জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০৩

0
1146

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা- ৩য় পর্ব
©শাহরিয়ার

— সকালে ঘুম থেকে উঠতেই বড় বড় চোখ করে সোহানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠলো ইকরা। চিৎকার দিবে এমন সময় মুখ চেঁপে ধরলো সোহান।

সোহান:- চুপ একদম চুপ চিৎকার করতে চাচ্ছিস কেন?

— সোহানের হাত ইকরার মুখে থাকায় সে কথা বলতে পারছিলো না, শুধু উম উম শব্দ করতে থাকলো। সোহান যদি চিৎকার না করিস তাহলে মুখ থেকে হাত সরাবো। ইকরা চোখ দিয়ে ইশারা করে বুঝালো ঠিক আছে। সোহান আস্তে করে হাত সরিয়ে নিতেই। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে শুরু করলো ইকরা। বেশ কিছুটা সময় পার হবার পর।

ইকরা:- তুমি এতো সকালে আমার রুমে কেন?

সোহান:- তোর কাছে এসেছিলাম দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। এসে তোর পাশে বসে দেখতে ছিলাম অমনি তুই চিৎকার করে উঠলি।

ইকরা:- চিৎকার করবো না তো কি করবো? আল্লাহ জানে তুমি কি কি দেখেছো?

সোহান:- হাসতে হাসতে হুম অনেক কিছুই দেখেছি।

ইকরা:- কি? আমি এখুনি চিৎকার করে সবাইকে ডাকবো।

সোহান:- আরে আস্তে আস্তে কিছুই দেখিনি। চেয়ারটা টেনে তোর সামনে বসতেইতো তুই জেগে উঠলি।

ইকরা:- তুমি কেন আসছো এতো সকালে আমার রুমে?

সোহান:- এখনো কি সকাল আছে নয়টা বাজে। তাড়াতাড়ি কিছু টাকা দেতো আমার একটা ইন্টারভিউ আছে।

ইকরা:- আমার কাছে কোন টাকা নেই তুমি কি আমাকে টাকা জমা দিয়ে রাখছো নাকি যে যখন তখন এসে টাকা চাইবে আর আমি দিয়ে দিবো?

সোহান:- শোন টাকার গায়ে কি লেখা আছে জানিস?

ইকরা:- না জানি না কি লেখা আছে।

সোহান:- টাকার গায়ে লেখা আছে চাহিবার মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবেন।

ইকরা:- তুমি যতই যা বলো না কেন আমি এবার তোমাকে টাকা দিচ্ছি না, মনে আছে গতবারের পাঁচশত টাকা এখনো তুমি ফেরৎ দাওনি।

সোহান:- আরে দিয়ে দিবো দিয়ে দিবো, তোর সব টাকা শুধে আসলে একেবারে দিয়ে দিবো চাকরিটা হলেই দিয়ে দিবো।

ইকরা:- পাক্কা দিবাতো?

সোহান:- তিন সত্যি দিয়ে দিবো।

— ইকরা বিছানা থেকে উঠে তুমি দাঁড়াও আমি ফ্রেশ হয়ে এসে দিচ্ছি। বলে ওয়াশ রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। অল্প সময়ের ভিতর ফ্রেশ হয়ে এসে টাকা বের করে সোহানের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে টাকা কিন্তু ফেরৎ দিয়ে দিবা, না হলে তোমার বিয়ের সময়, তোমার শ্বশুর বাড়িতে এই টাকা আমি যৌতুক হিসেবে চাইবো।

সোহান:- চুপ থাক মাথামোটা এই কয় টাকা কেউ যৌতুক নেয়? আমিতো ভাবছি যার বাবার তোর মত সুন্দরি একটা মেয়ে আছে, তোর মত একটা নিজস্ব রুম আছে, যার বাবার নিজের ব্যবসা আছে নিজের বাড়ি আছে, তাকেই বিয়ে করবো।

ইকরা:- সে তুমি যা খুশি করো না কেন আমার চেয়ে সুন্দরি কাউকেই তুমি পাবা না।

সোহান:- আরে সুন্দরি লাগবে না, তোর মত হলেই হবে, একটু মাথামোটা, চুল গুলো বড় বড়, মায়াবী দু’টো চোখ। গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁট। আর সে ঠোঁটের নিচে একটি কালো তিল। ব্যস তাহলেই হয়ে যাবে।

ইকরা:- ইস আমার মত খুঁজে কত সখ। জীবনেও পাবে না হুঁ।

সোহান:- আরে পাবো পাবো, না পেলে তোকে ফটোকপি মেশিনে বসিয়ে ফটোকপি করে ঘরের দেয়ালের সাথে টাঙিয়ে রাখবো।

ইকরা:- ফাজিল একটা বলেই সোহানের বুকে ঠুস ঠাস করে মারতে শুরু করলো।

— সোহান প্রতিরোধ করার বাহানায় ব ইকরার হাত চেঁপে ধরে বুকের সাথে মিলিয়ে রাখছে। ইকরা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বার বার সোহানের বুকে ঘুষি মারছে, সোহান মনে মনে মাথা মোটা কিছুই বোঝে না। আমি যে তোকে ভালোবেসে ফেলেছি না পারছি বলতে আর না পারছি লুকাতে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে দু’হাতে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেঁপে ধরেছে ইকরাকে সেদিকে কোন খেয়াল নেই। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে যখন ইকরা সোহানকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো তখন সোহান বাস্তবতায় ফিরে আসলো।

ইকরা:- এই তুমি কি আমাকে মেরে ফেলতে চাও নাকি? আর একটু হলেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যেতাম।

সোহান:- নিজের কানে হাত দিয়ে সরি সরি আমি বুঝতে পারিনি।

ইকরা:- তুমি ইচ্ছে করেই এমনটা করছো আমি জানি।

সোহান:- বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো নিজের এমন ভুলে। সে বিনয়ের সুরে ইকরার হাত চেঁপে ধরে বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে করিনি।

ইকরা:- না তুমি ইচ্ছে করেই এমনটা করছো, আমি জানি তুমি চাইছিলা আমি দম বন্ধ হয়ে মরি। আমি এখুনি চিৎকার করে সবাইকে ডাক দিবো।

সোহান:- মনে মনে হায়রে মাথামোটা, এই না না এমন করিস না আমি এখুনি চলে যাচ্ছি আর আসবো না। বলেই সোহান দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

— ইকরা দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে, বিছানায় শুয়ে হাসতে শুরু করলো, পাগল একটা এতো ভিতু মানুষ হয় কি করে? আচ্ছা আমি কি সোহান ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি? মোটেও অন্যায় কিছু না যদি ভালোবেসে ফেলি। কিন্তু সোহান ভাইয়া যদি অন্য কাউকে ভালোবাসে তাহলে? উফ কি সব ভাবছি আমি। বিছানা ছেড়ে উঠে ডাইনিং এর দিকে হাঁটা শুরু করলো ইকরা। ডাইনিং এ আসতেই সোহানকে দেখে মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাঁপলো। সোহানের সামনা সামনি যেয়ে বসে চোখ বড় বড় করে তাকালো। সোহান মুখে খাবার নিয়ে ইকরার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো বড় বড় চোখ করে ইকরা সোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। সোহান কোন রকম কথা না বলে মাথা নিচু করে তাড়াতাড়ি নাস্তা শেষ করে কোন রকমে দৌঁড়ে সেখান থেকে বের হয়ে গেলো। এমন অবস্থা দেখে ইকরা একাই মনে মনে হাসতে থাকলো। মনে মনে বলতে থাকলো ভিতু একটা।

— সকাল গড়িয়ে দুপুর শেষের দিকে সোহান এখনো বাসায় ফিরেনি দেখে ইকরা বার বার ডাইনিং এর সামনে যেয়ে ঘুরে আসতেছে। ইকরার এই জিনিসটা চোখে পড়ার মত। সোহান যে দিন বাহিরে থাকে সে দিন সবার খাওয়া শেষ হলেও ইকরা খায়না যতক্ষণ পর্যন্ত না সোহান বাড়িতে আসে। অপরদিকে সোহানও যেখানেই থাকুক হালকা খাবার খেয়ে থাকে আর চেষ্টা করে যত দ্রুত সম্ভব বাড়িতে ফিরে আসার জন্য। সোহানও জানে ইকরা খাবে না যত সময় না সে বাড়িতে ফিরবে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সেই কখন থেকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ইকরা। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে সোহানকে আসতে দেখে ইকরার মুখের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। ইকরা দৌঁড়ে নিচে নেমে ডাইনিং সাজানো থাকা প্লেটে খাবার পরিবেশন করতে শুরু করলো। কলিং বেলটা বেজে উঠতেই দৌঁড়ে যেয়ে দরজা খুলে দিলো। সোহান ঘরের ভিতর ঢুকতেই ইকরা বলে উঠলো এতো দেরী হলো কেন?

সোহান:- যেখানে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম সেখানে রিসিপসনে খুব সুন্দরি একটা মেয়ে ছিলো তার সাথে গল্প করতে করতে দেরী হয়ে গেছে।

ইকরা:- বাহ ভালোতো তাহলেতো তার সাথে পেট ভরে লাঞ্চ করে এসেছো বলেই হাঁটা শুরু করলো। আমিও বোকা অযথাই খাবার বেড়ে রেডি করছি।

সোহান:- উফ প্রচণ্ড খুদা লেগেছে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

ইকরা:- টেবিলে খাবার রেডি করা আছে যার ইচ্ছে হয় যেনো খেয়ে নেয়। আর খুদা লাগবে কেন? সুন্দরি মেয়ে মানুষের সাথে গল্প করেইতো পেট ভরা থাকার কথা।

সোহান:- কথা বললেই যদি পেট ভরতো তাহলে সবাই কথা বলে পেট ভরতো। খাবার খেতো না।

ইকরা:- যত সব ঢং এর কথা। খাবার বেড়ে রেখেছি খেয়ে নিলেই হয়।

— কথাটা বলেই ইকরা হাঁটা শুরু করতেই পেছন থেকে হাত ধরে টান দিলো সোহান। ইকরা চোখ বন্ধ করে ঘুরতে ঘুরতে মনে মনে বলে কি রোমান্টিক।

সোহান:- তুই খেয়েছিস?

ইকরা:- হাত ছাড়ো আমি খেলেই কার কি না খেলেই কার কি? হাত ছাড়ো না হলে চিৎকার করবো।

সোহান:- আয় এক সাথে খাবো।

ইকরা:- না তোমার সাথে খাবো না।

সোহান:- কেন খাবি না? খাবি দেখেই তো আমার আসার অপেক্ষায় বসে রয়েছিস।

ইকরা:- চুপ একদম চুপ যে মেয়ের সাথে বসে গল্প করছো যাও সে মেয়েকে নিয়ে এসে এক সাথে খেতে বসো। আমার সাথে খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

সোহান:- হাসতে হাসতে আরে এমনি বলছি, রাস্তায় খুব জ্যাম ছিলো তাই আসতে লেট হয়ে গেছে।

ইকরা:- টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে আমি কি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি রাস্তায় কি হয়েছে?

সোহান:- চেয়ার টেনে বসতে বসতে আচ্ছা এতো রাগ করিস কেন? রাগলে তোকে ঠিক শাঁকচুন্নির মত লাগে।

ইকরা:- এই আমি শাঁকচুন্নি, ভুতনি, পেত্নী আরও অনেক কিছু তাতে তোমার কি? তুমি ভালো একটা দেখে বিয়ে করে নিয়ে এসো।

সোহান:- হাসতে হাসতে আচ্ছা যখন বিয়ে করবো তখন দেখিস এখন খেয়ে নে।

— ইকরা সোহানের দিকে খাবার প্লেট এগিয়ে দিতে দিতে তোমার বউ আসার আগেই আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।

সোহান:- তা হবে না তুই না থাকলেতো আমি বিয়েই করবো না।

ইকরা:- ওরে কি ঢং এর কথারে সময় মত দেখা যাবে।

সোহান:- হুম হুম দেখিস দেখিস। এখন খেয়ে নে না হলে ঝগড়া করবি কি করে?

ইকরা:- খবরদার উল্টা পাল্টা কথা বলবে না তাহলে মাথার সব চুল ছিড়ে ফেলবো। তখন কেউ আর মেয়ে দিতে চাইবে না।

সোহান:- হাসতে হাসতে তোর বর হবে টাকলু।

ইকরা:- তোমার মাথা ফাঁটিয়ে ফেলবো উল্টা পাল্টা কথা বললে।

সোহান:- নে মাথা ফাটা।

ইকরা:- এখন না পরে খাবার সময় কাউকে মারতে নেই।

সোহান:- আমার খাওয়া শেষ তুই থাক আমি গেলাম।

ইকরা:- যাও যাও তাড়াতাড়ি আমার সামনে থেকে পালিয়ে বাঁচো।

সোহান:- রুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে তুই আমার থেকে বেঁচে থাক নাহলে।

ইকরা:- না হলে কি?

সোহান:- ইকরার দিকে তাকিয়ে মুখ বেংচি কেটে না হলে সময় মত বুঝবি।

— সোহানের চলে যাবার পথের দিকে চেয়ে রইলো কথার কিছুই বুঝলো না একা একাই বলে উঠলো পাগল একটা।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে