জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-১৫+১৬

0
968

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা- ১৫ তম পর্ব
©শাহরিয়ার

ইকরা:- এই রোমান্স কি রে?

মিলু:- এতো বড় মেয়ে তুমি বুঝ না? আমার বলতে লজ্জা করে।

সোহান:- মিলুর কান টেনে লাজ লজ্জা বলতে কিছু নাই? সারা দিন ফেসবুকে পরে থেকে এসব শিখতেছিস।

মিলু:- উফ ভাইয়া ছাড়ো না হলে বড় আব্বার কাছে বলে দিবো তোমাদের প্রেমের কথা।

সোহান:- কান টেনে ধরেই তোর কি মনে হয় আমি ভয় পাই? মোটেও ভয় পাই না বুঝলি। এখন আপাতত বেকার সে জন্য চুপ করে আছি নয়তো কবে বিয়ে করে ফেলতাম।

— কথাটা বলেই ইকরার দিকে তাকালো সোহান, ইকরার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে, সোহান ওদিকে তাকিয়েই বললো, আমি কি রাসেল ভাইয়ের মত বুড়া বয়সে বিয়ে করবো নাকি? সময় মতই বিয়ে করবো বলে মিলুর কান ছেড়ে দিলো। ইকরা কিছুটা শরম পেয়ে খাট ছেড়ে উঠে ব্যালকনির দিকে চলে গেলো।

মিলু:- এটা কি করলা ইস কান দুইটা ব্যথা করে দিছো।

সোহান:- বেশ করেছি সব সময় কেমন বড় মানুষের মত পাকনা পাকনা কথা।

মিলু:- মাথা হাতাতে হাতাতে, ঐ যে আপু অভিমান করে ঐদিকে গেছে এখন রাগ ভাঙাও।

— মিলুর দিকে তাকিয়ে সোহান সেদিকে হাঁটা শুরু করলো, পেছনে বিছানায় গা মিলিয়ে দিয়ে মিলু মিটমিট করে হেসে চলছে। চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে, সেই সাথে বৃষ্টিও পরছে খুব জোরে, বৃষ্টি মনে হয় আজ থামবে না। সোহান ইকরার পাশে যেয়ে দাঁড়িয়ে তোর আবার কি হলো এই অন্ধকারে এখানে এসে দাঁড়ালি কেন?

ইকরা:- এমনি বৃষ্টি দেখার জন্য।

— সোহান দুহাতে ইকরার দুই বাহু চেঁপে ধরে সত্যিই এমনি? ইকরা কোন উত্তর দেয় না, শুধু ঠোঁট দুটো কেঁপে কেঁপে উঠছে, আবার প্রশ্ন করে কিরে কথা বলছিস না কেন? ইকরা নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচে নামিয়ে বোকার মত বলে রোমান্স কি? যে কোন ছেলে মেয়ে এমন প্রশ্ন শুনলে হেসে দিবে, সোহানের ও যে হাসি আসছিলো না তেমনটা নয়, তবে সোহান এটা বুঝতে পারছিলো ইকরা ইচ্ছে করেই এমনটা বলছে, এই মুহুর্তে ইকরা যতটা বোকার মত এই প্রশ্নটা করছে ইকরা ঠিক ততটা বোকা নয়। তবে এই মুহর্তে ইকরা খুব করে সোহানের কাছে ভালোবাসার স্পর্শ চাচ্ছে। সোহান একটা হাত ইকরার থুতনিতে নামিয়ে নিয়ে এসে মুখটা উপরে তুলতেই একজনের চোখে আরেক জনের চোখ পরে। ইকরার চোখের পাপড়ি গুলো বার বার উঠা নামা করছে। সোহান ইকরার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ করাতেই বাতাসে বৃষ্টি এসে দু’জনের মুখ ভিজিয়ে দিতে শুরু করলো। আকাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে এলো। হঠাৎ করে রুমের ভিতর থেকে মিলু বলে উঠলো, আর ভিজতে হবে না ঘরের ভিতর আসো নয়তো বরফ হয়ে ব্যালকনিতেই পরে রবে। দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রুমের ভিতর ঢুকতেই মিলু আবার বললো তাহলে অভিমানের পালা শেষ হলো। সোহান বড় বড় চোখ করে তাকাতেই মিলু চুপ হয়ে গেলো। ইকরা আর সোহান দু’জনেই শব্দ করে হেসে দিলো।? মিলু ছোট হলেও এতোটা ছোট না তাই এ হাসির মানে বু্ঝতে ওর কষ্ট হলো না। তিনজন গল্প করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো, জুহি এসে খাবার খাওয়ার জন্য ডাক দিলো। সকলে এক সাথে চলে গেলো রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। সবাই মিলে রাতের খাবার খেতে খেতে ফুপু বলে উঠলো, ভাইজান রাসেলেরতো বিয়ে দেয়া দরকার একটা ভালো পাত্রী দেখা দরকার।

বাবা:- হ্যাঁ বয়সতো অনেক হয়ে যাচ্ছে আমরাও আছি দেখ ভালো পাত্রী পাস কিনা আমরা থাকতে থাকতে।

ফুপু:- বললেইতো পাওয়া যায় না তারপরও দেখি কি হয়। এমন অনেক আলোচনার মধ্যে দিয়ে সকলে মিলে রাতের খাবার শেষ করে যার যার রুমে চলে গেলো।

— সোহান নিজের রুমে শুয়ে আছে, ইকরা আর মিলু তাদের রুমে, মিলু গভীর মনোযোগ দিয়ে ফেসবুকিং করছে, এমন সময় ইকরা বললো কি করছিস?

মিলু:- কিছু না গল্প কবিতা পড়ছি কেন?

ইকরা:- না এমনি,

মিলু:- তুমি কি জানো ভাইয়ার গল্প গুলো অনেক সুন্দর আর রোমান্টিক।

ইকরা:- কোন ভাইয়া?

মিলু:- আরে কোন ভাইয়া আবার সোহান ভাইয়ার।

ইকরা:- কিন্তু মানুষটা খুবি আন রোমিন্টিক।

মিলু:- হাসতে হাসতে মোটেও না ভাইয়াও খুবি রোমান্টিক কিন্তু তুমি বুঝনা।

ইকরা:- হয়েছে আমিতো আর তোর মত এতো পাকনা বুড়ি না।

— দু’জন কথা বলছে এর ভিতর পাশের রুম থেকে সোহান ছোট করে ফেসবুকে পোষ্ট করছে অ্যাই এম ইন লাভ। মিলু ইকরাকে পোষ্টটা দেখিয়ে কমেন্টস বক্সে কমেন্টস করলো অভিনন্দন ভাইয়া। তাড়াতাড়ি ট্রিট দিও কিন্তু। সোহান সাথে সাথে রিপ্লাই দিলো ঢাকায় যেয়ে দিবো। দুই বোন বসে বসে হাসছে। রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে এক সময় সকলে ঘুমিয়ে পরলো।

— পরদিন সকালে সবাই যখন গোল হয়ে নাস্তার টেবিলে বসেছে তখন ফুপু বলে উঠলো যে গত রাতে তার দেবর ফোন করে বলেছে তাদের গ্রামে একটা মেয়ে দেখেছে। সবাই মিলে যেয়ে মেয়েটাকে দেখে আসলে কেমন হয়?

বাবা:- হুম মন্দ হয়না বলে সবার দিকে তাকালো।

— সকলে নাস্তা করে সেঁজে গুজে রওনা হলো সে মেয়েকে দেখার উদ্দেশ্যে, আগে থেকেই সে বাড়িতে জানিয়ে দিতে বলে ফুপু তার দেবর কে ফোন করে। দুপুরের আগে আগে সকলে যেয়ে সেই বাড়িতে উপস্থিত হয়। সকলে মেয়েকে দেখে মোটামুটি সকলের মেয়ে পছন্দ হয়। টুকটাক কথাবার্তা সেরে সকলে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। পথে আসার পর ফুপুর দেবর জানায় একটা দিন তাদের বাড়িতে থেকে যেতে। সবাই রাজী হয়ে যায় সেখানে থাকার জন্য এক রাত।সেখানে থেকে সকলে চলে আসে। দেখতে দেখতে গ্রামে সাতটা দিন কেটে যায়। অবশেষে সকলে আজ ঢাকায় চলে আসবে। রাসেল আগের রাতেই সবার জন্য টিকেট কেটে নিয়ে এসেছে। বাসায় আজ রান্না বান্নার প্রচুর আয়োজন হয়েছে, মেয়েরা সকলে রান্না বান্না নিয়েই ব্যস্ত সকাল থেকে। ছেলেরা বসে বসে লুডু খেলছে। দুপুরের খাবারের পরেই সকলে রেডি হতে শুরু করলো। সন্ধ্যার আগে আগেই বাড়ি থেকে বের হতে হবে। রাসেল বেশ কয়েকবার করে মিলু আর ইকরার রুমে এসেছে। হয়তো কিছু বলতে চায় কিন্তু কেন জানি কিছু বলতে পারে না। এদিকে ইকরা একবার জিজ্ঞাসাও করেছে, রাসেল বলে না তেমন কিছু না তোদের গুছনো কতটুকু হলো তা দেখতেই এসেছি। এভাবেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসলো। ফুপু অনেক কান্নাকাটি করছে, এই কয়েকদিন যেমন বাড়িটা আনন্দে মেতে ছিলো, আজ ঠিক উল্টো অবস্থা।

বাবা:- ফুপুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, কাঁদিস না রাসেলের বিয়েটা ঠিক হলেই আমরা আবার আসবো।

— সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলো বাস স্ট্যান্ডের দিকে, রাসেল ও সাথে আসলো ওদের উঠিয়ে দেবার জন্য। বাসে উঠিয়ে দিয়ে রাসেল সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। গাড়িতে তেমন বেশী যাত্রী নেই, গাড়ি ছেড়ে দিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। দারুণ উপভোগ করা সাতটা দিন নিয়ে বাসের ভিতর সকলের টুকটাক কথা বার্তা চলছে। এক সময় রাত বাড়তে থাকলো সকলে ঘুমিয়ে পড়লো। খুব ভোরে গাড়ি ঢাকায় এসে পৌঁছালো। সকলে গাড়ি থেকে নামলো, এর মাঝে ফুপু ফোন দিয়ে খোঁজ নিলেন বাবা জানালো। যে ভালো ভাবেই ঢাকায় চলে এসেছে।

— পরদিন থেকেই সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সোহান ইকরাকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিতে যাচ্ছে এমন সময় ইকরা সোহানকে বললো আমাদে আগামি দিন গুলোর কথা চিন্তা করে তোমাকে বাবার ব্যবসা দেখা উচিৎ। সোহান কিছুটা সময় চুপ থেকে বললো বেশতো তাই দেখবো। ইকরা খুশি হয়ে সোহানকে জড়িয়ে ধরলো।

— দু’জনের মাঝে এখন আর আগের মত ঝগড়া লাগে না। তবে দু’জন যখন বাসায় থাকে তখনি ছাঁদে উঠে একজন আরেক জনের সাথে গল্প করে। সোহান বাবা চাচাকে জানায় সে ব্যবসা বুঝে নিতে চায়। বাবা চাচা খুব খুশি হয়। এবং সোহানকে ব্যবসা বুঝিয়ে দিতে থাকে। প্রতিদিন সকালে সোহান অফিসে যাবার সময় ইকরাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে তারপর অফিসে চলে যায়। অল্প দিনের ভিতর সোহান ব্যবসা বেশ ভালো ভাবেই বুঝে নেন। বাবা চাচারাও বেশ খুশি হয় সোহানের উপর। সোহান ও প্রতিদিন ছাঁদে বসে ইকরাকে বলা যে সে ব্যবসাটা বেশ সুন্দর করে বুঝে নিচ্ছে। ইকরা খুশি হয়। সোহানের হাতে হাত রেখে বলে তুমি বাবাকে বলো আমাদের বিয়ের কথা।

সোহান:- ইকরার হাত চেঁপে ধরে বলে হ্যাঁ বলবো আর কয়েকটা দিনসময় দাও আমাকে।

ইকরা:- অভিমানের সুরে ততদিনে আমার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করে দিক।

সোহান:- হাসতে হাসতে দু’জন তাহলে পালিয়ে যাবো।

— ইকরা সোহানের কথা শুনে শুধু হাসে। আর বলে তোমার মাথাটা পুরাই নষ্ট হয়ে গেছে। একদিন সকালে সবাই বাসায় বসে নাস্তা করছে এমন সময় ফুপুর ফোন আসে। বাবা ফোন রিসিভ করতেই ফুপু জানায়। যে মেয়েকে তারা দেখেছিলো সে মেয়ে অন্য ছেলেকে পছন্দ করে আর তার বিয়ে সেখানেই ঠিক করেছে তারা। বাবা খুব দুঃখ প্রকাশ করে। ফুপু তখন বাবার কাছে আবদার করে ইকরাকে রাসেলের বউ বানাতে চায়। বাবা বলে যার মেয়ে তার সাথে কথা বলার জন্য। চাচা বলে আমি এই মুহুর্তে কিছু বলতে পারবো না তোকে রাতে জানাবো।

— বাবা মা, চাচা চাচী সবাই মিলে কথা বলে, তারাও মোটামুটি রাজী হয়ে যায়। এদিকে ইকরা আর সোহান তার কিছুই জানে না। রাতে ফোনে কথা বলার সময় ইকরা যখন এসব শুনে তখন কান্না করে দেয়, সে তার মাকে বলে আমি এ বিয়েতে রাজী না। মা ইকরার মুখ চেঁপে ধরে বলে তোর বাপ চাচার মুখের উপর কথা বলার সাহস হলো কি করে?

— ইকরা বলে জীবনটা আমার কোন খেলনা নয়, আমাকে না জানিয়ে তোমরা কি করে কথা দাও?

— মা অনেক সময় ইকরাকে বুঝিয়ে চলে যায় আর বলে এই বিষয়ে দ্বিতীও বার যেন আর মুখ না খুলে। ইকরা কাঁদতে কাঁদতে ছাঁদের দিকে হাঁটা শুরু করে।

চলবে…

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা- ১৬ তম পর্ব
©শাহরিয়ার

— ছাঁদে উঠে সোহানকে ফোন করে সোহান তখন বাসায় ফিরছিলো। ইকরার কান্নার শব্দ শুনে সোহান প্রশ্ন করে কি হয়েছে? ইকরা বলে তুমি বাসায় আসো তাড়াতাড়ি তারপর তোমাকে বলছি।
বলে ইকরা ফোন কেটে ছাঁদের এক কোনে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। ফোন কাটার পর থেকেই সোহানের মনটা কেমন জানি খারাপ হয়ে গেলো। বাড়িতে নিশ্চই বড় ধরনের কোন সমস্যা হয়েছে। নয়তো ইকরা এভাবে ফোন করে কান্না করার মেয়ে নয়। ভাবতে ভাবতে সোহান বাড়িতে ঢুকে গেলো। সোজা ইকরার রুমের ভিতর ঢুকে গেলো, রুমে ইকরাকে না পেয়ে সোহান বুঝতে পারলো ইকরা কোথায় আছে। সোহান আর দেরী না করে সোজা ছাঁদে উঠে এলো।

সোহান:- ইকরার পেছনে দাঁড়িয়ে, কিরে তোর কি হইছে?

— ইকরা ঘুরে সোহানের বুকের উপর মাথা রেখে হাউমাউ করে কান্না করতে শুরু করলো। সোহান কোন কিছুই বুঝে উঠেত পারছিলো না। কি হচ্ছে। সোহান বাে বার জিজ্ঞাসা করছে কি হয়েছে বলবিতো আমাকে।

ইকরা:- সোহানের বুক থেকে মাথা না তুলে, বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।

সোহান:- কি? কার সাথে আচ্ছা তুি কান্না থামা আমার সাথে ভালো করে কথা বল।

ইকরা:- সোহানের বুক থেকে মাথা তুলে, রাসেল ভাইয়ার সাথে।

সোহান:- বললেই হলো বলা নেই কওনা নেই হুট করে বললেই বিয়ে হয়ে গেলো? তুই চাচাকে বলিস নাই তুই বিয়ে করবি না?

ইকরা:- আমি বলার চেষ্টা করছি কিন্তু মা আমাকে কোন কিছু বলারই সুযোগ দেয়নি। এখন কি করবা তুমিই ভালো জানো। বলেই ইকরা আবার কান্না করতে শুরু করলো।

সোহান:- তুই কান্না করিস না, আমিতো আছি তাইনা চল নিচে চল রাত হয়ে আসছে। আর বাবা আর চাচাকে তুই বলবি তুই এ বিয়ে করতে চাস না তারপর যা হবে আমি বুঝবো।

— সোহানের দিকে তাকাতে সোহান চোখের ইশারায় বুঝালো আমিতো আছি তোর সাথে। দু’জন নিচে নামতেই দেখতে পেলো সকলে ডাইনিং এ বসে আছে। সোহান আর ইকরা সকলের সাথে যেয়ে ডাইনিং এ বসলো।

সোহানের বাবা:- কিরে মা তোকে এমন।দেখাচ্ছে কেন?

ইকরা:- মাথা নিচু অবস্থায় বড় আব্বু আমি এ বিয়ে করতে পারবো না।

— ইকরার মা ইকরার দিকে দৌঁড়ে আসলো, এসেই থাপ্পর মারতে যাবে এমন সময় সোহানের মা এসে হাত চেঁপে ধরে আহ কি করছো এসব।

মা:- যা করছি ঠিকই করছি ওর সাহস হলো কি করে এই কথা বলার।

সোহান:- চাচী তুমি এটা কেমন কথা বলছো? সারা জীবন সংসার করবে ও আর ওর সারা জীবনের ফয়সালা তোমরা কি করে করবে?

সোহানের বাবা:- সোহানের দিকে তাকিয়ে আজ পর্যন্ত এ বাড়িতে আমরা যা বলে এসেছি তাই হয়েছে। আর তুই ভালো করেই জানিস আমরা কাউকে কথা দিলে তার নড়চর হয়না।

সোহান:- তোমরা ভুল করেছো বাবা, ইকরা আমি মিলু আমরা সবাই বড় হয়েছি, আমাদের জীবনের ডিশিসন আমাদের জানিয়ে নেয়া, আমাদের মতামত নিয়ে তারপর করা তোমাদের উচিৎ।

বাবা:- আমরা যে ডিশিসন নিয়েছি তা ওর ভালোর জন্যই নিয়েছি। আর সবচেয়ে বড় কথা তোমাদের ফুপু জীবনে কোনদিন আমাদের কাছে কোন কিছুর আবদার করেনি। জীবনে প্রথম সে আমাদের কাছে কিছু চেয়েছে। তাকে আমরা কোন ভাবেই ফিরিয়ে দিতে পারি না।

সোহান:- সন্তানদের জীবনের চেয়ে বড় তোমার ওয়াদা হয়ে দাঁড়ালো। আমাদের জীবনের কোন মূল্য নেই?

চাচা:- তোমাদের জীবনে আমরা সব রকম স্বাধীনতা দিয়েছি, যখন যা চেয়েছো দিয়েছি, সব ধরণের ইচ্ছে পূরণ করেছি, আজ আমরা ওর বিয়ে ঠিক করেছি তাতেও আমরা সকলের মত দিয়েছি। তোমাদের সমস্যাটা কোথায়?

সোহান:- সমস্যা আছে বলেই বলছি, আমরা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসি।

— সোহানের কথা শুনে সকলে কয়েক মিনিটের জন্য একদম নিরব হয়ে গেলো কারো মুখ থেকে যেন কোন কথা বের হচ্ছিলো না। সকল নিরবতা ভেঙে মা বলে উঠলো এসব তুই কি বলছিস?

সোহান:- হ্যাঁ মা যা শুনেছো সত্যিই বলেছি।

বাবা:- যা বলেছো দ্বিতীয় বার তোমার মুখ থেকে আর শুনতে চাই না।

সোহান:- কেন শুনবে না বলো?

বাবা:- কারণ আমি তোমার ফুপুকে কথা দিয়েছি। আর তা অনড় থাকবে কোন রকম নড়চড় হবে না।

সোহান:- বেশতো তুমিতো আমাকেও কথা দিয়েছো আমি যা চাইবো তাই দিবে। আজ আমি তোমার কাছে আমার ভালোবাসা চাচ্ছি দাও আমি যা চাচ্ছি তা দাও।

বাবা:- এসব প্রেম ভালোবাসা সব পাগলামি, দু’দিন পরেই সব চলে যাবে।

সোহান:- ভুল বাবা, বরং দু’দিন পর আমাদের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। আর তুমি কথা দিছো তার মানে এই নয় যে তুমি তা ফিরিয়ে নিতে পারবে না। এটা তোমাদের সন্তানদের জীবন মরণের ব্যাপার। আর তোমরা যদি আমাদের ভালো মন্দ না বুঝো তবে আমাদের অন্য পথ বেছে নিতে হবে।

— সোহানের এমন কথা শুনে সকলে মুখে হাত দিলো। বাবা চিৎকার করে বলে উঠলো তোমার এতো বড় সাহস আমার মুখের উপর কথা বলো। বের হয়ে যাও এখুনি আমার বাড়ি থেকে।

মা:- এসব কি বলছেন আপনি। সোহানের দিকে এগিয়ে যেয়ে বাবা শান্ত হো। বাবা যা করছেন তোদের ভালোর জন্যই করছেন।

সোহান:- ইকরার দিকে তাকিয়ে চল আমার সাথে।

বাবা:- চিৎকার করে তোর মত সন্তান জন্ম দিয়ে আমি ভুল করেছি, বের হয়ে যা আর কোন দিনও এ বাড়িতে পা দিবি না। আমি মনে করবো আমার কোন সন্তান নেই। তোর জন্য দুটো রাস্তাই খোলা আছে এ বাড়িতে আমাদের ছেলে হয়ে থাকতে হলে আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। নয়তো সারা জীবনের জন্য এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।

— বাবার এমন কথায় সকলে একদম স্তব্দ হয়ে গেলো। মা ছুটে এসে বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে মাথা ঠাণ্ডা রাখার জন্য। চাচাও কিছু বলতে চেয়ে থেমে গেলেন।

সোহান:- বেশতো চলে যাবো, তবুও তোমাদের এ অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারবো না। বলে ইকরার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে। মা এসে পেছন থেকে সোহানের হাত ধরে টেনে বলে যাস নে বাবা।

— সোহান মাকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা করে দিও মা। বলে হাঁটতে শুরু করে, মা ছুটে যায় একবার সোহানের বাবার কাছে একবার চাচার কাছে। হাউমাউ করে কান্না করে দু’জনই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। ইকরার মা মুখে কাপড় গুজে কান্না করতে থাকে। ইকরা আর সোহান বের হয়ে আসে বাড়ির ভিতর থেকে মিলু ভাইয়া আপু বলতে বলতে দরজা পর্যন্ত দৌঁড়ে আসে। ততক্ষণে দু’জন বাড়ির বাহিরে চলে আসে। হাত নেড়ে ইকরা মিলুকে বিদায় জানায়। ওরা বের হয়ে যেতেই বাবা সোফায় বসে পরে। মা যেয়ে উনার পা জড়িয়ে কান্না করতে শুরু করলো।

বাবা:- প্লীজ কান্না কাটি করো না, ওরা বাড়িতে ফিরে আসবে, কোথায় যাবে ওদের যাবার মত কোন জায়গা নেই। কিন্তু আমি রাসেলদের কি জানাবো?

মা:- কি জানাবেন মানে? আপনার জিদের জন্য আজ বাড়ির দুটো ছেলে মেয়ে বাহিরে চলে গেছে। যদি ওদের কিছু হয়ে যায় তখন কি হবে?

— নিজের স্ত্রীর মুখে এমন কথা শুনে কথা শুনে শুধু ছলছল চোখে চেয়ে রইলো, কোন কথাই বের হলো না মুখ থেকে।

— গভীর রাত হয়ে আসে দু’জন কোথায় যাবে বুঝতে পারে না। ইকরা সোহানের হাত চেঁপে ধরে এতো রাতে আমরা কোথায় যাবো?

সোহান:- বুঝতে পারছি না, কিছু একটাতো মেনেজ করবো তুই চিন্তা করিস না।

— হলুদ ল্যাম্পপোষ্টের নিচে বসে আছে দু’জন ঢাকার রাস্তায় সারা রাত গাড়ি চলে, একটু পর পর গাড়ি হর্ণ বাজিয়ে চলে যাচ্ছে ওদের দু’জনের সামনে দিয়ে। সোহানের মাথায় চিন্তার পাহাড় ভেঙে পরেছে। কি করবে এতো রাতে সাথে একটা মেয়ে মানু্ষ। ভাবতে ভাবতে ফোন হাতে নিয়ে এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে সব বলে। বন্ধু সব শুনে তার বাড়িতে যেতে বলে। সোহান ইকরাকে নিয়ে সে বাড়িতে চলে আসে। বন্ধু তার বোনের সাথে ইকরার থাকার ব্যবস্থা করে আর সোহান সেই বন্ধুর সাথে। এভাবেই দুজনের রাত পার হয়। পরদিন সেই বন্ধু সাথে আরও কয়েকটা বন্ধুকে ডেকে নিয়ে আসে। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেয় কোর্টে যেয়ে দু’জন বিয়ে দিবে। তারপর একটা ছোট বাসা ভাড়া করে দিবে সেখানেই থাকবে ওরা দু’জন আপাতত। সেই মোতাবেক সকলে মিলে রওনা হলো কোর্টের দিকে। বারোটা বিশ মিনিটের সময় সকলে মিলে কোর্টে পৌঁছে গেলো। এবং ঘড়ির কাটায় যখন সময় বারোটা চল্লিশ মিনিট তখন দু’জনের বিয়ে সম্পন্ন হলো। সকলে মিলে রওনা হলো সেই বন্ধুর বাসাতে। বাসায় আসার পর সব বন্ধুরা বললো তোরা আজ রাত পর্যন্ত এই বাসাতেই থাক, আমরা তোদের নতুন বাসা কম্পিলিট করে রাতে নিয়ে যাবো। এসব বলে সকল বন্ধুরা বিদায় নিয়ে চলে যায়।

— দুপুরের খাবার খাওয়া শেষে ইকরা মিলুর নাম্বারে ফোন দিয়ে জানালো যে ওরা বিয়ে করে নিছে। মিলু শুনে খুশি হলো। দু’জন কথা বলতে বলতে ওদের মা মিলুর রুমে চলে আসলো। মিলু তাড়াতাড়ি ফোন কাটতে চাইলে মা বললো ফোনটা তার কাছে দিতে। মিলু মায়ের দিকে ফোন এগিয়ে দিলো। মা ফোন কানে লাগিয়ে কান্না করতে শুরু করলো। মায়ের কান্না শুনে ইকরাও হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে