার এসব বলছো।

— দু’জন ঝগড়া করতে করতে প্রচণ্ড বাতাস শুরু হলো। দু’জন দৌঁড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে যেয়ে একজন আরেক জনের সাথে মাথায় মাথায় টাক খেলো। সোহান ইকরার দিকে আর ইকরা সোহানের দিকে তাকালো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে