জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
1013

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা- ৫ম পর্ব
©শাহরিয়ার

— দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে থেকে প্রচণ্ড শব্দ করে হেসে উঠলো এমন সময় সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকা মিলু চিৎকার করে বলে উঠলো ভুত ভুত। মিলুর এমন কাণ্ড দেখে দু’জন আরও কিছুটা সময় হেসে তারপর নিচে নেমে আসলো। নিচে নামতেই দেখতে পেলো মিলু ডাইনিং এ বসে থরথর করে কাঁপছে আর আস্তে আস্তে কি যেন বলছে।

ইকরা:- কিরে বনু তোর কি হইছে?

মিলু:- ভুত ভুত আপু ভুত দেখেছি।

— মিলুর কথা শুনে দু’জন আবারো হেসে দিলো।

ইকরা:- কোথায় ভুত দেখেছিস?

মিলু:- ছাঁদে উঠার সিঁড়িতে দেখেছি আপু জানো না আমাকে দেখা মাত্র কি জোড়ে হাসতে শুরু করলো।

–মিলুর এমন কথায় হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যাবার অবস্থা দু’জনের। সোহান আচ্ছা ছাঁদের সিঁড়ির কোথায় ছিলো ভুতটা বলতে পারবি?

মিলু:- হুম পারবো কিন্তু আমি যাবো না, আমি ভীষণ ভয় পাইছি।

সোহান:- কিছু হবে না আমরা তোর সাথে আছিতো।

মিলু:- সত্যি থাকবাতো?

সোহান:- হ্যাঁ তিন সত্যি থাকবো এখন চল।

— তিনজন ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলো। সিঁড়ির কাছে এসে মিলু উপরের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিলো ঐ দিকটায়।

সোহান:- চল দেখি কি আছে ঐখানে।

মিলু:- না না আমি যাবো না তোমরা যাও।

— সোহান আর ইকরা মিটমিট করে হাসতে হাসতে সেদিকে রওনা হলো। এদিকে মিলু ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। অনেকটা উপরে উঠে ইকরা আর সোহান দু’জন মিলো হা হা করে হাসতে শুরু করতেই মিলু চিৎকার করতে শুরু করলো। সোহান আর ইকরা মিলুকে বললো আরে ভয় পাস না আমরা দু’জন। নিচে নেমে এসে বললো তুই এতো ভিতু কেনরে?

মিলু:- কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে ভুত।

ইকরা:- দূর কোন ভুত না আমরা দু’জন তখন হাসতে হাসতে নামছিলাম।

মিলু:- তোমরা এভাবে আমাকে ভয় দেখাতে পারলে?

সোহান:- তোকে আমরা ভয় দেখাবো কেন? তুই নিজেই ভয় পেয়েছিস আচ্ছা এটা বল এতো রাতে তুই কেন ছাঁদে যাচ্ছিলি?

মিলু:- কেন আমি কি ছাঁদে যেতে পারি না?

ইকরা:- তা পারবি না কেন? কিন্তু কেন যাচ্ছিলি এটাতো বল।

মিলু:- এমনি বিশুদ্ধ হাওয়া খাওয়ার জন্য তুমি বুঝবে না।

— বলতে বলতে মিলু নিচের দিকে নামতে শুরু করলো। ইকরা সোহানের দিকে তাকালো মিলু নেমে যেতেই সোহান বললো আমার মনে হয় মিলু প্রেমে পরছে। তাইতো এতো রাতে ছাঁদে যাচ্ছিলো।

ইকরা:- তুমি কি করে বুঝলে? তুমি কি ছাঁদে বসে প্রেম করো নাকি?

সোহান:- আমার ছাঁদে বসে প্রেম করতে হবে কেন? এজন্যই বলি তোর মাথা মোটা। তুই ওর বলার ভঙ্গীমা দেখেও বুঝতে পারিস নাই।

ইকরা:- মাথায় হাত দিয়ে ওর এতো বড় সাহস, বড় বোন প্রেম করে না আর ও প্রেম করছে। আচ্ছা এটা বলো তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?

সোহান:- নারে বেকার মানুষের কাউকে ভালোবাসতে নেই।

ইকরা:- কেন? বেকাররা কি মানুষ না?

সোহান:- হাসতে হাসতে বেকাররাও মানুষ তবে বেকার মানুষ। যেমন মনে কর, একজন বেকার ছেলে একটা মেয়েকে ভালোবাসলো। এদিকে মেয়ের বাড়ি থেকে মেয়েটাকে বিয়ের জন্য চাঁপ দিচ্ছে এমন অবস্থায় মেয়েটা যখন ছেলেটাকে বিয়ের কথা বলবে তখন ছেলেটা পরিবারের কথা মেয়েটার ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে মেয়েটাকে বলবে যার সাথে পরিবার বিয়ে ঠিক করছে তাকে বিয়ে করে নেবার জন্য। কিন্তু ছেলেটা সত্যিই মেয়েটাকে ভালোবাসে। বুকের ভিতর পাথর চাঁপা রেখে মেয়েটাকে এ কথাটা ছেলেটার বলতে হয়েছে। অথচ মেয়েটা ভাববে ছেলেটা কতই না স্বার্থপর।

ইকরা:- শোন সব সময় যে ছেলেদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে এমন হবে কেন? আমি হলে ছেলেটাকে বলবো আমি তোমাকে সাহায্য করবো বিয়ের পর, যতদিন না তোমার চাকরি হচ্ছে। আমি দু’টো টিউশনি করি, না হয় আরও দু’টো টিউশনি বাড়িয়ে করবো।

— ইকরার কথা শুনে মুগ্ধ নয়নে আধো আলো আধো অন্ধকারে তাকিয়ে রইলো সোহান। মুখ থেকে কোন কথাই জেনো বের হতে চাচ্ছে না সোহানের শুধু চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে এই মাথা মোটা মেয়েটার দিকে না মাথা মোটা বললে ভুল হবে কিছুটা হলেও মেয়েটার মাথায় বুদ্ধি আছে সত্যিই মেয়েটা জ্যামিতিতে যতটা কাঁচাই হোক না কেন। ভালোবাসার অংকে পুরোই পাকা। এ যেন জ্যামিতির মিলিয়ে দেয়া এক সূত্র। হয়ে যাক না জ্যামিতিক প্রেম।

ইকরা:- এমনি করে তাকিয়ে আছো কেন? আমি কি কোন কিছু ভুল বলেছি?

সোহান:- বাস্তবতায় ফিরে এসে, না তুই খুব সুন্দর যুক্তি যুক্ত কথা বলেছিস। ইদ্যানিং দেখছি তোর মাথা খুলতে শুরু করেছে।

ইকরা:- আমি ছোট বেলা থেকেই খুব বুদ্ধিমতী কিন্তু তোমরা কেউ বুঝনা।

— কথাটা বলেই হেসে দিলো ইকরা, সোহানও নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না ইকরা সাথে সাথে নিজেও হাসতে শুরু করলো। আর বেশ কিছুটা সময় সিঁড়িতে বসে দু’জন গল্প করে যার যার রুমে চলে আসলো।

— ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সোহান এই প্রথম অনুভব করলো সে সত্যি সত্যি ইকরাকে ভালোবেসে ফেলেছে, ওর প্রতিটা কথায় ওর প্রতিটা হাসিতেই সোহান এখন মুগ্ধ হয়। আগের মত আর ঝগড়া করতে ইচ্ছে করে না। বরং মাঝে মাঝে ইকরার খোলা চুলে হাত দিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে। কিংবা কখনো কখনো খুব ইচ্ছে করে ঠোঁটের নিচের কালো তিলটায় একটু হাত বুলিয়ে দিতে।

— নিজের রুমের বিছানার এপাশ ওপাশ করতে করতে ইকরা ভাবছো বোকা একটা। কিরে এমন বোকা মানুষ কে আমি ভালোবেসে ফেললাম। যে আমার ভালোবাসা বুঝেইনা। আচ্ছা সোহান কি অন্য কাউকে ভালোবাসে? এখন কেমন জানি বদলে যাচ্ছে আগের মত আমার সাথে ঝগড়া করে না। আমার সাথে রাগ করে না। কত সুন্দর করে ভালোবাসার কথা বলার পর সোজা বেকারের উদাহরণ দিলো। অথচ ওর চোখে আমি স্পষ্ট কারো জন্য ভালোবাসা দেখেছি। কিন্তু কে সে? সে কি আমার থেকেও অনেক বেশী সুন্দরি? সে কি আমার থেকেও তোমায় বেশী ভালোবাসবে সোহান। ভাবতে ভাবতে এক সময় দু’চোখ বন্ধ হয়ে এলো ইকরার।

— সকালে নাস্তার টেবিলে সকলে এক সাথে নাস্তা করতে বসছে। এ সময় মিলু সবার সামনে বলে উঠলো আমাদের বাড়িতে ভুত আছে তোমরা কি জানো?

মা:- তোরে কি দৌঁড়ানি দিছে?

মিলু:- শুধু কি দৌঁড়ানি আর একটু হলে হার্টফেইল করে মারা যেতাম।

বাবা:- কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলছিস মাথাটা কি পুরাই নষ্ট হয়ে গেছে?

— সবার কথা শুনে ইকরা আর সোহান একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।

মিলু:- আমার মাথা ঠিক আছে তোমার বড় মেয়ে আর ভাইয়ার মাথা নষ্ট হইছে কোন কারণ ছাড়াই হা হা করতে থাকে। গতকাল রাতে ছাঁদে উঠতে ছিলাম এমন সময় দু’জন ছাঁদের উপর থেকে নামছে আর এতো উচ্চ সুরে হাসা হাসি করছে যে অন্ধকারে ভয়ে আমার আত্মার পানি শুকিয়ে গিয়েছিলো।

— এবার মিলুর কথা শুনে সকলে একসাথে উচ্চ সুরে হেসে দিলো। অনেক সময় হাসাহাসি করে সোহানের বাবা জিজ্ঞাসা করলো তোদের দু’জন কে যে দায়িত্ব দিয়েছিলাম তা কতদূর।

সোহান:- এ আর এমন কি কঠিন কাজ? টাকা দিয়ে যাও কবে বেড়াতে যাবে সেই ডেট বলো।

বাবা:- তোরা এতো ফাস্ট হয়ে গিয়েছিস তা কোথায় বেড়াতে যাবি তা বল আগে দেখি জায়গা পছন্দ হয় কিনা।

ইকরা:- উহু তা বলা যাবে না, এবারের ঘুরাঘুরিটা সম্পূর্ণ সারপ্রাইজ হবে।

বাবা:- সোহানকে বিশ্বাস না করা গেলেও ইকরাকে বিশ্বাস করা যায়। তোরা কি বলিস?

— সবাই বললো হ্যাঁ অবশ্যই করা যায়। ইকরার বাবা, কেন সোহান কে কেন বিশ্বাস করা যাবে না? অবশ্যই আমি সোহানকে বিশ্বাস করি। সোহান অবশ্যই ভালো কিছু প্লান করবে। বলতে বলতে পকেট থেকে টাকা বের করে দিতে থাকলো। সোহানের বাবা আরে আরে কি করছিস আমি টাকা দিচ্ছি।

ইকরা:- দু’জনে ভাগ করে দাও সাথে আমরা দু’জন টিকেট কাটতে যাবো, সেই টাকা সাথে ফুটকা খাবার টাকাও দিবা।

— ইকরার কথা শুনে সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। দুই ভাই মিলে টাকা দিয়ে নাস্তার টেবিল থেকে উঠতে উঠতে বললো আগামি শুকবারের টিকেট কেটে আনবি। মানে মাত্র দু’দিন সময়। আর অবশ্যই গন্তব্য স্থান যেন সুন্দর হয়।

সোহান:- তা নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। তোমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।

— সকলে চলে যাবার পর সোহান ইকরার দিকে তাকিয়ে বললো টাকা গুলো তোর কাছে রাখ আর দুপুরের পর রেডি হয়ে থাকবি। লাঞ্চ করেই টিকেট কাটতে চলে যাবো দু’জন।

ইকরা:- আচ্ছা ঠিক আছে।

— দু’জন নিজেদের মত করে চলে গেলো রুমে। দুপুরের খাবার শেষ করতেই সোহান ইকরাকে বললো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে একটু পরেই বের হবো।

ইকরা:- আর কি রেডি হবো? আমিতো রেডিই।

সোহান:- ইস এই পোশাকে তুই আমার সাথে যাবি। আমার একটা মান সম্মান আছেতো। আর আমি একটা ইয়ং হ্যান্ডসাম ছেলে।

ইকরা:- তোমার মাথা থাকো তুমি নিজে রেডি হয়ে নিও। ঠিক চারটার সময় আমরা বের হবো।

সোহান:- আচ্ছা।

— দু’জন নিজেদের রুমে চলে গেলো। ইকরা মনে মনে হাসছে আর বলছে পাগল একটা।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে